প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে স্পেন সরকারের প্রেসিডেন্ট শ্রী পেড্রো সাঞ্চেজ ২৮ – ২৯ অক্টোবর। ২০২৪ তারিখে ভারত সফর করেন। প্রেসিডেন্ট পেড্রোর এটি ছিল প্রথম ভারত সফর এবং ১৮ বছর পর এই প্রথম স্পেনের কোনও প্রেসিডেন্ট ভারত সফরে এলেন। তাঁর সঙ্গে এসেছিলেন স্পেনের পরিবহণ ও সাসটেনেবল মোবিলিটি মন্ত্রী, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী এবং এক উচ্চ পর্যায়ের সরকারি ও বাণিজ্যিক প্রতিনিধিদল।
উভয় নেতাই বলেন, এই সফর বিভিন্ন ক্ষেত্রে দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির এক নতুন যুগের সূচনা করবে এবং উভয় দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে আরও গতি আনবে। রাজনৈতিক, আর্থিক, সুরক্ষা, প্রতিরক্ষা, মানুষে মানুষে পারস্পরিক যোগাযোগ এবং সাংস্কৃতিক সহযোগিতা সহ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সব ক্ষেত্রে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের নির্দেশ দেন দুই রাষ্ট্রনেতা।
ভদোদরায় প্রেসিডেন্ট সাঞ্চেজের সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তিনি মুম্বই সফরও করেন এবং সেখানকার প্রথমসারির ব্যবসায়ী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও ভারতীয় সিনেমা জগতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় মিলিত হন।
প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং প্রেসিডেন্ট সাঞ্চেজ যৌথভাবে ভদোদরায় এয়ারবাস স্পেন এবং টাটা অ্যাডভান্সড্ সিস্টেমস্ লিমিটেড – এর সি-২৯৫ এয়ারক্র্যাফট্ - এর ফাইনাল অ্যাসেম্বলি লাইন পয়েন্টের উদ্বোধন করেন। এই প্ল্যান্টে ২০২৬ সালে প্রথম ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ সি-২৯৫ এয়ারক্র্যাফট্ তৈরি করা হবে। ভারতে তৈরি হবে ৪০টি এয়ারক্র্যাফট্ এবং ১৬টি এয়ারক্র্যাফট্ সরবরাহ করবে এয়ারবাস স্পেন। ইতিমধ্যে ভারতীয় বায়ুসেনাকে ৬টি এয়ারক্র্যাফট্ সরবরাহও করা হয়েছে।
রাজনৈতিক, প্রতিরক্ষা ও সুরক্ষা সহযোগিতা:
১) দুই নেতা উভয় দেশের উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পর্যালোচনা করেন এবং গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, আইনের শাসন বিশ্ব অর্থনীতিতে সমতা, আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে দুই দেশের সম্পর্কের ভিত্তি হিসেবে চিহ্নিত করেন।
২) দুই দেশের সম্পর্কে গতি আনার ক্ষেত্রে নিয়মিত উচ্চ পর্যায়ের আলাপ-আলোচনার উপর জোর দেন উভয় নেতা। তাঁরা বলেন, বিদেশ, অর্থনীতি, বাণিজ্য এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রক বর্তমানে চালু থাকা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। দুই পক্ষের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক/সংস্থার মধ্যে নিয়মিত দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পাশাপাশি, সাইবার সুরক্ষা, বাণিজ্য ও আর্থিক বিষয়সমূহ, সংস্কৃতি, পর্যটন, শিক্ষা ও মানুষে মানুষে যোগাযোগের মতো ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতাকে সম্প্রসারিত করার উপর গুরুত্ব দেন তাঁরা।
৩) প্রতিরক্ষা শিল্পে দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে উভয় নেতাই সি-২৯৫ এয়ারক্র্যাফট্ প্রকল্পকে প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করেন। প্রতিরক্ষা শিল্পের মতো অন্যান্য ক্ষেত্রেও একই ধরনের যৌথ প্রকল্প গড়ে তোলার উপর জোর দেন তাঁরা।
আর্থিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা:
৪) প্রধানমন্ত্রী মোদী ও প্রেসিডেন্ট সাঞ্চেজ দু’জনই দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অংশীদারিত্বে ইতিবাচক অগ্রগতিকে স্বাগত জানান এবং বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দু’দেশের মধ্যে শক্তিশালী বন্ধন গড়ে তোলার ডাক দেন।
৫) স্পেনের অর্থ ব্যবস্থার অগ্রগতি ও ধারাবাহিকতার জন্য প্রেসিডেন্ট সাঞ্চেজকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী মোদী। অন্যদিকে, ভারতের দ্রুত আর্থিক বিকাশের জন্য মোদীকেও অভিনন্দন জানান সাঞ্চেজ। সেইসঙ্গে, বাণিজ্য-বান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের প্রশংসা করেন তিনি। বর্তমানে ভারতে ২৩০টির মতো স্পেনের সংস্থা রয়েছে। এগুলির মাধ্যমে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগে স্পেনের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার করেন প্রেসিডেন্ট সাঞ্চেজ।
