ভারত-রাশিয়া : পরিবর্তনশীল বিশ্বে এক স্থায়ী অংশীদারিত্ব

 

1.      চৌঠা এবং ৫ই অক্টোবর নতুন দিল্লীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী এবং রুশ ফেডারেশনের রাষ্ট্রপতি শ্রী ভ্লাদিমির পুতিন দু’দেশের মধ্যে ১৯তম বার্ষিক দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ বৈঠকে মিলিত হন। ভারত এবং রাশিয়ার মধ্যে সহযোগিতা ১৯৭১ সালের শান্তি, মৈত্রী এবং সহযোগিতা চুক্তির দৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এছাড়া, ১৯৯৩ সালেও দু’দেশের মধ্যে মৈত্রী ও সহযোগিতা সংক্রান্ত একটি চুক্তি এবং ২০০০ সালে দু’দেশের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্ব বিষয়ে ঘোষণাপত্র ও ২০১০ সালে দু’দেশের মধ্যে অংশীদারিত্বকে বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত অংশীদারিত্বের স্তরে উন্নীত করার বিষয়ে যৌথ বিবৃতি দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কের ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে। ভারত এবং রাশিয়ার মধ্যে সহযোগিতার বিষয়টি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্প্রসারিত হয়েছে এবং রাজনৈতিক এবং কৌশলগত সহযোগিতা, সামরিক এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, অর্থনীতি, শক্তি, শিল্প, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সংস্কৃতি এবং মানবিক সহযোগিতার বিষয়টিও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

 

2.      ২০১৮-র ২১শে মে রাশিয়ার সোচিতে দু’দেশের মধ্যে যে ঘরোয়া শীর্ষ বৈঠক হয়েছিল, তার সমসাময়িক প্রাসঙ্গিকতা এবং তাৎপর্য বিষয়ে দুই দেশই উচ্চস্তরীয় মূল্যায়ন করে থাকে। এই শীর্ষ বৈঠক ছিল প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং রাষ্ট্রপতি পুতিনের মধ্যে গভীর আস্থা ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক কূটনীতির ক্ষেত্রে এক অনন্য আলাপচারিতা। এই বৈঠকে উভয় দেশের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা এবং পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে ঘন ঘন আলোচনা ও পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের বিভিন্ন প্রধান ইস্যুতে সহমত গড়ে তোলার লক্ষ্যে উভয় দেশের ইচ্ছাপ্রসূত উদ্যোগ। সোচি শীর্ষ বৈঠক ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে সহযোগিতা এবং আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে একটি বহু মেরুসম্পন্ন বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। উভয় দেশ নিয়মিত ভিত্তিতে এই ধরণের অনানুষ্ঠানিক বৈঠক এবং সর্বস্তরে কৌশলগত যোগাযোগ রক্ষা করে চলার বিষয়ে একমত হয়।

 

3.      ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে একটি বিশেষ এবং সুবিধাপ্রাপ্ত কৌশলগত অংশীদারিত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রে তাদের অঙ্গীকারের প্রতি পুনরায় দৃঢ় আস্থা ব্যক্ত করে। তারা ঘোষণা করে যে তাদের সম্পর্ক বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতার পক্ষে এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং বিশ্বের মধ্যে অন্যতম প্রধান শক্তি হিসাবে বিশ্বের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে যৌথ দায়িত্ব পালনে উভয় দেশের ভূমিকা বিশেষভাবে প্রশংসনীয়।

 

4.      উভয় দেশই গভীর আস্থার ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে থাকা সম্পর্ক এবং পারস্পরিক বিশ্বাস, শ্রদ্ধা এবং একে অপরের অবস্থান বিষয়ে গভীর সমঝোতা বিষয়ে তারা ঐকমত্য প্রকাশ করে। ভারত ও রাশিয়া বহু সাংস্কৃতিক, বহু ভাষিক এবং বহু ধর্মভিত্তিক সমাজ হিসেবে আধুনিক সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দু’দেশের সভ্যতাকেন্দ্রিক জ্ঞানকে কাজে লাগানোর বিষয়ে দৃঢ় আস্থা ব্যক্ত করে। উভয় দেশ আরও বেশি যোগাযোগ সম্পন্ন ও বৈচিত্র্যপূর্ণ বিশ্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে অবদান রাখার বিষয়ে তাদের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে।

 

5.      আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে উত্তেজনা কমানোর লক্ষ্যে কাজ করার জন্য বিশ্বের সমস্ত রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়ে উভয় দেশ সহিষ্ণুতা, সহযোগিতা, স্বচ্ছতা এবং আন্তঃরাষ্ট্রিক সম্পর্কে খোলামেলা দৃষ্টিভঙ্গিতে কাজ করার বিষয়ে ঐকমত্য প্রকাশ করেছে। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে দ্রুত পরিবেশ-বান্ধব সুষম অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা, দারিদ্র্য দূরীকরণ, রাষ্ট্রগুলির মধ্যে অসমতা কমানো এবং সব রাষ্ট্রের সমস্ত নাগরিকের জন্য ন্যূনতম স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যবস্থাকে উভয় দেশই চিহ্নিত করেছে। এইসব লক্ষ্য অর্জনে ভারত এবং রাশিয়া একে অপরের সঙ্গে সহযোগিতার শপথ গ্রহণ করেছে।

 

6.      উভয় পক্ষই দু’দেশের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধিতে সন্তোষ ব্যক্ত করেছে। উভয় দেশের মধ্যে মন্ত্রী পর্যায়ের ৫০টিরও বেশি সফর দু’দেশের সম্পর্কের মধ্যে এক নতুন গতি সঞ্চার করেছে। ২০১৭-১৮ বর্ষের মধ্যে উভয় দেশের বৈদেশিক বিষয় সংক্রান্ত আলোচনা প্রোটোকলের সফর রূপায়ণের প্রেক্ষিতে উভয় দেশ আরও পাঁচ বছরের জন্য (২০১৯ থেকে ২০২৩) এই আলোচনার সময়সীমা বাড়ানোর ব্যাপারে এবং একটি প্রোটোকল স্বাক্ষর করার বিষয়ে একমত হয়েছে। রাশিয়া সে দেশের একাটারিনবার্গ এবং আস্ত্রাখান’-এ ভারতের অবৈতনিক বাণিজ্য দূত নিয়োগের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত উভয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল এবং মানুষের মধ্যে আরও ভালো যোগাযোগ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলে মনে করা হচ্ছে।

 

7.      উভয় দেশ ২০১৭-র নভেম্বর মাসে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, মাদক চালান প্রতিরোধ, বিপর্যয় মোকাবিলা, উভয় দেশের মাদক নিয়ন্ত্রণ সংস্থার মধ্যে যৌথ কর্মপরিকল্পনা এবং ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও রুশ ফেডারেশনের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রকের মধ্যে সহযোগিতা সংক্রান্ত চুক্তিটিকে স্বাগত জানিয়েছে। ২০১৮-২০২০ পর্যন্ত এই চুক্তিটি কার্যকর থাকবে। ভারতের পক্ষ থেকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলার ক্ষেত্রে রাশিয়ার প্রযুক্তিগত কৃৎকৌশলের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। উভয় দেশই প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলার ক্ষেত্রে কর্মী প্রশিক্ষণ এবং জরুরিকালীন সহায়তার ব্যবস্থা গড়ে তোলার সম্ভাবনা বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে একমত হয়েছে।

 

