দেশের প্রধান বিচারপতি শ্রী দীপক মিশ্র, আমার মন্ত্রিমণ্ডলীর সদস্য আইনমন্ত্রী শ্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ, ল কমিশনের চেয়ারম্যান ডঃ জাস্টিস বি এস চৌহান, নিতিআয়োগের ভাইস চেয়ারম্যান ডঃ রাজীব কুমার, আইন প্রতিমন্ত্রী শ্রী পি পি চৌধুরী, এইসভাগৃহে উপস্থিত সকল সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ, ভাই ও বোনেরা;
ভারতীয় গণতন্ত্রে আজকের দিনটি যতটা পবিত্র, ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমারগণতান্ত্রিক ব্যবস্থাসমূহের আত্মা যদি কোনও কিছুকে বলা যায়, তা হল আমাদের সংবিধান।এই আত্মাকে, এই লিখিত গ্রন্থকে ৬৮ বছর আগে স্বীকার করে নেওয়া অত্যন্ত ঐতিহাসিকমুহূর্ত। এই দিনে আমরা একটি রাষ্ট্র হিসাবে ঠিক করেছিলাম যে, এখন আমাদের পরবর্তীলক্ষ্য সাধনে কোন্ নির্দেশাবলী মেনে, কোন্ নিয়মাবলী মেনে এগোতে হবে! সেইনিয়মাবলী, সেই সংবিধান যার প্রতিটি শব্দ আমাদের জন্য পবিত্র ও পুজনীয়।
আজকের দিন দেশের সংবিধান নির্মাতাদের শ্রদ্ধা জানানোরও দিন। স্বাধীনতার পরযখন কোটি কোটি মানুষ নতুন আশা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন, তখন প্রতিকূলপরিস্থিতি থাকা সত্ত্বেও দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে দেশের সামনে এমন একটি সংবিধান প্রস্তুতকরা, যা প্রত্যেকেই মেনে নেবেন – এটা কোনও সহজ কাজ ছিল না! যে দেশে এক ডজনেরও বেশিধর্মপন্থা, একশোরও বেশি ভাষা, সতেরোশোর-ও বেশি কথ্যভাষা, শহর-গ্রাম-ভ্রাম্যমানগোষ্ঠী এবং অরণ্যেও মানুষ থাকেন, তাঁদের নিজস্ব আস্থা রয়েছে, তাঁদেরকে এক মঞ্চেআনা, প্রত্যেকের আস্থাকে সম্মান জানিয়ে এই ঐতিহাসিক দস্তাবেজ রচনা করা সহজ ছিল না।
এই সভাগৃহে উপস্থিত প্রত্যেকেই সাক্ষী রয়েছেন যে, সময়ের সঙ্গে আমাদেরসংবিধান প্রতিটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। যাঁরা বলেছিলেন যে, পরিবর্তিত সময়েরসঙ্গে দেশের সামনে যে সমস্যাগুলি আসবে, সেগুলির সমাধান এটি করতে পারবে না, আমাদেরসংবিধান। তাঁদের আশঙ্কাকে ভুল প্রমাণ করেছে।
এমন কোনও বিষয় নেই, যার ব্যাখ্যা, যার দিশা-নির্দেশ আমরা ভারতীয় সংবিধানেপাই না! সংবিধানের এই শক্তিকে বুঝে সংবিধান সভার অন্তবর্তী চেয়ারম্যান শ্রীসচ্চিদানন্দ সিনহা মহোদয় বলেছিলেন –
“মানব দ্বারা রচিত কোনও রচনাকে যদি অমর বলা যায় – তা হল ভারতের সংবিধান”।
আমাদের সংবিধান যতটা জীবন্ত, ততটাই সংবেদনশীল। আমাদের সংবিধান জবাবদিহিকরতে সক্ষম। বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকর স্বয়ং সংবিধান সম্পর্কে বলেছিলেন,
“এটা কার্যকরী, এটা নমনীয়, আর এর মধ্যে যুদ্ধ ও শান্তির সময় দেশকে ঐক্যবদ্ধরাখার শক্তি রয়েছে”। বাবাসাহেব আরও বলেছিলেন – “সংবিধানকে সামনে রেখে যদি কিছু ভুলহয়ও, তার দায় সংবিধানের নয়, সংবিধান পালনকারী সংস্থাগুলির হবে”।
ভাই ও বোনেরা, এই ৬৮ বছর ধরে সংবিধান আমাদের একজন অভিভাবকের মতো সঠিক পথে,গণতন্ত্রের পথে চলা শিখিয়েছে, বিভ্রান্ত হতে দেয়নি। আজ আমরা সবাই এই অভিভাবকেরপরিবারের সদস্যরূপে এই সভাগৃহে উপস্থিত রয়েছি। সরকার, বিচার ব্যবস্থা, শাসনব্যবস্থার প্রত্যেকে এই পরিবারেরই সদস্য।
বন্ধুগণ, আজ সংবিধান দিবস আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন নিয়েএসেছে। আমাদের সংবিধান, আমাদের অভিভাবক যেরকম প্রত্যাশা করে, আমরা কি একটিপরিবারের সদস্যরূপে সেই মর্যাদাগুলি পালন করছি? একই পরিবারের সদস্যরূপে পরস্পরকেশক্তিশালী করার কাজ করছি, একে অপরের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছি?
