এখানে উপস্থিত বিপুল সংখ্যায় আগত আমার ভাই ও বোনেরা,
আপনাদের সবাইকে দীপাবলি এবং নববর্ষের শুভেচ্ছা। গতকালই আমরা ভ্রাতৃদ্বিতীয়াউৎসব পালন করেছি আর এখন নাগপঞ্চমীর অপেক্ষায় দিন গুণছি। এমন সময়ে নতুন সংকল্প নিয়েনতুন ভারত, নতুন গুজরাট নির্মাণের লক্ষ্যে আমরা এগিয়ে চলেছি। সেই প্রক্রিয়ারঅংশস্বরূপ আজ ঘোঘার মাটিতে দেশবাসী এক অমুল্য উপহার পাচ্ছেন। এটা ভারতে এ ধরণেরপ্রথম প্রকল্প। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতেও এটি এত বড় মাপের প্রথম প্রকল্প। আমিগুজরাটের জনগণকে, রাজ্য সরকারকে, ৬৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগে, অনেক আধুনিক প্রযুক্তিরসমন্বয়ে নির্মিত এই প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়িত করার জন্য, সম্পূর্ণ করার জন্যে অনেকঅনেক অভিনন্দন জানাই। এই প্রকল্পের বাস্তবায়নের সঙ্গে সাড়ে ছয় কোটি গুজরাটবাসীরএকটি স্বপ্নপূরণ হচ্ছে।
আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা, মানুষ আগে সাঁতার শিখেছিল নাকি আগে চাকা আবিষ্কারকরেছে, সেটা একটা বিতর্কের বিষয়। তবে এটা সত্যি যে মানুষ প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেইসাঁতরে কিম্বা নৌকোয় বসে নদী পার করা রপ্ত করেছে। গুজরাটে হাজার হাজার বছরেরসমুদ্রযাত্রার ইতিহাস রয়েছে। এখানেই নৌকো তৈরি হত। সেই নৌকায় করে অন্যান্য দেশেনানা সামগ্রী নিয়ে পাড়ি দিতেন সওদাগরেরা। এখানকার লোথাল বন্দরে ৮৪টি দেশের পতাকাউড়ত। আজ থেকে ১ হাজার ৭০০ বছর আগে এখানকার ফলফী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক দেশেরশিক্ষার্থী পড়তে আসতেন। কিন্তু না জানি কী হয়েছিল যে, এইসব কিছু ইতিহাসের মতোমাটির নীচে চাপা পড়ে গেছে। কিন্তু সেই গৌরবময় দিনগুলির কথা আমাদের ভোলা উচিৎ না।
ভাই ও বোনেরা, আজকের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ঘোঘা, ভাবনগর এবং গুজরাটেরসমুদ্রতটে সেই প্রাচীন ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ার সূচনা হ’ল। ঘোঘা-দহেজ – এরমাঝে এই ফেরি পরিষেবা চালু হলে দক্ষিণ গুজরাটে কোটি কোটি মানুষের জীবনকে সহজ করেদেবে। সৌরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের যাতায়াতের সময় হ্রাস পাবে। ৭-৮ ঘন্টা’র জায়গায় এখনসোয়া ঘন্টার মধ্যেই মানুষ সৌরাষ্ট্রে আসা-যাওয়া করতে পারবেন। আমরা জানি যে,মানুষের জীবনে সবচেয়ে মূল্যবান হ’ল সময়। বিশ্ববাসী বলেন, ‘টাইম ইজ মানি’। কেন্দ্রীয়সরকার ও রাজ্য সরকারের যৌথ উদ্যোগে আমরা এভাবে আপনাদের জীবনে প্রত্যেক ২৪ ঘন্টায় ১ঘন্টা যাত্রা করে ৭ ঘন্টা বাঁচানোর ব্যবস্থা করেছি। একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, কোনওজিনিস পরিবহণে সড়কপথে যদি দেড় টাকা খরচ হয়, তা হলে সেই জিনিস রেল পরিবহণে ১ টাকাখরচ হবে আর একই জিনিস জলপথে নিয়ে গেলে খরচ হবে ২০-২৫ পয়সা। ভাবতে পারেন, আপনাদেরকত সাশ্রয় হবে! সময় তো বাঁচবেই পাশাপাশি দেশের অনেক পেট্রোল-ডিজেলের খরচও বাঁচবে।ট্রাফিক জ্যামে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ লিটার তেল নষ্ট হয়।
