"ভারত সরকারের স্বাস্থ্য সুরক্ষা উদ্যোগ ৫০ কোটি ভারতীয়র ওপরে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ভারতের দরিদ্র জনগণকে দারিদ্রতা থেকে মুক্ত করার উদ্যোগ আমাদেরকেই নিতে হবে কারণ এই দারিদ্রতার জন্য তাঁরা চিকিৎসার ব্যায়ভার গ্রহণ করতে পারে না"।
- প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
প্রত্যেক ভারতীয়র সস্তায় উচ্চমানের চিকিৎসা ব্যবস্থা পাওয়া উচিত। সুস্থ সমাজ গড়ে তোলার জন্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো খুব প্রয়োজনীয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার সুস্থ ভারত গড়ে তোলার লক্ষে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
মা ও শিশুর স্বাস্থ্য
প্রধানমন্ত্রী মাতৃ সুরক্ষিত মাতৃত্ব অভিযানের মাধ্যমে সুরক্ষিত, সুসংহত এবং উচ্চমানের মাতৃত্বকালীন সুরক্ষা দেওয়া হচ্ছে ৯মাস পর্যন্ত অন্তঃসত্ত্বা মা-কে। মা ও শিশুর সুসাস্থের জন্য প্রায় ১.৩ কোটি টাকা ব্যায়ে গর্ভাবতী মায়েদের চিকিৎসার জন্য ১৩,০৭৮টি স্বাস্থ্য পরিষেবা কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এছাড়াও ৮০.৬৩ লক্ষ গর্ভাবতী মায়েদের টিকাকরণ করা হয়েছে। চিকিৎসার সময় ৬.৫ লক্ষ অতি ঝুঁকি সম্পন্ন গর্ভাবস্থা চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে।লা হয়েছে। এছাড়াও ৮০.৬৩ লক্ষ গকিৎসার সময় ৬.৫ লক্ষ অতি ঝুঁকি সম্পন্ন গর্ভাবস্থা চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মাতৃমাত্রু বন্দনা যোজনার মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয় সন্তানসম্ভবা বা প্রথম সন্তানের দুগ্ধবতী জননীদের সন্তান হওয়ার আগে ও পরে যথেষ্ট বিশ্রাম দেওয়ার জন্য। প্রত্যেক বছর প্রায় ৫০ লক্ষ মা-কে ৬০০০ টাকা নগদ দিয়ে এই সাহায্য করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
শৈশব হচ্ছে স্বাস্থ্য গঠনের সময়। মিশন ইন্দ্রধনুষ যোজনা হচ্ছে এমনই একটি যোজনা যার মাধ্যমে ২০২০ সালের মধ্যে সমস্ত শিশুদের ডিপথেরিয়া, হুপিং, কফ, টিটেনাস, পোলিও, টিউবারকিউলসিস, মিসেলস এবং হেপাটাইটিস-বি ইত্যাদি টিকাকরণ করা হয়েছে অথবা হবে।
৫২৮টি জেলায় যেখানে ৮১.৭৮ লক্ষ গর্ভাবতী মহিলা এবং ৩.১৯ কোটি শিশুদের টিকাকরণের মাধ্যমে চার দফায় সম্পন্ন হয়েছে মিশন ইন্দ্রধনুষ প্রকল্প। ইনঅ্যাক্টিভেটেড পোলিও টিকা (আইপিভি) যা মৌখিক টিকাকরণের থেকে অনেক বেশি কার্যকরী, এর সূচনা করা হয়েছে ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে। ৪ কোটিরও বেশি ডোস শিশুদের দেওয়া হয়েছে। ২০১৬ সালের মার্চ মাসে রেটা ভাইরাসের টিকা চালু হয়েছে যা প্রায় ১.৫ কোটি শিশুকে দেওয়া হয়েছে। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মিসেলস রুবেলা (এমআর) টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে যা এখন অবধি ৮ কোটি শিশুকে দেওয়া হয়েছে। ২০১৭ সালের মে মাসে নিউমোকোক্কাল কোনজুগেট ভ্যাকসিন (পিসিভি) দেওয়া শুরু হয়েছে তা ইতিমধ্যেই ১৫ লক্ষ শিশুর দেহে প্রয়োগ করা হয়েছে।
প্রতিরোধক স্বাস্থ্যসেবা
