প্রধানমন্ত্রীশ্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে, ফরাসী প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ২০১৮’র ১০ থেকে ১২ মার্চ ভারতে রাষ্ট্রীয় সফর করেন। দুই নেতা যৌথভাবে ২০১৮’র ১১মার্চ আন্তর্জাতিক সৌর জোটের প্রথম শীর্ষ বৈঠকের যৌথভাবে আয়োজন করেন। নেতৃবৃন্দব্যাপকভিত্তির গঠনমূলক আলোচনা করেন এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে দু’দেশেরঅবস্থানের ক্রমবর্ধমান ঐকমত্যের ওপর জোর দেন।
2. ভারতও ফ্রান্সের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্কের বিশতম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে দুই নেতা এইসম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এই সম্পর্ককে নতুন একপর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবংফ্রান্সের রাষ্ট্রপতির মধ্যে প্রতি দু’বছরে একবার শিখর বৈঠক আয়োজনে তাঁরা একমত হন।উভয় নেতাই অভিন্ন নীতি, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, আইনের শাসন এবং মানবাধিকারের প্রতিসম্মানের ভিত্তিতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে গভীর ও শক্তিশালী করার বিষয়ে রাজি হন।
3. প্রথমবিশ্বযুদ্ধে ভারতীয় ও ফরাসী সৈন্যদের অসাধারণ আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করেপ্রধানমন্ত্রী মোদী প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের শতবর্ষ উদযাপনের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে ভারতেরঅংশগ্রহণের আগ্রহের কথা বলেন। ২০১৮’র ১১ নভেম্বর প্যারিসে এই অনুষ্ঠান হবে। এইউপলক্ষে, ‘প্যারিস পিস ফোরাম’ আয়োজনের সিদ্ধান্তকে প্রধানমন্ত্রী স্বাগত জানান। এইউদ্যোগে ভারতের সমর্থনের জন্য ফরাসী রাষ্ট্রপতি ম্যাক্রঁ প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদজানান।
(I) কৌশলগতঅংশীদারিত্ব
4. দুইদেশের সরকারের মধ্যে ‘গোপনীয় ও সুরক্ষিত তথ্য বিনিময় ও পারস্পরিক সুরক্ষা’সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরকে উভয় নেতাই স্বাগত জানান। এই চুক্তিতে দুই দেশের মধ্যেকৌশলগত আস্থার উচ্চ পর্যায়টি প্রতিফলিত হয়েছে। উভয় দেশ মন্ত্রী পর্যায়ের বার্ষিকপ্রতিরক্ষা সংক্রান্ত আলোচনার ব্যবস্থা করতে রাজি হয়েছে।
5. নেতৃবৃন্দভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সামুদ্রিক লেনদেন সংক্রান্ত ক্ষেত্রে বর্ধিত সহযোগিতার জন্যগভীর মতবিনিময়ের বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে তাঁরা ‘ভ‘রতমহাসাগরীয় অঞ্চলে সহযোগিতা সংক্রান্ত ভারত-ফ্রান্স যৌথ কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গী’কেস্বাগত জানান। এই নথিটি এক্ষেত্রে অংশীদারিত্বের দিশানির্দেশ করবে। আন্তর্জাতিকসমুদ্রপথের নিরাপত্তা বজায় রাখার ক্ষেত্রে এই সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হইয়েউঠবে বলে উভয় নেতা পুনরায় তাঁদের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে অবাধেবাণিজ্য ও যোগাযোগ, সামুদ্রিক সন্ত্রাসবাদ ও জলদস্যুতা মোকাবিলা, সামুদ্রিক লেনদেনবিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, পরিকাঠামো নির্মাণ এবং এই অঞ্চলের আঞ্চলিক/আন্তর্জাতিকমঞ্চে দুই দেশের মধ্যে সমন্বয়সাধনের ক্ষেত্রে এই সহযোগিতা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণভূমিকা নেবে।
6. দুইনেতা ভারত ও ফ্রান্সের সরকারের মধ্যে সেনাবাহিনীর পরিবহণ সংক্রান্ত পারস্পরিকসহায়তা বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষরকে স্বাগত জানিয়েছেন। এই চুক্তিতে ভারতীয় ও ফ্রান্সেরসেনাবাহিনী তাদের নিজস্ব ব্যবস্থা, একে অপরকে পরিবহণের জন্য ব্যবহার করতে দেবে বলেস্থির হয়েছে। চুক্তিটিকে ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে প্রতিরক্ষা সম্পর্কের গভীরতারপ্রতীক হিসাবে দেখা হচ্ছে।
7. উভয়নেতাই নিয়মিত যৌথ সামরিক মহড়ার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন। তাঁরা ২০১৭’র এপ্রিলেফ্রান্সে ‘বরুণ’ নৌ-মহড়া এবং ২০১৮’র জানুয়ারিতে সেনাবাহিনীর ‘শক্তি’ নামে যৌথসামরিক মহড়ার সাফল্যকে স্বাগত জানিয়েছেন। উভয় দেশই আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে‘বরুণ’ নৌ-মহড়া এবং ২০১৯-এ ফ্রান্সে ‘গরুড়’ নামে যৌথ বিমান বাহিনীর মহড়ার জন্যঅপেক্ষা করছে। উভয় পক্ষই যৌথ সামরিক মহড়ার উন্নত স্তর ও ভবিষ্যতে এই ধরনের মহড়ারকার্যকর গুণমান বজায় রাখার বিষয়ে তাদের দৃঢ় ইচ্ছা ব্যক্ত করেছে।