8.      ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৭০তম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের সফল সমাপনের মধ্য দিয়ে উভয় দেশের মানুষের মধ্যে উৎসাহ এবং মানুষে মানুষে সম্পর্ক আরও সংহত হয়ে ওঠার বিষয়টি উভয় দেশ লক্ষ্য করেছে। ২০১৭-য় স্বাক্ষরিত চুক্তির ভিত্তিতে ২০১৭-২০১৯ সালের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচি রূপায়ণ বিষয়ে উভয় দেশই সন্তোষ ব্যক্ত করেছে। তারা ভারতে বার্ষিক রাশিয়া উৎসব এবং রাশিয়ায় বার্ষিক ভারত উৎসব আয়োজনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। বর্তমানে চালু যুব সফর বিনিময় কর্মসূচি, লেখকদের মধ্যে সফর বিনিময় কর্মসূচি এবং উভয় দেশের জাতীয় চলচ্চিত্র উৎসবে পারস্পরিক সহায়তাকেও উভয় দেশ স্বাগত জানিয়েছে। গত দু’বছরে উভয় দেশের মধ্যে পর্যটক যাতায়াতের হার বৃদ্ধিকেও উভয় পক্ষ স্বাগত জানিয়ে এই সদর্থক প্রবণতাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে একমত হয়েছে। ভারত ২০১৮-র ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ সফলভাবে আয়োজনের জন্য রাশিয়ার প্রশংসা করেছে। উভয় দেশ বেশ কয়েক দশক ধরে ভারত-রুশ সম্পর্কের উন্নয়নে ইনস্টিটিউট অফ ওরিয়েন্টাল স্টাডিজ ও রাশিয়া অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সের অবদানকে স্বীকৃতি জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী জানিয়েছেন যে এই ইনস্টিটিউট স্থাপনের ২০০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানকে সফল করে তুলতে ভারত বিশেষ অবদান রাখবে।

 

অর্থনীতি

9.      বাণিজ্য, অর্থনীতি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সাংস্কৃতিক সহযোগিতা বিষয়ক ভারত-রাশিয়া আন্তঃসরকারি কমিশনের যে বৈঠক ২০১৮-র ১৪ই সেপ্টেম্বর মস্কোয় অনুষ্ঠিত হয়েছে, উভয় দেশই তাকে স্বাগত জানিয়েছে। কমিশনের ২৩তম এই বৈঠকে যৌথ সভাপতিত্ব করেন রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী ইউরি আই বরিশভ এবং ভারতের বিদেশ মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ।

 

10.  উভয় দেশ ২০২৫ সালের মধ্যে তিন হাজার কোটি মার্কিন ডলার পারস্পরিক বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের অগ্রগতি পর্যালোচনা করেছে এবং এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের কাজ যথাযথভাবে এগিয়ে চলায় উভয় দেশ সন্তোষ ব্যক্ত করেছে। তারা উল্লেখ করেছে, ২০১৭ সালে দু’দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ২০ শতাংশেরও বেশি হারে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এই বাণিজ্যিক লেনদেনকে আরও বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে কাজ করার জন্য একমত পোষণ করেছে। উভয় দেশ নিজ নিজ দেশের জাতীয় মুদ্রায় দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেছে।

 

11.  ভারতের নীতি আয়োগ এবং রাশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়ন মন্ত্রকের মধ্যে কৌশলগত অর্থনৈতিক আলোচনার প্রথম বৈঠক ২০১৮-র শেষ দিকে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে বলে উভয় দেশ স্থির করেছে।

 

12.  উভয় দেশ ইউরেশিয়ান ইকনমিক ইউনিয়ন ও তার সদস্য রাষ্ট্রগুলি এবং ভারতের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে আলোচনা শুরু করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা এই আলোচনাকে ত্বরান্বিত করার উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়েও একমত হয়েছে।

 

13.  দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য অর্থনৈতিক সম্পর্কের উন্নয়ন এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সহযোগিতা সংক্রান্ত একটি যৌথ কৌশল স্থির করতে যৌথ সমীক্ষা চালানোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে এবং এই কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ভারতের পক্ষ থেকে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ফরেন ট্রেড এবং রাশিয়ার পক্ষ থেকে অল রাশিয়ান অ্যাকাডেমি অফ ফরেন ট্রেডকে মনোনীত করা হয়েছে।

 

14.  রুশ বিনিয়োগকারীরা যাতে ভারতে বিনিয়োগ করতে পারেন, সেই লক্ষ্যে ‘ইনভেস্ট ইন্ডিয়া’ নামে সম্মেলনের কাজে সন্তোষ ব্যক্ত করেছে এবং ভারতীয় কোম্পানিগুলি যাতে রাশিয়ায় বিনিয়োগ করতে পারে সেই লক্ষ্যে রাশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়ন মন্ত্রক কর্তৃক ‘সিঙ্গল উইন্ডো সার্ভিস’ চালু করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো হয়েছে।  

 

15.  ২০১৮-র ৪-৫ অক্টোবরে ১৯তম বার্ষিক শীর্ষ বৈঠকের পাশাপাশি নতুন দিল্লীতে ভারত-রুশ বাণিজ্যিক শীর্ষ বৈঠক সংগঠনের সিদ্ধান্তকে উভয় পক্ষই স্বাগত জানিয়েছে। এই বৈঠকে উভয় দেশের বড় বাণিজ্যিক প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করেছে এবং এর মধ্য দিয়ে বাণিজ্যিক লেনদেনের ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিষয়ে উভয় দেশের আগ্রহ প্রতিফলিত হয়েছে। উভয় দেশই বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করার বিষয়ে একমত হয়েছে।

 

16.  উভয় দেশই খনি, ধাতব উৎপাদন, বিদ্যুৎ, তেল ও গ্যাস, রেল, ওষুধপত্র, তথ্যপ্রযুক্তি, রাসায়নিক দ্রব্য, পরিকাঠামো, অটোমোবাইল, অসামরিক পরিবহণ, মহাকাশ, জাহাজ নির্মাণ এবং বিভিন্ন ধরণের যন্ত্রাংশ উৎপাদনের মতো অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিনিয়োগ প্রকল্প রূপায়ণের ক্ষেত্রে অগ্রগতি পর্যালোচনা করেছে। উভয় দেশই রাশিয়ায় অ্যাডভান্সড ফার্মা কোম্পানি কর্তৃক ওষুধ কারখানা স্থাপনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে রাশিয়া থেকে সার আমদানি বৃদ্ধির করার আগ্রহ বিষয়ে ঐ দেশকে জানানো হয়েছে। উভয় দেশই অ্যালুমিনিয়াম ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দিয়েছে।

 

17.  ক্ষুদ্র শিল্পক্ষেত্রে ভারত ও রাশিয়া জাতীয় সংস্থার মধ্যে সমঝোতা স্বাক্ষরকে উভয় দেশ স্বাগত জানিয়েছে।

 

18.  পরিকাঠামো উন্নয়নকে উভয় দেশের জাতীয় অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করে উভয় দেশই এই ক্ষেত্রটিতে সহযোগিতার বিপুল সুযোগ বিষয়ে একমত হয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে শিল্প করিডর উন্নয়নে রুশ কোম্পানিগুলিকে অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া, সড়ক এবং রেল পরিকাঠামো, ছোট শহর উন্নয়ন, ওয়াগন নির্মাণ এবং যৌথ উদ্যোগে একটি পরিবহণ কোম্পানি গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও ভারতের পক্ষ থেকে রুশ সংস্থাগুলিকে অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। রাশিয়ার পক্ষ থেকে শিল্প করিডর পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে ভারতকে উপগ্রহ-ভিত্তিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কর সংগ্রহের প্রযুক্তি প্রদানের কথা বলা হয়েছে। ভারতের রেল মন্ত্রক ট্রেনগুলির গতি বৃদ্ধির যে প্রকল্প গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক বিডিং-এর ক্ষেত্রে রাশিয়া অংশগ্রহণের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। উভয় পক্ষই পরিবহণ, কর্মী প্রশিক্ষণ এবং আন্তর্জাতিক পরিবহণ করিডর প্রকল্প রূপায়ণে প্রযুক্তিগত সহায়তার মতো ক্ষেত্রে সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। এইসব ক্ষেত্রে কাজের জন্য উভয় দেশই ভারতের ভদোদরার ন্যাশনাল রেল অ্যান্ড ট্রান্সপোর্টেশন ইনস্টিটিউট এবং রাশিয়ার ইউনিভার্সিটি অফ ট্রান্সপোর্টের মধ্যে সহযোগিতা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে।