ভাই ও বোনেরা, এই প্রশ্ন শুধুই বিচার ব্যবস্থা কিংবা সরকারের দায়িত্বে থাকাব্যক্তিদের সামনেই নয়, এদেশের এরকম প্রতিটি স্তম্ভের সামনে ঝুলছে, দেশের কোটি কোটিমানুষ যাদেরকে ভরসা করেন, যাদের কাছে আশা করেন। এই সংস্থাগুলির এক একটি সিদ্ধান্ত,প্রতিটি পদক্ষেপ মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে। প্রশ্ন এটাই যে, এই সংস্থাগুলি কিদেশের উন্নয়নের জন্য, দেশের প্রয়োজন বুঝে, দেশের সামনে উপস্থিত চ্যালেঞ্জগুলিবুঝে, দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্খা বুঝে পরস্পরকে সাহায্য, সমর্থন ও শক্তিশালী করবে।
ভাই ও বোনেরা, ৭৫ বছর আগে যখন ১৯৪২ সালে গান্ধীজি ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনেরআহ্বান জানিয়েছিলেন, দেশ একটি নতুন উদ্দীপনায় উদ্বেলিত হয়েছিল। প্রত্যেক গ্রাম,প্রতিটি গলি, প্রত্যেক শহর, প্রত্যেক পাড়ায় এই উদ্দীপনা সঠিক পদ্ধতিতে পুষ্পিত হতেথাকে আর তারই পরিণামে পাঁচ বছর পর দেশ স্বাধীন হয়।
আজ থেকে পাঁচ বছর পর আমরা স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষপূর্তির উৎসব পালন করব। এইপাঁচ বছরে আমাদের একজোট হয়ে আমাদের সেই ভারতের স্বপ্নপূরণ করতে হবে। যেমন ভারতেরস্বপ্ন আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামীরা দেখেছিলেন। সেজন্য সংবিধান থেকে শক্তি নিয়েপ্রত্যেক সংস্থাকে সেই শক্তিকে সঠিক পথে সঞ্চালিত করতে হবে। ‘নতুন ভারত’-এরস্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার কাজে লাগাতে হবে।
বন্ধুগণ, একথা আজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ জনভাবনার এমন প্রবল প্রকাশদেশে আজ হয়তো কয়েক দশক পর পরিলক্ষিত হচ্ছে। ভারত আজ বিশ্বে সর্বাধিক নবীন জনবলের দেশ।এই নবীন শক্তিকে সঠিক দিশায় পরিচালিত করতে প্রতিটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মিলেমিশেকাজ করার প্রয়োজন রয়েছে।
বিংশ শতাব্দীতে আমরা একবার এই সুযোগ হারিয়েছি। এখন একবিংশ শতাব্দীতেভারত’কে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে, নতুন ভারত গড়তে, আমাদের সবাইকে সংকল্প গ্রহণ করতেহবে। মিলেমিশে কাজ করার সংকল্প, পরস্পরকে শক্তিশালী করার সংকল্প।
ভাই ও বোনেরা, দেশের সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেগুলির মোকাবিলা করতে ডঃরাজেন্দ্র প্রসাদ সংবিধান সভার একটি আলোচনায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ হঅয়ার গুরুত্ববিস্তারিতভাবে বুঝিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন –
“আমরা সবাইকে আশ্বস্ত করছি যে, দেশ থেকে দারিদ্র্য মেটাতে, অপরিচ্ছন্নতামেটাতে, ক্ষিদে এবং অপুষ্টিজনিত রোগ দূর করতে, বৈষম্য মেটাতে, শোষণ সমাপ্ত করতে আরজীবনধারণের জন্য উন্নত পরিবেশ সুনিশ্চিত করতে আমরা সর্বদাই সচেষ্টা থাকব। আমরাএকটি অনেক বড় উদ্যোগ নিতে চলেছি। আশা করি, এই প্রচেষ্টায় সকলের সহযোগিতা এবংসহানুভূতি পাব, সমাজের প্রত্যেকবর্গের মানুষের সমর্থন পাব”।