ভাই ও বোনেরা, সৌরাষ্ট্র ও দক্ষিণ গুজরাটের মাঝে প্রতিদিন প্রায় ১২ হাজারমানুষ যাতায়াত করেন। প্রায় ৫ হাজার গাড়ি প্রতিদিন চলাচল করে। এই যোগাযোগ সড়কপথেরবদলে সমুদ্রপথে হলে ৩০৭ কিলোমিটারের বদলে যাত্রীদের যেতে হবে মাত্র ৩১ কিলোমিটার।আর একটি ফেরিতে একসঙ্গে ৫০ জন মানুষ, ১০০টি গাড়ি এবং ১০০টি লরি নিয়ে যাওয়া যাবে।বুঝতেই পারছেন, এয়ারপোর্ট থেকে এই দুই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা সিংহভাগই এই ফেরিপরিষেবা নির্ভর হয়ে উঠবে। এর প্রভাব দিল্লি ও মুম্বাইয়ের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনকারীসড়কপথকে আরও অনেক জঙ্গম করে তুলবে। গুজরাটের সবচেয়ে বেশি শিল্পায়ন ক্ষেত্রগুলিযেমন – দহেজ, ভদোদরা ইত্যাদি শহর সংশ্লিষ্ট রাজপথগুলিতে গাড়ির সংখ্যা কমবে। ফলে,যাতায়াতের গতি বাড়বে, যা সমগ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ত্বরান্বিত করবে।
বন্ধুগণ, আমরা পুরনো ভাবনাচিন্তা নিয়ে নতুন সাফল্য পেতে পারি না। পুরনোভাবনা নিয়ে নতুন প্রয়োগও সম্ভব নয়। ঘোঘা-দহেজ রো-রো ফেরি পরিষেবা এর বড় উদাহরণ।আমি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করার পরই এই যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তোলারসম্ভাবনা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছিলাম। কয়েক দশক ধরেই গুজরাট সরকার এই পরিবহণব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা ভাবছিল। কিন্তু আমি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরই একাজে অগ্রগতিশুরু হয়। কিন্তু তৎক্ষণাৎ শুরু করার কোনও উপায় ছিল না। আপনারা শুনলে অবাক হবেন যে,পূর্ববর্তী সরকার এমনসব পরিকাঠামোগত ভুল করেছিল যে, এই রো-রো ফেরি পরিষেবা চালুহওয়ার সম্ভাবনাই বিনষ্ট হতে চলেছিল। সমস্যাটা কোথায় ছিল? সমস্যা ছিল তাঁদেরভাবনায়! যাঁরা ফেরি পরিষেবা প্রদান করবেন, তাদেরকেই টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাবদেওয়া হয়েছিল। এখন আপনারা বলুন, সড়কপথ দিয়ে বাস চলে বলে বাসের মালিকদের যদি বলা হয়যে, আপনাদেরকেই এই সড়ক নির্মাণ করতে হবে, বাসস্ট্যান্ড বানাতে হবে, বিমানসংস্থাগুলিকে যদি বলা হয়, আপনারাই বিমানবন্দর নির্মাণ করে আসা-যাওয়ার ব্যবস্থাকরুন – তা হলে কেমন করে চলবে!