 

19.  উভয় দেশই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উত্তর-দক্ষিণ পরিবহণ করিডর উন্নয়নের মাধ্যমে যোগাযোগ বৃদ্ধির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। তবে এই ক্ষেত্রে কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে সংশ্লিষ্ট দেশগুলির সীমাশুল্ক কর্তৃপক্ষের মধ্যে বকেয়া বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, রেল এবং সড়ক পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে, দ্বিপাক্ষিক পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে আর্থিক লেনদেনের উপযুক্ত ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে এবং অন্যান্য সহযোগী দেশগুলির সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে সমগ্র বিষয়টিকে চূড়ান্ত করতে হবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মস্কোয় ‘পরিবহণ সপ্তাহ-২০১৮’ অনুষ্ঠানের ফাঁকে ভারত, রাশিয়া এবং ইরানের মধ্যে ত্রিপাক্ষিক বৈঠককে উভয় দেশই স্বাগত জানিয়েছে। এই বৈঠকে ইরানের ভূখণ্ডের মধ্য দিয়ে ভারতীয় পণ্যদ্রব্য রাশিয়ায় পরিবহণের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে রাশিয়াকে আন্তর্জাতিক পণ্য পরিবহণ সংক্রান্ত সীমাশুল্ক চুক্তিতে ভারতের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। উভয় দেশ এ বিষয়ে একটি মন্ত্রী পর্যায়ের সমন্বয় বৈঠক আয়োজনের ব্যাপারে একমত হয়েছে।

 

20.  দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেনকে উৎসাহিত করতে উভয় দেশ, বাধ্যতামূলক পরিদর্শন / নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত যে সব বিষয় কোন পণ্যদ্রব্যের আমদানি বা রপ্তানির সময় চালাতে হয়, তাতে বিলম্ব এড়াতে উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়ে একমত হয়েছে।

 

21.  উভয় দেশ তাদের বাণিজ্য প্রদর্শনী এবং বাণিজ্য মেলার তালিকা বিনিময় ও রপ্তানি উন্নয়ন পরিষদ বা রপ্তানি সংক্রান্ত বিভিন্ন সংস্থার তালিকা বিনিময় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উভয় দেশের আমদানি বা রপ্তানিকারকরা যাতে সংশ্লিষ্ট পণ্যের বাণিজ্যিক লেনদেন বিষয়ে সব ধরণের বিস্তারিত খোঁজখবর এইসব মেলা, প্রদর্শনী বা আমদানি-রপ্তানি সংস্থার কাছ থেকে পেতে পারে, সেই লক্ষ্যেই এই সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হচ্ছে।

 

22.  ভারত এবং রাশিয়ার মধ্যে পণ্যদ্রব্য পরিবহণের সুবিধার্থে সীমাশুল্ক সংক্রান্ত নিয়মকানুনের সরলীকরণের লক্ষ্যে ‘গ্রিন করিডর’ প্রকল্প চালু করার বিষয়ে উভয় দেশই একমত হয়েছে। পারস্পরিক বাণিজ্যি লেনদেন বৃদ্ধির লক্ষ্যে এটি এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে উভয় দেশ একমত হয়েছে। এই প্রকল্পটির সূচনা হওয়ার পর, উভয় দেশের সীমাশুল্ক প্রশাসন এক্ষেত্রে সহযোগিতাকে আরও প্রসারিত করার উদ্যোগ নেবে বলে স্থির হয়েছে।

 

23.  উভয় দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য শিল্পোদ্যোগ এবং সরকারি সংস্থাগুলির মধ্যে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ আরও বৃদ্ধির লক্ষ্যে উভয় দেশ উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়ে একমত হয়েছে। এছাড়া, দুই দেশের বিভিন্ন প্রদেশের মধ্যে পৃথক পৃথক চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টিকেও উভয় দেশ স্বাগত জানিয়েছে। যেমন, অসম ও সাখালিন, হরিয়ানা এবং বাস্কোরতোস্তান, গোয়া এবং কালিনিনগ্রাদ, ওড়িশা এবং ইরকুট্‌স্ক, ভিশাখাপত্তনম এবং ব্লাদিভোস্তক-এর মধ্যে এই ধরণের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। সেন্ট পিটার্সবার্গে আয়োজিত আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ফোরাম, পূর্বাঞ্চলীয় অর্থনৈতিক ফোরাম এবং অংশীদারিত্ব শীর্ষ বৈঠকের মতো অনুষ্ঠানে আঞ্চলিক পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের অংশগ্রহণকে উভয় দেশই স্বাগত জানিয়েছে। এছাড়া, উভয় দেশ ভারত-রাশিয়া আন্তঃআঞ্চলিক ফোরামের বৈঠক আয়োজনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।

 

24.  উভয় দেশের মধ্যে প্রাকৃতিক সম্পদের সুদক্ষ এবং যথাযথ ব্যবহারের লক্ষ্যে যৌথ প্রকল্প গড়ে তোলা যায় কিনা, সে বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণের জন্য উভয় দেশ একমত হয়েছে। উপযুক্ত প্রযুক্তির প্রয়োগের মাধ্যমে অথচ একইসঙ্গে পরিবেশ-বান্ধব পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক সম্পদকে ব্যবহারের বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণে উভয় দেশ রাজি হয়েছে। উভয় দেশই কৃষিক্ষেত্রকে সহযোগিতার এক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতাগুলি দূর করা, উৎপাদন বৃদ্ধি করা এবং কৃষি পণ্যের বাণিজ্যিক লেনদেন বাড়ানোর বিষয়ে একমত হয়েছে।

 

25.  দুই দেশ হীরক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সহযোগিতার মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় সন্তোষ ব্যক্ত করেছে। বিশেষ করে, রাশিয়ার পিজেএসসি আলরোসা কোম্পানি কর্তৃক ভারতীয় সংস্থাগুলিকে অপরিশোধিত হীরক খণ্ড সরবরাহ বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি স্বাক্ষর, মুম্বাইয়ে আলরোসা কোম্পানির একটি অফিস খোলা, ভারতীয় বাজারে দু’দেশের হীরক ব্যবসায়িক সংস্থাগুলির সহযোগিতায় উৎপাদিত হীরকের বিপণন প্রভৃতির ক্ষেত্রে সহযোগিতাকে আরও বৃদ্ধি করার বিষয়ে একমত হয়েছে। রাশিয়ার দূরপ্রাচ্য অঞ্চলে ভারতীয় কোম্পানিগুলি কর্তৃক হীরক উৎপাদনের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক বিনিয়োগকেও উভয় দেশের পক্ষ থেকে স্বাগত জানানো হয়েছে। মূলবান ধাতু, খনিজ দ্রব্য এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ, অরণ্য সম্পদের মতো ক্ষেত্রে যৌথ উদ্যোগ গড়ে তোলার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে উভয় দেশ একমত হয়েছে।

 

26.  রাশিয়ার পক্ষ থেকে ভারতের বিভিন্ন কোম্পানির কাছে সে দেশের দূরপ্রাচ্য হিসেবে চিহ্নিত প্রদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হয়েছে। রাশিয়ার দূরপ্রাচ্য সংস্থার একটি অফিস মুম্বাইতে খোলায় ভারতীয় কোম্পানিগুলির পক্ষ থেকে স্বাগত জানানো হয়েছে। ২০১৮-র সেপ্টেম্বরে ব্লাদিভোস্টকে পূর্বাঞ্চলীয় অর্থনৈতিক ফোরামের বৈঠকে ভারতের শিল্পবাণিজ্য মন্ত্রী শ্রী সুরেশ প্রভুর নেতৃত্বে এক প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করেছে। অনুরূপভাবে, একটি উচ্চপর্যায়ের রাশিয়ার প্রতিনিধিদল সে দেশের দূরপ্রাচ্যে আরও বেশি করে ভারতীয় কোম্পানিগুলির বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে ভারতে রোড শো আয়োজন করবে বলে স্থির হয়েছে।