ভাই ও বোনেরা, সংবিধান রচনার সঙ্গে যুক্ত মহান ব্যক্তিদের এই প্রজ্ঞার ফলেইআমাদের সংবিধানকে একটি ‘সামাজিক নথি’ বলে গণ্য করা হয়। এটি নিছকই একটি আইনের বইনয়, এতে একটি সামাজিক দর্শনও রয়েছে। ১৪ আগস্ট, ১৯৪৭, অর্থাৎ স্বাধীনতা লাভের কয়েকমুহূর্ত আগে বলা রাজেন্দ্রবাবুর এই বক্তব্য আজও ততটাই প্রাসঙ্গিক। আমাদের সকলেরউদ্দেশ্য তো অবশেষে দেশের সাধারণ মানুষের জীবনকে উন্নত করা, তাঁদেরদারিদ্র্য-অপরিচ্ছন্নতা, ক্ষুধা ও রোগ থেকে মুক্ত করা। তাঁদের সমান সুযোগ প্রদান,ন্যায় প্রদান, তাঁদের নিজস্ব অধিকার প্রদান। এই কাজ প্রতিটি সংস্থার ভারসাম্যরক্ষার মাধ্যমে, একটি সংকল্প নির্দিষ্ট করেই বাস্তবায়িত করা সম্ভব।
ঐ বৈঠকে ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছিলেন। তিনিবলেছিলেন – “যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা উচ্চপদে আসীন ব্যক্তিদের দুর্নীতিমুক্ত না করতেপারব, স্বজনপোষণকে আমূল উৎপাটন না করতে পারব, ক্ষমতার লোভ, মুনাফাকারী আরকালোবাজারী দূর না করতে পারব, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা প্রশাসনে দক্ষতাবৃদ্ধি করতেপারব না আর যেসব জিনিস জীবনের সঙ্গে যুক্ত, সেগুলি সহজেই মানুষের কাছে পৌঁছে দিতেপারব”।
বন্ধুগণ, এসব কথা তিনি বলেছিলেন দেশ স্বাধীন হওয়ার কয়েক মুহূর্ত আগে। ১৪আগস্ট ১৯৪৭, একটি দায়িত্বভাব ছিল, দেশের আন্তরিক দুর্বলতাগুলি অনুভূত হওয়ারপাশাপাশি, এই আকুতিও ছিল যে এই দুর্বলতাগুলিকে কিভাবে দূর করা যাবে। দুর্ভাগ্যবশতঃস্বাধীনতার এত বছর পরও ঐ দুর্বলতাগুলি দূর হয়নি। সেজন্য প্রশাসন ব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা এবং আইনসভা – তিনটি স্তরেই এই উদ্দেশ্যে মন্থনের প্রয়োজন রয়েছে যে এখনপরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কিভাবে এগোনো যাবে। আমাদের কাউকে ঠিক আর কাউকে ভুল প্রমাণিতকরার প্রয়োজন নেই। আমরা নিজের নিজের দুর্বলতা সম্পর্কে জানি, আমরা নিজের নিজেরশক্তিকেও চিনি।
ভাই ও বোনেরা, বর্তমান সময় তো ভারতের ক্ষেত্রে সুবর্ণ যুগের মতো। অনেক বছরপর দেশে এমন আত্মবিশ্বাসের পরিবেশ গড়ে উঠেছে। নিশ্চিতভাবেই এর পেছনে ১২৫ কোটিভারতবাসীর ইচ্ছাশক্তি কাজ করছে। এই ইতিবাচক পরিবেশকে ভিত্তি করে আমাদের নতুন ভারতগড়ে তোলার পথে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের দেশে সামর্থ্য এবং উপাদানের অভাব নেই। ব্যস,আমাদের সময়ের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
আমরা যদি ভাবি যে, অফুরন্ত সময় রয়েছে, আমরা যদি ভাবি যে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মইসবকিছু করবে, সমস্ত ঝুঁকি নেবে, তা হলে ইতিহাস আমাদের কখনও ক্ষমা করবে না! যা করারআমাদেরকে এখনই করতে হবে, এবারই করতে হবে! এর পরিণাম আসতে আসতে আমরা থাকব না – একথাভেবে আমাদের থেমে থাকলে চলবে না!