সরকারকে বিমানবন্দর গড়ে দিতে হবে, বাসস্ট্যান্ড বানিয়ে দিতে হবে। সড়কনির্মাণ সরকারের দায়িত্ব। রো-রো ফেরি সার্ভিসের জন্যও তেমনই বন্দর ও জেটি নির্মাণসরকারের দায়িত্ব। সেজন্য একাজ বাস্তবায়নের আগে আমরা সরকারের পুরনো নীতি পরিবর্তনকরে আগে সরকারের পক্ষ থেকে টার্মিনাল গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিই। টার্মিনাল গড়ে দিয়েফেরি পরিষেবার দায়িত্ব দেওয়া হবে বেসরকারি সংস্থাগুলিকে। এখানকার ‘রব’ সমুদ্রক্ষেত্রে নলহাটি এলাকায় জলস্তর নিয়ে সমস্যা রয়েছে। সেজন্য ফেরি পরিষেবা সমুদ্রতটঅবধি পৌঁছতে পারে না। পরিবর্তিত রণনীতি অনুযায়ী সরকার এটাও সিদ্ধান্ত নেয় যে,তটবর্তী মাটি ও পাথর ড্রেজিং-এর মাধ্যমে সরিয়ে ফেরি পরিষেবাকে সমুদ্রতট পর্যন্তনিয়ে আসার খরচও সরকারকেই করতে হবে। তবে, সরকার এই খরচ হওয়া টাকা রাজকোষে ফেরাবে।ফেরি পরিষেবার মাধ্যমে বেসরকারি সংস্থাগুলির যে লাভ হবে তার লভ্যাংশ সরকারকে দিতেহবে। বেসরকারি সংস্থাগুলি এই রণনীতি মেনে নিলে পরিণামস্বরূপ আজ ঘোঘা ও দহেজ-এরমাঝে এই রো-রো ফেরি পরিষেবা শুরু করা সম্ভব হয়েছে। ২০১২ সালে আমি এই প্রকল্পেরশিলান্যাস করেছিলাম। কিন্তু তখন সমুদ্রে যত কাজ করার ছিল, পুরোটা করার মতো অর্থগুজরাট সরকারের কাছে ছিল না। আর তখন কেন্দ্রীয় সরকারে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের কথা যতকম বলা যায় ততই ভালো। তাঁরা কচ্ছ-এর মান্ডোবি পর্যন্ত গুজরাটের সমুদ্রতটের উন্নয়নেপ্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিলেন। গুজরাটের সমস্ত শিল্প কারখানাগুলিকে পরিবেশ দূষণেরআরোপ লাগিয়ে বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। আমি জানি, কত সমস্যার মধ্য দিয়েআমরা গুজরাটকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সাফল্য পেয়েছি। কিন্তু যখন আপনারা আমাকেকেন্দ্রীয় সরকারের নেতৃত্ব প্রদান করে কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন, একের পর এক সমস্যাদূর হয়েছে। আর আজ এই রো-রো ফেরি পরিষেবার প্রথম পর্যায় উদ্বোধন করা সম্ভব হয়েছে।
এই কঠিন প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়বরুণদেব বারবার আমাদের পরীক্ষা নিয়েছেন। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী, যখনই সেতুনির্মাণের জন্য কোনও রকম সমস্যা এসেছে, তখন সমুদ্র মন্থন থেকেই অমৃত নিষ্কাশিতহয়েছিল। বন্ধুগণ, আজ আমরা বরুণদেবের আশীর্বাদে এই অমৃত, এই জলসেতু পেয়েছি। আমিমাথা নত করে কামনা করি, বরুণদেবের এই আশীর্বাদ সদাসর্বদা গুজরাটের মানুষের ওপরবর্ষিত হোক। আর আজ এই রো-রো ফেরি পরিষেবা উদ্বোধনের সময় আমি বীর মোখরাজি দাদাকেপ্রণাম জানাই। আমার মৎস্যজীবী ভাই ও বোনেরা যেমন মোখরাজি দাদার উদ্দেশে