দৈনন্দিন জীবনে নিত্য নতুন রোগের উদ্ভব হচ্ছে যা মানুষের শরীরে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনছে পৃথীবী পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে যোগাসন যা দেহের একাধিক উপকার করে তা একটি জন-আন্দোলনের রুপ নিয়েছে। ২০১৫ সালের পর থেকে প্রত্যেক বছর জুনের ২১ তারিখ আন্তর্জাতিক যোগ দিবষ হিসেবে পালিত হয় যা সারা বিশ্বে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে এবং তাতে সারা বিশ্বের মানুষ যোগ দিয়েছেন।
দেশ থেকে অপুষ্টি মুছে ফেলতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পোষণ অভিযানের সুচনা করেছেন। দেশে এই প্রথম এই রকমের উদ্যোগ নেওয়া হল এই ধরণের সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য। সঠিক পথে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে এবং নির্দিষ্ট লক্ষে এগোলেই অপুষ্ট নিরাময় করা সম্ভব।
সুলভ এবং উন্নত মানের স্বাস্থ্য পরিষেবা
২০১৪ সালের মে মাসে মধ্যে কম খরচায় সুরক্ষিত স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে ১০৮৪টি গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ তার মধ্যে জীবনদায়ী ওষুধগুলিকে অর্থ নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনা হয়েছে এর সম্পূর্ণ সুফল ভোগ করেছে ক্রেতারা, যা প্রায় ১০,০০০ কোটি টাকা।
সারা ভারতে প্রায় ৩ হাজারেরও বেশি প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় জন ঔষধি কেন্দ্র খোলা হয়েছে, সেখান থেকে ঔষধ কিনলে সাশ্রয় হয় প্রায় ৫০ শতাংশ সেই সঙ্গে অমৃত (আফোর্ডেবল মেডিসিন্স এন্ড রিলায়েবল ইমপ্লান্টস ফর ট্রিটমেন্ট) ঔষধ বিপনী থেকে ক্যানসার, হৃদরোগের সঙ্গে হৃদ যন্ত্র প্রতিস্থাপন চিকিৎসার সামগ্রী প্রায় ৬০ থেকে ৯০ শতাংশ ছাড়ে পাওয়া যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার হৃদরোগের স্টান্ট এবং হাটু প্রতিস্থাসপনের খরচ কমিয়ে দিয়েছে ৫০-৭০ শতাংশ। এই পদক্ষেপ রোগীদের বড়সড় খরচের হাত থেকে রেহাই দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ডায়ালিসিস কর্মসূচী ২০১৬ সালে শুরু করা হয়েছে, এর মাধ্যমে দরিদ্র রোগীদের বিনামূল্যে ডায়ালিসিস করানো হয় এবং ন্যাশনাল হেল্থ মিশনের আওতায় ভর্তুকি দিয়ে সেকেটস করা হয়। এই যোজনার আওতায় প্রায় ২.৫ লক্ষ রোগী এই সুবিধা পেয়ে থাকে এবং প্রায় ২৫ লক্ষ ডায়ালিসিস শিবির করা হয়েছে। এখন প্রায় ৪৯৭টি ডায়ালিসিস অপারেশনাল কেন্দ্র এবং মোট ৩৩৩০টি ডায়ালিসিস মেশিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আয়ুষ্মান ভারত
চিকিৎসার বিপুল খরচ লক্ষ লক্ষ ভারতীয়কে দারিদ্রতার মুখে ঠেলে দিচ্ছে। স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে বিশাল সংখক সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা আসরে নেমেছে। আয়ুষ্মান ভারত এরকমই একটি প্রকল্প যেটা সুসংহত, সুলভ এবং উচ্চ মানের স্বাস্থ্য পরিষেবা দিয়ে থাকে। এটা পৃথিবীর সব থেকে বড় স্বাস্থ্য বীমা, এর আওতায় প্রায় ৫০ কোটি মানুষকে স্বাস্থ্যবীমার সুবিধা দেওয়া হবে। এতে ৫ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্যবীমার সুবিধা পাবে প্রতিটি পরিবার। প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে যে, ১.৫ লক্ষ উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রকে সারা ভারত জুড়ে হেল্থ এন্ড ওয়েলনেস সেন্টার (এইচডব্লুসিএস) গড়ে তোলা হবে, যা প্রাথমিক চিকিৎসা পরিষেবা দেবে।
