কেন্দ্রীয় বৈদ্যুতিন ও তথ্যপ্রযুক্তি, যোগাযোগ, আইন ও বিচার মন্ত্রী শ্রী রবি শঙ্কর প্রসাদ আজ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন অন্যান্য পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা বা আদার সার্ভিস প্রোভাইডার্সদের (ওএসপি) জন্য নীতি নির্দেশিকার আরও উদারীকরণ করা হয়েছে। টেলিযোগাযোগ দপ্তরের ঘোষণার ফলে যেসব বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) সংস্থাগুলি ভয়েস বেসড পরিষেবা ভারতে এবং বিদেশে দিয়ে থাকে সেইসব ওএসপিগুলির সুবিধা হবে। এই নীতি নির্দেশিকা ঘোষণা করার ফলে ওএসপিগুলির আরও উদারীকরণ সম্ভব হবে। ২০২০র নভেম্বরে ওএসপি সংস্থাগুলির জন্য সরকার একগুচ্ছ নীতি নির্দেশিকা জারি করেছিল। আজ উদারীকরণ সংক্রান্ত আরো কিছু ঘোষণা করা হল।
শ্রী প্রসাদ জানিয়েছেন বিশ্বে বৃহত্তম বিপিও শিল্প ভারতে রয়েছে। আজ ভারতের তথ্য প্রযুক্তি- বিজনেস প্রসেস ম্যানেজমেন্ট (বিপিএম) শিল্পের পরিমাণ (২০১৯-২০ অর্থবর্ষের হিসেবে) ৩৭৬০ কোটি মার্কিন ডলার বা ২ লক্ষ ৮০ হাজার কোটি টাকা। এই শিল্প দেশের লক্ষ লক্ষ যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে। ২০২৫ সালের মধ্যে ভারতে তথ্যপ্রযুক্তি বিপিও শিল্পের আরও বিকাশ ঘটবে এবং ৫,৫৫০ কোটি মার্কিন ডলার বা ৩ লক্ষ ৯০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছাবে।
প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার যে আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের সূচনা করেছে তার আওতায় বৈদ্যুতিন সামগ্রী উৎপাদনের সঙ্গে উৎসাহ ব্যাঞ্জক প্রকল্প যুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে দেশে ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী তৈরির ক্লাস্টার গড়ে উঠবে এবং টেলি-যোগাযোগ শিল্পে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম আরও বেশি করে দেশে তৈরি হবে।
একইভাবে সহজে ব্যবসা করার নীতির ফলে তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলি-যোগাযোগ শিল্পে নতুন যুগের সৃষ্টি হয়েছে। সরকার এই শিল্পে যে সংস্কার এনেছে তার ফলে ভিএনও লাইসেন্স সহজে পাওয়া যায়, স্পেকট্রাম বন্টন ও ব্যবসা-বাণিজ্যে সুবিধা হয় এবং নির্দিষ্ট কিছু ফ্রিকোয়েন্সি লাইসেন্স ছাড়াই ব্যবহার করা যায়। ওএসপিগুলির উদারীকরণের যে পদক্ষেপ আজকে নেওয়া হল তারফলে সংশ্লিষ্ট শিল্পে আরো বিকাশ হবে।
২০২০র নভেম্বরে ওএসপি-র নীতি-নির্দেশিকায় যে উদারীকরণ করা হয়েছিল সেগুলি হল :
তথ্যভিত্তিক ওএসপিগুলিকে যেকোন নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে আসা হয়েছে।
এই শিল্পের জন্য কোন ব্যাঙ্ক গ্যারান্টির প্রয়োজন নেই।
স্ট্যাটিক আইপি-র প্রয়োজন নেই।
টেলি-যোগাযোগ দপ্তরকে কোনো কিছু জানাতে হয়না ।
নেটওয়ার্ক সংক্রান্ত নকশা প্রকাশের প্রয়োজন নেই।
কোনো জরিমানা করা হয়না।
বর্তমানে যে কোন জায়গা থেকে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে।
বিপিএম শিল্প থেকে ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে ৩,৭৬০ কোটি মার্কিন ডলার রাজস্ব এসেছিল। মহামারী সত্ত্বেও ২০২০-২১ অর্থবর্ষে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩,৮৫০ কোটি মার্কিন ডলার। সরকারের ওয়ার্ক ফ্রম হোম অর্থাৎ বাড়িতে বসে কাজ করার ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ায় এই শিল্পের পক্ষে প্রত্যন্ত জায়গা থেকে পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। ২০২০র মার্চ মাসে সাময়িকভাবে ওএসপিগুলির জন্য এই সুবিধার ব্যবস্থা করা হলেও নভেম্বরে নতুন নির্দেশিকায় এ সংক্রান্ত ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ সংস্কারের কথা ঘোষণা করা হয়।
বিশ্বজুড়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যঃ-
বর্তমানে বিপিও-র বাজার ১৯৮০০ কোটি মার্কিন ডলার
আউটসোর্সিং-এর বাজার- ৯১০০ কোটি মার্কিন ডলার (৪৬ শতাংশ)
ভারতে বিপিও থেকে বর্তমানে রাজস্ব আদায় হয়- ৩,৮৫০ কোটি মার্কিন ডলার (২ লক্ষ ৮০ হাজার কোটি টাকা)
আজ নীতি-নির্দেশিকার যে উদারীকরণ ঘোষিত হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলি হল :
ক) দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ওএসপিগুলির মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকবেনা। ভারত সহ বিশ্বের যেকোন প্রান্তে অভিন্ন টেলি-যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপিএম সেন্টারগুলি গ্রাহকদের পরিষেবা দিতে পারবে।