নারকেলউৎসর্গ করে সমুদ্রপথে পা বাড়ান, আমিও আজ সেই পরম্পরাই পালন করব, যাতে বীর মোখরাজিরআশীর্বাদে আমাদের যাত্রীদের সুরক্ষা সুনিশ্চিত থাকে। ভাবনগর এবং সৌরাষ্ট্র, দক্ষিণগুজরাটের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় সমৃদ্ধ হয়ে উঠুক! আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, বীরমোখরাজির আশীর্বাদ থাকলে এই সমৃদ্ধি সুনিশ্চিত। এই প্রকল্প ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য একটিবড় চ্যালেঞ্জ ছিল। গুজরাট সরকারের জন্যও এটি একটি চ্যালেঞ্জ ছিল। সেজন্য এইপ্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তি ধন্যবাদের অধিকারী।
ভাই ও বোনেরা, আমাদের দেশে সবচেয়ে দীর্ঘ সমুদ্রতট হ’ল গুজরাটে। ১ হাজার ৬০০কিলোমিটারেরও বেশি। শত শত বছর ধরে গুজরাট তার শক্তি ও সামর্থ্য দিয়ে সমগ্র বিশ্বকেআকৃষ্ট করে চলেছে। লোথাল বন্দরের ইতিহাসলব্ধ তথ্যাবলি আজও বড় বড় সমুদ্রবিদ্যাবিশারদদের চমকে দেয়। আমরা সবাই আজ যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, সেখানে শত শত বর্ষ পূর্বেসমুদ্রপোত আসতো। এই ঐতিহ্যের কথা ভেবেই আপনারা যখন আমাকে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বদিয়েছিলেন, তখন থেকেই গুজরাটে বন্দর-নির্ভর উন্নয়নের ভাবনা আমার মাথায় এসেছিল। সেইচিন্তা থেকেই গুজরাটের তটবর্তী অঞ্চলে পরিকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে হাতদিয়েছিলাম। আমরা জাহাজ নির্মাণের নতুন নীতি চালু করি, জাহাজ নির্মাণ পার্ক চালুকরি, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসাবে ছোট ছোট বন্দর গড়ে তোলার কাজে উৎসাহ দিই, জাহাজভাঙার নিয়মে পরিবর্তন আনি, বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য-কেন্দ্রীক ভিন্ন ভিন্ন টার্মিনাল নির্মাণেজোর দিই। যেমন – দহেজ বন্দরে সলিড কার্গো, রাসায়নিক এবং এলএনজি টার্মিনাল,মুন্দ্রা বন্দরে কয়লা নিকাশি টার্মিনাল – এভাবে বন্দর ক্ষেত্রকে একটি নতুনলক্ষ্যে, নতুন চেতনায় শক্তি প্রদান করতে আমরা সাফল্য পাই। পাশাপাশি সরকার ভেসেলট্রাফিক ব্যবস্থাপনা এবং গ্রাউন্ড ব্রেকিং কানেক্টিভিটি প্রকল্পকেও বিশেষভাবেউৎসাহ প্রদান করে। আগামীদিনে এই অঞ্চলে নৌ ও সমুদ্র সম্পর্কিত বিশ্ববিদ্যালয় এবংলোথালে নৌ ও সমুদ্র সম্পর্কিত সংগ্রহালয় গড়ে উঠবে। এইসব কাজের পাশাপাশি এখানাকরমৎস্যজীবী ভাই ও বন্ধুদের উন্নয়নে সাগর-খেড়ু বিকাশ কার্যক্রমের মতো বেশ কিছুপ্রকল্প আমরা চালু রেখেছি। লক্ষ্য রেখেছি যাতে এই জাহাজ নির্মাণ শিল্পে স্থানীয়যুবসম্প্রদায়ের প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান সুনিশ্চিত হয়। তাঁদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য,পানীয় জল, বিদ্যুৎ এবং সমুদ্র তটবর্তী সামাজিক সুরক্ষার পরিকাঠামোও আমরা গড়েতুলেছি।