আমার বন্ধুগণ, আমরা না থাকলেও এই দেশ তো থাকবেই। আমরা না থাকলে যে ব্যবস্থাআমরা দেশকে দিয়ে যাব, তা যেন সুরক্ষিত-আত্মাভিমানী এবং স্বাবলম্বী ভারতের ব্যবস্থাহয়ে ওঠে। এক এমন ব্যবস্থা, যা সাধারণ মানুষের জীবনকে সহজ করে দেবে।
বন্ধুগণ, আমি সর্বদাই মনে করি, সরকারের ভূমিকা ‘নিয়ন্ত্রক’ থেকে বেশি‘সাহায্যকারী’ হওয়া উচিৎ। আজ আপনারাও হয়তো অনুভব করেন যে, এখন কত দ্রুত আপনারাপাসপোর্ট পেয়ে যান। খুব বেশি হলে দু’দিন না হলে তিনদিন। আগে এই পাসপোর্ট পেতেএক-দু’মাস সময় লাগত। বিগত দু-তিন বছরে আপনাদের আয়কর রিফান্ড-এর জন্যও মাসের পর মাসঅপেক্ষা করতে হচ্ছে না।
আপনারা হয়তো লক্ষ্য করছেন যে ব্যবস্থায় গতি আসছে। আর এই গতি শুধু আপনাদেরইনয়, দেশের মধ্যবিত্ত, দরিদ্র – সকলের জীবনকেই সহজ করে দিচ্ছে।
এখন ভাবুন, গ্রুপ-সি এবং ডি-র চাকরিতে ইন্টারভিউ প্রথা তুলে দেওয়ায়যুবসম্প্রদায়ের কতটা সময় এবং অর্থ সাশ্রয় হয়েছে! আগে সকল; নথির প্রতিলিপি গেজেটেডঅফিসারদের দিয়ে প্রত্যয়িত করতে হ’ত – এখন আর তা করাতে হয় না! ফলে বিনা কারণে আরদৌড়ঝাঁপ করতে হয় না, কোনও গেজেটেড অফিসার কিংবা বিধায়কের পেছনে ছুটতে হয় না।
বন্ধুগণ, আপনারা জেনে অবাক হবেন যে, আমাদের দেশের রাজকোষে এমন ২৭ হাজারকোটি টাকা ছিল, যার কোনও হদিশ ছিল না। এই টাকা শ্রমিকরা, কর্মচারীরা নিজেদের পিএফঅ্যাকাউন্টে জমা করিয়েছিলেন আর পরে স্থান কিংবা কোম্পানি পরিবর্তনের কারণে তাঁরানিজেদের জমানো টাকা দাবি করতে পারেননি। একবার শহর ছেড়ে এলে, আর কে ফিরে যায়, কে এতদৌঁড়ঝাঁপ করতে পারেন!