8. দুইনেতা দু’দেশের মধ্যে সামরিক সরঞ্জাম সংক্রান্ত চুক্তিটি সম্পাদনে সময়নির্দিষ্টভাবে অগ্রগতির বিষয়ে সন্তোষ ব্যক্ত করেছেন। বিশেষ করে, ২০১৬ সালেস্বাক্ষরিত রাফায়েল জঙ্গী বিমান সংক্রান্ত চুক্তি রূপায়ণে কাজের অগ্রগতিতে সন্তোষপ্রকাশ করেন। এছাড়া, ভারতের মাজাগাঁও ডক শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড-এ ফ্রান্সের‘ন্যাভাল গ্রুপ’ নামে জাহাজ নির্মাতা সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে নির্মিত প্রথমস্করপিন ডুবো জাহাজ আইএনএস কালভরি’র কর্ম সূচনা বিষয়েও উভয় পক্ষ আলোচনা করেছে।
9. উভয়েইদু’দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা উৎপাদনের ক্ষেত্রে বর্তমানে প্রচলিত অংশীদারিত্বকে আরওবাড়ানো ও গভীরতর করার বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে মতপ্রকাশ করেন। তাঁরাস্বীকার করেন যে, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগ ভারত ও ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা উৎপাদনসংস্থাগুলির কাছে মূল্যবান সুযোগ এনে দিয়েছে। এর মাধ্যমে ভারতে প্রতিরক্ষাসরঞ্জামের যৌথ উন্নয়ন ও উৎপাদন এবং উভয় দেশের কাছে সুবিধাজনক প্রযুক্তিহস্তান্তরের সুযোগ এনে দিয়েছে। এর প্রেক্ষিতে উভয় নেতাই ভারত ও ফ্রান্সের বিভিন্নকোম্পানির মধ্যে যৌথ উদ্যোগকে স্বাগত জানান এবং আরও নতুন নতুন এই ধরনের উদ্যোগ গড়েউঠবে বলে অঙ্গীকার প্রকাশ করেন।
10. উভয়নেতাই ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা উন্নয়ন সংগঠন ডিআরডিও এবং সাফ্রান-এর মধ্যে জঙ্গীবিমানের ইঞ্জিন তৈরি করার বিষয়ে আলোচনা নিয়ে কথা বলেন। এই বিষয়টি দ্রুত চূড়ান্তহবে বলে তাঁরা আশা প্রকাশ করেন।
11. উভয়নেতা যে কোনও ধরনের সন্ত্রাসবাদের কঠোর নিন্দা করেন। এর মধ্যে যেমন সীমান্তপারেরসন্ত্রাস রয়েছে এবং ভারত ও ফ্রান্সের সন্ত্রাসমূলক ঘটনাও রয়েছে। উভয় নেতা সুস্পষ্টভাষায় জানান যে, সন্ত্রাসবাদকে কোনও ভাবেই যুক্তিগ্রাহ্য করা যাবে না, সে, ধর্ম,জাতি, জনগোষ্ঠি, যার ভিত্তিতেই হোক না কেন। ২০১৬ সালে জানুয়ারি মাসে দুই দেশসন্ত্রাসবাদ বিষয়ে যে যৌথ বক্তব্য রেখেছিল, তার কথা স্মরণ করে পৃথিবীর যে কোনওস্থানেই সন্ত্রাসবাদের অস্তিত্বকে নির্মূল করার বিষয়ে তাঁদের দৃঢ় আস্থা ব্যক্তকরেন। সন্ত্রাসবাদীদের অর্থের যোগান প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর আরও উদ্যোগনেওয়া প্রয়োজন বলে উভয় নেতাই একমত হন এবং ফরাসী সরকারের উদ্যোগে ২০১৮’র এপ্রিলেপ্যারিসে সন্ত্রাসবাদের অর্থের যোগান বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনের বিষয়টিকেস্বাগত জানান।
12. সন্ত্রাসবাদেরনিরাপদ আশ্রয়স্থল ও পরিকাঠামোগুলিকে সমূলে উৎপাটনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল দেশের কাছেতাঁরা উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আহ্বান জানান। এইসব সন্ত্রাসবাদীদের নেটওয়ার্ক, তাদেরআর্থিক লেনদেনের ব্যবস্থা ও আল-কায়দা, দায়েশ/আইএসআইএস, জঈস-এ মহম্মদ, হিজবুলমুজাহিদিন, লস্কর-এ তৈবা এবং তাদের সহযোগী সংগঠনগুলির সদস্যদের চলাচল বন্ধ করারজন্য তাঁরা উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান। এইসব সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী ও সংগঠনগুলিদক্ষিণ এশিয়া ও সাহেল অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করছে বলে তাঁরা উল্লেখকরেন।
13. দুইনেতা এনএসজি এবং জিআইজিএন-এর মতো দুটি বাহিনীর যৌথ উদ্যোগ বিষয়ে সহযোগিতা প্রসঙ্গেআলাপ-আলোচনা ছাড়াও দু’দেশের তদন্তকারী সংস্থা ও উভয় দেশের সন্ত্রাসবাদ বিরোধীসংগঠনগুলির মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির কথাও বলেন। দু’দেশে যুবকদের মধ্যেসন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার প্রবণতা মোকাবিলা করতে একটি নতুন সহযোগিতামূলকউদ্যোগের কথাও আলোচনা হয়। রাষ্ট্রসংঘ, জিসিটিএফ, এফএটিএফ এবং জি-২০’র মতোবহুপাক্ষিক মঞ্চে দুই নেতাই সন্ত্রাসবাদ বিরোধিতায় জোরালো সওয়াল করার বিষয়ে একমতহন। তাঁরা রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা সংক্রান্তপ্রস্তাবটিকে রূপায়ণের জন্য সমস্ত রাষ্ট্রসংঘের সদস্য দেশের কাছে আহ্বান জানান।তাঁরা রাষ্ট্রসংঘে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক কনভেনশন দ্রুততার সঙ্গেঅনুমোদনের লক্ষ্যে কাজ করে যেতে একমত হন।
