রাষ্ট্রপতি বাইডেন ২৪ সেপ্টেম্বর হোয়াইট হাউজে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী যোশিহিদে সুগাকে নিয়ে গঠিত কোয়াড বা চতুর্দেশীয় অক্ষ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির নেতৃবৃন্দকে সামনাসামনি বৈঠকে আমন্ত্রণ জানান। এটিই ছিল কোয়াড গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির নেতৃবৃন্দের ব্যক্তিগত উপস্থিতিতে প্রথম বৈঠক। কোয়াড গোষ্ঠীভুক্ত নেতৃবৃন্দ উচ্চাকাঙ্ক্ষী উদ্যোগে অগ্রাধিকার দেন যার ফলে একুশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলায় বাস্তবিক সহযোগিতা এবং পারস্পরিক সম্পর্ক আরও নিবিড় হয়। এই বৈঠকে কোভিড-১৯ মহামারীর অবসান সহ নিরাপদ ও কার্যকর টিকার উৎপাদন বৃদ্ধি ও সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়া; উন্নতমানের পরিকাঠামো নির্মাণ; জলবায়ুজনিত সঙ্কটের মোকাবিলা; উদীয়মান প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অংশীদারিত্ব, মহাকাশ ও সাইবার নিরাপত্তার মতো ক্ষেত্রে সমন্বয় আরও বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলিতে আগামী প্রজন্মের মেধার আরও বিকাশের বিষয়টিকে  অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।

কোভিড ও বিশ্ব স্বাস্থ্য

কোয়াড গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির নেতৃবৃন্দ এটা স্বীকার করে নিয়েছেন যে এই গোষ্ঠীভুক্ত চারটি দেশ এবং সমগ্র বিশ্বের কাছেই কোভিড-১৯ মহামারী জীবন ও জীবিকার ক্ষেত্রে সবথেকে বড় বিপদ। গত মার্চে কোয়াড গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির নেতৃবৃন্দ ভ্যাক্সিন অংশীদারিত্ব কর্মসূচির সূচনা করেন। এর উদ্দেশ্য ছিল, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এবং বিশ্বে নিরাপদ ও কার্যকর টিকা সরবরাহ করা। গত মার্চ থেকে কোয়াড গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি কোভিড-১৯ টিকার উৎপাদন বাড়াতে এবং সরবরাহে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির মধ্যে টিকা সম্পর্কিত যে বিশেষজ্ঞ গোষ্ঠী গঠন করা হয়েছে তা সহযোগিতার মূল ভিত্তি হয়ে উঠেছে। এই বিশেষজ্ঞ গোষ্ঠী মহামারীর সর্বশেষ প্রবণতা সম্পর্কে নিয়মিতভাবে নিজেদের মধ্যে বৈঠক করছে, যাতে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল সহ সারা বিশ্বে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ও প্রতিরোধ মোকাবিলায় সমন্বয়মূলক প্রয়াস গ্রহণ করা যায়। আমরা রাষ্ট্রপতি বাইডেনের পক্ষ থেকে গত ২২ সেপ্টেম্বর কোভিড-১৯ সম্পর্কিত শীর্ষ বৈঠক আয়োজনকে স্বাগত জানাই এবং একযোগে কাজ করার ব্যাপারে নিজেদের অঙ্গীকার প্রকাশ করি। কোয়াড গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি :

