রাষ্ট্রপতিশ্রী রামনাথ কোবিন্দের আমন্ত্রণে সমাজতন্ত্রী ভিয়েতনাম সাধারণতন্ত্রের প্রেসিডেন্টমিঃ ত্রাণ দাই কোয়াং সরকারিভাবে ভারত সফর করেন এ মাসের দু’ থেকে চার তারিখপর্যন্ত। ভিয়েতনামের উপ-প্রধানমন্ত্রী তথা বিদেশ মন্ত্রী মিঃ ফাম বিন মিন সহ একউচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলও প্রেসিডেন্ট কোয়াং-এর সঙ্গে ভারত সফরে এসেছিলেন।

ভিয়েতনামেরপ্রেসিডেন্টের ভারত সফরকালে তাঁকে সাদর অভ্যর্থনা জানান রাষ্ট্রপতি শ্রী কোবিন্দ।রাষ্ট্রপতি ভবনে এক বিশেষ গার্ড অফ অনার-এরও আয়োজন করা হয় ভিয়েতনামেররাষ্ট্রপ্রধানের জন্য। মিঃ ত্রাণের সরকারি সফরসূচির মধ্যে ছিল রাজঘাটে মহাত্মাগান্ধীর স্মারক স্তম্ভে পুষ্পমাল্য নিবেদন, ভারতের রাষ্ট্রপতি আয়োজিত সরকারিভোজসভায় যোগদান, প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে প্রতিনিধি পর্যায়েরআলোচনা বৈঠকে অংশগ্রহণ ইত্যাদি। এছাড়াও, প্রেসিডেন্ট কোয়াং লোকসভার অধ্যক্ষশ্রীমতী সুমিত্রা মহাজন এবং ভারতের বিদেশ মন্ত্রী শ্রীমতী সুষমা স্বরাজের সঙ্গেওসাক্ষাৎকারে মিলিত হন। ভিয়েতনাম-ভারত বাণিজ্য ফোরামের বৈঠকেও ভাষণ দেন ভিয়েতনামেররাষ্ট্রপ্রধান। সেখানে ভারতীয় শিল্প ও বাণিজ্য ক্ষেত্রের দিকপালদের সঙ্গে আলোচনায়মিলিত হন তিনি। পরিদর্শন করেন বুদ্ধগয়াও।

ভারত ওভিয়েতনামের মধ্যে প্রতিনিধি পর্যায়ের আলাপ-আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় এক হৃদ্য ও আন্তরিকপরিবেশে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে অগ্রগতি, বিভিন্ন ক্ষেত্রে দু’দেশেরসহযোগিতা প্রচেষ্টা এবং ২০১৬-তে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফল ভিয়েতনাম সফরের পরবর্তীসময়ে দু’দেশের কর্মপ্রচেষ্টা আরও নিবিড় হয়ে ওঠার বিষয়গুলি স্থান পায় এই আলোচনাবৈঠকে। বৈঠক শেষে প্রেসিডেন্ট কোয়াং এবং প্রধানমন্ত্রী মোদী দু’দেশের মধ্যে পরমাণুশক্তি, বাণিজ্য, কৃষি ও মৎস্যচাষ সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চুক্তি বিনিময় অনুষ্ঠানটিপ্রত্যক্ষ করেন।

আর্থ-সামাজিকউন্নয়ন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, জনসাধারণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রেভারতের সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করেন প্রেসিডেন্ট কোয়াং। আঞ্চলিক তথা আন্তর্জাতিকমঞ্চগুলিতে ভারতের ভূমিকা ও অবস্থানকে আরও উন্নত করে তুলতে সর্বতোরকম সমর্থনেরওপ্রতিশ্রুতি দেন তিনি। অন্যদিকে, বিদেশ নীতি এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেভিয়েতনামের গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি ও সাফল্যের জন্য প্রেসিডেন্ট কোয়াংকে অভিনন্দিতকরেন ভারতের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। ভিয়েতনাম যে অচিরেই এক শিল্পোন্নত দেশেরমর্যাদা অর্জন করতে চলেছে, এ বিষয়ে দৃঢ় আস্থা ও বিশ্বাসের কথাও ব্যক্ত করেন তাঁরা।