আমাদের শ্রমিক আর মধ্যবিত্তের এত বড় সমস্যা সমাধানের জন্য বর্তমান সরকার ইউনিভার্সালঅ্যাকাউন্ট নম্বর ব্যবস্থা চালু করেছে। এখন কর্মচারীরা যেখানেই চাকরি করুক না কেন,তাঁদের কাছে ইউএএন নম্বর থাকে। এর মাধ্যমে তাঁরা নিজেদের পিএফ থেকে টাকা তুলতেপারেন।
বন্ধুগণ, বৃহদারণ্যক উপনিষদে বলা হয়েছে –
তদেতৎ – ক্ষত্রস্য ক্ষত্রং য়দ্ধর্ধঃ
তস্মাদ্ধর্মাৎ পরং নাস্তি
অথো অবল্বীয়ান্ বলীয়াংসমাশংসতে ধর্মেন
যথা রাজ্ঞা এবম্
আইন সম্রাটদের সম্রাট! আইনের ওপর কিছু নেই। আইনের মধ্যেই রাজার শক্তি নিহিতআর আইনই দরিদ্রদের, দর্বলদের শক্তিমানের বিরুদ্ধে লড়াই করার সাহস যোগায়, তাঁদেরসক্ষম করে তোলে। এই মন্ত্র নিয়ে এগিয়ে চলার পথে আমাদের সরকারও নতুন আইন প্রণয়নকরে, পুরনো সময়াতিক্রান্ত আইন বাতিল করে জীবনশৈলীকে সহজ করার কাজ করছি।
বিগত তিন-সাড়ে তিন বছরের মধ্যে প্রায় ১২০০ সময়াতিক্রান্ত আইন বাতিল করতেপেরেছি। সর্দার প্যাটেল যেমন দেশকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন, তেমনই দেশকে ঐক্যসূত্রেবাধার কাজ জিএসটি’র মাধ্যমে হয়েছে। কয়েক বছর পর ‘এক দেশ-এক কর’ – এর স্বপ্ন সাকারহয়েছে।
এভাবে দিব্যাঙ্গদের সুবিধার জন্য আইনে পরিবর্তন-সাধনের সিদ্ধান্ত হোক,তপশিলি জাতি/তপশিলি জনজাতি সংশ্লিষ্ট আইন কঠিন করার ফয়সালা হোক, কিংবা বিল্ডারদেরযথেচ্ছাচার থামানোর জন্য আরইআরএ, এই সবকিছু এজন্য করা হয়েছে, যাতে সাধারণনাগরিকদের দৈনন্দিন জীবনে বিপত্তি কমে!
বন্ধুগণ, এখানে এই সভাগৃহে হাজির প্রত্যেক মানুষ জানেন, সুপ্রিম কোর্টেরআদেশ থাকা সত্ত্বেও তিন বছর ধরে কালো টাকার বিরুদ্ধে ‘সিট’ গঠন করা হয়নি, আমাদেরসরকার শপথ গ্রহণের তিন দিনের মধ্যে এই দল গঠন করে দেয়। এই সিদ্ধান্ত যতটা কালোটাকা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ছিল, ততটাই সাধারণ মানুষের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট। দেশেরদুর্নীতির ও কালো টাকার প্রতিটি লেনদেন কোথাও না কোথাও কোনও গরিবের অধিকার হরণকরে, তাঁদের জীবনকে ব্যতিব্যস্ত করে।
ভাই ও বোনেরা, আমরা জনগণের সমস্যাগুলি বুঝে ছোট-বড় অনেক সিদ্ধান্ত নিয়েছি।চেষ্টা করেছি যাতে আমাদের সিদ্ধান্ত শুরু যথার্থই নয়, সংবেদনশীলও থাকে। বন্ধুগণ,মানুষের জীবনযাত্রাকে সহজ করার সাফল্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে দেশের ‘ইজ অফ ডুইংবিজনেস’-এর ব্যাঙ্কিং-এ অভূতপূর্ব উন্নতি হয়। ২০১৪ সালে ‘ইজ অফ ডুইং বিজনেস’-এভারতের বিশ্ব র্যাঙ্কিং ছিল ১৪২, এখন আমরা ১০০তম স্থানে পৌঁছে গেছি।
আমি আনন্দিত যে, আমাদের বিচার ব্যবস্থাও এই লক্ষ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপনিয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, এ বছর জাতীয় স্তরে শুধু লোক আদালতের মাধ্যমেই ১৮ লক্ষ‘প্রিলিটিগেশন’ আর ২২ লক্ষ স্থগিত মামলার নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়েছে।