14. তাঁরাবেআইনি মাদক চোরাচালান প্রতিরোধে দু’দেশের মধ্যে চুক্তিকে স্বাগত জানান। এইচুক্তিটিতে দু’দেশের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে যোগাযোগের মাধ্যমে মাদক চালানবন্ধের এবং মাদক বিক্রয়ের অর্থে সন্ত্রাসবাদীদের অর্থের যোগান বন্ধের কথাও বলাহয়েছে।
15. ভারতও ফ্রান্সের মধ্যে ২০০৮ সালে শান্তিপূর্ণ কাজে পরমাণু শক্তি ব্যবহার বিষয়ে যেচুক্তি হয়েছিল, সেটি এবং ২০১৬’র জানুয়ারি মাসে এ বিষয়ে সহযোগিতা সংক্রান্ত চুক্তিঅনুসারে, ভারতে মহারাষ্ট্রের জয়িতাপুরে ৬টি পরমাণু চুল্লির কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতেএনপিসিআইএল এবং ইডিএফ-এর মধ্যে ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ে ফরওয়ার্ড এগ্রিমেন্ট’ চুক্তিচূড়ান্ত হওয়ায় উভয় নেতাই সন্তোষ ব্যক্ত করেন।
16. ২০১৮’রশেষ দিকে জয়ীতাপুরে পরমাণু চুল্লির কাজের সূচনা করার লক্ষ্যমাত্রার বিষয়ে উভয়নেতাই পুনরায় প্রত্যয় ব্যক্ত করা এবং সংশ্লিষ্ট দু’দেশের সংস্থার মধ্যে চুক্তিসংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা ত্বরান্বিত করার বিষয়ে কথা বলেন। জয়িতাপুর প্রকল্পটিস্থাপিত হলে এটিই হবে বিশ্বের বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। এইকেন্দ্র থেকে ৯.৬ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে। এরফলে, ২০৩০ সালের মধ্যেপুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির মাধ্যমে জীবাশ্ম জ্বালানিমুক্ত শক্তি উৎপাদনের ৪০ শতাংশলক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হবে। এই প্রসঙ্গে উভয় নেতাই সুলভে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবংফরাসী সরকারের পক্ষ থেকে অর্থনৈতিক দিক থেকে প্রতিযোগিতামূলক প্যাকেজের বিষয়ে কথাহয়। জয়িতাপুর পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন কেন্দ্রের স্থায়িত্বকালীন নিরবচ্ছিন্নভাবেজ্বালানি সরবরাহের বিষয়েও তাঁদের মধ্যে আলোচনা হয়। এই ধরনের বিদ্যুৎ উৎপাদনেরক্ষেত্রে প্রযুক্তি হস্তান্তর ও সরঞ্জামের স্থাণীয় পর্যায়ে উৎপাদন বিষয়ে সহযোগিতাবিষয়েও কথা হয়।
17. তাঁরাজয়িতাপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ সংক্রান্তভারতের আইন-কানুনগুলি প্রয়োগ করার বিষয়ে সমঝোতাকে স্বাগত জানান। ২০১০ সালের সিভিললায়াবিলিটি ফর নিউক্লিয়ার ড্যামেজ অ্যাক্ট এবং দ্য সিভিল লায়াবিলিটি ফর নিউক্লিয়ারড্যামেজ রুলস্ ২০১১ অনুসারে এই সমঝোতা হয়েছে। সমগ্র সমঝোতাটি আন্তর্জাতিক পরমাণুশক্তি সংস্থা কর্তৃক বিজ্ঞাপিত এবং অনুমোদিত যে আন্তর্জাতিক ক্ষতি পূরণ সংক্রান্তকনভেনশন রয়েছে, তা মেনে করা হয়েছে।
18. উভয়নেতাই দু’দেশের পরমাণু শক্তি সংগঠনের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ ও শান্তিপূর্ণ কাজেপরমাণুশক্তির ব্যবহারের ক্ষেত্রে উভয় দেশের পক্ষে কল্যাণকর বৈজ্ঞানিক এবংপ্রশিক্ষণের কাজকর্ম সংক্রান্ত উদ্যোগকে স্বাগত জানান। বিশেষ করে, দু’দেশের পরমাণুশক্তি সংগঠন সিইএ/আইএনএসটিএন এবং ডিএই/জিসিএনইপি’র মধ্যে সহযোগিতা সংক্রান্তসমঝোতাকে স্বাগত জানানো হয়। ভারতের পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণকারী পর্ষদ এবংফ্রান্সের অনুরূপ সংগঠন, যথাক্রমে এইআরবি এবং এএসএনএ’র মধ্যে প্রতিনিয়ত নিরবচ্ছিন্নযোগাযোগের বিষয়টিকেও স্বাগত জানানো হয়। এর ফলে, উভয় সংস্থার মধ্যে মূল্যবানঅভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন ক্ষেত্রের নিরাপত্তা ওনিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিষয়গুলির কাজ আরও ভালো হবে।
মহাকাশ ক্ষেত্রে সহযোগিতা
