আজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ভারত এবং জাপান ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করতে এক ঐতিহাসিক প্রয়াস নিয়েছে। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিরাময়যোগ্য সার্ভাইক্যাল ক্যান্সার একটি প্রধান স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সঙ্কট। এছাড়াও অন্যান্য ক্যান্সারের মোকাবিলায় এই উদ্যোগ সহায়ক হবে বলে স্থির হয়েছে কোয়াড নেতাদের শিখর সম্মেলনে।
সারা বিশ্বেই ক্যান্সার একটি মারাত্মক সমস্যা। একটি দেশের পক্ষে এর মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। তাই একযোগে কাজ করে কোয়াড-এর লক্ষ্য এমন উদ্ভাবনমূলক রণকৌশল তৈরি করা যাতে রোগী এবং তাঁর পরিবারের ওপর ক্যান্সারের প্রভাব কম পড়ে। কোয়াড-এর অংশীদার দেশগুলি এই সংক্রান্ত গবেষণা এবং উন্নয়নে সহযোগিতার পাশাপাশি সার্ভাইক্যাল ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে বেসরকারি ক্ষেত্র এবং অ-সরকারি ক্ষেত্রকেও কাজে লাগাতে উদ্যোগী হয়েছে।
এর জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আগামী পাঁচ বছরে অন্তত ১.৫৮ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার। এছাড়া কোয়াডভুক্ত দেশগুলি সার্ভাইক্যাল ক্যান্সারের নির্ণয়ে খরচ কমাতে একলপ্তে এইচপিভি ডায়াগনস্টিক্স কিনতে রাষ্ট্রসঙ্ঘের সংস্থাগুলির সঙ্গে একযোগে কাজ করবে। এছাড়াও মেডিকেল ইমেজিং ও রেডিয়েশন থেরাপির গুণমানের উন্নতিতে সহযোগিতা নেওয়া হবে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার কাছ থেকে।
ভারত ন্যাশনাল নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ (এনসিডি) পোর্টালের মাধ্যমে ডিজিটাল হেলথ সম্পর্কে প্রযুক্তিগত দক্ষতা ভাগ করে নেবে। ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সাহায্যের প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেতৃত্বে ডিজিটাল হেলথ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক উদ্যোগের অঙ্গ হিসেবে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে ভারত। ভারত এইচপিভি স্যাম্পলিং কিট্স, নির্ণায়ক উপকরণ এবং ৭.৫ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ক্যান্সারের টিকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ভারত ‘স্ট্রেংদেনিং অফ টার্শিয়ারি কেয়ার ক্যান্সার সেন্টার্স’ কর্মসূচিতে বিশেষ ধরনের ক্যান্সার চিকিৎসার সুযোগের প্রসার ঘটাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনাতেও সুলভে ক্যান্সার চিকিৎসা করতে ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সার্ভাইক্যাল ক্যান্সার দূরীকরণে ভারতের দায়বদ্ধতার সহায়ক হবে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ, আইসিএমআর-এর গবেষণা।
সার্ভাইক্যাল এবং ব্রেস্ট ক্যান্সারের জন্য ডায়াগনস্টিক এবং মেডিকেল ইমেজিং-এর জন্য শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান হলোজিক সরকারি সংস্থাগুলির সঙ্গে কাজ করবে। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারীদের সঙ্গে মিলে সার্ভাইক্যাল ক্যান্সার সম্পর্কে শিক্ষা দেবে এবং সচেতনতা বাড়াবে। হলোজিক বর্তমানে সার্ভাইক্যাল ক্যান্সার নির্ণয়ে কৃত্রিম মেধার মতো উদ্ভাবনী প্রযুক্তির সুবিধা নিচ্ছে যাতে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারীদের ঘাটতি মেটানো যায়। হলোজিক নিয়মিত আন্তর্জাতিক স্তরে মহিলাদের স্বাস্থ্য সূচক প্রকাশ করবে যা মহিলাদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত একটি সার্বিক আন্তর্জাতিক সমীক্ষা। এইচপিভি এবং সার্ভাইক্যাল ক্যান্সারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক উদ্যোগে এইচপিভি টিকাকরণ বাড়বে, সার্ভাইক্যাল স্ক্রিনিং এবং দ্রুত চিকিৎসা প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে। এজন্য ব্যাংককে এশিয়া-প্যাসিফিক কর্মশিবিরের আয়োজন করা হবে যাতে এই অঞ্চলে জ্ঞান এবং কর্মপদ্ধতি ভাগ করে নেওয়া যায়। গোটা ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল জুড়ে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ আরও বাড়ানো হবে।