ভাই ও বোনেরা, এই পরিসংখ্যান একথা প্রমাণ করে যে, যেসব বিবাদ পারস্পরিককথাবার্তা কিংবা কারও মধ্যস্থতায় মিটে যেতে পারত, তেমন বিপুল সংখ্যক মামলাআদালতগুলিতে পৌঁছে গেছে। আমি জানি না, করত বছর ধরে এই মামলাগুলি ঝুলে ছিল! এইমামলাগুলির সহজ নিষ্পত্তির ফলে নিশ্চিতভাবেই আমাদের দেশের আদালতগুলির বোঝা হ্রাসপেয়েছে। এরফলে, আমাদের দেশে লোক আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাও বেড়েছে। আমার মনে হয়, এমনইকোটি কোটি স্থগিত মামলার সমাধানে এরকম লোক আদালত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেপারে।
আমাকে বলা হয়েছে যে, এই সেপ্টেম্বরেই প্রধান বিচারপতি স্থগিত মামলাগুলিনিষ্পত্তি সম্পর্কে সকল উচ্চ আদালতের বিচারকদের চিঠিও লিখেছেন। আবেদন শুনানীরক্ষেত্রে বিলম্বকে তিনি আমাদের বিচার ব্যবস্থা এবং বিশেষ করে আমাদের অপরাধ বিচারব্যবস্থার দুর্বলতা বলে মনে করেন। তাঁরা শনিবারে বিশেষ আদালত চালু করে কিছু মামলারনিষ্পত্তি করার উপদেশ সম্পর্কে জেনে আমার খুব ভালো লেগেছে। স্থগিত মামলাগুলিরসমস্যা কমানোর জন্য তামিলনাড়ু ও গুজরাটের মতো রাজ্যগুলিতে সন্ধ্যাকালীন আদালত চালুকরা হয়েছে। এ ধরণের প্রয়োগ বাকি রাজ্যগুলিতে চালু করা যেতে পারে।
বন্ধুগণ, বিচার-ব্যবস্থায় প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধিও সাধারণ মানুষেরজীবনযাত্রা সহজ করতে কার্যকরী প্রমাণিত হবে। ই-কোর্টের বিস্তার যত বৃদ্ধি পাবে,ন্যাশনাল জুডিশিয়াল ডেটা গ্রিড যত প্রসারিত হবে, আদালতে সাধারণ মানুষের হয়রানি ততকমবে! ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে দেশের আদালতগুলি কারাগার ব্যবস্থার সঙ্গেযুক্ত হলে আদালত এবং কারাগার প্রশাসনের মধ্যে সম্পর্ক নিবিড় হবে।
আমাকে বলা হয়েছে যে, বিগত দু’বছরে প্রায় ৫০০টি আদালতের ভিডিওকনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে কারাগারগুলির সঙ্গে সংযুক্তিকরণ হয়েছে। আমাকে টেলি আইনপ্রকল্প সম্পর্কেও বলা হয়েছে, যার সাহায্যে দেশের দূরদূরান্তে বসবাসকারী মানুষদেরএবং গ্রামীণ গরিবদের আইনি পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এই প্রকল্পের আওতা যত বৃদ্ধি পাবে,সাধারণ মানুষের তত ভালো হবে।
আরেকটি উদ্ভাবনী ভাবনা আমার খুব ভালো লেগেছে – জাস্টিস ক্লক-এর ভাবনা এইঘড়ি এখন সরকারের আইন বিভাগের দপ্তরে লাগানো হয়েছে। এর মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ দক্ষতাপ্রদর্শনকারী জেলা আদালতগুলি সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়, ভবিষ্যতে এরকম বিচার ঘড়িদেশের সমস্ত আদালতে লাগানোর প্রচেষ্টা চলছে। এর মাধ্যমে আদালতগুলিকে ‘র্যাঙ্কিং’প্রদানের কথা হয়েছে।
পরিচ্ছন্নতার র্যাঙ্কিং শুরু করার পর শহরগুলির মধ্যে যেমন একটিপ্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, কলেজগুলিতে র্যাঙ্কিং শুরু করানোর পর উচ্চশিক্ষাক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার পরিবেশ গড়ে উঠেছে, তেমনই জাস্টিস ক্লকের বিস্তারের মাধ্যমে,এর মধ্যে কোনও সংস্কারের প্রয়োজন হলে তা করে চালু করলে আদালতগুলির মধ্যেও পেশাগতপ্রতিযোগিতা শুরু হতে পারে। এটা আমার অভিজ্ঞতা যে প্রতিযোগিতার আবহ গড়ে তুলতেপারলে ব্যবস্থায় গতি আসে, কম সময়ে বেশি সংস্কার হতে দেখা যায়। আমি আইন বিশেষজ্ঞনই, কিন্তু আমার মনে হয় যে আদালতে প্রতিযোগিতার আবহ গড়ে উঠলে তা ‘ইজ দ্য অ্যাক্সেসটু জাস্টিস’ আর ‘ইজ অফ লিভিং’-কে ত্বরান্বিত করবে। গতকাল মাননীয় রাষ্ট্রপতি মহোদয়ওএই বিষয়ে দুশ্চিন্তা ব্যক্ত করেছেন যে, দেশের গরিব মানুষ ন্যায়-বিচারের জন্যআদালতে যেতে ভয় পায়। বন্ধুগণ, আমাদের সমস্ত প্রচেষ্টার পরিণাম এটা হওয়া উচিৎ যেগরিব মানুষ আর আদালতকে ভয় পাবে না, সময় মতো ন্যায়-বিচার পাবে আর এই বিচারপ্রক্রিয়ায় তাঁদের ন্যূনতম খরচ হবে।