 

27.  উভয় দেশই রেল, শক্তি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে কোন তৃতীয় দেশে প্রযুক্তি ও সহায়সম্পদ-ভিত্তিক যৌথ প্রকল্প গড়ে তোলার বিষয়ে সক্রিয়ভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করার লক্ষ্যে কাজ করার জন্য একমত হয়েছে।

 

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

28.  উভয় পক্ষই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতা আরও বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে একমত হয়েছে এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে দশম ভারত-রুশ কর্মীগোষ্ঠীর সফল বৈঠককে স্বাগত জানিয়েছে। ২০১৮-র ফেব্রুয়ারি মাসে দু’দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দপ্তরের যৌথ উদ্যোগে এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল।

 

29.  মৌল এবং প্রায়োগিক ক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যৌথ গবেষণার দশম বর্ষপূর্তি উদযাপনের সাফল্যে দু’দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগিতায় উভয় পক্ষই সন্তোষ ব্যক্ত করেছে। দু’দেশের মধ্যে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি সুসংহত কর্মসূচিতে সহযোগিতাকে জোরদার করার বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই কর্মসূচিতে দু’দেশের গবেষণাগার, বিশ্ববিদ্যালয় ও বিজ্ঞান-প্রযুক্তি সংগঠনগুলির মধ্যে সহযোগিতা সংক্রান্ত একটি রূপরেখা প্রণয়নের বিষয়ে উভয় দেশ একমত হয়েছে।

 

30.  দুই দেশই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, বিশেষ করে বৈদ্যুতিন ব্যবস্থা নির্মাণ ও উৎপাদন, সফ্‌টওয়্যার উৎপাদন, সুপার কম্পিউটিং, ই-গভর্নেন্স, জনপরিষেবা ব্যবস্থা, নেটওয়ার্ক নিরাপত্তা, তথ্য এবং যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহারের নিরাপত্তা, আর্থিক প্রযুক্তি, ইন্টারনেট অফ থিঙ্গস, রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি স্পেকট্রামের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রভৃতির মতো ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও বৃদ্ধির বিষয়ে একমত হয়েছে। ব্রিক্‌স এবং আইটিইউ-এর মতো মঞ্চে দুই দেশ পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমন্বয়সাধনের বিষয়ে কাজ করার জন্য একমত হয়েছে।

 

31.  ২০১৮-র মার্চ মাসে নতুন দিল্লীতে আয়োজিত ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রক এবং রাশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়ন মন্ত্রকের উদ্যোগে আয়োজিত অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংক্রান্ত যৌথ ঘোষণাপত্র স্বাক্ষরকে স্বাগত জানিয়েছে। ২০১৮-র ডিসেম্বরে ভারত এবং রাশিয়ার মধ্যে স্টার্ট-আপের শীর্ষ বৈঠক আয়োজনের সিদ্ধান্তকেও উভয় দেশ স্বাগত জানিয়েছে। ভারতের কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজ এবং রাশিয়ার স্কলকোভো ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে এই শীর্ষ বৈঠকের আয়োজন করা হবে। এই লক্ষ্যে উভয় দেশের স্টার্ট-আপ বিনিয়োগকারীর উদ্ভাবন সংস্থা এবং উদীয়মান উদ্যোগপতিদের নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার জন্য একটি অনলাইন পোর্টাল চালু করার সিদ্ধান্তকেও উভয় দেশ স্বাগত জানিয়েছে।

 

32.  বহির্মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি এবং পারস্পরিক সুবিধার সহযোগিতার গুরুত্ব বিষয়ে উভয় দেশই জোর দিয়েছে এবং ভারতের আঞ্চলিক নেভিগেশন স্যাটেলাইট ব্যবস্থার গ্রাউন্ড স্টেশন মারফৎ তথ্য সংগ্রহের কাজকে স্বাগত জানানো হয়েছে। শান্তিপূর্ণ কাজে বহির্মহাকাশের ব্যবহার এবং মনুষ্যবাহিত মহাকাশ উড়ান কর্মসূচি সহ বিভিন্ন ধরণের বিজ্ঞান-ভিত্তিক প্রকল্পে সহযোগিতা জোরদার করার ব্যাপারে একমত হয়েছে। উভয় দেশই ব্রিক্‌স-এর দূরসংবেদী উপগ্রহ ব্যবস্থার উন্নয়নে সহযোগিতার ক্ষেত্রেও একমত হয়েছে।

 

33.  মেরু অঞ্চলে উভয় দেশের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে সহযোগিতার ক্ষেত্রে উভয় দেশই আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কুমেরু অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতার কাজের অগ্রগতিতে ভারত এবং রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা যে কাজ করেছেন, তাতে উভয় দেশই সন্তোষ ব্যক্ত করেছে।

 

34.  দু’দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধি এবং ভারত ও রাশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে নিয়ে গড়ে ওঠা নেটওয়ার্কের কাজকর্মের অগ্রগতিতে সন্তোষ ব্যক্ত করা হয়েছে। ২০১৫ সালে এই নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার পর ৪২ সদস্যবিশিষ্ট এই সংস্থার তিনবার বৈঠক আয়োজিত হয়েছে। ছাত্র, গবেষক এবং শিক্ষকদের জন্য সফর বিনিময় এবং যৌথ উদ্যোগে বিজ্ঞান-ভিত্তিক এবং শিক্ষা সংক্রান্ত প্রকল্প রূপায়ণে যে বিপুল আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে, তাতে দুই দেশই সন্তোষ ব্যক্ত করেছে।

 

শক্তি

35.  ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে শক্তিক্ষেত্রে সহযোগিতা প্রসারের গুরুত্ব বিষয়ে উভয় পক্ষই একমত হয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে রাশিয়ার শক্তিসম্পদ ক্ষেত্রে বিশেষ করে, প্রাকৃতিক গ্যাস ক্ষেত্রে বিশেষ আগ্রহ দেখানো হয়েছে। এছাড়া, উভয় দেশ যৌথ উদ্যোগে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ক্ষেত্রে প্রকল্প রূপায়ণের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে রাজি হয়েছে।

 

36.  শক্তিক্ষেত্রে উভয় দেশের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার সম্ভাবনা বিষয়ে উভয় দেশ আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং নিজ নিজ দেশের কোম্পানিগুলিকে শক্তিক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যৌথ উদ্যোগ এবং শক্তিসম্পদের পারস্পরিক অধিগ্রহণ ও তৃতীয় কোন দেশের সঙ্গে সম্ভাব্য সহযোগিতার বিষয় খতিয়ে দেখতে আহ্বান জানিয়েছে।

 

37.  উভয় দেশ রাশিয়া এবং ভারতের শক্তি কোম্পানিগুলির মধ্যে বিভিন্ন চালু প্রকল্পে সহযোগিতাকে স্বাগত জানিয়েছে। বিশেষ করে, রাশিয়ার ভ্যাঙ্কোরনেফ্‌ট এবং তাসইউরিয়াখ নেফ্‌টেগাজোডোবাইকা-তে ভারতীয় সংস্থাগুলির বিনিয়োগ এবং ভারতের এসার অয়েল ক্যাপিটালের সঙ্গে রাশিয়ার পিজিএসসি রসনেম অয়েল কোম্পানির যৌথ উদ্যোগকে স্বাগত জানানো হয়েছে। ভ্যাঙ্কোর শক্তি প্লাস্টারে দু’দেশের কোম্পানিগুলির মধ্যে সার্বিক সহযোগিতার জন্য আলোচনা চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে উদ্যোগকে উভয় দেশের পক্ষ থেকে স্বাগত জানানো হয়েছে।

 

38.  তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের ক্ষেত্রে ভারত ও রুশ কোম্পানিগুলির সহযোগিতা বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। ভারতের গেইল ইন্ডিয়া লিমিটেড এবং রাশিয়ার গ্যাজপম গ্রুপের মধ্যে এলএনজি সরবরাহ বিষয়ক দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি রূপায়ণের কাজ শুরু হওয়ায় উভয় দেশই তাকে স্বাগত জানিয়েছে।