19. উভয়দেশের মধ্যে অসামরিক মহাকাশ অভিযানের ক্ষেত্রে যে ঐতিহাসিক এবং গুরুত্বপূর্ণ সংযোগরয়েছে, তার প্রেক্ষিতে দু’দেশের নেতৃবৃন্দ ‘মহাকাশ ক্ষেত্রে ভারত-ফ্রান্স যৌথদৃষ্টিভঙ্গী’ সংক্রান্ত নথিকে স্বাগত জানান। এই নথিটিতে মহাকাশ ক্ষেত্রে ভবিষ্যতেসহযোগিতার একটি সুস্পষ্ট পথরেখা চিহ্নিত করা হয়েছে। উভয় পক্ষই দু’দেশের মহাকাশসংস্থাগুলির যৌথ সহযোগিতায় তৃতীয় যৌথ উপগ্রহ মিশন, ‘তৃষ্ণা’কে স্বীকৃতি দেয়। এইউপগ্রহটির মাধ্যমে বাস্তুতন্ত্রের ওপর চাপ মুক্ত করা, জলের ব্যবহারের ওপর নজরদারিকরার কাজ হবে। এছাড়াও, ভারতে ওসানস্যাট-৩ উপগ্রহে ফরাসী প্রতিষ্ঠানগুলির সরঞ্জাম ওযন্ত্রপাতি রাখার বিষয়টিও এই সহযোগিতার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
(II) অর্থনৈতিক, শিক্ষাগত, বিজ্ঞান প্রযুক্তি,সাংস্কৃতিক এবং মানুষে-মানুষে সহযোগিতা
20. প্রধানমন্ত্রীমোদী এবং প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁ দু’দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক, শিক্ষাগত, বিজ্ঞান, সাংস্কৃতিকএবং পর্যতন ক্ষেত্রে সম্পর্কের গভীরতায় সন্তোষ ব্যক্ত করেন।
21. তাঁরাদু’দেশের মধ্যে অভিবাসন ও চলাচল সংক্রান্ত অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষরকে স্বাগতজানান। এই চুক্তির ফলে ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে ছাত্রছাত্রী ও বিভিন্ন পেশারমানুষজন উভয় দেশে সহজে যাতায়াত করতে পারবেন এবং দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে অবস্থান করতেপারবেন।
22. প্রধানমন্ত্রীএবং প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁ দু’দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে যোগাযোগ ও সফর বিনিময়েরবিষয়টিকে প্রশংসা করেন এবং দু’দেশের যুবকদের আরও বেশি করে সফর বিনিময়েরপ্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। এর মাধ্যমে উভয় দেশের যুবকরা একে অপরের সংস্কৃতি বিষয়েসচেতন হয়ে উঠবেন। তাঁরা এই প্রসঙ্গে ‘ভারত-ফ্রান্স ভবিষ্যৎ কর্মসূচি’র সূচনাকেস্বাগত জানান। ফরাসী সরকারের উদ্যোগে এই কর্মসূচির মাধ্যমে দু’দেশের যুবক-যুবতীরাসফর বিনিময় করতে পারবেন।
অর্থনৈতিক আদান-প্রদান
23. উভয়নেতাই ভারতে বেশ কয়েকটি নতুন উৎপাদনমূলক প্রকল্পে ফরাসী কোম্পানিগুলির যুক্তহওয়াকে স্বাগত জানান। ভারতে এই কোম্পানিগুলি গবেষণা ও উন্নয়নে যে বিরাট প্রকল্পহাতে নিয়েছে, তাতে তাঁরা সন্তোষ ব্যক্ত করেন। ফ্রান্সে ভারতীয় বিনিয়োগেরপ্রসঙ্গটিও সমানভাবে উত্থাপিত হয়।
24. সাম্প্রতিককালেদু’দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক লেনদেন বৃদ্ধিতে তাঁরা সন্তোষ ব্যক্ত করেনএবং ২০২২ সালের মধ্যে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেনকে ১ হাজার ৫০০ কোটি ইউরো-তেনিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে এই লেনদেনের গতিকে আরও জোরালো করার পক্ষে মত প্রকাশ করেন।দু’দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ওকোম্পানিগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে তাঁরা মনে করেন। দ্বিপাক্ষিকপর্যায়ে বাণিজ্য ও বিনিয়োগকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলারওপরও দুই নেতা একমত হন।
এই লক্ষ্যেউভয় নেতাই –
ক) ভারত-ফ্রান্স যৌথ কমিটির মধ্যে অর্থনৈতিকসহযোগিতা সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা নিয়মিত করার ওপর জোর দেন
খ) ২০১৮’র মার্চ মাসে দিল্লিতে দু’দেশের সিইওফোরামের যৌথ সভাপতিরা যে নতুন সুপারিশগুলি করেছে, সেগুলিকে স্বাগত জানান।
25. অর্থনৈতিকএবং আর্থিক ক্ষেত্রে সহযোগিতাকে গভীরতর করার ক্ষেত্রে প্রতি বছর একটি করে মন্ত্রীপর্যায়ের আলোচনা বৈঠক আয়োজনের ওপর উভয় নেতাই গুরুত্ব দেন।
শিক্ষা এবংবিজ্ঞান-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতা
26. উভয়নেতাই সরকারি ব্যবস্থার মধ্যে শিক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা ও বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে সহযোগিতা বিষয়ে সন্তোষ ব্যক্ত করেন এবং ২০২০ সালের মধ্যেউভয় দেশের ছাত্রছাত্রীর শিক্ষাগত সফর বিনিময়ের সংখ্যাকে ১০ হাজারে পৌঁছে দেওয়ারকথা বলেন। এ প্রসঙ্গে উভয় দেশ পারস্পরিক ডিগ্রির স্বীকৃতি প্রদান প্রসঙ্গেচুক্তিকে স্বাগত জানান। এর ফলে, ভারতের ছাত্রছাত্রীরা ফ্রান্সে এবং ফ্রান্সেরছাত্রছাত্রীরা ভারতে উচ্চ শিক্ষা লাভ করতে পারবেন এবং তাঁদের কর্মযোগ্যতা বৃদ্ধিপাবে। ২০১৮ সালের ১০-১১ মার্চ নতুন দিল্লিতে গবেষণা ও উচ্চ শিক্ষার বিষয়ে যে প্রথমভারত-ফ্রান্স সম্মেলন বা জ্ঞান সংক্রান্ত শিখর বৈঠক হয়েছে, উভয় নেতাই তাকে স্বাগতজানান।