বিশ্বকে টিকাকরণে সাহায্য করবে – কোয়াড গোষ্ঠীভুক্ত দেশ হিসেবে আমরা শপথ নিয়েছি যে ১.২ বিলিয়নের বেশি টিকার ডোজ সারা বিশ্বে সরবরাহ করা হবে। এছাড়াও ‘কোভ্যাক্স’ উদ্যোগের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা যোগানো হবে। আজ পর্যন্ত আমরা সমবেতভাবে প্রায় ৭৯ মিলিয়ন টিকার ডোজ ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সরবরাহ করেছি। টিকার ক্ষেত্রে আমাদের অংশীদারিত্ব অব্যাহত রয়েছে এবং টিকার উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে। বায়োলজিক্যাল ই-লিমিটেড সংস্থা চলতি বছরের শেষ নাগাদ অন্ততপক্ষে ১ বিলিয়ন টিকার ডোজ উৎপাদন করতে পারবে। টিকার ডোজের ক্রমবর্ধমান উৎপাদনের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে কোয়াড নেতারা শীঘ্রই কিছু সাহসী পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করবেন, যার ফলে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মহামারীর অবসান ঘটাতে আশু সমাধানের হদিশ মিলবে। আমরা টিকা উৎপাদনের ক্ষেত্রে অবাধ ও নিরাপদ সরবরাহ শৃঙ্খলের গুরুত্ব স্বীকার করেছি। কোয়াড গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি নিরাপদ ও কার্যকর কোভিড-১৯ টিকা রপ্তানির জন্য ভারতের সাম্প্রতিকতম ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে। আগামী অক্টোবর থেকেই ভারতের টিকা রপ্তানি শুরু হবে। কোভিড-১৯ আপৎকালীন সঙ্কট মোকাবিলায় ঋণ সহায়তা কর্মসূচিতে ৩.৩ বিলিয়ন ঋণ সহায়তা সংস্থানের মাধ্যমে জাপান নিরাপদ, কার্যকর ও গুণগত মানের টিকা উৎপাদনে আঞ্চলিক দেশগুলিকে সাহায্য করবে। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া ২১২ মিলিয়ন ডলার সাহায্য দেবে যাতে দক্ষিণ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য টিকা সংগ্রহ করা যায়। এর পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির প্রত্যেক ব্যক্তির কাছে টিকার ডোজের সুবিধা পৌঁছে দিতে ২১৯ মিলিয়ন ডলার সাহায্য করবে। কোয়াড গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি আসিয়ান সচিবালয়, ‘কোভ্যাক্স’ অভিযান এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংগঠনগুলির সঙ্গে সমন্বয় বজায় রাখবে। আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলির জীবনদায়ী প্রয়াসে সাহায্য করতে এই ধরনের উদ্যোগকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, কোভ্যাক্স এবং ইউনিসেফ-এর মতো আন্তর্জাতিক সংগঠনকে সাহায্য করব ও অংশীদারিত্ব গড়ে তুলব। একইসঙ্গে, কোয়াড গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির নেতৃবৃন্দ নিরাপদ ও কার্যকর টিকা উৎপাদনের ব্যাপারে সম্পূর্ণ অঙ্গীকারবদ্ধ। এই লক্ষ্যে কোয়াড গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি মানুষের মন থেকে বিভ্রান্তি দূর করতে ৭৫তম বিশ্ব স্বাস্থ্য অধিবেশনে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। 

অবিলম্বে জীবন রক্ষা – কোয়াড গোষ্ঠীভুক্ত দেশ হিসেবে একসঙ্গে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সাধারণ মানুষের জীবন রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ। জাপান ব্যাঙ্ক ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন-এর মাধ্যমে জাপান কোভিড-১৯ সম্পর্কিত স্বাস্থ্য পরিচর্যা সহ টিকা ও টিকার ওষুধপত্র তৈরিতে ভারতের সঙ্গে কাজ করবে এবং প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। আমরা কোয়াড গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির টিকা সম্পর্কিত বিশেষজ্ঞ গোষ্ঠীকে আরও বেশি কাজে লাগাব এবং আপৎকালীন সহায়তার ক্ষেত্রে দ্রুত পরামর্শের জন্য প্রয়োজনসাপেক্ষে বৈঠক আয়োজন করব।