 

39.  উভয় দেশ, পিজেএসসি নোভাটেক এবং ভারতের শক্তি কোম্পানিগুলির মধ্যে সহযোগিতা প্রসারের লক্ষ্যে আলোচনাকে স্বাগত জানিয়েছে এবং এলএনজি ক্ষেত্রে যৌথ উদ্যোগে প্রকল্প রূপায়ণের প্রয়াসকে স্বাগত জানানো হয়েছে।

 

40.  রাশিয়ার মেরু অঞ্চলে বিশেষ করে, পেচোরা এবং ওখটস্ক সাগরে যৌথ উদ্যোগে খনিজ তেল উত্তোলনের প্রকল্প বিষয়ে সহযোগিতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে দু’দেশের বিভিন্ন কোম্পানিগুলির মধ্যে আলোচনাকে উভয় দেশ স্বাগত জানিয়েছে।

 

41.  ২০১৭ সালে রাশিয়া ও অন্যান্য দেশ থেকে ভারতের মধ্যে গ্যাস সরবরাহের জন্য পাইপলাইন স্থাপন বিষয়ে যে যৌথ সমীক্ষা চালানো হয়েছে, উভয় দেশ তাকে স্বাগত জানিয়েছে এবং গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে ভারত ও রাশিয়ার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের মধ্যে আলোচনাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে উভয় দেশের পক্ষ থেকে সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। দু’দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের মধ্যে এ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সম্ভাব্যতাকে উভয় দেশই স্বাগত জানিয়েছে।

 

42.  ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে অসামরিক ক্ষেত্রে পারমানবিক সহযোগিতা দু’দেশের কৌশলগত সম্পর্কের এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটি ভারতের শক্তি নিরাপত্তার জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্যারিস চুক্তিতে উভয় দেশের প্রদত্ত প্রতিশ্রুতিগুলি পূরণেও এক্ষেত্রে সহযোগিতার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। উভয় দেশ তামিলনাড়ুর কুড়ামকুলামে পারমানবিক শক্তি উৎপাদন কেন্দ্রের বাকি ছ’টি ইউনিট নির্মাণের কাজের অগ্রগতিতে সন্তোষ ব্যক্ত করেছে। এছাড়া, স্থানীয় পর্যায়ে এই ধরণের পরমাণু শক্তি উৎপাদন কেন্দ্রের যন্ত্রাংশ নির্মাণের উদ্যোগকেও স্বাগত জানিয়েছে। উভয় পক্ষই ভারতে রাশিয়া পরিকল্পিত নতুন পারমানবিক শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন বিষয়ে আলাপ-আলোচনা, পারমানবিক যন্ত্রাংশের যৌথ উৎপাদন এবং তৃতীয় কোন দেশে এ বিষয়ে সহযোগিতাকে স্বাগত জানিয়েছে।

 

বাংলাদেশের রূপপুর পারমানবিক শক্তি প্রকল্প রূপায়ণে ত্রিপাক্ষিক সহযোগিতা সংক্রান্ত যে স্মারক সমঝোতা হয়েছে, তা পূরণে কাজের অগ্রগতি বিষয়ে দুই দেশ পর্যালোচনা করেছে। উভয় দেশ পারমানবিক ক্ষেত্রে যৌথ উদ্যোগে চিহ্নিত বিষয়ে সহযোগিতার বিষয়টিতে অগ্রাধিকার-ভিত্তিক রূপায়ণের জন্য কর্মপরিকল্পনা স্বাক্ষরকে স্বাগত জানিয়েছে এবং সন্তোষ ব্যক্ত করেছে।

 

43.  জলবিদ্যুৎ এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য বিদ্যুৎ শক্তির উৎস বিষয়ে সহযোগিতার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে উভয় দেশই একমত হয়েছে। এছাড়া, শক্তি সাশ্রয় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব হ্রাস করার বিষয়ে উদ্যোগকেও উভয় দেশ স্বাগত জানিয়েছে।

 

সামরিক প্রযুক্তিগত সহযোগিতা

 

44.  দুই দেশ মনে করে যে দু’দেশের কৌশলগত অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে সামরিক প্রযুক্তিগত সহযোগিতার বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভস্বরূপ উভয় দেশ ২০১৮-র ডিসেম্বর মাসে ভারত-রাশিয়া আন্তঃসরকারি কমিশনের বৈঠকে সামরিক প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বিষয়ে আলোচনার সম্ভাবনাকে স্বাগত জানিয়েছে। উভয় দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে প্রশিক্ষণ এবং বরিষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাদের সফর বিনিময়, কর্মীদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা এবং যৌথ মহড়া প্রভৃতির ক্ষেত্রে সামরিক সহযোগিতার রূপরেখা এই ক্ষেত্রে সহযোগিতার পথকে আরও প্রশস্ত করেছে বলে উভয় দেশ মনে করে। রাশিয়ার পক্ষ থেকে ২০১৮-র আর্মি গেম্‌স, আর্মি, ২০১৮ এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত মস্কো সম্মেলনে ভারতের অংশগ্রহণকে সদর্থকভাবে স্বাগত জানানো হয়েছে। উভয় দেশই বাহিনীত্রয়ের যৌথ মহড়া ‘ইন্দ্র, ২০১৭’কে স্বাগত জানিয়েছে এবং ২০১৮-য় নৌ-সেনা, স্থলবাহিনী এবং বায়ুসেনার ‘ইন্দ্র’ পর্যায়ের যৌথ মহড়া চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তাদের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে।

 

45.  উভয় দেশই ‘এস-৪০০’ শ্রেণীর দূরপাল্লার ভূপৃষ্ঠ থেকে আকাশে ক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ভারতকে সরবরাহ করার জন্য চুক্তি সম্পাদনকে স্বাগত জানিয়েছে। উভয় দেশই সামরিক প্রযুক্তিগত সহযোগিতা আরও বাড়ানোর ব্যাপারে তাদের দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। দু’দেশের মধ্যে এক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা ও আস্থার এক দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। সামরিক প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকল্পে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিতে উভয় দেশ সন্তোষ ব্যক্ত করেছে এবং দু’দেশের মধ্যে সামরিক যন্ত্রাংশ উৎপাদন ও এ বিষয়ে গবেষণাকে স্বীকৃতি জানিয়েছে। ভারত সরকারের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ নীতিকে উৎসাহ দিতে সামরিক শিল্পক্ষেত্রে এই উদ্যোগ বিশেষ ভূমিকা নেবে বলে উভয় দেশ একমত হয়েছে। ২০১৭-র নভেম্বর মাসে উচ্চপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতা সংক্রান্ত যে উচ্চপর্যায়ের কমিটি হয়েছে, তার বৈঠককে উভয় দেশ স্বাগত জানিয়েছে। এই বৈঠক থেকেই পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ক্ষেত্রে যৌথ উদ্যোগে গবেষণা ও উন্নয়নের বিভিন্ন বিষয়কে চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

 

আন্তর্জাতিক ইস্যুগুলি

46.  উভয় দেশ রাষ্ট্রসঙ্ঘের সনদ অনুসারে আন্তর্জাতিক আইনের সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত সমতা, পারস্পরিক আস্থা এবং অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতির প্রতি অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। এছাড়া, রাষ্ট্রসঙ্ঘের সনদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে মৈত্রী সম্পর্ক ও সহযোগিতার ক্ষেত্রে ১৯৭০ সালে আন্তর্জাতিক আইনের নীতিগুলির প্রতি তাদের আস্থা ব্যক্ত করেছে।

 