খ) ওএসপি-র ইলেক্ট্রনিক প্রাইভেট অটোমেটিক ব্রাঞ্চ এক্সচেঞ্জ (ইপিএবিএক্স) বিশ্বের যেকোন প্রান্তে থাকতে পারে। টেলি-যোগাযোগ পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলি ইপিএবিএক্স পরিষেবা ব্যবহারের পাশাপাশি ওএসপিগুলি ভারতে তৃতীয় কোন তথ্যকেন্দ্রের ইপিএবিএক্স ব্যবহার করতে পারবে।
গ) দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ওএসপি কেন্দ্রগুলির মধ্যে পার্থক্য দূর করার ফলে সব ধরণের ওএসপি কেন্দ্রের মধ্যে যোগাযোগ গড়ে তোলার অনুমতি দেওয়া হল।
ঘ) গ্রাহকরা ওএসপি/ইপিএবিএক্স-এর পরিষেবা ব্যবহার করার জন্য যে ব্রডব্যান্ড প্রযুক্তি ব্যবহার করবে সেটি ওএসপিগুলির দূর সঞ্চার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এজেন্টরা কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তুলবে।
ঙ) একই সংস্থার যেকোন ওএসপি কেন্দ্রের মধ্যে অথবা অন্য সংস্থার সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদানে কোনো বিধিনিষেধ থাকবেনা।
চ) এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য যে টেলি-যোগাযোগ দপ্তর ইতিমধ্যেই ওএসপি সংক্রান্ত নিয়ন্ত্রণের বাইরে তথ্যভিত্তিক পরিষেবাগুলিকে নিয়ে এসেছে। বর্তমানে ওএসপিগুলির কোনো নিবন্ধীকরণের প্রয়োজন নেই। তাই এই সংস্থাগুলির কোনো ব্যাঙ্ক গ্যারান্টিও দেখাতে হবেনা। বাড়ি বা যেকোন জায়গা থেকে কাজের অনুমতি দেওয়া হল।
ছ) সরকার এই ব্যবসার প্রতি আস্থা দেখিয়ে কোনো নিয়ম লঙ্ঘন করলে তার জন্য ওএসপিগুলির বিরুদ্ধে জরিমানা করার সংস্থানটি প্রত্যাহার করে নিল।
জ) নীতি-নির্দেশিকার উদারীকরণ সংক্রান্ত আজকের এই ঘোষণার ফলে ভারতে ওএসপি শিল্পের প্রসার ঘটবে। এর ফলে প্রচুর আয় এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
ন্যাসকম এপ্রিল মাসে ওএসপি-র সংস্কারের ফলে কি প্রভাব পড়বে সে সংক্রান্ত একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল। এই সমীক্ষায় প্রাপ্ত ফল হল :
সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ৭২ শতাংশের বেশি সংস্থা জানিয়েছে ভারতে ওএসপি-র সংস্কারে তারা অত্যন্ত সন্তুষ্ট।
সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ৯৫ শতাংশের বেশি সংস্থা জানিয়েছে এর ফলে বিভিন্ন জটিলতা দূর হয়েছে এবং ভারতে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে ব্যয় কমেছে।
সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ৯৫ শতাংশের বেশি সংস্থা জানিয়েছে এই সংস্কারের ফলে আন্তর্জাতিক স্তরে তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবার মধ্যে আরও প্রতিযোগিতা গড়ে উঠবে।
সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ৭৭ শতাংশের বেশি সংস্থা জানিয়েছে ওএসপি-র সংস্কারের ফলে উৎপাদনশীলতা বাড়বে।
অংশগ্রহণকারী ৯২ শতাংশ সংস্থা জানিয়েছে এই সংস্কারগুলির ফলে বিভিন্ন সংস্থার ওপর আর্থিক বোঝা কমবে।
সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ৬২ শতাংশ সংস্থা জানিয়েছে ওএসপি সংস্কারের ফলে তারা তাদের কাজের পরিধি বাড়ানোর বিষয় নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করছে এবং এরজন্য নতুন করে বিনিয়োগ করবে।
৫৫ শতাংশ অংশগ্রহণকারী জানিয়েছে এরফলে নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে এবং আরও বেশি মেধাকে কাজে লাগানো যাবে।
আজকের সংস্কারের ঘোষণার ফলে বিপিও সংস্থাগুলির বিভিন্ন ব্যয় কমবে এবং এই শিল্পে গতি আসবে। আরও বেশি বহুজাতিক সংস্থা ভারতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উৎসাহিত হবে এবং দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়বে।
টেলি-যোগাযোগ শিল্পে ইউপিএ সরকারের আমলে ২০০৭-১৪ সময়কালে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ হয়েছিল ১,১৬৪ কোটি মার্কিন ডলার। এনডিএ সরকারের আমলে ২০১৪ থেকে ২১এর মধ্যে এই বিনিয়োগ ১০২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ২,৩৫০ কোটি মার্কিন ডলার। তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে কম্পিউটারের সফ্টওয়্যার ও হার্ডওয়্যার শিল্পে ইউপিএ সরকারের আমলে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৭১৯ কোটি মার্কিন ডলার। বর্তমান এনডিএ সরকারের সময়ে ২০১৪-২১ সালের মধ্যে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগের পরিমাণ ৭১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৫,৮২৩ কোটি মার্কিন ডলার।