জাতির জনকমহাত্মা গান্ধী এবং ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট হো চি মিন-এর হাত ধরে ভারত ওভিয়েতনামের মধ্যে যে মৈত্রী সম্পর্কের সূচনা হয়েছিল, সেই প্রসঙ্গের অবতারণা করেদুটি দেশই স্বীকার করে যে পরবর্তী প্রজন্মের নেতৃবৃন্দ এবং জনসাধারণ এইদ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও প্রসারিত করে তুলেছে। ভারত ও ভিয়েতনামের মধ্যে কৌশলগতঅংশীদারিত্বের মাত্রা এখন যে পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে, সে সম্পর্কে বিশেষ সন্তোষপ্রকাশ করে দুটি দেশই। ভারত ও ভিয়েতনামের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৪৫তমবার্ষিকী এবং কৌশলগত অংশীদারিত্বের দশম বার্ষিকীর উদযাপনে ২০১৭ বছরটি মৈত্রী বর্ষরূপে পালন করা হয়। এই উপলক্ষে ভারতে ভিয়েতনাম দিবস পালনের যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়তার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট।

দ্বিপাক্ষিকসম্পর্কের এই ক্রমপ্রসারকে নিরন্তর রাখতে নিয়মিতভাবে দ্বিপাক্ষিকসফরসূচি বিনিময়েরওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয় আলোচনাকালে। সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলি সম্পর্কে পর্যালোচনাএবং ২০১৭-২০ পর্যন্ত কৌশলগত অংশীদারিত্বের কর্মপরিকল্পনা রূপায়ণের বিষয়গুলি খতিয়েদেখতে ২০১৮-তে দু’দেশের বিদেশ মন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত যৌথ কমিটির পরবর্তী বৈঠকআয়োজনের প্রস্তাবেও সম্মতিজ্ঞাপন করে ভারত ও ভিয়েতনাম।

প্রতিরক্ষাও নিরাপত্তা

দ্বিপাক্ষিককৌশলগত অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা যে একগুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর ভূমিকা পালন করে, এই বিষয়টি স্বীকার করে নেয় দু’পক্ষই। এক্ষেত্রেঅর্জিত সাফল্য ও অগ্রগতিতে বিশেষ সন্তোষও প্রকাশ করা হয়। দু’দেশের সেনাবাহিনীরমধ্যে বলিষ্ঠতর সহযোগিতা এবং সাইবার নিরাপত্তা, সন্ত্রাস দমন এবং উগ্রপন্থীকার্যকলাপ রোধে দু’দেশের ঘনিষ্ঠতর সহযোগিতা প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানানো হয়। এছাড়াও,মানব ও মাদক পাচার রোধ, নৌ-নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং খাদ্য নিরাপত্তাক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতাকে আরও জোরদার করে তোলার ওপরও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়াহয়।

সাইবারনিরাপত্তা ক্ষেত্রে ভারত ও ভিয়েতনামের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলির কার্যকররূপায়ণের ওপরও গুরুত্ব আরোপ করে দুটি দেশ। ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ সচিবালয়এবং ভিয়েতনামের সরকারি নিরাপত্তা মন্ত্রকের মধ্যে স্বাক্ষরিত সহযোগিতা চুক্তিটিকেদ্রুত বাস্তবায়িত করতেও সহমত প্রকাশ করে দু’পক্ষ।

ভিয়েতনামেরসঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ছাড়াও ঐ দেশের দক্ষতা বৃদ্ধিতে অংশীদারিত্বের আগ্রহপ্রকাশ করে ভারত। ভিয়েতনামের উপকূলরক্ষীবাহিনীর উচ্চগতির প্রহরা যান নির্মাণেরলক্ষ্যে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ সহায়তার বাস্তবায়নের বিষয়টি দ্রুততর করেতোলার ওপর জোর দেওয়া হয় দু’দেশের আলোচনা বৈঠকে। এছাড়াও, প্রতিরক্ষা সহযোগিতাকে আরওজোরদার করে তোলার সপক্ষে মত প্রকাশ করেন দু’দেশের নেতৃবৃন্দ।

নৌ-ক্ষেত্রেবিশেষত, জলদস্যুতা রোধ, সমুদ্রপথের নিরাপত্তা, জাহাজ চলাচল সম্পর্কিত তথ্য বিনিময়ইত্যাদি বিষয়ে সহযোগিতাকে আরও নিবিড় করে তোলা যে একান্ত জরুরি সে বিষয়ে সহমতপ্রকাশ করে দুটি দেশই। ২০১৮-র জানুয়ারি মাসে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত আসিয়ান-ভারতনৌ-সহযোগিতা সম্পর্কিত স্মারক শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের সূত্রে সামুদ্রিক বিষয়গুলিতেভারত-ভিয়েতনাম দ্বিপাক্ষিক পরামর্শ ও আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার ওপর বিশেষ জোরদেওয়া হয়।