47.  ২০১৮-র জুলাই মাসে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিক্‌স শীর্ষ বৈঠকের দশম বর্ষপূর্তির ফলাফলের উল্লেখ করে এই সংগঠনের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে ভারত ও রাশিয়ার আগ্রহ পুনরায় ব্যক্ত করেছে। আন্তর্জাতিক আইন এবং রাষ্ট্রসঙ্ঘের সনদের ভিত্তিতে একটি নীতিনিষ্ঠ বহু মেরুর বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজকে অগ্রাধিকার প্রদান করার বিষয়েও উভয় দেশ একমত প্রকাশ করেছে।

 

48.  উভয় দেশ আফগানিস্তানে সে দেশের নেতৃত্বে জাতীয় শান্তি আলোচনার প্রক্রিয়ার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। আফগানিস্তানে ক্রমবর্ধমান হিংসাত্মক ঘটনার ফলে সে দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে এই অঞ্চলের ওপর তার নেতিবাচক প্রভাব নিয়েও নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করেছে। দুই দেশ মস্কো ফরম্যাট এবং আফগানিস্তান সংক্রান্ত এসসিও যোগাযোগ গোষ্ঠীর মাধ্যমে সে দেশের সমস্যার সমাধানে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আফগানিস্তানের দীর্ঘদিনের বিরোধের দ্রুত নিষ্পত্তিকল্পে সমস্ত স্বীকৃত পদ্ধতিতে কাজ চালিয়ে যাওয়া, সন্ত্রাসবাদী তৎপরতাকে নির্মূল করা, সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয়দানের ঘটনা বন্ধ করা এবং ক্রমবর্ধমান মাদক চোরাচালানের সমস্যা নিরসনের উদ্যোগের ওপর জোর দিয়েছে। উভয় দেশ আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর কাছে আফগানিস্তানে কোন বহিরাগত হস্তক্ষেপ বন্ধ করার লক্ষ্যে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া, আফগান অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন, সে দেশের শান্তি এবং নিরাপত্তায় অবদান যোগানো এবং একটি স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ ও স্বাধীন আফগানিস্তান গড়ে তোলার লক্ষ্যে আর্থ-রাজনৈতিক উন্নয়নের জন্য কাজ করার বিষয়ে উভয় দেশই একমত হয়েছে।

 

49.  উভয় দেশ সিরিয়ার সংঘাতের রাজনৈতিক সমাধানের লক্ষ্যে সিরিয়ার নেতৃত্বে রাষ্ট্রিক সার্বভৌমত্বের রক্ষাকবচ সহ এবং সিরিয়ার অখণ্ডতা ও স্বাধীনতা বজায় রেখে উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব অনুসারে এবং জেনেভা ও আস্তানা আলোচনায় গৃহীত পদক্ষেপ অনুসারে, কাজ চালানোর জন্য আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর কাছে আহ্বান জানিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের কাছে একটি শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল এবং সার্বভৌম সিরিয়া গড়ে তোলার লক্ষ্যে এবং সিরিয়ার গোষ্ঠীগুলির মধ্যে কোনরকম শর্ত ছাড়াই এবং বহিরাগত হস্তক্ষেপ ছাড়াই আলোচনা প্রক্রিয়ার প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করা হয়েছে। সিরিয়ার মানুষের দীর্ঘমেয়াদি ভোগান্তি দূর করতে মানবিক সহায়তার কথা এবং জরুরি ভিত্তিতে সে দেশের পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তা, গৃহযুদ্ধের ফলে উৎখাত হওয়া শরণার্থীদের দেশে ফেরানো এবং দেশের অভ্যন্তরে গৃহচ্যুত মানুষের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে উদ্যোগ জোরদার করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

 

50.  উভয় দেশই ইরানের পারমানবিক কর্মসূচি বিষয়ে যৌথ সার্বিক কর্মপরিকল্পনা রূপায়ণের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছে। আন্তর্জাতিক শান্তি এবং নিরাপত্তার স্বার্থে ও পরমাণু শক্তি প্রসার রোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে উদ্যোগ গ্রহণের ওপর উভয় দেশ জোর দিয়েছে। এছাড়া, ইরানের সঙ্গে স্বাভাবিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা গড়ে তোলার কথাও উভয় দেশ বলেছে। ইরানের পারমানবিক কর্মসূচি বিষয়ে সমস্ত ইস্যু শান্তিপূর্ণভাবে আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে ফেলার আহ্বানও উভয় দেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

 

51.  উভয় দেশ কোরীয় উপদ্বীপে সদর্থক ঘটনাগুলিকে স্বাগত জানিয়েছে এবং এই অঞ্চলে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনার উদ্যোগের প্রতি দুই দেশ তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেছে। কিন্তু কোরীয় উপদ্বীপের সমস্যার সমাধানের পাশাপাশি এই সমস্যার সঙ্গে যুক্ত পরমাণু শক্তির প্রসারের বিষয়টিকেও যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ বলে উভয় দেশ অভিমত প্রকাশ করেছে।

 

52.  উভয় দেশই বহির্মহাকাশে অস্ত্র প্রতিযোগিতার সম্ভাবনা বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং বহির্মহাকাশকে সামরিক সংঘাতের মঞ্চে পরিণত না করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আহ্বান জানিয়েছে। দুটি দেশই বলেছে বহির্মহাকাশে অস্ত্র প্রতিযোগিতার সম্ভাবনা বন্ধ করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এক বড় বিপদ এড়িয়ে চলা সম্ভব। রাষ্ট্রসঙ্ঘের সরকারি বিশেষজ্ঞদের গোষ্ঠীর প্রথম অধিবেশনে বহির্মহাকাশে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধে একটি আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক চুক্তি বা ব্যবস্থা গড়ে তোলার বিষয়ে যে আলোচনা হয়েছে, উভয় দেশ তাকে স্বাগত জানিয়েছে। এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের কাজের মধ্যে স্বচ্ছতা এবং আস্থা বর্ধক উদ্যোগ বিশেষ কার্যকর হতে পারে বলে উভয় দেশ অভিমত ব্যক্ত করেছে।

 

53.  উভয় দেশ রাসায়নিক অস্ত্র উৎপাদন, জমা করা এবং ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ বিষয়ে আন্তর্জাতিক চুক্তির কার্যকরতা বজায় রাখার জন্য উদ্যোগের প্রতি তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেছে। এছাড়া, রাসায়নিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ সংগঠনের কাজের রাজনীতিকরণ বন্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণের কথা উভয় দেশ বলেছে। রাশিয়ার পক্ষ থেকে সে দেশের রাসায়নিক অস্ত্র ভাণ্ডার ধ্বংস করার কাজ দ্রুত শেষ করায় ভারত তাকে স্বাগত জানিয়েছে। রাসায়নিক অস্ত্রমুক্ত এক বিশ্ব গড়ে তোলার লক্ষ্য অর্জনে এই কাজ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলে উভয় দেশ জানিয়েছে।

 

54.  উভয় দেশ যে কোন ধরণের সন্ত্রাসবাদের নিন্দা করেছে এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে কোনরকম দ্বিমুখী নীতি ছাড়াই সম্মিলিতভাবে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। উভয় দেশই সন্ত্রাসবাদীদের নেটওয়ার্ক ধ্বংস করা, তাদের আয়ের পথ বন্ধ করা, অস্ত্র এবং অন্যান্য সরবরাহ চ্যানেল বন্ধ করা, তাদের আদর্শ, প্রচার ও নিয়োগ বন্ধ করার লক্ষ্যে একযোগে কাজ করার কথা বলেছে। উভয় দেশ সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদ সহ যে কোন ধরণের সন্ত্রাসবাদের প্রতি রাষ্ট্রিক সমর্থনের নিন্দা করেছে এবং দ্রুত আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে একটি সার্বিক চুক্তি স্বাক্ষরের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে। দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রসঙ্ঘে ঝুলে থাকা এই চুক্তিটি যাতে আন্তর্জাতিক আইনে পরিণত হয়, উভয় দেশই তার জন্য আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর কাছে আহ্বান জানিয়েছে। রাসায়নিক এবং জৈব সন্ত্রাসের সমস্যা মোকাবিলায় ভারত ও রাশিয়া নিরস্ত্রীকরণ সংক্রান্ত সম্মেলনে বহুপাক্ষিক আলোচনা শুরু করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে। কোনভাবেই যাতে গোপনে রাসায়নিক এবং জৈব সন্ত্রাসবাদের কাজ করা না যায়, তার জন্য একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি সম্পাদনের কথাও উভয় দেশ বলেছে।