বন্ধুগণ, আজ দেশের সংবিধান দিবস উপলক্ষে আমি দেশের সেই যুবক-যুবতীদেরশুভেচ্ছা জানাতে চাই, যাঁরা ১লা জানুয়ারি, ২০১৮-য় ভোটাধিকার পাবেন। একবিংশ শতাব্দীতেজন্মগ্রহণ করা এই সদ্যযুবক-যুবতীরা কয়েক মাস পরই নির্বাচনে প্রথমবার ভোট দেবে।একবিংশ শতাব্দীকে ভারতের শতাব্দী গড়ে তোলার দায়িত্ব এই নবীন প্রজন্মের। তেমনইআমাদের দায়িত্ব এই নবীন প্রজন্মকে এমন ব্যবস্থার উত্তরাধিকার প্রদান করা, যাতাঁদের আরও মজবুত করবে, তাঁদের শক্তি বাড়াবে।
এবার আমি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আপনাদের মতো বিদ্বানদের সামনেতুলে ধরতে চাই। সেটি হ’ল – কেন্দ্র ও রাজ্যগুলিতে এক সঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়াসম্পাদন। গত কয়েক মাস ধরে দেশে এই বিষয়ে আলাপ-আলোচনা বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক রাজনৈতিকদলই প্রত্যেক ৪-৬ মাস পর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলে দেশে আর্থিক বোঝা এবং প্রশাসনেরওপর চাপ নিয়ে চিন্তা ব্যক্ত করেছে। উদাহরণস্বরূপ – ২০০৯-এর লোকসভা নির্বাচনে ১,১০০কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ৪ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে।এছাড়া, প্রার্থীদের আলাদা খরচ রয়েছে। প্রত্যেক নির্বাচনে হাজার হাজার কর্মচারীকেস্থানান্তর করতে এবং লক্ষ লক্ষ নিরাপত্তাকর্মীকে দেশের এক প্রান্ত থেকেঅন্যপ্রান্তে পাঠাতে অনেক খরচ হয়, ব্যবস্থার ওপর চাপ পড়ে। আর আচরণবিধি চালু হলে,সরকার এত সহজে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারে না!
বিশ্বের অনেক দেশে এর ঠিক বিপরীত ব্যবস্থা রয়েছে, যেখানে সমস্ত স্তরের জন্যএকটি নির্দিষ্ট নির্বাচনের তারিখ থাকে। ফলে, দেশ সর্বদা কোথাও না কোথাও নির্বাচনপ্রক্রিয়ার মধ্যে থাকে না, নীতি-নির্ধারণ প্রক্রিয়া এবং বাস্তাবায়নে অধিক দক্ষতাথাকে। দেশের প্রশাসন ও অর্থ ব্যবস্থাকে কোনও অনাবশ্যক বোঝা গ্রহণ করতে হয় না।
ভারতে আগেও একসঙ্গে নির্বাচনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। আর সেই অভিজ্ঞতা অত্যন্তসুখকর। কিন্তু আমাদের কর্মীদের সদিচ্ছার অভাবে সেই ব্যবস্থা টেকেনি। আমি আজ শুভসংবিধান দিবস উপলক্ষে এই আলোচনাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
ভাই ও বোনেরা, নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ না থাকলে যে কোনও ব্যক্তি, সংস্থা কিংবাসরকারকে যে কোনও দিন সংকটের সম্মুখীন হতে হয়। আমাদের দেশে এই ব্যবস্থা রয়েছে যেআমরা সময়ের সঙ্গে নিজেদের পরিষ্কৃত করি, নিজেদের নিয়ন্ত্রিত করি। বিশেষ করে,জনপ্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক দলগুলি দেশ ও সমাজের হিতে নিজেদের অনেক নিয়ন্ত্রণেরবন্ধনে বাঁধতে পারে।