ভাই ও বোনেরা, সম্প্রতি জাপানের প্রধানমন্ত্রী এসেছিলেন। তাঁর সঙ্গে আমরাজাহাজ নির্মাণ ক্ষেত্র বিষয়ক একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি সম্পাদন করেছি। সেই চুক্তিঅনুযায়ী, জাপান সরকার এবং সেদেশের একটি অর্থনৈতিক সংস্থা ‘জাইকা’ আমাদের অলংজাহাজঘাটার আধুনিকীকরণে আর্থিক সহযোগিতা করবে।
বন্ধুগণ, সরকার ভাবনগর থেকে অলং-সোসিয়া শিপ রিসাইক্লিং ইয়ার্ড পর্যন্ত একটিবিকল্প সড়কপথ নির্মাণেরও কাজ শুরু করেছে। এটি এশিয়ার বৃহত্তম শিপ রিসাইক্লিংইয়ার্ড, যেখানে ১৫-২৫ হাজার কর্মচারী কাজকরেন। এই অঞ্চলটি ভাবনগর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে। সংযোগ রক্ষাকারী সড়কপথে সবসময়ট্রাফিক জ্যাম থাকায় যাতায়াত কতটা কষ্টকর তা আমার বলার প্রয়োজন নেই। সেজন্য সরকারমউয়া, পিপাবাউ আর জাফরাবাদ, বৈয়রাবল-কে সংযুক্ত করে যে বিকল্প যাতায়াতের ব্যবস্থারয়েছে, সেটিকে প্রশস্ত করার কাজ শুরু করেছে। ভবিষ্যতে অলং জাহাজঘাটার ক্ষমতাওবৃদ্ধি পাবে। সেজন্য এই সড়ক আধুনিকীকরণ প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে। এই পথে ঘোঘা-দহেজফেরি পরিষেবা ব্যবহারকারী গাড়িগুলিও লাভবান হবে।
বন্ধুগণ, সরকারের নিয়মিত প্রচেষ্টার ফলে আজ গুজরাটের তটবর্তী এলাকার উন্নয়নত্বরান্বিত হয়েছে। আজ সারা দেশে ছোট বন্দরের মাধ্যমে পণ্য পরিবহণের ৩২ শতাংশই হয়গুজরাটে। অর্থাৎ দেশে ছোট বন্দরের মাধ্যমে পণ্য পরিবহণের এক-তৃতীয়াংশ। গত ১৫ বছরেএই পরিমাণ চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। পণ্য হ্যান্ডলিং-এর গতিও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
ভাই ও বোনেরা, কৌশলগত দিক থেকে গুজরাটের অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।বিশ্বের যে কোনও অঞ্চলে সমুদ্রপথে পাড়ি দিতে হলে গুজরাট থেকে অনেক সহজে সুলভ ওসরলপথে পাড়ি দেওয়া যায়। গুজরাটের এই সামর্থ্যকে যথাযথ ব্যবহার করলে দেশের লাভ হবে।গুজরাটের নৌ ও জাহাজ ক্ষেত্রের উন্নয়ন সারা দেশের জন্য আজ একটি মডেল হয়ে উঠেছে।আমি স্থির নিশ্চিত যে, এই রো-রো ফেরি পরিষেবাও দেশের অন্যান্য রাজ্যের জন্য একটিমডেল প্রকল্প হিসাবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
আমরা যেভাবে অনেক বছরের পরিশ্রমের ফলস্বরূপ এ ধরনের প্রকল্প নির্মাণেরসমস্যাগুলিকে বুঝে সেগুলি দূর করেছি, অন্যান্য রাজ্যের ক্ষেত্রে আমাদের অভিজ্ঞতাথেকে শিখে তাঁরা আরও সহজে ও সুলভে এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে পারবে। এই ফেরিপরিষেবার মাধ্যমে এই সম্পূর্ণ অঞ্চলের সামাজি ও আর্থিক উন্নয়নে একটি নতুন যুগ শুরুহবে। অসংখ্য নতুন কর্মসংস্থান হবে, তটবর্তী জাহাজ পরিষেবা এবং তটবর্তী পর্যটনেরনতুন অধ্যায়ের সূত্রপাত হবে। আগামীদিনে যখন দিল্লি আর মুম্বাইয়ের মাঝে ডেডিকেটেডফ্রেট করিডর ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল করিডর গড়ে উঠবে, তখন এই পরিষেবা গুজরাট সন্নিহিত সমুদ্রপথেরগুরুত্ব কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে। এই প্রকল্প আমেদাবাদ ও ভাবনগরের মধ্যবর্তীঅঞ্চলগুলির শিল্পায়নের জন্য নির্মিত ঢোলেরা এসইআর-কেও একটি নতুন প্রাণশক্তিযোগাবে। এই ঢোলেরা এসআইআর শুধু ভারত নয়, বিশ্বের মানচিত্রে নির্মিয়মান বৃহত্তমশিল্প কেন্দ্র হয়ে উঠছে। এখানে লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। গুজরাট সরকারেরপ্রচেষ্টায় ঢোলেরায় পরিকাঠামো উন্নয়নের গতি আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কয়েক বছরের মধ্যেঢোলেরার নাম সারা পৃথিবী জেনে যাবে। সেক্ষেত্রে এই ঘোঘা-দহেজ ফেরি পরিষেবা আরওগুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
বন্ধুগণ, ভবিষ্যতে এই ফেরি পরিষেবা কেবল ঘোঘা ও দহেজ-এর মধ্যে সীমাবদ্ধথাকবে না। আমরা এই ফেরি পরিষেবার মাধ্যমে ভবিষ্যতে হজিরা, পিপাবাও, জাফরাবাদ এবংদমন দ্বীপকে সংযুক্ত করার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছি। কয়েক বছর পরই এই ফেরি পরিষেবাসুরাট থেকে হজিরা হয়ে মুম্বাই পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার কাজ এগিয়ে চলেছে। কচ্ছ উপসাগরেওএ ধরনের প্রকল্প শুরু করার প্রাথমিক স্তরের কাজ শুরু হয়েছে। কচ্ছ-এর বায়ু বন্দর আরজামনগরের রোজিবন্দরের মাঝে এ রকম পরিষেবা চালু করার জন্য প্রি-ফিজিবিলিটি রিপোর্টইতিমধ্যেই তৈরি করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এই ফেরি পরিষেবা জনপ্রিয় হয়ে উঠলে নর্মদানদীর মাধ্যমে রাজ্যের অধিকাংশ শিল্প কেন্দ্রগুলির সঙ্গে এই পরিষেবাকে যুক্ত করাহবে।
বন্ধুগণ, ভারতের বিশাল সমুদ্রসীমা ৭ হাজার ৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ। আমার মতে,এই বিশাল সমুদ্রতট দেশের উন্নয়নকে নতুন মাত্রায় পৌঁছে দিতে পারে। অনেক বিনিয়োগেরসম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু বিগত দশকগুলিতে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে এই সম্ভাবনাকেবাস্তবে পরিণত করার প্রচেষ্টা খুবই কম হয়েছে। দেশের জাহাজ পরিবহণ এবং বন্দরক্ষেত্র দীর্ঘকাল ধরে উপেক্ষিত ছিল। আমরা সরকারে এসে এই ক্ষেত্রটিকে সংস্কার করেআধুনিকীকরণের জন্য সাগরমালা কার্যক্রম চালু করেছি। এই সাগরমালা পরিযোজনার মাধ্যমেদেশের বন্দরগুলির আধুনিকীকরণ আর নতুন নতুন বন্দর নির্মাণের কাজ শুরু করেছি। সড়কপথ,রেলপথ এবং আন্তঃরাজ্য জলপথকে সমুদ্রতটবর্তী পরিবহন ব্যবস্থার সঙ্গে সংহত করাহয়েছে। এই পরিযোজনা সমুদ্রতটবর্তী পণ্য-পরিবহন বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণভূমিকা পালন করছে।