 

55.  উভয় দেশ আন্তর্জাতিক আইনের নীতির প্রতি তাদের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রসঙ্ঘের কেন্দ্রীয় ভূমিকার ওপর বিশেষ জোর দিয়েছে। উভয় দেশই আন্তর্জাতিক আইনকানুনের ক্ষেত্রে আস্থার বিষয়টিকে সাধারণ নীতি হিসেবে গ্রহণ করে দ্বিচারিতা এড়িয়ে এক রাষ্ট্রের ওপর অন্য রাষ্ট্রের দায় চাপিয়ে এবং একতরফাভাবে আন্তর্জাতিক আইন বিরোধী শক্তি প্রয়োগ করে যে কোন ধরণের কাজের বিরোধীতা করেছে। উভয় দেশই সংশ্লিষ্ট সকলের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ-ভিত্তিক এক বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে।

 

56.  উভয় দেশ রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপর সংস্কারে জোর দিয়েছে এবং বর্তমান বিশ্বের চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলায় অতি দ্রুত এই কাজ সম্পন্ন করার আহ্বান জানিয়েছে। রাশিয়া রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের স্থায়ী সদস্যপদের প্রতি তাদের সমর্থন পুনরায় ব্যক্ত করেছে। উভয় দেশই আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শান্তি, নিরাপত্তা এবং সমতার ভিত্তিতে উন্নয়ন সুনিশ্চিত করতে একযোগে কাজ করতে সম্মত হয়েছে এবং বিশ্ব ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা আনার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তাদের কাজে সমন্বয়সাধনের কথা বলেছে।

 

57.  উভয় দেশই ২০৩০-এর সুষম উন্নয়ন লক্ষ্য সংক্রান্ত কর্মসূচি রূপায়ণের জন্য তাদের অঙ্গীকার পুনরায় ব্যক্ত করেছে সমতার ভিত্তিতে সার্বিক এবং উদ্ভাবনকেন্দ্রিক অন্তর্ভুক্ত উন্নয়ন সুনিশ্চিত করতে ও অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং পরিবেশগত সুষম উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনে কাজ করার কথা বলেছে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রসঙ্ঘের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, বিশেষ করে সুষম উন্নয়ন সংক্রান্ত উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক মঞ্চ, ২০৩০-এর সুষম উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বিষয়ে কাজের সমন্বয় এবং পর্যালোচনায় বিশেষ ভূমিকা নিতে পারে বলে উভয় দেশ অভিমত ব্যক্ত করেছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের উন্নয়ন ব্যবস্থার সংস্কার এবং যথা সময়ে প্রতিশ্রুতিমতো প্রদেয় আর্থিক সহায়তা প্রদান করে উন্নয়নশীল দেশগুলির উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়সম্পদের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়েছে।

 

58.  উভয় দেশ পরিবেশ-বান্ধব উন্নয়ন এবং কম কার্বন নির্গমনের অর্থনীতিকে তুলে ধরতে তাদের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। সুষম উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য দূরীকরণের প্রেক্ষিতে তারা প্যারিস চুক্তির সম্পূর্ণ রূপায়ণের ওপর জোর দিয়েছে। এক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত রাষ্ট্রসঙ্ঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনে যে অভিন্ন কিন্তু স্বতন্ত্র দায়িত্ব রয়েছে, তা পালনের কথা বলেছে এবং উন্নত দেশগুলিকে আর্থিক, প্রযুক্তিগত এবং অন্যান্য সহায়তা দিয়ে এই কাজে সাহায্য করার আহ্বান জানিয়েছে।

 

59.  উভয় পক্ষই বিশ্বব্যাপী পরমাণু শক্তির প্রসার রোধ ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করার ব্যাপারে তাদের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। রাশিয়া, ‘পারমানবিক সরঞ্জাম সরবরাহ গোষ্ঠী’তে ভারতের সদস্যপদের সমর্থন ব্যক্ত করেছে।

 

60.  উভয় পক্ষই তথ্য এবং যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতাসম্পন্ন কাজ বিষয়ে একটি নিয়মকানুন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে। এছাড়া, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য এক্ষেত্রে একটি আন্তর্জাতিক আইন ব্যবস্থা তৈরির প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছে উভয় দেশই। এর প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রসঙ্ঘের ৭৩তম সাধারণ অধিবেশনে এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব গ্রহণের ওপর উভয় দেশ জোর দিয়েছে। দুই দেশ এক্ষেত্রে সহযোগিতার কাঠামো গড়ে তুলতে ব্রিক্‌স দেশগুলির নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার কথা বলেছে এবং এ বিষয়ে সহযোগিতা সংক্রান্ত ব্রিক্‌সভুক্ত আন্তঃসরকারি চুক্তি সম্পাদনের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে অভিমত প্রকাশ করেছে।

 

61.  উভয় দেশ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য একটি অভিন্ন অবস্থান গ্রহণ করা এবং দ্বিপাক্ষিক পর্যায়ে দুই দেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলির মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তথ্য এবং যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সহযোগিতা সংক্রান্ত একটি আন্তঃসরকারি চুক্তিতে উপনীত হওয়ার লক্ষ্যে দুই দেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলির মধ্যে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারেও ঐকমত্য হয়েছে।

 

62.  উভয় দেশ এশিয়া, প্রশান্ত মহাসাগর এবং ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলির মধ্যে সমতার ভিত্তিতে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে একটি আঞ্চলিক নিরাপত্তা কাঠামো প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবের প্রতি সহমত পোষণ করেছে। পূর্ব এশিয়া শিখর বৈঠক এবং অন্যান্য আঞ্চলিক মঞ্চের মধ্যে এই লক্ষ্যে বহুপাক্ষিক আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার ওপর উভয় দেশই গুরুত্ব আরোপ করেছে। দুটি দেশই মনে করে যে আঞ্চলিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার যে কোন ধরণের উদ্যোগকে বহুপাক্ষিকতা, স্বচ্ছতা, অন্তর্ভুক্ততা, পারস্পরিক আস্থা এবং সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির লক্ষ্যে সমন্বিত প্রচেষ্টার ভিত্তিতে চালিয়ে যাওয়া দরকার। তবে এই কাজ যেন কোন দেশের বিরুদ্ধে পরিচালিত না হয়, এই প্রসঙ্গে উভয় দেশ ২০১৮-র ২৪শে আগস্ট মস্কোয় রাশিয়ার উপ-বিদেশমন্ত্রী ইগর মরগুলভ এবং ভারতের বিদেশ সচিব বিজয় গোখেলের মধ্যে যে গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে, তাকে স্বাগত জানিয়েছে।

 

63.  উভয় দেশ ব্রিক্‌স, জি-২০, এসসিও, আরআইসি, ইস্ট এশিয়া সামিটের মতো বহুপাক্ষিক আঞ্চলিক মঞ্চে তাদের অবস্থান ও কাজের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সমন্বয় বজায় রাখার প্রতি অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। ভারতের পক্ষ থেকে ইউরেশিয়ান ইকনমিক ইউনিয়নের সঙ্গে সহযোগিতা আরও ব্যাপকতর করার আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে।

 

