মাননীয় সভাপতি,
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য পেশ করেছেন, তার জবাবে আমি এই সভায় ভারতের দৃষ্টিভঙ্গী জানাতে চাই।
সাধারণ সভার মঞ্চ থেকে যে সমস্ত কথা বলা হয়, তা ইতিহাসের গুরুত্বকে বহন করে চলে বলে বিশ্বাস করা হয়ে থাকে। দুর্ভাগ্যবশত, আমরা আজ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের কাছ থেকে দ্বিধাবিভক্ত মানসিকতাপূর্ণ বিশ্বের এক নির্মম প্রতিফলনের কথা শুনেছি, যেমন – ধনী বনাম দরিদ্র, উত্তর বনাম দক্ষিণ, উন্নত বনাম উন্নয়নশীল, মুসলিম বনাম অন্য ধর্ম প্রভৃতি। তাঁর ভাষণ রাষ্ট্রসংঘে বিভাজনের দৃষ্টিভঙ্গী তুলে ধরে। এই ভাষণে মতবিরোধ তীব্র হয়, ঘৃণার সৃষ্টি হয়, সংক্ষেপে বলতে গেলে – এটি ঘৃণ্য ভাষণ।
খুব কম সময়েই সাধারণ অধিবেশনে এ ধরনের অপব্যবহার লক্ষ্য করা গেছে। প্রতিটি শব্দই কূটনীতির ক্ষেত্রে গুরুত্ব রাখে। ভাষণে বিভিন্ন বিশেষণ, যেমন – রক্তস্নান, জাতিগত সংখ্যাগরিষ্ঠতা, অস্ত্র গ্রহণ এবং শেষ পর্যন্ত লড়াই মধ্যযুগীয় মানসিকতারই প্রতিফলন। একবিংশ শতাব্দীর দৃষ্টিভঙ্গী নয়।
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি তাঁর কূটনীতি-সুলভ মানসিকতার নয়, বরং আগ্রাসী মনোভাবেরই পরিচয়।
এই সমস্ত কথা এমন একজন দেশের নেতার মুখে উচ্চারিত হয়েছে, যেখানে সন্ত্রাস নামক শিল্পকে গুরুত্ব ও একচেটিয়া অধিকার দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সন্ত্রাস নিয়ে ব্যাখ্যা ধৃষ্টতা এবং দ্বন্দের পরিচয় দেয়।
ভদ্র লোকের খেলা ক্রিকেট, যিনি এই খেলার সঙ্গে ক্রিকেটার হিসাবে যুক্ত ছিলেন, তাঁর কাছ থেকে আজকের ভাষণ বর্বরতা ও নির্মমতার প্রতিফলন, যা দারা আদম খেলের অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নরসংহারের কথা মনে করিয়ে দেয়।
এখন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান রাষ্ট্রসংঘকে আহ্বান জানাচ্ছেন, পাকিস্তানে আসতে, একথা প্রমাণিত করার জন্য যে, সেখানে কোনও জঙ্গী সংগঠন নেই। সমগ্র বিশ্ব তাঁর এই প্রতিশ্রুতি সত্য বলে মেনে নিতে পারবে না।
এখানে পাকিস্তানকে কয়েকটি প্রশ্ন করতে চাই। প্রয়োজনে পাকিস্তান তার জবাবদিহি করতে পারে।
পাকিস্তান কি এই তথ্য উপেক্ষা করতে পারবে যে, আজ পর্যন্ত রাষ্ট্রসংঘের তালিকাভুক্ত ১৩০ জন কুখ্যাত জঙ্গী এবং ২৫টি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন সেদেশে রয়েছে?
পাকিস্তান কি একথা স্বীকার করবে যে, সারা বিশ্বে তারাই একমাত্র সরকার যে, রাষ্ট্রসংঘের তালিকাভুক্ত আল কায়েদা জঙ্গী সংগঠনের একজনকে পেনশন দেয়।
পাকিস্তান কি এই প্রশ্নের নিউইয়র্ককে কোনও জবাব দিতে পারবে যে, সেদেশের অগ্রণী হাবিব ব্যাঙ্ককে সন্ত্রাসে মদত যোগানোর জন্য কয়েক মিলিয়ন ডলার জরিমানা করায় বন্ধ করে দিতে হয়েছে?