বন্ধুগণ, সরকারের এই প্রচেষ্টার ফলে বিগত তিন বছরে বন্দর ক্ষেত্রে অনেক বড়পরিবর্তন এসেছে। গত দু-তিন বছরেই সবচাইতে বেশি ক্ষমতা সংযোজিত হয়েছে। যে বন্দর আরসরকারি কোম্পানিগুলি লোকসানে চলছে, সেগুলিরও পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। সরকার সমুদ্র তটবর্তীপরিষেবার সঙ্গে যুক্ত দক্ষতা উন্নয়নেও জোর দিয়েছে। একটি অনুমান অনুসারে আগামীদিনেশুধু এই সাগরমালা প্রকল্পেই ভারতের এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। আমরা সেইলক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি যাতে সম্পূর্ণ পরিবহণ পরিকাঠামো আধুনিক এবং সংহতভাবে কাজকরতে পারে।
আমাদের দেশে পরিবহন নীতিতে যেসব ভারসাম্যহীনতা ছিল সেগুলি দূর করা হচ্ছে।এই ভারসাম্যহীনতা এত বেশি ছিল যে, স্বাধীনতার এত বছর পরেও দেশে মাত্র পাঁচটি জাতীয়জলপথ ছিল। অথচ জলপথ পরিবহন এত সস্তা আর আমাদের দেশে এত এত নদী! একথা মাথায় রেখেআমরা এই অল্প সময়ের মধ্যে ১০৬টি জাতীয় জলপথ চালু করেছি। আর এক্ষেত্রে দ্রুত কাজএগিয়ে চলেছে। এই জাতীয় জলপথগুলির মোট দৈর্ঘ্য ১৭ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি। এই নতুন১৭ হাজার কিলোমিটার জলপথ সংযুক্ত হওয়ায় দেশের পরিবহণ ব্যবস্থায় ভারসাম্যহীনতাঅনেকটাই দূর হয়েছে।
আমাদের সমুদ্র সম্পদ, আমাদের গ্রামীণ এবং সমুদ্র তটবর্তী অঞ্চলগুলিরউন্নয়নে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। মৎস্যজীবী ভাই-বোনেরা যাতে এই সম্পদেরসম্পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে পারেন, তা সুনিশ্চিত করতে সরকার নীল বিপ্লব প্রকল্প গড়েতুলেছে। এর মাধ্যমে তাঁদেরকে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির মাধ্যমে মাছ ধরাএবং মৎস্যপালনের নানা উন্নত পদ্ধতি মূল্য সংযোজনের মাধ্যমে শেখানো হচ্ছে।
নীল বিপ্লব প্রকল্পের অন্তর্গত মৎস্যজীবীদের লংলাইনার ট্রলার কেনারক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তা প্রদানের প্রকল্প চালু হয়েছে। একটি ভেসেলে কেন্দ্রীয় সরকার৪০ লক্ষ টাকা ভর্তুকি দেবে। এই লংলাইনার ট্রলার শুধু মৎস্যজীবীদের জীবনকে সহজ করেতুলবে না, তাঁদের ব্যবসা বৃদ্ধিতেও সাহায্য করবে। এখন যেভাবে এই ট্রলারগুলিব্যবহার করা হয়, তা কম জলে মাছ ধরার কাজে লাগে। প্রযুক্তিগতভাবেও এগুলি অনেক পুরনোএবং ঝুঁকিপূর্ণ। সেজন্য এই পুরনো ট্রলারগুলি নিয়ে সমুদ্রে গিয়ে মাঝে মধ্যেই তাঁরাপথ হারান। কখনও কখনও অজান্তেই ভারতের সমুদ্রসীমা ছাড়িয়ে অন্য দেশের সমুদ্রসীমায়পৌঁছে যান। অন্য দেশের তটরক্ষীদের হাতে ধরা পড়লে, তাঁদের নানারকম সমস্যার