27. উভয়দেশের ক্ষেত্রেই মানুষের দক্ষতার বিকাশকে একটি অগ্রাধিকারমূলক ক্ষেত্র হিসাবেউল্লেখ করে উভয় নেতাই বিভিন্ন ফরাসী কোম্পানি ভারতে এদেশীয় শ্রমিক-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণেরক্ষেত্রে যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে, তাকে স্বাগত জানান। উভয় পক্ষই দু’দেশেরদক্ষতা বৃদ্ধিকারী প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনগুলির মধ্যে সহযোগিতার প্রাতিষ্ঠানিকব্যবস্থার পরিধিকে আরও বাড়ানোর কথা বলেন।
28. দুইনেতা গবেষণায় উৎসাহ দানের লক্ষ্যে ইন্দো-ফ্রেঞ্চ সেন্টার ফর প্রোমোশন অফঅ্যাডভান্স রিসার্চ (সিইএফআইপিআরএ) যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে, তাতে সন্তোষব্যক্ত করেন এবং ২০১৭ সালে এই সংস্থা ৩০তম বর্ষপূর্তিতে উভয়েই অভিনন্দন জানান। এইসংস্থাটি যাতে গবেষণা, বিপণন এবং সামাজিক প্রয়োজনের কাজে মৌলিক গবেষনারউদ্ভাবনগুলিকে প্রয়োগ করতে পারে, তার জন্য এই সংস্থাকে উৎসাহিত করেন। বিজ্ঞান,প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার পরিধি ও বিষয়কে আরও বাড়ানোরলক্ষ্যে উভয় নেতাই ২০১৮ সালের মধ্যে দু’দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংক্রান্ত যৌথকমিটির বৈঠকের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন।
সাংস্কৃতিক বিনিময়
29. ২০১৬সালে ‘নমস্তে ফ্রান্স’ নামে উৎসবের সাফল্যে উভয় নেতাই সন্তোষ ব্যক্ত করেন। এইউৎসবে ৪১টি শহরে ৮৩টি অনুষ্ঠানে ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরা হয় এবং‘বঁজুর ইন্ডিয়া’ নামে ভারতে আয়োজিত উৎসবের তৃতীয় অনুষ্ঠানে ভারতের ৩৩টি শহরে ৩০০ফরাসী বিষয়কে তুলে ধরা হয় । উভয়নেতাই ফ্রান্সে ভারত কর্তৃক বর্ষব্যাপী ‘India@70’নামে উৎসবের আয়োজনকে অভিনন্দন জানান।
30. উভয়দেশের মধ্যে মৈত্রী সম্পর্কের ক্ষেত্রে সাহিত্যের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে দুইনেতা ২০২০ সালে ফরাসী বইমেলা বা ‘স্যালোন দু লিভরে দে পারিস’-এর ৪২তম অনুষ্ঠানেসম্মানীয় অতিথি হিসাবে ভারতের অংশগ্রহণের প্রস্তাবকে উভয় নেতাই স্বাগত জানান।
31. প্রধানমন্ত্রীমোদী এবং প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁ উভয় দেশের মধ্যে পর্যটক বিনিময়ের সংখ্যা বৃদ্ধিতেসন্তোষ ব্যক্ত করেন। ২০১৪ সাল থেকে ফ্রান্সে ভারতীয় পর্যটকের সংখ্যা ৬৯ শতাংশেরওবেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। উভয় দেশ ২০২০ সালের মধ্যে ফ্রান্সে ১০ লক্ষ ভারতীয় পর্যটক এবংভারতে ৩ লক্ষ ৩৫ হাজার ফরাসী পর্যটক আগমনের লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করেছে।
(III) এই গ্রহের জন্য অংশীদারিত্ব
32. উভয়দেশই জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নেতৃত্বদানের ক্ষেত্রে তাঁদের প্রত্যয়ব্যক্ত করেন। এই লড়াইয়ের মধ্যে রয়েছে – বিচক্ষণ জলবায়ু ব্যবস্থা, জলবায়ুর উন্নয়নকেউৎসাহ প্রদান এবং কম গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন যুক্ত উন্নয়ন উভয় পক্ষই জলবায়ুসংক্রান্ত প্যারিস চুক্তি সম্পূর্ণভাবে রূপায়ণ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। এছাড়াও,রাষ্ট্রসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের আওতায় মানবসভ্যতারকল্যাণে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কাজ চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। তাঁরা ২০১৭ সালের১২ ডিসেম্বর প্যারিসে ‘এক গ্রহের শীর্ষ বৈঠক’ আয়োজনের সদর্থক অবদানের ওপর জোর দেন।
33. ফরাসীরাষ্ট্রপতি পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে বিশ্ব চুক্তির লক্ষ্যে উদ্যোগের প্রতি ভারতেসমর্থনের জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ধন্যবাদ জানান।
আন্তর্জাতিক সৌর জোট