উন্নত স্বাস্থ্য নিরাপত্তা গড়ে তোলা – কোয়াড গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি আরও বেশি প্রস্তুতি গ্রহণে অঙ্গীকারবদ্ধ যাতে পরবর্তী মহামারী থেকে বিশ্বকে রক্ষা করা যায়। আমরা কোভিড-১৯ সংক্রমণ ও প্রতিরোধ মোকাবিলায় সমন্বয় অব্যাহত রাখব এবং ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে স্বাস্থ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব। এই লক্ষ্যে ২০২২-এ আমরা মহামারীর আগাম প্রস্তুতি সম্পর্কিত অন্ততপক্ষে একটি কর্মসূচি যৌথভাবে আয়োজনের পরিকল্পনা করেছি। আমরা ১০০ দিনের অভিযানের অঙ্গ হিসেবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও নিবিড়তর করব, যাতে ১০০ দিনের মধ্যে নিরাপদ ও কার্যকর টিকা, উপযুক্ত চিকিৎসা এবং রোগ নির্ণয়ের সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দেওয়া যায়। ভবিষ্যতেও এই ধরনের প্রয়াস অব্যাহত থাকবে। আমরা বিশ্বব্যাপী মহামারীর মতো স্বাস্থ্যক্ষেত্রে জটিলতার আগাম সতর্কীকরণ প্রয়াসকে সমর্থন জানাব। সেইসঙ্গে, আমাদের ভাইরাল জেনেরিক সার্ভেলেন্স বা ভাইরাসের জিনগঠিত বিবর্তনে নজর রাখার পন্থাপদ্ধতি আরও উন্নত করব। একইভাবে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল ইনফ্লুয়েঞ্জা সার্ভেলেন্স এবং রেসপন্স সিস্টেম ব্যবস্থার সম্প্রসারণে সহযোগিতা করব।

উন্নত স্বাস্থ্য নিরাপত্তা গড়ে তোলা – কোয়াড গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি আরও বেশি প্রস্তুতি গ্রহণে অঙ্গীকারবদ্ধ যাতে পরবর্তী মহামারী থেকে বিশ্বকে রক্ষা করা যায়। আমরা কোভিড-১৯ সংক্রমণ ও প্রতিরোধ মোকাবিলায় সমন্বয় অব্যাহত রাখব এবং ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে স্বাস্থ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব। এই লক্ষ্যে ২০২২-এ আমরা মহামারীর আগাম প্রস্তুতি সম্পর্কিত অন্ততপক্ষে একটি কর্মসূচি যৌথভাবে আয়োজনের পরিকল্পনা করেছি। আমরা ১০০ দিনের অভিযানের অঙ্গ হিসেবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও নিবিড়তর করব, যাতে ১০০ দিনের মধ্যে নিরাপদ ও কার্যকর টিকা, উপযুক্ত চিকিৎসা এবং রোগ নির্ণয়ের সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দেওয়া যায়। ভবিষ্যতেও এই ধরনের প্রয়াস অব্যাহত থাকবে। আমরা বিশ্বব্যাপী মহামারীর মতো স্বাস্থ্যক্ষেত্রে জটিলতার আগাম সতর্কীকরণ প্রয়াসকে সমর্থন জানাব। সেইসঙ্গে, আমাদের ভাইরাল জেনেরিক সার্ভেলেন্স বা ভাইরাসের জিনগঠিত বিবর্তনে নজর রাখার পন্থাপদ্ধতি আরও উন্নত করব। একইভাবে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল ইনফ্লুয়েঞ্জা সার্ভেলেন্স এবং রেসপন্স সিস্টেম ব্যবস্থার সম্প্রসারণে সহযোগিতা করব।

পরিকাঠামো

জি-৭ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি আরও উন্নত বিশ্ব পরিকাঠামো গড়ে তোলার যে কথা ঘোষণা করেছে – তার ওপর গুরুত্ব দিয়ে কোয়াড গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি ডিজিটাল যোগাযোগ ব্যবস্থা, জলবায়ু, স্বাস্থ্য নিরাপত্তা এবং লিঙ্গ সমতা সম্পর্কিত পরিকাঠামো গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের কাজে লাগানো, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে চালু পরিকাঠামোমূলক প্রয়াসগুলিকে আরও মজবুত করতে সম্মত হয়েছে। সেইসঙ্গে, কোয়াড গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি পরিকাঠামোগত চাহিদা মেটাতে সহযোগিতার নতুন সুযোগ-সুবিধা খুঁজে বের করবে। এই লক্ষ্যে কোয়াড গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি :

কোয়াড পরিকাঠামো সমন্বয় গোষ্ঠী গড়ে তুলবে – উচ্চমানের পরিকাঠামো গড়ে তোলার লক্ষ্যে বর্তমান কোয়াড গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির নেতৃবৃন্দ একটি পরিকাঠামো সম্পর্কিত সমন্বয় গোষ্ঠী গঠন করবে। এই গোষ্ঠী আঞ্চলিক পর্যায়ে পরিকাঠামোগত চাহিদা নিরূপণে নিয়মিতভাবে নিজেদের বক্তব্য আদানপ্রদান করবে। সেই অনুসারে, উচ্চমানের পরিকাঠামো গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পারস্পরিক সমন্বয় বজায় রাখা হবে। এই বিশেষজ্ঞ গোষ্ঠী কারিগরি সহায়তা ও দক্ষতা বৃদ্ধির মতো প্রয়াসগুলিতে সমন্বয় করবে যাতে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোগত চাহিদা পূরণ করা যায়। 

কোয়াড গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে উন্নতমানের পরিকাঠামো গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা নেয়। সরকারি ক্ষেত্রের পাশাপাশি বেসরকারি ক্ষেত্রকেও সামিল করা হয় যাতে উন্নতমানের পরিকাঠামো গড়ে তোলার সুবিধার সর্বাধিক সদ্ব্যবহার করা যায়। ২০১৫ থেকে কোয়াড গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি এই অঞ্চলে পরিকাঠামো গড়ে তোলার জন্য ৪৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি সরকারি সাহায্য দিয়েছে। পরিকাঠামো গড়ে তোলার পাশাপাশি দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। একইভাবে, ৩০টির বেশি দেশে গ্রামোন্নয়ন, স্বাস্থ্য পরিকাঠামো, পানীয় জল সরবরাহ ও স্বচ্ছতা, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদন, টেলি-যোগাযোগ, সড়ক পরিবহণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে কয়েক হাজার প্রকল্প রূপায়িত হচ্ছে। পরিকাঠামো গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমাদের অংশীদারিত্ব এই দেশগুলির পরিকাঠামো প্রকল্পগুলিতে বড় অবদান রাখবে। সেইসঙ্গে, এই অঞ্চলে বেসরকারি বিনিয়োগের আরও বেশি সুযোগ করে দেবে।

জলবায়ু

জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত আন্তঃসরকারি প্যানেলের গত আগস্ট মাসের রিপোর্ট সম্পর্কে কোয়াড গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি অভিন্ন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এই রিপোর্টে জলবায়ু সঙ্কটের মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে কোয়াড গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যার মোকাবিলায় আরও অগ্রাধিকার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একইসঙ্গে, কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ হ্রাস এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদনের ধার্য লক্ষ্য ২০৩০-এর মধ্যে পূরণ করার লক্ষ্যে কাজ করছে। কোয়াড গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি ক্রমবর্ধমান শক্তি চাহিদা মেটাতে ধারাবাহিকভাবে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ হ্রাস করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যার মোকাবিলায় যে লক্ষ্য স্থির হয়েছে তা পূরণ করতে এই পদক্ষেপ। এছাড়াও, প্রাকৃতিক গ্যাস ক্ষেত্রে মিথেনের পরিমাণ হ্রাস করার লক্ষ্যে আমরা একযোগে কাজ করছি এবং এক নমনীয় পরিবেশ-বান্ধব শক্তি সরবরাহ শৃঙ্খল গড়ে তুলতে অঙ্গীকারবদ্ধ।