আন্তঃসীমান্তসন্ত্রাস সহ যে কোন ধরনের সন্ত্রাসমূলক তৎপরতার কঠোর নিন্দা করে দুটি দেশই। বিশ্বশান্তি, নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতার পক্ষে সন্ত্রাসের হুমকি যে ভয়ঙ্কর আকার গ্রহণকরতে পারে, সে সম্পর্কে ভারতের উদ্বেগে সায় জানায় ভিয়েতনামও। সন্ত্রাসের পিছনে যেকোনরকম যুক্তি বা কারণ থাকতে পারে না, এ সম্পর্কে সহমত প্রকাশ করে তারা। এছাড়াও,সন্ত্রাসমূলক কর্মতৎপরতার সঙ্গে জাতি, ধর্ম, সভ্যতা এবং জনজাতি গোষ্ঠীগুলিকে যে কোনভাবেইযুক্ত করা উচিৎ নয়, এ সম্পর্কে দৃঢ় মত পোষণ করে ভারত ও ভিয়েতনাম। এই পরিস্থিতিতে সন্ত্রাসবাদএবং তার মদতদাতাদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে আহ্বান জানানো হয় বিশ্বের সবক’টি দেশেরকাছে। সন্ত্রাস দমনে যে যুক্তভাবে সবক’টি দেশেরই এগিয়ে আসা উচিৎ একথাও বিশেষ জোরেরসঙ্গে উচ্চারিত হয় দ্বিপাক্ষিক আলোচনা বৈঠকে। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস সম্পর্কে একটিসুসংবদ্ধ আলোচনা বৈঠক ও প্রস্তাব গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার দিকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করেভারত ও ভিয়েতনাম।

অর্থনৈতিকসম্পর্ক

দু’পক্ষইস্বীকার করে যে এক বলিষ্ঠতর বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা গড়ে তোলা দু’দেশেরই একটিকৌশলগত উদ্দেশ্য। শুধু তাই নয়, দু’দেশের কৌশলগত অংশীদারিত্বের তা একটি বিশেষস্তম্ভও। গত দু’বছরে ভারত ও ভিয়েতনামের মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেনের মাত্রা যেভাবেবৃদ্ধি পেয়ে চলেছে, তাতে সন্তোষ প্রকাশ করেন ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট এবং ভারতেরপ্রধানমন্ত্রী। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের মাত্রাকে আরও প্রসার ও বৈচিত্র্যমুখী করেতোলার উদ্দেশ্যে সম্ভাব্য সমস্তরকম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার অনুকূলে মত প্রকাশকরেন তাঁরা। আগামী ২০২০ সালের মধ্যে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাণিজ্যলক্ষ্যমাত্রা পূরণে উদ্যোগী হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকেই তাঁরা পরামর্শ দেন।এ বছর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হ্যানয়ে বাণিজ্য সম্পর্কিত যৌথ সাব-কমিশনের পরবর্তী বৈঠকআয়োজনের প্রস্তাবে সায় দেন দুই নেতাই।

হাইড্রোকার্বন,বিদ্যুৎ উৎপাদন, পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি, শক্তিক্ষেত্র, পরিবেশ ও জ্বালানি সংরক্ষণ,পরিকাঠামো, বস্ত্রশিল্প, পাদুকা শিল্প, ওষুধ উৎপাদন, মেশিন টুল্‌স, কৃষি ও কৃষিজাতপণ্য, পর্যটন, রাসায়নিক, তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি এবং অন্যান্য পরিষেবাসম্পর্কিত শিল্পক্ষেত্রগুলিতে নতুন নতুন বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্ভাবনার প্রসারে দু’দেশেরবাণিজ্য কর্তাদের উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান ভারত ও ভিয়েতনামের নেতৃদ্বয়। এছাড়াও,কৃষিপণ্যের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রয়োগকেআরও নিবিড়তর করে তোলার ওপরও জোর দেন তাঁরা।