64.  উভয় দেশই ২০১৮-র জুন মাসে ক্যুইনডাওতে সাংহাই সহযোগিতা সংগঠনের রাষ্ট্রপ্রধানদের বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অংশগ্রহণকে ঐ সংগঠনের পূর্ণ সদস্য হিসেবে ভারতের সফল অন্তর্ভুক্তি হিসেবে দেখতে চায়। সাংহাই সহযোগিতা সংগঠনের সনদ, নিয়মনীতি এবং আন্তর্জাতিক আইনের নীতির প্রতি দু’দেশ তাদের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। এই সংগঠনের কাজের সম্ভাবনাকে সবদিক থেকে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে উভয় দেশ সমন্বিত উদ্যোগ নেবে বলে স্থির হয়েছে। নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা, বেআইনি মাদক চালান এবং সংগঠিত অপরাধ মোকাবিলা সংক্রান্ত বিষয়ে বিশেষ জোর দেওয়া হবে বলে উভয় দেশ স্থির করেছে। এর ফলে, সংগঠনের আঞ্চলিক পর্যায়ে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী কাঠামোয় সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে উভয়েই অভিমত প্রকাশ করেছে। রাশিয়ার পক্ষ থেকে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী সামরিক মহড়া ‘পিস মিশন, ২০১৮’-এ অংশগ্রহণকে স্বাগত জানানো হয়েছে। উভয় পক্ষই সাংহাই সহযোগিতা সংগঠনের অর্থনৈতিক বিষয়টিকে তুলে ধরা এক গুরুত্বপূর্ণ কাজ বলে মনে করে। এর মধ্যে সংগঠনভুক্ত দেশগুলির নিজেদের মধ্যে পরিবহণের পরিকাঠামো সংক্রান্ত প্রকল্প রূপায়ণও রয়েছে। উভয় দেশ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সাংহাই সহযোগিতা সংগঠনের ক্রমবর্ধমান ভূমিকার প্রতি সহমত পোষণ করে রাষ্ট্রসঙ্ঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংগঠনেও সহযোগিতার কথা বলেছে। এছাড়া, এই সংগঠনের মধ্যে সাংস্কৃতিক এবং মানবিক সংযোগকে গভীরতর করার বিষয়ে উভয় দেশ একমত হয়েছে।

 

65.  উভয় দেশ একটি উন্মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্বচ্ছ, বৈষম্যহীন ও আইন-ভিত্তিক বহুপাক্ষিক বাণিজ্যিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কের বিচ্ছিন্নতা প্রতিরোধ করা এবং বাণিজ্যিক লেনদেনের ক্ষেত্রে যে কোন ধরণের রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেছে।

 

66.  একটি বৃহত্তর ইউরেশিয়ান অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে রাশিয়া যে উদ্যোগ নিয়েছে, ভারত তাকে স্বাগত জানিয়েছে। এই উদ্যোগের মধ্যে জাতীয় পর্যায়ের উন্নয়ন সংক্রান্ত কর্মসূচি এবং আন্তর্জাতিক আইন, সমতার নীতি, পারস্পরিক আস্থার ভিত্তিতে গঠনমূলক সহযোগিতার মঞ্চ হিসাবে বিভিন্ন প্রকল্পের রূপায়ণের কথা ভাবা হয়েছে।

 

67.  উভয় দেশই ভারত ও রাশিয়ার সম্পর্ক, অভিন্ন স্বার্থ এবং বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক এবং আন্তর্জাতিক ইস্যুতে অভিন্ন অবস্থান গ্রহণকে স্বাগত জানিয়েছে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার সমন্বয় এবং বিশেষ ও সুবিধাপ্রাপ্ত অংশীদারিত্বকে আরও এগিয়ে নিয়ে গিয়ে উভয় দেশের স্বার্থকে সংহত করায় একমত হয়েছে।

 

68.  রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আতিথেয়তার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং ২০১৯-এ দু’দেশের মধ্যে ২০তম বার্ষিক শীর্ষ বৈঠকে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আনন্দের সঙ্গে এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন।

 

Explore More
৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪

জনপ্রিয় ভাষণ

৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪
Global aerospace firms turn to India amid Western supply chain crisis

Media Coverage

Global aerospace firms turn to India amid Western supply chain crisis
NM on the go

Nm on the go

Always be the first to hear from the PM. Get the App Now!
...
The World This Week On India
February 18, 2025

This week, India reinforced its position as a formidable force on the world stage, making headway in artificial intelligence, energy security, space exploration, and defence. From shaping global AI ethics to securing strategic partnerships, every move reflects India's growing influence in global affairs.

And when it comes to diplomacy and negotiation, even world leaders acknowledge India's strength. Former U.S. President Donald Trump, known for his tough negotiating style, put it simply:

“[Narendra Modi] is a much tougher negotiator than me, and he is a much better negotiator than me. There’s not even a contest.”

With India actively shaping global conversations, let’s take a look at some of the biggest developments this week.

|

AI for All: India and France Lead a Global Movement

The future of AI isn’t just about technology—it’s about ethics and inclusivity. India and France co-hosted the Summit for Action on AI in Paris, where 60 countries backed a declaration calling for AI that is "open," "inclusive," and "ethical." As artificial intelligence becomes a geopolitical battleground, India is endorsing a balanced approach—one that ensures technological progress without compromising human values.

A Nuclear Future: India and France Strengthen Energy Security

In a world increasingly focused on clean energy, India is stepping up its nuclear power game. Prime Minister Narendra Modi and French President Emmanuel Macron affirmed their commitment to developing small modular nuclear reactors (SMRs), a paradigm shift in the transition to a low-carbon economy. With energy security at the heart of India’s strategy, this collaboration is a step toward long-term sustainability.

Gaganyaan: India’s Space Dream Inches Closer

India’s ambitions to send astronauts into space took a major leap forward as the budget for the Gaganyaan mission was raised to $2.32 billion. This is more than just a scientific milestone—it’s about proving that India is ready to stand alongside the world’s leading space powers. A successful human spaceflight will set the stage for future interplanetary missions, pushing India's space program to new frontiers.

India’s Semiconductor Push: Lam Research Bets Big

The semiconductor industry is the backbone of modern technology, and India wants a bigger share of the pie. US chip toolmaker Lam Research announced a $1 billion investment in India, signalling confidence in the country’s potential to become a global chip manufacturing hub. As major companies seek alternatives to traditional semiconductor strongholds like Taiwan, India is positioning itself as a serious contender in the global supply chain.

Defence Partnerships: A New Era in US-India Military Ties

The US and India are expanding their defence cooperation, with discussions of a future F-35 fighter jet deal on the horizon. The latest agreements also include increased US military sales to India, strengthening the strategic partnership between the two nations. Meanwhile, India is also deepening its energy cooperation with the US, securing new oil and gas import agreements that reinforce economic and security ties.

Energy Security: India Locks in LNG Supply from the UAE

With global energy markets facing volatility, India is taking steps to secure long-term energy stability. New multi-billion-dollar LNG agreements with ADNOC will provide India with a steady and reliable supply of natural gas, reducing its exposure to price fluctuations. As India moves toward a cleaner energy future, such partnerships are critical to maintaining energy security while keeping costs in check.

UAE Visa Waiver: A Boon for Indian Travelers

For Indians residing in Singapore, Japan, South Korea, Australia, New Zealand, and Canada, visiting the UAE just became a lot simpler. A new visa waiver, effective February 13, will save Dh750 per person and eliminate lengthy approval processes. This move makes travel to the UAE more accessible and strengthens business and cultural ties between the two countries.

A Gift of Friendship: Trump’s Gesture to Modi

During his visit to India, Donald Trump presented Prime Minister Modi with a personalized book chronicling their long-standing friendship. Beyond the usual diplomatic formalities, this exchange reflects the personal bonds that sometimes shape international relations as much as policies do.

Memory League Champion: India’s New Star of Mental Speed

India is making its mark in unexpected ways, too. Vishvaa Rajakumar, a 20-year-old Indian college student, stunned the world by memorizing 80 random numbers in just 13.5 seconds, winning the Memory League World Championship. His incredible feat underscores India’s growing reputation for mental agility and cognitive excellence on the global stage.

India isn’t just participating in global affairs—it’s shaping them. Whether it’s setting ethical AI standards, securing energy independence, leading in space exploration, or expanding defence partnerships, the country is making bold, strategic moves that solidify its role as a global leader.

As the world takes note of India’s rise, one thing is clear: this journey is just getting started.