কোয়াড গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি বিশ্ব নৌ-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হাব বা কেন্দ্র এবং এই দেশগুলিতে বিশ্বের বৃহৎ কয়েকটি বন্দর রয়েছে। কোয়াড গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি গ্রিন পোর্ট পরিকাঠামো গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ভৌগোলিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান করছে। এই দেশগুলি জাহাজ পরিবহণ সম্পর্কিত একটি কর্মীগোষ্ঠী গঠন করে যাবতীয় কাজকর্ম সম্পাদন করবে। সেইসঙ্গে, বিশ্বের বৃহৎ বন্দরগুলির মধ্যে একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে বিভিন্ন বন্দর কর্তৃপক্ষকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। কোয়াড গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির প্রস্তাবিত জাহাজ পরিবহণ সংক্রান্ত কর্মীগোষ্ঠী ২০৩০-এর মধ্যে কার্বন নির্গমনের পরিমাণ দুই-তৃতীয়াংশ কমাতে শিপিং করিডর গড়ে তুলবে। 

কোয়াড গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি ক্লিন হাইড্রোজেন অংশীদারিত্ব গড়ে তুলবে। এই লক্ষ্যে ক্লিন হাইড্রোজেন মূল্য শৃঙ্খলে যাবতীয় উপাদানের খরচ কমাতে ক্লিন হাইড্রোজেন অংশীদারিত্বের কথা ঘোষণা করা হবে। কোয়াড গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির মধ্যে এই অংশীদারিত্বে প্রযুক্তি উদ্ভাবন, ক্লিন হাইড্রোজেন উৎপাদন বাড়ানো, পারস্পরিক বন্টন পরিকাঠামো গড়ে তোলা, ক্লিন হাইড্রোজেন মজুত রাখা সহ বাজার চাহিদা পূরণে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ক্লিন হাইড্রোজেনের লেনদেন বাড়াতে উদ্যোগী হবে। 

কোয়াড গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিনিময় এবং বিপর্যয় প্রতিরোধী পরিকাঠামো ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে সহযোগিতাকে আরও নিবিড় করার ব্যাপারে অঙ্গীকার প্রকাশ করেছে। গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি জলবায়ু এবং তথ্য পরিষেবা সম্পর্কিত কর্মীগোষ্ঠী গঠন করবে। সেইসঙ্গে, বিপর্যয় প্রতিরোধী পরিকাঠামো গড়ে তুলতে জোট গঠনের মাধ্যমে নতুন একটি কারিগরি সহায়তা ব্যবস্থা শুরু করবে। এ ধরনের পরিকাঠামো ছোট উন্নয়নশীল দ্বীপ রাষ্ট্রগুলির ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকর হবে।

মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ ও শিক্ষা

আজকের পড়ুয়ারা আগামীদিনকে নেতৃত্ব দেবে, উদ্ভাবক হয়ে উঠবে এবং আগামীকে পথ দেখাবে। আগামী প্রজন্মের বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদদের মধ্যে সেতুবন্ধন গড়ে তুলতে কোয়াড গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি এই প্রথম কোয়াড ফেলোশিপ চালু করার কথা ঘোষণা করেছে। এই ফেলোশিপ কর্মসূচিতে অসরকারি কর্মীগোষ্ঠী গঠনের প্রস্তাব রয়েছে। এই গোষ্ঠীতে কোয়াড গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির নেতৃবৃন্দ থাকবেন। প্রকৃতপক্ষে এই কর্মসূচি আমেরিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং ভারতের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ইঞ্জিনিয়ারিং ও গণিতশাস্ত্রের বিশেষজ্ঞ ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের সাহায্য করবে। এমনকি এই ফেলোশিপ কর্মসূচি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মধ্যে একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলবে, যাঁরা জাতীয় স্তরে এবং কোয়াড গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলিতে সরকারি, বেসরকারি ও শিক্ষাক্ষেত্রের সঙ্গে সহযোগিতা বজায় রাখবে। প্রতি বছর এই ফেলোশিপ কর্মসূচিতে ১০০ জন ছাত্রছাত্রীকে স্কলারশিপ দেওয়া হবে। গোষ্ঠীভুক্ত চারটি দেশের ২৫ জন করে ছাত্রছাত্রী এই সুবিধা পাবেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রণী বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে অধ্যায়নের ক্ষেত্রে এই সুবিধা মিলবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সহ অন্যান্য ক্ষেত্রের মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের জন্য এই কর্মসূচি অস্ট্রেলিয়া, ভারত, জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেরা মেধাবী পড়ুয়াদের একত্রিত করবে। ফেলোশিপ কর্মসূচির পৃষ্ঠপোষক সংস্থাগুলির মধ্যে থাকছে অ্যাসেঞ্চিওর, ব্ল্যাকস্টোন, বোয়িং, গুগল, মাস্টার কার্ড এবং ওয়েস্টার্ন ডিজিটাল। 