‘মেক ইনইন্ডিয়া’ কর্মসূচির আওতায় ভারতে বিনিয়োগ-বান্ধব যে পরিবেশ ও পরিস্থিতির সৃষ্টিহয়েছে, তার সুযোগ গ্রহণ করার জন্য ভিয়েতনামের শিল্প সংস্থাগুলিকে আহ্বান জানানশ্রী নরেন্দ্র মোদী। অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট ওয়াং, ভিয়েতনামে বিনিয়োগের প্রসারে আমন্ত্রণজানান ভারতের শিল্পপতিদের। বাণিজ্যিক কাজকর্ম সহজতর করে তোলার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীমোদীর কর্মপ্রচেষ্টার ভূয়সী প্রশংসাও করেন তিনি।

উন্নয়নসহযোগিতা

ভিয়েতনামকেদীর্ঘদিন ধরে ভারত যেভাবে অনুদান ও ঋণ সহায়তার প্রসার ঘটিয়ে আসছে, সেজন্য এই দেশেরভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি। ভিয়েতনামের ছাত্রছাত্রী, গবেষক এবং শিক্ষাক্ষেত্রেরপেশাদার কর্মী ও সরকারি আধিকারিকদের বৃত্তিদানের মাত্রা ভারত যেভাবে আরও উন্নীতকরেছে, তাতে ভারতের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন তিনি। বিশেষত, ভারতেরপ্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা কর্মসূচি, মেকং-গঙ্গা সহযোগিতা কাঠামো এবংঅন্যান্য প্রকল্পগুলির মাধ্যমে যেভাবে এই সহযোগিতার প্রসার ঘটেছে, তার সপ্রশংসউল্লেখ করেন ভিয়েতনামের রাষ্ট্রনেতা। এ বছর আসিয়ান-ভারত স্মারক শীর্ষ সম্মেলনেবিভিন্ন দেশকে গ্রামীণ সংযোগ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রসারে সহযোগিতাবদ্ধ হওয়ার যেআহ্বান জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী, তার বিশেষ প্রশংসাও করেন তিনি।

জ্বালানিক্ষেত্রে সহযোগিতা

তেল ও গ্যাসঅনুসন্ধান, তাপবিদ্যুৎ ও জলবিদ্যুৎ উৎপাদন এবং শক্তি ও পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানিক্ষেত্রে দু’দেশের সহযোগিতা যে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রসার লাভ করেছে একথা স্বীকারকরেন দুই রাষ্ট্র নেতাই। ভিয়েতনামে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান প্রচেষ্টাকে আরও জোরদারকরে তুলতে ভারতের বাণিজ্য কর্তাদের উদ্দেশ্যে সাদর আহ্বান জানান প্রেসিডেন্ট ত্রাণদাই কোয়াং। তৃতীয় দেশগুলিতে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান প্রকল্পের ক্ষেত্রে সহযোগিতাপ্রসারের জন্য স্বাক্ষরিত চুক্তিটি যথাযথভাবে অনুসরণ করার জন্য আহ্বান জানান দুইনেতাই। ভিয়েতনামে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে যে সমস্ত সুযোগ-সুবিধার প্রসারঘটানো হয়েছে তা সদ্ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট ভারতীয় শিল্পপতিদের কাছে আহ্বান জানানভিয়েতনামের রাষ্ট্রপ্রধান। তাঁর দেশের শক্তি ও পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি সংরক্ষণপ্রকল্পগুলিতে ভারতীয় সংস্থাগুলির বিনিয়োগকে স্বাগত জানান তিনি। এছাড়াও,আন্তর্জাতিক সৌর সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষরদানের বিষয়টি বিবেচনার জন্য ভারতের পক্ষথেকে যে আবেদন জানানো হয়েছে, তার কথাও উল্লেখ করা হয় এদিনের আলোচনা বৈঠকে।

দু’দেশেরশিক্ষা, সংস্কৃতি এবং জনসাধারণের মধ্যে সফর বিনিময় কর্মসূচি

সংস্কৃতি ও পর্যটনেরপ্রসার এবং দু’দেশের জনসাধারণের পারস্পরিক সফরসূচিতে অংশগ্রহণের ওপর বিশেষ জোরদেওয়া হয় দু’দেশের প্রতিনিধিদলের এই আলোচনা বৈঠকে। এজন্য সহযোগিতার বাতাবরণকে আরওনিবিড় করে তোলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন দুই রাষ্ট্রনেতা। এছাড়াও, দু’দেশের মধ্যেপুরাতত্ত্ব, সংরক্ষণ ও সংগ্রহশালা সম্পর্কিত যে ঐতিহাসিক সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে,তাকে আরও গভীরে নিয়ে যাওয়ার অনুকূলেও মত পোষণ করেন তাঁরা। ভারতে ভিয়েতনামের একটিসাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তোলার যে প্রস্তাব করা হয়েছে ঐ দেশের পক্ষ থেকে, তাকেআন্তরিকভাবে স্বাগত জানায় ভারত।