34. উভয়নেতাই আন্তর্জাতিক সৌর জোট সংক্রান্ত ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি কার্যকর করার বিষয়টিকেস্বাগত জানান এবং নতুন দিল্লিতে ২০১৮’র ১১ মার্চ আন্তর্জাতিক সৌর জোটের প্রতিষ্ঠাসম্মেলন যৌথভাবে আয়োজনের আগ্রহ ব্যক্ত করেন। উভয় নেতা আন্তর্জাতিক সৌর জোটের আওতায়বিশাল পরিমাণ সৌর শক্তি উৎপাদনের জন্য সুলভ সহায়সম্পদ সংগ্রহের ওপর জোর দেন।
পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি
35. উভয়নেতাই পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ক্ষেত্রে ভারত-ফ্রান্স প্রযুক্তিগত সহযোগিতার ওপরজোর দেন। তাঁরা সৌরশক্তির উন্নয়নে সরকারি ও বেসরকারি তহবিল সংগ্রহের গুরুত্বের কথাবলেন। এই প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক সৌর জোটের মধ্যে একটি আন্তর্জাতিক বণিকসভা কমিটিস্থাপনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান। এই বণিকসভায় এমইডিইএফ, এসইআর, ফিকি এবংসিআইআইএ-র মতো বণিকসভার যোগদানের আগ্রহকেও তাঁরা স্বাগত জানান।
সুষম পরিবহণ
36. উভয়নেতাই ভারত ও ফ্রান্সের সুষম উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক বৃদ্ধির জন্য কম গ্রিনহাউস গ্যাসনির্গমন যুক্ত দক্ষ পরিবহণ ব্যবস্থাকে একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পূর্ব শর্ত হিসাবেচিহ্নিত করেন। বিদ্যুৎচালিত পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে উভয় নেতাই তাঁদেরউচ্চাকাঙ্খার কথা বলেন। এ প্রসঙ্গে ভারতের নিতি আয়োগ ও ফ্রান্সের মিনিস্ট্রি অফইকোলজিক্যাল অ্যান্ড ইনক্লুসিভ ট্রানজিশন-এর মধ্যে একটি আগ্রহপত্র স্বাক্ষরেরবিষয়টিকে স্বাগত জানান। ফরাসী উন্নয়ন সংস্থা এএফডি কর্তৃক ফ্রান্সের টেকনিক্যালসহযোগিতায় এই বিষয়টিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।
37. উভয়নেতাই দু’দেশের মধ্যে রেলের ক্ষেত্রে সহযোগিতাকে শক্তিশালী করার কথা বলেন। দিল্লিথেকে চণ্ডীগড়ের মধ্যে একটি মধ্য-উচ্চ গতির রেল যোগাযোগ সংক্রান্ত সম্ভাব্যতাসমীক্ষা সম্পূর্ণ হওয়া এবং আম্বালা থেকে লুধিয়ানা পর্যন্ত রেল স্টেশনগুলিরউন্নয়নের সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজ সম্পূর্ণ হওয়ায় উভয়েই সন্তোষ ব্যক্ত করেন।দিল্লি-চন্ডীগড় সেক্টরের ট্রেনগুলির গতি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে উভয় পক্ষই ভবিষ্যতেটেকনিক্যাল সহযোগিতা সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে। এছাড়াউভয় নেতাই একটি স্থায়ী ভারত-ফ্রান্স রেল ফোরাম প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্তকে স্বাগতজানান। ভারতের রেল মন্ত্রক এবং ফ্রান্সের পরিবহণ ও রেল মন্ত্রকের মধ্যে এই ফোরামেরমাধ্যমে দু’দেশের মধ্যে রেল-কেন্দ্রিক পরিবহণ শিল্পের সহযোগিতার পথ এর ফলে প্রশস্তহবে।
স্মার্টসিটি
38. সুষমশহর ও স্মার্টসিটি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে সহযোগিতায়প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁ সন্তোষ ব্যক্ত করেন। এই সহযোগিতারফলে ভারত ও ফ্রান্সে শহরগুলির উন্নয়নে বহু ক্ষেত্রে উদ্ভাবনের সুফলকে ভাগ করেফলপ্রসূ সহযোগিতামূলক কাজ করা সম্ভব হবে। চণ্ডীগড়, নাগপুর এবং পুদুচেরী – এই তিনটিস্মার্ট শহরের ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতাকে তাঁরা স্বাগত জানান। এছাড়া,স্মার্টসিটি মিশনের আওতায় ফরাসী উন্নয়ন সংস্থা এএফডি যে টেকনিক্যাল সহযোগিতারব্যবস্থা করেছে, তাকেও তাঁরা স্বাগত জানান। এএফডি এবং ভারত সরকারের মধ্যেস্মার্টসিটি মিশনে ১০ কোটি ইউরো ঋণ চুক্তিকেও তাঁরা স্বাগত জানান।
(IV) আন্তর্জাতিক ইস্যুতে কৌশলগত বিষয়ে দু’দেশের অভিন্নঅবস্থানের পরিসর বৃদ্ধি
39. কৌশলগতঅংশীদার হিসাবে দুই দেশ গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ে অভিন্নঅবস্থান নিয়ে থাকে। উভয় দেশে অভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনাও সমন্বয়ের কাজ অব্যাহত আছে।
40. নিরাপত্তাপরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসাবে ভারতের প্রার্থী পদকে ফ্রান্সের পক্ষ থেকে পুনরায়সমর্থন জানানো হয়েছে। গণবিধ্বংসী পারমাণবিক অস্ত্রশস্ত্রের প্রসার রোধের ক্ষেত্রেভারত ও ফ্রান্স অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গীর অংশীদার।