সম্মুখীনহতে হয়। এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তিযুক্ত লংলাইনার ট্রলারগুলির সাহায্যে মৎস্যজীবীভাইরা গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতে পারবেন এবং অত্যন্ত কম সময়ে সঠিক লক্ষ্যে ফিরেআসতে পারবেন। এই আধুনিক লংলাইনার ট্রলারগুলি জ্বালানি সাশ্রয়কারী। তার মানেমৎস্যজীবীদের সুরক্ষা বৃদ্ধির পাশাপাশি তাঁদের ব্যবসা বৃদ্ধিও সুনিশ্চিত করে।
বন্ধুগণ, আমরা দেশের পরিকাঠামো উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। বিগত তিন বছরেমহাসড়ক নির্মাণ, রেলপথ, জলপথ এবং আকাশপথে যাতায়াতের পরিকাঠামো উন্নয়নে অনেক কাজকরেছি। এর আগে এত কম সময়ে এত কাজ আর কোনওদিন হয়নি। তাছাড়া, নতুন বিমান পরিষেবানীতি গড়ে তুলে ক্ষেত্রীয় বিমান পরিষেবার ক্ষেত্রেও সংস্কার আনা হয়েছে। ছোট ছোটবিমানবন্দরের আধুনিকীকরণ করা হচ্ছে। কয়েক সপ্তাহ আগেই আমেদাবাদ থেকে মুম্বাইযাতায়াতকারী দেশের প্রথম বুলেট ট্রেন প্রকল্পের কাজও শুরু হয়েছে। এই সমস্তপ্রচেষ্টা দেশে একবিংশ শতাব্দীর উপযোগী অত্যাধুনিক পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তোলারবুনিয়াদকে পোক্ত করবে। একটি এমন পরিবহণ ব্যবস্থা, যা নতুন ভারতের প্রয়োজন ওআকাঙ্খা বাস্তবায়নে কাজে লাগবে। বন্ধুগণ, আজ এই ঘোঘা থেকে আমি ফেরি পরিষেবারমাধ্যমে দহেজ পর্যন্ত যাব। আমার সঙ্গে যাবে কয়েকজন দিব্যাঙ্গ শিশু। তাদের মুখেরহাসি হবে আমার আজকের পারিশ্রমিক।
ভাই ও বোনেরা, আমি ছোটবেলা থেকে যে কাজ করার স্বপ্ন দেখতাম, তা বাস্তবায়িতহওয়ার পর এমন অনুভব করেছি, যা হয়তো কেউ কল্পনা করতে পারবেন না। আমার ছোটবেলারস্বপ্ন বাস্তবায়িত করার সুযোগ পেয়ে আমার জীবন আজ ধন্য হয়ে গেছে। আমি এটাকে আমারব্যক্তিগত সৌভাগ্য বলে মনে করি। দহেজ-এ গিয়ে আমি নিজের এই অনুভূতির কথা শোনাব। আজআমি আপনাদের অনুরোধ করব, এই গুরুত্বপূর্ণ কর্মযজ্ঞে আপনারাও আমার সঙ্গে যুক্ত হনআর মনে রাখবেন এই ফেরি পরিষেবা সূচনামাত্র; প্রথম পদক্ষেপ। ভবিষ্যতে বেসরকারিকোম্পানিগুলি এগিয়ে আসবে এবং ফেরি পরিষেবা অনেক বৃদ্ধি পাবে। নতুন নতুন রুট চালুহবে। পর্যটন উন্নয়ন হবে। আমাদের সুরাটের ধনী সম্প্রদায় এই ফেরি পরিষেবা ভাড়া করেজন্মদিন পালনের জন্য সমুদ্রে যাবে। এরকম অনেক নতুন নতুন বিষয় ঘটবে আর সেজন্যই আমিবললাম এই পরিষেবা দেখবেন ঘোঘা’র ভাগ্য বদলে দেবে। আমি আরেকবার আপনাদের সবাইকে এইঘোঘা, দহেজ, রো-রো ফেরি পরিষেবা এবং সর্বোত্তম ডেয়ারির ক্যাটল ফিড প্ল্যান্টেরজন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। আপনাদের সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ভারতমাতা কি জয়,
ভারতমাতা কি জয়,
জয় বীর মোখরাজি দাদা,
জয় বীর মোখরাজি দাদা,
জয় বীর মোখরাজি দাদা,