ভিয়েতনামে ইউনেস্কোবিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য কেন্দ্রটির সংরক্ষণ এবং সেটিকে নতুনভাবে গড়ে তোলার জন্য যেপ্রকল্পটি রয়েছে, তার সফল রূপায়ণ প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন দুই নেতাই।ভিয়েতনামেবিভিন্ন ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পুনরুদ্ধার ও সংস্করণ প্রচেষ্টায় ভারতেরআর্থিক সহযোগিতা প্রস্তাবকে স্বাগত জানায় ভিয়েতনাম। ঐ দেশেরফু তো, বিন ফুক এবংঅন্যান্য প্রদেশে ৫০০ জন ভিয়েতনাম নাগরিকের কাছেজয়পুর ফুট-এর মতো কৃত্রিম অঙ্গপৌঁছে দেওয়ার জন্য ভারত সরকার এবং ভগবান মহাবীর বিকলাঙ্গ সহায়তা সমিতি যেপুনর্বাসন কর্মসূচি রূপায়িত করছে, সেজন্য ভিয়েতনামের পক্ষ থেকে ভারতকে আন্তরিকধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানো হয়।

সংযোগ ওযোগাযোগ

ভারতেরসঙ্গে ভিয়েতনাম এবং আসিয়ানভুক্ত দেশগুলির সঙ্গে ভারতের বলিষ্ঠতর সংযোগ ও যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে দুই পক্ষই। ভারত, মায়ানমার,থাইল্যান্ড ত্রিপাক্ষিক মহাসড়ক নির্মাণ প্রকল্পের মাধ্যমে আঞ্চলিক পর্যায়ে যেসংযোগ ও যোগাযোগ প্রসারের চেষ্টা করা হয়েছে, সে কথারও উল্লেখ করা হয় প্রতিনিধিপর্যায়ের আলোচনা বৈঠকে। আকাশপথে নয়াদিল্লির সঙ্গে হো চি মিন সিটির সরাসরি যোগাযোগস্থাপনের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তারও ভূয়সী প্রশংসা করেন দুই রাষ্ট্রনেতা।

আঞ্চলিকসহযোগিতা

এশিয়ারআঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি সহ দ্বিপাক্ষিক এবং আন্তর্জাতিক বিষয়গুলিতে সহমতপ্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং প্রেসিডেন্ট ত্রাণ দাই কোয়াং। এক শান্তিপূর্ণও সমৃদ্ধ ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল গড়ে তোলার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেনতাঁরা। দুই রাষ্ট্রনেতার মতে, সার্বভৌমত্ব ও আন্তর্জাতিক নিয়ম-নীতি, আকাশ ওসমুদ্রপথে যান চলাচলের স্বাধীনতা, নিরন্তর উন্নয়ন প্রচেষ্টা এবং ন্যায়সঙ্গতভাবেউদার বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতাকে সমর্থন জানানো হবে এই শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধঅঞ্চলে।

দুই নেতাইস্বীকার করেন যে ধরনের এক মুক্ত, স্বচ্ছ, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং নিয়ম-নীতি পরিচালিতআঞ্চলিক কাঠামো গড়ে তোলা এবং আসিয়ানভুক্ত দেশগুলির সঙ্গে সহযোগিতা সম্পর্ককেনিবিড়তর করে তোলার ক্ষেত্রে ভারত ও ভিয়েতনাম এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেপারে। ২০১৮-র জানুয়ারিতে আসিয়ান-ভারত স্মারক শীর্ষ সম্মেলনের সফল সমাপ্তিতে সন্তোষপ্রকাশ করেন তাঁরা। ২০১৫-১৮ – এই সময়কালে একটি সমন্বয় রক্ষাকারী দেশ হিসেবেভিয়েতনামের বিশেষ অবদানের কথাও স্বীকার করে নেওয়া হয় দ্বিপাক্ষিক আলোচনা বৈঠকে। আসিয়ান-ভারতকৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্কের প্রসারে দিল্লি ঘোষণার মধ্যে যে প্রস্তাবগুলির কথাউল্লেখ রয়েছে, তার বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের অনুকূলেও মত প্রকাশ করেদুটি দেশ।