গোটা ভারত জুড়ে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে ঢেলে সাজাতে ব্যাপক জোর দেওয়া হচ্ছে:
- ২০টি নতুন এইমস-এর মত হাসপাতাল স্থাপন করা হবে
- বিগত চার বছরে ৯২টি মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন করা হয়েছে, যার ফলে ১৫,৩৫৪টি এমবিবিএস আসন বৃদ্ধি পেয়েছে
- ৭৩টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজকে উন্নত করা হয়েছে
- ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ছটি কার্যকরী এইমস-এ ১৫৭৫টি হাসপাতাল শয্যা যুক্ত করা হয়েছে
- ২টি নতুন এইমস-এর ঘোষণা করা হয়েছে ঝাড়খন্ড ও গুজরাতে
• মোট ১২,৬৪৬টি পিজি সিট (ব্রড এন্ড সুপার স্পেসিয়ালিটি কোর্স) বিগত চার বছরে নতুন করে সংযোজন করা হয়েছে
নীতি এবং আইন
প্রায় ১৫ বছরের ব্যবধানে ২০১৭ সালে জাতীয় স্বাস্থ্য নীতির প্রণয়ন করা হয়েছে। জাতীয়-অর্থনীতি এবং মহামারী সংক্রান্ত চিত্রের ওপর ভর করে বাস্তব সমস্যা এবং আসন্ন চ্যালেঞ্জের পরিবর্তন হচ্ছে।
মানসিক স্বাস্থ্য সবথেকে বেশি অবহেলিত, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃতাধীন এনডিএ সরকার তার গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে অনেকটা। মেন্টাল হেল্থ এক্ট, ২০১৭ মানসিক রোগীদের জন্য অধিকারের ভিত্তিতে একটা কাঠামো তৈরি করেছে ভারতে এবং সেই সঙ্গে মানসিক সমস্যা সম্পন্ন মানুষের অধিকার রক্ষার স্বার্থে মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা পরিষেবা দিতে সমতা ফেরানোর চেষ্টা করছে।
রোগ দূরীকরণ
টিউবারকিউলসিস (টিবি) একটি ছোঁয়াচে ব্যাধি। বিশ্বের টিবি আক্রান্তদের মধ্যে এক চতুর্থ অংশই ভারতীয়। ২০৩০ সালের মধ্যে স্থিতিশীল উন্নয়নের মাধ্যমে দেশ থেকে টিবি সম্পূর্ণ মুছে ফেলার পরিকল্পনা রয়েছে। ভারত থেকে টিবি মুছে ফেলার উদ্যোগকে আরও জোরদার করা হচ্ছে, ঔষধ নির্ভর এই টিবি রোগ চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার ৪ লক্ষ ডট কেন্দ্র গড়ে তুলেছে। প্রকট টিবি রোগীদের ক্ষেত্রে সরকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রায় ৫.৫কোটি মানুষের চিকিৎসা করার উদ্যোগ নিয়েছে। যেহেতু টিবি আক্রান্তের কর্মক্ষমতা কমে যায় এবং রোজকার প্রায় তলানিতে এসে ঠেকে তাই চিকিৎসা চলাকালীন রোগীদের ৫০০ টাকা করে ভাতা দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
২০১৮ সালের মধ্যেও কুষ্ঠ রোগ, প্রাথমিকভাবে ২০২০ সালের মধ্যে হাম এবং ২০২৫ -এর মধ্যে টিবি দেশ থেকে সম্পূর্ণ নির্মূল করার পরিকল্পনা নিয়েছে ভারত সরকার। ভারত মাতৃকালীন ও জন্মপূর্বক টিকাকরণ চালু করেছে ২০১৫ সালের মে মাসে, যার মূল লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০১৫ সালের ডিসেম্বর।