গুরুত্বপূর্ণ ও উদীয়মান প্রযুক্তি

কোয়াড গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি এক অবাধ, সহজলভ্য ও নিরাপদ প্রযুক্তির অনুকূল পরিবেশ গড়ে তুলতে অঙ্গীকারবদ্ধ। গত মার্চে গুরুত্বপূর্ণ এবং উদীয়মান প্রযুক্তি সম্পর্কিত কর্মীগোষ্ঠী গঠনের সময় থেকে আমরা চারটি ক্ষেত্রে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এগুলি হল কারিগরি গুণমান, ৫-জি ডাইভার্সিফিকেশন অ্যান্ড ডেপ্লয়মেন্ট, হরাইজন স্ক্যানিং এবং প্রযুক্তি সরবরাহ শৃঙ্খল। আজ কোয়াড গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি প্রযুক্তির পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ও উদীয়মান প্রযুক্তির ক্ষেত্রে একযোগে কাজ করার লক্ষ্যে একটি বিবৃতি জারি করবে। গুরুত্বপূর্ণ ও উদীয়মান প্রযুক্তিক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং সর্বজনীন মানবাধিকারের বিষয়গুলিকে বিবেচনায় রেখে তৈরি হবে। 

কোয়াড গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির মধ্যে কয়েক মাস সহযোগিতার পর দেশগুলির পক্ষ থেকে যৌথভাবে প্রযুক্তি সম্পর্কিত ডিজাইন বা নকশা ও তার উদ্ভাবনের বিষয়ে একটি বিবৃতি জারি করা হবে। কোয়াড গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির মধ্যে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে এই সহযোগিতা কেবল এই অঞ্চলেই নয়, বরং সারা বিশ্বের ক্ষেত্রেও অত্যন্ত কার্যকর হবে।

কোয়াড গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি আধুনিক যোগাযোগ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কিত একটি গোষ্ঠী গঠন করবে। এই গোষ্ঠী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা প্রণয়ন করবে এবং গবেষণার ভিত্তি গড়ে তুলবে। এছাড়াও, গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি যৌথভাবে সেমি-কন্ডাক্টর ও তার যন্ত্রাংশ সরবরাহ বাড়াতে, সহযোগিতার ক্ষেত্র চিহ্নিত করতে ও দক্ষতা মান নিরূপণে একযোগে কাজ করবে। 

কোয়াড গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির সরকারের মধ্যে এক নমনীয় ও নিরাপদ টেলি-যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ৫-জি ডেপ্লয়মেন্ট ও ডাইভার্সিফিকেশন ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে। এর ফলে, ৫-জি পরিষেবার অনুকূল বাতাবরণ গড়ে উঠবে।