৬) অচিরাচরিত, পরমাণু এবং স্মার্ট গ্রিডের মতো বিদ্যুৎ শক্তি, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও স্বাস্থ্য পরিষেবা, ট্রেন, সড়ক, বন্দর সহ গাড়ি ও পরিবহণ পরিকাঠামো এবং পরিবহণ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে স্পেনের সংস্থাগুলির দক্ষতাকে কাজে লাগানোর উপর জোর দেন দুই নেতা। অন্যদিকে তথ্য প্রযুক্তি, ওষুধ, গাড়ি ও গাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরির ক্ষেত্রে স্পেনের অর্থনীতিতে ভারতীয় সংস্থাগুলির ইতিবাচক অবদানের কথা স্বীকার করেন স্পেনের প্রেসিডেন্ট।
৭) দুই নেতাই ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত ভারত – স্পেন ‘জয়েন্ট কমিশন ফর ইকনোমিক কো-অপারেশন (জেসিইসি)’ – এর ১২তম বৈঠকের ফলাফল পর্যালোচনা করেন এবং আগামী বছরের শুরুতে স্পেনে জেসিইসি-র পরবর্তী বৈঠকের আয়োজন নিয়ে একমত হন।
৮) দুই নেতাই ২৯ অক্টোবর মুম্বইয়ে অনুষ্ঠিত ভারত – স্পেন সিইও ফোরামের দ্বিতীয় বৈঠক এবং ভারত – স্পেন বাণিজ্য শীর্ষ বৈঠককে স্বাগত জানান এবং দু’দেশের বাণিজ্য ও লগ্নি সহযোগিতার ক্ষেত্রে এর গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন।
৯) দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে উদ্ভাবন ও স্টার্টআপ পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা স্বীকার করেন উভয় নেতা। সেইসঙ্গে, পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন নতুন সম্ভাবনার পথ খুঁজে বের করার উপর জোর দেন তাঁরা।
১০) রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে মউ স্বাক্ষর এবং সহযোগিতার চুক্তি স্বাক্ষর নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন দুই রাষ্ট্রনেতা।
১১) আর্থিক ও বাণিজ্যিক সম্ভাবনাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে পর্যটন ক্ষেত্রের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন দুই নেতা। সেইসঙ্গে, দুই দেশের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধির উপর জোর দেন তাঁরা। ভারত ও স্পেনের মধ্যে সরাসরি উড়ান পরিষেবা চালু করা নিয়ে বিভিন্ন বিমান সংস্থার আগ্রহকে স্বাগত জানিয়েছেন দুই নেতা।
২০২৬ সাল ভারত – স্পেন সংস্কৃতি, পর্যটন এবং এআই বর্ষ হিসেবে চিহ্নিত:
১২) ভারত ও স্পেনের মধ্যে গভীর সম্পর্ক এবং দুই দেশের মানুষের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বের কথা মাথায় রেখে প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং প্রেসিডেন্ট সাঞ্চেজ ২০২৬ সালকে ভারত – স্পেন সংস্কৃতি, পর্যটন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বর্ষ হিসেবে চিহ্নিত করার ব্যাপারে একমত হয়েছেন।
১৩) ঐ বছর সংগ্রহালয়, শিল্প, মেলা, সিনেমা, উৎসব, সাহিত্য ও বিভিন্ন ধরনের আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে দুই দেশের সাংস্কৃতিক উপস্থিতিকে তুলে ধরতে সর্বাত্মক উদ্যোগ নেবে উভয় পক্ষ।
১৪) পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ানো, পারস্পরিক লগ্নিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং গ্রাম ও শহরাঞ্চলে পর্যটনের বিকাশে আতিথেয়তা, স্থাপত্যবিদ্যা, রন্ধন শিল্প ও বিপণনে বিশেষ নজর দেবে উভয় দেশ।
১৫) জি-২০ নতুন দিল্লি ঘোষণার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সকলের কল্যাণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর ইতিবাচক প্রয়োগে ভারত ও স্পেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। ঐ বছর উভয় দেশই এআই – এর ইতিবাচক ব্যবহার এবং ফলপ্রসূ ও কার্যকর অর্থনীতির ক্ষেত্রে এআই – এর বাস্তবসম্মত প্রয়োগের লক্ষ্যে দুই দেশ কাজ করবে।
১৬) এই উদ্যোগের গুরত্ব বোঝাতে দুই নেতা সংশ্লিষ্ট সবপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
সাংস্কৃতিক ও মানুষে মানুষে বন্ধন:
১৭) দুই দেশের মানুষকে কাছাকাছি আনতে সাংস্কৃতিক বন্ধনের কথা স্বীকার করেন দুই নেতা। সেইসঙ্গে, ভারত ও স্পেনের সমৃদ্ধ এবং বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের কথা তুলে ধরেন তাঁরা। দুই দেশের দীর্ঘস্থায়ী সাংস্কৃতিক বিনিময়ের প্রশংসা করেন দুই নেতা। সঙ্গীত, নৃত্য, নাটক, সাহিত্য, সংগ্রহশালা এবং উৎসবে দ্বিপাক্ষিক বিনিময় বাড়াতে সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচিতে স্বাক্ষরকে স্বাগত জানান উভয় নেতা।
১৮) দুই দেশের মানুষের মধ্যে পরস্পরের সংস্কৃতি ও ভাষাচর্চার প্রতি আগ্রহ যেভাবে বাড়ছে, তার প্রশংসা করেছেন দুই নেতা। ভারতে জনপ্রিয় বিদেশি ভাষাগুলির মধ্যে অন্যতম হ’ল স্পেনের ভাষা।
১৯) ভাল্লাডোলিড বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দি ও ভারতের চর্চার জন্য আইসিসিআর – এর চেয়ার স্থাপনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন দুই নেতা। জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০২০ রূপায়ণের ফলে ভারতে শিক্ষা ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। ভারতের প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে স্পেনের প্রথমসারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলির শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে অংশীদারিত্বকে মজবুত করতে উৎসাহিত করে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
২০) মুম্বইয়ে স্পেন – ইন্ডিয়া কাউন্সিল ফেডারেশন এবং অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন – এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত চতুর্থ স্পেন – ভারত ফোরামের বৈঠকে মূল ভাষণ দেন স্পেনের প্রেসিডেন্ট। ভারত ও স্পেনের নাগরিক সমাজ, বিভিন্ন কোম্পানী, চিন্তাবিদ, প্রশাসন এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে একসূত্রে গাঁথার ক্ষেত্রে এই সংস্থার উল্লেখযোগ্য অবদানের কথা স্বীকার করেন দুই নেতা।
২১) স্পেনের মানুষকে উপহার হিসেবে আইসিসিআর – এর উদ্যোগে ভাল্লাডোলিডে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আবক্ষ মূর্তি প্রতিষ্ঠা এবং স্প্যানিশ ভাষায় গুরুদেবের সৃষ্টির অনুবাদকে স্বাগত জানান দুই নেতা।
২২) চলচ্চিত্র এবং দৃশ্য-শ্রাব্য ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সহযোগিতা বৃদ্ধি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন দুই নেতা। ভারত ও স্পেনের চলচ্চিত্র ও দৃশ্য-শ্রাব্য শিল্পের ব্যাপকতার কথা স্বীকার করে দুই নেতা এই দুটি ক্ষেত্রে যৌথ সহযোগিতাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বার্তা দেন। যৌথভাবে সিনেমা নির্মাণের উপরও জোর দেন তাঁরা।
২৩) দু’দেশের মানুষের মধ্যে বন্ধন ও দূতাবাস পরিষেবার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে স্পেনের বার্সেলোনায় ভারতের প্রথম কনস্যুলেট জেনারেল এবং বেঙ্গালুরুতে স্পেনের কনস্যুলেট জেনারেল চালু হওয়ায় দুই নেতা সন্তোষ প্রকাশ করেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ভারতের সম্পর্ক:
২৪) অবাধ বাণিজ্য চুক্তি, বিনিয়োগ রক্ষা চুক্তি এবং ভৌগোলিক সূচক চুক্তিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং ভারত – ইউরোপীয় ইউনিয়ম কৌশলগত অংশীদারিত্বকে মজবুত করার ক্ষেত্রে দুই নেতা ফের তাঁদের অঙ্গীকারের কথা ব্যক্ত করেন।
২৫) সহযোগী দেশগুলির মধ্যে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, প্রযুক্তি, বিদ্যুৎ, লজিস্টিকস্, বন্দর ও পরিকাঠামো উন্নয়নের মতো ক্ষেত্রে নতুন নতুন সহযোগিতার পথ অন্বেষণের উপর গুরুত্ব দেন দুই নেতা।
আন্তর্জাতিক বিষয়সমূহ:
২৬) প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং প্রেসিডেন্ট সাঞ্চেজ ইউক্রেনের যুদ্ধ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং আন্তর্জাতিক আইন ও রাষ্ট্রসংঘের সনদ মেনে সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখন্ডতা বজায় রেখে দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন। এই সংঘর্ষের অবসানে আলোচনা প্রক্রিয়ায় সহায়তার লক্ষ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ বজায় রাখতে একমত হন দুই নেতা।