অন্যান্যক্ষেত্রে সহযোগিতা

আঞ্চলিক তথাআন্তর্জাতিক মঞ্চগুলিতে ভারত ও ভিয়েতনামের মধ্যে সহযোগিতা ও সমন্বয়ের অবস্থানেরসপ্রশংস উল্লেখ করা হয় দ্বিপাক্ষিক এই আলোচনা বৈঠকে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তাপরিষদের অস্থায়ী সদস্য পদে দু’দেশের আবেদনকে পারস্পরিকভাবে সমর্থন জানানোর সিদ্ধান্তেরকথাও পুনরুচ্চারিত হয় এই বৈঠকে। অন্যদিকে, নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কার ও পুনর্গঠনপ্রক্রিয়ায় ভারতের স্থায়ী সদস্য পদের আবেদনকে ভিয়েতনাম নিরন্তরভাবে সমর্থন জানিয়েযাবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়।

ভারত-প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চল তথা বৃহত্তর বিশ্বে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের স্বার্থে ভারতও ভিয়েতনাম পরস্পরের সঙ্কল্প ও উন্নয়ন সহযোগিতার অঙ্গীকারের বিষয়টি পুনর্ব্যক্তকরে। দক্ষিণ চিন সমুদ্রে নৌ চলাচলের স্বাধীনতা এবং আকাশপথে বিমান পরিবহণেরবিষয়গুলিও আলোচিত হয় এই বৈঠকে।

নিরন্তরউন্নয়নের লক্ষ্যে আগামী ২০৩০ সাল পর্যন্ত এক সুসংবদ্ধ কর্মসূচি গ্রহণের বিষয়টিকেস্বাগত জানান দুই বিশ্ব নেতাই। এর লক্ষ্য পূরণে দুটি দেশই যে অঙ্গীকারবদ্ধ, সেকথাওবিশেষ জোরের সঙ্গে ঘোষণা করা হয়।

তাঁর ভারতসফরকালে যেভাবে আন্তরিক অভ্যর্থনা এবং আতিথ্য তিনি লাভ করেছেন, সেজন্য রাষ্ট্রপতিকোবিন্দ এবং ভারতের মৈত্রী প্রিয় জনসাধারণকে ধন্যবাদ জানান প্রেসিডেন্ট ত্রাণ দাইকোয়াং। রাষ্ট্রপতি কোবিন্দকে তিনি সুবিধাজনক কোন এক সময়ে ভিয়েতনাম সফরের আমন্ত্রণজানালে তা সানন্দে গ্রহণ করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি।

 

Explore More
৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪

জনপ্রিয় ভাষণ

৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪
Annual malaria cases at 2 mn in 2023, down 97% since 1947: Health ministry

Media Coverage

Annual malaria cases at 2 mn in 2023, down 97% since 1947: Health ministry
NM on the go

Nm on the go

Always be the first to hear from the PM. Get the App Now!
...
Prime Minister condoles passing away of former Prime Minister Dr. Manmohan Singh
December 26, 2024
India mourns the loss of one of its most distinguished leaders, Dr. Manmohan Singh Ji: PM
He served in various government positions as well, including as Finance Minister, leaving a strong imprint on our economic policy over the years: PM
As our Prime Minister, he made extensive efforts to improve people’s lives: PM

The Prime Minister, Shri Narendra Modi has condoled the passing away of former Prime Minister, Dr. Manmohan Singh. "India mourns the loss of one of its most distinguished leaders, Dr. Manmohan Singh Ji," Shri Modi stated. Prime Minister, Shri Narendra Modi remarked that Dr. Manmohan Singh rose from humble origins to become a respected economist. As our Prime Minister, Dr. Manmohan Singh made extensive efforts to improve people’s lives.

The Prime Minister posted on X:

India mourns the loss of one of its most distinguished leaders, Dr. Manmohan Singh Ji. Rising from humble origins, he rose to become a respected economist. He served in various government positions as well, including as Finance Minister, leaving a strong imprint on our economic policy over the years. His interventions in Parliament were also insightful. As our Prime Minister, he made extensive efforts to improve people’s lives.

“Dr. Manmohan Singh Ji and I interacted regularly when he was PM and I was the CM of Gujarat. We would have extensive deliberations on various subjects relating to governance. His wisdom and humility were always visible.

In this hour of grief, my thoughts are with the family of Dr. Manmohan Singh Ji, his friends and countless admirers. Om Shanti."