পাকিস্তান কি এই তথ্য অস্বীকার করতে পারবে যে, ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাক্সফোর্স তার ২৭টি মাপকাঠির মধ্যে ২০টিতেই বিধি লঙ্ঘণের জন্য তাদেরকে নোটিশ দিয়েছে?
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এই নিউইয়র্ক শহরকে কি জানাবেন যে তিনি এক সময় ওসামা বিন লাদেন’কে প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছেন?
মাননীয় সভাপতি,
মূল ধারার সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ ও ঘৃণ্য বক্তব্যকে জুড়ে দিয়ে পাকিস্তান মানবাধিকারের প্রশ্নে তার সর্বাত্মক চেষ্টা বজায় রাখতে চাইছে।
পাকিস্তান এমন একটি দেশ, যেখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সংখ্যা ১৯৪৭ – এর ২৩ শতাংশ থেকে কমে আজ ৩ শতাংশে এসে পৌঁছেছে। খ্রীস্টান, শিখ, হিন্দু, শিয়া, পাস্তুন, সিন্ধি এবং বালুচদের প্রতি স্বৈরাতান্ত্রিক আঘাত হেনেছেন, মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে তাঁদের অভিযুক্ত করা হয়েছে, তাঁদের সঙ্গে অমানবিক দুর্ব্যবহার করা হয়েছে, এমনকি বলপূর্বক অভিযোগ স্বীকারে বাধ্য করা হয়েছে।
মানবাধিকার নিয়ে এখন এই দেশটি যে সমস্ত কথাবার্তা বলছে, তা বিলুপ্তপ্রায় পাহাড়ি ছাগল ‘মারখুর’ খুঁজে পাওয়ার মতো।
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বর্তমান গণতন্ত্রের শক্তি সম্পর্কে উদাসীন নন। আমরা আপনাকে ইতিহাস সম্পর্কে আপনার বিভ্রান্তিকর ধারনা মুছে ফেলার অনুরোধ জানাই। একথা ভুলে যাবেন না যে, ১৯৭১ সালে আপনার নিজের দেশেই বর্বরোচিত নরহত্যার কথা। নরহত্যায় লেঃজেঃ এ এ কে নিয়াজি’র ভূমিকাও আপনি বিস্মৃত হবেন না। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আজ বিকেলে সাধারণ সভাকে হীনমানসিকতাসম্পন্ন ঘটনার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।
মাননীয় সভাপতি,
একটি অপ্রাসঙ্গিক ও অস্থায়ী ধারা, যেটি ভারতের রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীরের উন্নয়ন তথা অখন্ডতার ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করছিল, তা প্রত্যাহারে পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া এ ঘটনাকেই প্রমাণিত করে, যারা দ্বন্দ্ব চালিয়ে যেতে চায়, তারা কখনই শান্তির বার্তাকে স্বাগত জানাবে না।
পাকিস্তান একদিকে সন্ত্রাসবাদে মদত জুগিয়েছে, আজ এখানে ঘৃণ্য ভাষণ দিচ্ছে। ভারত জম্মু ও কাশ্মীরের উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ চালিয়ে যাবে।
জম্মু ও কাশ্মীর তথা লাদাখকে উন্নয়নের মূলধারার সঙ্গে যুক্ত করে ভারত নিরবচ্ছিন্ন এবং প্রাণবন্ত গণতন্ত্রের রূপকেই প্রতিফলিত করতে চায়। ভারতীয় গণতন্ত্রের শত-সহস্র প্রাচীন মূল্যবোধগুলি তার বৈচিত্র্য, বহুত্ববাদ এবং সহনশীলতার মধ্যে প্রোথিত রয়েছে।
ভারতবাসীর পক্ষ থেকে কিছু বলার জন্য অন্য কোনও ব্যক্তিকে প্রয়োজন নেই, বিশেষ করে সেই সমস্ত ব্যক্তি, যারা ঘৃণার আদর্শ থেকে সন্ত্রাস শিল্প গড়ে তুলছে।
মাননীয় সভাপতি, আপনাকে আমার ধন্যবাদ।