“একজনের পাসপোর্টের রং অন্যের থেকে ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু মানবতারবন্ধনের থেকে শক্তিশালী আর কোন কিছুই হতে পারে না” – একথা বারংবার বলে এসেছেনপ্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। যখনই কোন বিপদ বা বিপর্যয় উপস্থিত হয়েছে, তখনইতাঁর এই কথার বাস্তব প্রতিফলন সম্ভব করে দেখিয়েছেন তিনি।
ইয়েমেন-এ সংঘাত ও সংঘর্ষ যখন চরমে, তখন বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রের মানুষসেই সংঘর্ষ কবলিত এলাকাগুলিতে আটকে পড়েন। সেই কঠিন পরিস্থিতিতে দুর্গত মানুষদেরউদ্ধারে বিন্দুমাত্র দেরি করেনি ভারত সরকার। যথেষ্ট তৎপরতার সঙ্গে উদ্ধার করে নিয়েআসা হয় আটকে পড়া ভারতীয় তথা অন্যান্য দেশের নাগরিকদের। বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রই তখনউদ্ধার কাজে ভারতের সাহায্যের প্রত্যাশী। সেই মুহূর্তে ভারত যেভাবে দক্ষতার সঙ্গেউদ্ধার কাজের বিষয়টি পরিচালনা করে, তা যথেষ্ট তাৎপর্যময়।
আর্ত ও বিপন্নের ত্রাণ এবং উদ্ধারে ভারত যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, তাপর্যালোচিত হয়েছে সর্বোচ্চ মাত্রায়। পরিস্থিতির ওপর নিরন্তর দৃষ্টি রেখেছিলেনভারতের বিদেশ মন্ত্রী শ্রীমতী সুষমা স্বরাজ। বিদেশ প্রতিমন্ত্রী শ্রী ভি কে সিংইয়েমেন-এ গিয়ে ব্যক্তিগতভাবে এই উদ্ধার কাজের বিষয়টি পরিচালনা করেন।
মনে পড়ে যায়, ২০১৫-র ২৫ এপ্রিল নেপালের সেই বিধ্বংসী ভূমিকম্পের ঘটনা।নেপালের বিপন্ন ভাই-বোনদের দুঃখ, কষ্ট ও যন্ত্রণাকে ভাগ করে নিতে ভারত বিন্দুমাত্রবিলম্ব করেনি। ভারতীয় সেনাবাহিনী, বিপর্যয় মোকাবিলা গোষ্ঠী এবং শীর্ষস্থানীয়কর্মীরা নেপালে উপস্থিত থেকে পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করে আনতে নিরলস পরিশ্রম চালিয়েগেছেন। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার লক্ষ্যে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা-বৈঠকগুলিতে নেতৃত্বদেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী স্বয়ং। একইসঙ্গে, ভূকম্প বিধ্বস্ত এলাকাগুলিথেকে মানুষকে উদ্ধার করে নিয়ে আসার কাজে চেষ্টার ত্রুটি করেনি ভারতের সেনাবাহিনী ওবিপর্যয় মোকাবিলা গোষ্ঠী। ভারতীয় এবং অন্যান্য দেশের নাগরিকদের উদ্ধার করে নিয়েআসা হয় বিপদের কবল থেকে।
ভারতের এই মানবতাবাদী প্রচেষ্টা উচ্চ প্রশংসিত হয় বিশ্ব মঞ্চে।ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ওল্যাঁদ কিংবা প্রধানমন্ত্রী হার্পার, যাঁদের সঙ্গেইসাক্ষাৎকার ও আলোচনা-বৈঠকে মিলিত হয়েছেন শ্রী নরেন্দ্র মোদী, তাঁর এই প্রচেষ্টারজন্য বিশেষ প্রশংসিত হয়েছেন তিনি। রাষ্ট্র নেতারা সপ্রশংস অভিব্যক্তিতে অভিনন্দিতকরেছেন তাঁকে। ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্রমোদীর সঙ্গে দূরভাষের মাধ্যমে এক আলাপচারিতায় ভারতের এই উদ্যোগ ও প্রচেষ্টারঅকুন্ঠ প্রশংসা করেছেন। এমনকি, ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মিঃ রিচার্ডভার্মাও দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের মুহূর্তে ভারতের এই বিশেষ ভূমিকার প্রশংসা করেছেনউচ্চকিতভাবে।
আফগানিস্তানে দীর্ঘ আট মাসের বন্দিদশা কাটিয়ে ঘরে ফেরেন ফাদারঅ্যালেক্সিস প্রেম কুমার ২০১৫-র ফেব্রুয়ারিতে। আর্ত ও অসুস্থের সেবায় নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন ফাদার অ্যালেক্সিস। কিন্তু অমানবতাবাদী গোষ্ঠীগুলির পরিকল্পনা ছিলঅন্যরকম। তাঁকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তাঁর মুক্তি নিয়ে চলে নানারকমটালবাহানা। পরিশেষে, ভারত সরকার নিরলস প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে ফাদারকে ঘরে ফিরিয়েআনে। ফাদার আবার মিলিত হন তাঁর পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে। ফাদার অ্যালেক্সিসকে এইভাবেউদ্ধার করে নিয়ে আসার জন্য সকৃতজ্ঞ অভিব্যক্তি প্রকাশ পায় তাঁর পরিবার-পরিজনদেরচোখে-মুখে। তাঁরা আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদীকে।
মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন প্রান্তে যে সমস্ত ভারতীয় সেবিকা দীর্ঘদিন ধরেআটক অবস্থায় ছিলেন, তাঁদেরও উদ্ধার করে নিয়ে আসে কেন্দ্রীয় সরকার। এইভাবে ইরাকথেকে ভারতীয় সেবিকাদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে বিশেষভাবে ধন্যবাদজানান কেরলের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ওমেন চান্ডি।
আর এইভাবেই, বিপদ ও বিপর্যয়ের মুহূর্তে ভারত বারবার একথাই প্রমাণ করেএসেছে যে পাসপোর্টের রং নয়, মানবতার বন্ধনই হল শক্তির আসল উৎস।