41. ২০১৫সালের জুন মাসে ভারত ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি সংক্রান্ত রাষ্ট্র জোটের এমটিসিআর-এর অন্তর্ভুক্তহয়েছে, ২০১৭’র ডিসেম্বরে ‘ওয়াসেনার অ্যারেঞ্জমেন্ট’ ২০১৭’র জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়াগ্রুপের সদস্য হয়েছে। এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ গোষ্ঠীতে ভারতের অন্তর্ভুক্তিকেফ্রান্স স্বাগত জানিয়েছে। ‘ওয়াসেনার অ্যারেঞ্জমেন্ট’ গোষ্ঠীতে ভারতের সদস্যপদলাভের ক্ষেত্রে ফ্রান্সের নেতৃত্বে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তার জন্যপ্রধানমন্ত্রী মোদী প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁকে ধন্যবাদ জানান। এছাড়া, অস্ট্রেলিয়াগ্রুপে ভারতের সদস্যপদ লাভের ক্ষেত্রে ফ্রান্সের সমর্থনের জন্যও তিনি ধন্যবাদজানান। বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক শক্তির প্রসার রোধের উদ্যোগকে আরও শক্তিশালী করারলক্ষ্যে পারমাণবিক সরঞ্জাম সরবরাহকারী গোষ্ঠীতে ভারতের সদস্যপদের জন্য সদস্যরাষ্ট্রগুলির মধ্যে ঐকমত্য গড়ে তুলতে ফ্রান্স পুনরায় তাদের জোরালো সমর্থন ব্যক্তকরেছে।
42. উভয়নেতাই উত্তর কোরিয়া যেভাবে পারমাণবিক এবং ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিচালিয়ে যাচ্ছে, সেই কাজকে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গভীর বিপদ বলেউল্লেখ করেন এবং কোরীয় উপদ্বীপে সম্পূর্ণ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান জানান।উভয় পক্ষই কোরিয়াকে তাদের পারমাণবিক এবং ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিকে যেসব দেশ সাহায্যকরছে, তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর জোর দেন। তাঁরা এই ধরনেরচ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর মতৈক্যের গুরুত্বের কথা বলেন। আলোচনারমাধ্যমে এই ধরনের সমস্যার সার্বিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধান করার লক্ষ্যে চাপ সৃষ্টিকরার জন্য রাষ্ট্রসঙ্ঘের জারি করা নিষেধাজ্ঞা সম্পূর্ণ রূপে কার্যকর করারপ্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।
43. ভারতও ফ্রান্স, ইরান ও ৬টি দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত পরমাণু শক্তি সংক্রান্ত যৌথকর্মপরিকল্পনা সম্পূর্ণভাবে রূপায়ণের ওপর জোর দেন। ইরান যে এই কর্মপরিকল্পনাসঠিকভাবে মেনে চলছে, এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার বক্তব্যকে তাঁরাস্বীকৃতি দেন। রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ অনুমোদিত এই চুক্তিটি সম্পূর্ণভাবেরূপায়ণের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা বজায় থাকবে এবংপরমাণু শক্তি প্রসার রোধের উদ্যোগেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেবে বলে তাঁরা অভিমতপ্রকাশ করেন। তাঁরা রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এই সংক্রান্ত প্রস্তাবটিসম্পূর্ণভাবে রূপায়ণের আহ্বান জানান।
44. সিরিয়াসমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে রাষ্ট্রসংঘের উদ্যোগে জেনিভা শান্তি প্রক্রিয়ার ওপরউভয় নেতাই তাঁদের দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করেন। সিরিয়ার মানুষের আশা-আকাঙ্খা পূরণেসেদেশের সরকার যে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু করেছে, তাকেও শান্তি প্রক্রিয়ার সঙ্গেযুক্ত করা দরকার বলে তাঁরা মনে করেন। নিরীহ নাগরিকদের নিরাপত্তা এবং মানবিক সহায়তাকর্মীদের বিধ্বস্ত অঞ্চলগুলিতে প্রবেশাধিকারের বিষয়টিকেও তাঁরা বিশেষ গুরুত্ব দেন।উভয় নেতাই জোরের সঙ্গে জানান যে, সিরিয়া সমস্যার কোনও সামরিক সমাধান হতে পারে নাএবং সেদেশের ভৌগোলিক অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্বকে সুরক্ষিত রাখার কথাও তাঁরা বলেন।কোনও পরিস্থিতিতেই যেন সেখানে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার না করা হয়, তার ওপরও বিশেষগুরুত্ব দেন।