২৭) মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি ও স্থায়িত্ব রক্ষার ব্যাপারে তাঁরা মতবিনিময় করেন এবং পশ্চিম এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তাঁরা। আলাপ-আলোচনা ও কূটনৈতিক পথে সমস্ত বিতর্কের নিষ্পত্তির আবেদন জানান তাঁরা। অবিলম্বে সমস্ত পণবন্দির মুক্তি, যুদ্ধ বিরতি এবং গাজায় নিরাপদে মানবিক সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার আর্জি জানান উভয় নেতা। সেইসঙ্গে, সাধারণ নাগরিকদের জীবন রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন তাঁরা।
২৮) লেবাননে হিংসা বাড়তে থাকায় তাঁরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ইউএনআইএফআইএল – এর উপর আক্রমণের নিন্দা করে বলেন, শান্তি রক্ষা বাহিনীর সুরক্ষা ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ।
২৯) অবাধ, খোলামেলা, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সমৃদ্ধ ভারত – প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল গড়ে তুলতে আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে চলা, পারস্পরিক সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা এবং বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধানের উপর জোর দেন তাঁরা। ভারত – প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সংরক্ষণ, সুরক্ষা এবং সামুদ্রিক এলাকা উন্নয়নে স্পেনকে সামিল হওয়ার আর্জি জানিয়েছে ভারত।
৩০) দুই নেতা বিনিয়োগ ও আঞ্চলিক বিকাশে সহযোগিতার ক্ষেত্রে ব্যাপক সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন। সেইসঙ্গে, ভারত ও লাতিন আমেরিকার মধ্যে ঐতিহাসিক, আর্থিক ও সাংস্কৃতিক যোগসূত্রের প্রসঙ্গ উঠে আসে তাঁদের আলোচনায়।
আন্তর্জাতিক এবং বহুস্তরীয় সহযোগিতা:
৩১) রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এবং অন্যান্য বহুস্তরীয় মঞ্চ সহ রাষ্ট্রসংঘের মধ্যে সমন্বয় ও সহযোগিতা বাড়ানোর ব্যাপারে মতৈক্যে পৌঁছেছেন উভয় নেতা। বিশ্ব শান্তি এবং উন্নয়নের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি মেনে চলার উপর জোর দেন তাঁরা। নিরাপত্তা পরিষদ সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাকে আরও প্রতিনিধিত্বমূলক, সক্রিয়, গণতান্ত্রিক, দায়বদ্ধতামূলক এবং স্বচ্ছ করে তোলার ক্ষেত্রে বহুস্তরীয় সহযোগিতার উপর গুরুত্ব দেন তাঁরা।
৩২) দুই নেতা সেভিলায় (স্পেন) আর্থিক উন্নয়ন সংক্রান্ত চতুর্থ আন্তর্জাতিক সম্মেলনের অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করেন।
৩৩) প্রেসিডেন্ট সাঞ্চেজ জি-২০’র সভাপতি হিসেবে সাফল্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদীকে অভিনন্দন জানান। অন্যদিকে, জি-২০’তে স্থায়ী আমন্ত্রিত দেশ হিসেবে স্পেনের ভূমিকার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
৩৪) বিদ্যুৎ শক্তি এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় পারস্পরিক সহযোগিতাকে মজবুত করার ব্যাপারে দুই নেতা একমত হন। অচিরাচরিত শক্তির ক্ষেত্রে মউ স্বাক্ষর নিয়ে দুই নেতা সন্তোষ প্রকাশ করেন। আন্তর্জাতিক সৌর জোটে স্পেনকে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী মোদী। নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রার আগেই অচিরাচরিত শক্তির ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনের জন্য ভারতের প্রশংসা করেন প্রেসিডেন্ট সাঞ্চেজ।
৩৫) ইন্টারন্যাশনাল ড্রট রেজিলিয়েন্স অ্যালায়েন্স (আইডিআরএ) – এ যোগদানের জন্য ভারতকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে স্পেন। খরা মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি এবং পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ২০২২ সালে এটি চালু করা হয়েছিল।
৩৬) দুই দেশ সীমান্ত সন্ত্রাস সহ যে কোনও ধরনের সন্ত্রাসবাদ ও হিংসার নিন্দা করেছে। আন্তর্জাতিক শান্তি ও স্থায়িত্বের ক্ষেত্রে সন্ত্রাসবাদকে গুরুতর বিপদ হিসেবে চিহ্নিত করেছে দুই দেশ। সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মে জঙ্গিরা যাতে কোনও ভূখন্ড ব্যবহার করতে না পারে, সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আর্জি জানিয়েছেন দুই নেতা।
৩৭) উষ্ণ আতিথেয়তা এবং অভ্যর্থনার জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট সাঞ্চেজ এবং অদূর ভবিষ্যতে মোদীকে স্পেন সফরে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তিনি।