সাইবার নিরাপত্তা

সাইবার নিরাপত্তা ক্ষেত্রে চার দেশের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে সহযোগিতা গড়ে তুলতে কোয়াড গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি সাইবার বিপদের মোকাবিলায় এক উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তুলবে। আন্তর্জাতিক মানের সেরা পন্থাপদ্ধতিগুলিকে বিবেচনায় রেখে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এই সহযোগিতা গড়ে উঠবে। এছাড়াও, কোয়াড গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি একটি সিনিয়র সাইবার গোষ্ঠী গঠন করবে। এই গোষ্ঠীর বিশেষজ্ঞরা নিয়মিতভাবে সরকার ও শিল্প সংস্থাগুলির মধ্যে সমন্বয় বজায় রেখে কাজ করার ব্যাপারে পরামর্শ দেবে। সেইসঙ্গে, নিরাপদ সফটওয়্যার, দক্ষ কর্মীবাহিনী এবং সাইবার বিপদের মোকাবিলায় সক্ষম বিশ্বস্ত ডিজিটাল পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে। 

মহাকাশ

মহাকাশ ক্ষেত্রে কোয়াড গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি বিশ্বের অগ্রণী দেশের মধ্যে পড়ে। আজ কোয়াড এক নতুন কর্মীগোষ্ঠী গঠনের মধ্য দিয়ে মহাকাশ ক্ষেত্রে সহযোগিতার সূচনা করেছে। আমাদের মধ্যে এই অংশীদারিত্ব স্যাটেলাইট ডেটা বিনিময়, জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর নজর রাখা, বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা এবং অভিন্ন চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলায় পারস্পরিক সহায়তা যোগাবে। 

কোয়াড গোষ্ঠীভুক্ত আমাদের চারটি দেশ স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ভূ-নিরীক্ষণ তথ্য বিনিময় করবে এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি বিশ্লেষণ করবে। সেইসঙ্গে, সমুদ্র ও সামুদ্রিক সম্পদের দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে সদ্ব্যবহার সম্পর্কিত তথ্য লেনদেন করবে। এ ধরনের তথ্য বিনিময়ের ফলে কোয়াড গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে নিজেদের দক্ষতা গড়ে তুলতে পারবে এবং ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলিকেও জলবায়ু ঝুঁকিজনিত বিপদ থেকে সহায়তা করবে। কোয়াড গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অন্যান্য দেশের সঙ্গে মহাকাশ সম্পর্কিত বিষয়ে দক্ষতার বিকাশ ঘটাবে। এছাড়াও, গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি পারস্পরিক স্বার্থে মহাকাশ প্রযুক্তির প্রয়োগ বাড়াতে একে অপরকে সাহায্য করবে।

কোয়াড গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি মহাকাশের দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে সদ্ব্যবহার সুনিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় নিয়ম-নীতি ও শর্তাবলী প্রণয়নে একে অপরের সঙ্গে আলোচনা করবে বলে স্থির হয়েছে।

Explore More
৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪

জনপ্রিয় ভাষণ

৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪
Snacks, Laughter And More, PM Modi's Candid Moments With Indian Workers In Kuwait

Media Coverage

Snacks, Laughter And More, PM Modi's Candid Moments With Indian Workers In Kuwait
NM on the go

Nm on the go

Always be the first to hear from the PM. Get the App Now!
...
Prime Minister Narendra Modi to attend Christmas Celebrations hosted by the Catholic Bishops' Conference of India
December 22, 2024
PM to interact with prominent leaders from the Christian community including Cardinals and Bishops
First such instance that a Prime Minister will attend such a programme at the Headquarters of the Catholic Church in India

Prime Minister Shri Narendra Modi will attend the Christmas Celebrations hosted by the Catholic Bishops' Conference of India (CBCI) at the CBCI Centre premises, New Delhi at 6:30 PM on 23rd December.

Prime Minister will interact with key leaders from the Christian community, including Cardinals, Bishops and prominent lay leaders of the Church.

This is the first time a Prime Minister will attend such a programme at the Headquarters of the Catholic Church in India.

Catholic Bishops' Conference of India (CBCI) was established in 1944 and is the body which works closest with all the Catholics across India.