45. উভয়নেতাই ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ভারতের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্ব বিষয়ে পুনরায় তাঁদেরসমর্থন জ্ঞাপন করেন। এই অংশীদারিত্বটি অভিন্ন নীতি ও মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিকনিয়ম-কানুনের প্রতি মান্যতার ভিত্তিতে কাজ করছে। উভয়েই ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন যাতেতাদের বহুপাক্ষিক এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত ইস্যু, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক এবং জলবায়ুপরিবর্তন বিষয়ে সহযোগিতা গভীরতর করে তুলতে পারে – সে বিষয়ে একমত হন। ২০১৭ সালের ৬অক্টোবর নতুন দিল্লিতে ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে চতুর্দশ শিখর বৈঠকের আয়োজনকরা হয়েছিল, তার ফলাফলকে স্বাগত জানান। তাঁরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ভারতের মধ্যেব্যাপক-ভিত্তির বাণিজ্য ও বিনিয়োগ চুক্তি বিষয়ে আলোচনা আবার নতুন করে শুরু করারকথা বলেন।
46. ভারতও ফ্রান্স আজকের দিনে বিশ্বায়িত পৃথিবীর মধ্যে যোগাযোগের গুরুত্বের কথা স্বীকারকরেন। আন্তর্জাতিক নিয়ম-নীতির ভিত্তিতে সুপ্রশাসন, আইনের শাসন, স্বচ্ছতা এবংখোলামেলা পরিবেশে যোগাযোগের উদ্যোগের ওপর তাঁরা গুরুত্ব দেন। এছাড়া, এই যোগাযোগেরক্ষেত্রে সামাজিক ও পরিবেশগত মান, আর্থিক দায়দায়িত্বের নীতি, দায়বদ্ধ ঋণ পরিশোধব্যবস্থার কথাও রয়েছে। অন্যদিকে, এটি সংশ্লিষ্ট দেশগুলির ভৌগোলিক অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্বকেমান্য করেই চালানো দরকার বলে তাঁরা অভিমত প্রকাশ করেন।
47. ভারতও ফ্রান্স জি-২০ দেশগোষ্ঠীর সিদ্ধান্তগুলি রূপায়ণে তাঁদের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে।অন্যান্য জি-২০ দেশগুলির মতো শক্তিশালী, সুষম এবং অন্তর্ভুক্ত বৃদ্ধির লক্ষ্যেএকযোগে কাজ করার কথাও দুই দেশ বলেছে।
48. বহুপাক্ষিকবাণিজ্যিক ব্যবস্থায় এবং মুক্ত ও অবাধ বাণিজ্য ব্যবস্থার উন্নয়নের ক্ষেত্রে তারগুরুত্বের ওপর তাঁরা জোর দেন। তাঁরা বিশ্ব বাণিজ্য সংগঠনের সমস্ত রাষ্ট্রের সঙ্গেএকযোগে কাজ করার কথাও বলেন। নিয়মতান্ত্রিক বহুপাক্ষিক বাণিজ্যিক ব্যবস্থার মূলনীতির প্রতি তাঁরা অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
49. ভারতও ফ্রান্স বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ও আর্থিক প্রশাসন ব্যবস্থার উন্নয়ন, বিশ্বেরবিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে অসাম্য হ্রাস, অন্তর্ভুক্ত উন্নয়নে উৎসাহ প্রদান,সন্ত্রাসবাদ, ক্ষুধা, দারিদ্র্য, বেকারত্ব, জলবায়ু পরিবর্তন, শক্তি নিরাপত্তা এবংলিঙ্গ-ভিত্তিক অসাম্যের সমস্যা দূর করতে একযোগে কাজ করার কথা বলেন।
50. ভারতও ফ্রান্স আফ্রিকার দেশগুলির স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি সুনিশ্চিত করতে সহযোগিতা করারকথা বলেন। এইসব দেশগুলিতে যৌথ উদ্যোগে পরিকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন-কেন্দ্রিকউদ্যোগের মাধ্যমে এই কাজ চালিয়ে যাওয়ার কথাও তাঁরা বলেন। ২০১৭ সালের জুন মাসেপ্যারিসে আফ্রিকা বিষয়ক প্রথম আলোচনা প্রসঙ্গে উভয় নেতা কয়েকটি অভিন্ন প্রকল্পরূপায়ণে তাঁদের আগ্রহের কথা জানান। উভয় নেতাই জি-৫ সাহেল যৌথ বাহিনী গড়ে তোলারসিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান। এই বাহিনী গঠনের মধ্য দিয়ে সন্ত্রাসের মতো সমস্যামোকাবিলায় এবং এই অঞ্চলে সংগঠিত সীমান্তপারের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আফ্রিকার দেশগুলিযে একযোগে কাজ করতে পারে, তা সুস্পষ্ট হয়েছে।
51. দুইনেতা ভারত মহাসাগরীয় দেশগুলির সংগঠন আইওআরএ’র প্রতি তাঁদের সমর্থন ব্যক্ত করেন। এইসংগঠনের কাজকর্মে সক্রিয়ভাবে উভয় দেশই সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
52. বিভিন্নক্ষেত্রে উভয় দেশের নীতিগত অভিন্নতার প্রেক্ষিতে পূর্ব এশিয়া ও মধ্য এশিয়ার ওপরনিয়মিত বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের আলাপ-আলোচনা শুরু করার বিষয়ে দুই নেতা একমত হন। দু’দেশেরবিদেশ মন্ত্রীদের মধ্যে একটি বার্ষিক নীতি ও পরিকল্পনা বিষয়ক আলোচনার ব্যবস্থাও চূড়ান্তহয়েছে।
53. তাঁরভারত সফরকালে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে তাঁর ও তাঁর প্রতিনিধি দলের জন্য যে উষ্ণআতিথেয়তার ব্যবস্থা করা হয়েছে, তার জন্য প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁ প্রধানমন্ত্রীমোদীকে ধন্যবাদ জানান এবং শ্রী মোদীকে ফ্রান্সে তিনি স্বাগত জানানোর অপেক্ষায়থাকবেন বলে জানান।