যেমন আজও অনেকে জানেই না যে, নির্বাচনের আগে যে আচরণবিধি চালু হয়, সেটিকোনও আইন প্রণয়নের মাধ্যমে চালু হয়নি, এই আচরণবিধি দেশের রাজনৈতিক দলগুলি নিজেরাইস্বেচ্ছায় স্বীকার করে নিয়েছে। তেমনই সংসদে কত না আইন প্রণয়ন করে নেতাদের এবংরাজনৈতিক ব্যবস্থাকে নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।রাজনীতিতে শুচিতা স্বচ্ছতা বজায় রাখার প্রচেষ্টা জারি রয়েছে। যে সংস্থাই হোক নাকেন, তাতে আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং ভারসাম্য রক্ষার ব্যবস্থা যত মজবুত হয়, সংস্থাটি এবংতার সঙ্গে যুক্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও তত মজবুত হয়।
আজ এই উপলক্ষে সংবিধানের তিনটি মূল স্তম্ভের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার প্রসঙ্গউত্থাপিত হওয়ায় একথা মনে রাখতে হবে যে, আমাদের দেশে বিচার-ব্যবস্থা, আইন-ব্যবস্থাআর প্রশাসনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার মেরুদন্ড হ’ল আমাদের সংবিধান। এই ভারসাম্যেরজোরেই জরুরি অবস্থার সময় দেশে গণতন্ত্রকে বিপথগামী করার অনেক প্রচেষ্টা হলেও তাখারিজ হয়ে গেছে।
বন্ধুগণ, সেই সময় সুপ্রিম কোর্ট ঐতিহাসিক রায়দানের মাধ্যমে বলেছিল –“সংবিধানের বুনিয়াদী স্বরূপের অন্তর্গত, সাংবিধানিকভাবে আলাদা তিনটি অঙ্গ, সংবিধানদ্বারা নির্ধারিত সীমাগুলি অতিক্রম করে পরস্পরের সীমায় প্রবেশ করতে পারে না। এটাইসংবিধানের প্রভূত্বের সিদ্ধান্তের তর্কসম্মত এবং বাস্তব অর্থ”।
সংবিধানের এই শক্তিগুলির কারণে বাবাসাহেব একে ‘ফান্ডামেন্টাল ডক্যুমেন্ট’বা মূল নথি আখ্যা দিয়েছেন। এটি এক এমন নথি, যা প্রশাসনিক, বিচার-বিভাগীয় এবংআইন-বিভাগের স্থিতি এবং শক্তিসমূহকে পরিভাশিত করে। ডঃ আম্বেদকর বলেছিলেন –
“সংবিধানের উদ্দেশ্য শুধু রাষ্ট্র ব্যবস্থার তিনটি অঙ্গকে নির্মাণ করা নয়,তাদের অধিকারের সীমা নির্ধারণ করা। এটা এজন্যই প্রয়োজন যে, সীমা নির্দিষ্ট না করে দিলেসংস্থাগুলির মধ্যে নিরঙ্কুশতা বর্তাতে পারে আর তা উৎপীড়ন শুরু করতে পারে। সেজন্যআইনসভার যে কোনও আইন প্রণয়নের স্বাধীনতা থাকা উচিৎ, প্রশাসনের যে কোনও সিদ্ধান্তনেওয়ার স্বাধীনতা থাকা উচিৎ আর সুপ্রিম কোর্টের থাকা উচিৎ আইনের ব্যাখ্যা করারস্বাধীনতা”।
বাবসাহেব-এর বলা এই কথাগুলি মেনে আমরা আজ এতদূর পৌঁছেছি আর গর্বের সঙ্গেসংবিধান দিবস পালন করছি। সংবিধানের এই বৈশিষ্ট্য, সংবিধানের মৌলিক গঠন প্রণালীসংশ্লিষ্ট তিনটি সংস্থার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার জন্য সুপ্রিম কোর্টও বেশ কিছুসিদ্ধান্ত নিয়েছে। ১৯৬৭ সালে একটি সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল –
“আমাদের সংবিধান আইনসভা, শাসন ব্যবস্থা এবং বিচার ব্যবস্থার সীমা অত্যন্তসূক্ষ্মভাবে নির্ণয় করেছে। সংবিধান তাদের থেকে আশা করে যে তারা নিজেদের সীমা লঙ্ঘননা করে নিহিত শক্তিগুলি প্রয়োগ করবে”।
ভাই ও বোনেরা, আজ যখন আমরা ‘নতুন ভারত’-এর স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার জন্যযথাসম্ভব প্রচেষ্টা চালাচ্ছি, এই সময়ে সংবিধানের শিক্ষার প্রাসঙ্গিকতা আরও বৃদ্ধিপেয়েছে। প্রত্যেক ব্যবস্থাকে নিজের সীমার মধ্যে থেকে জনগণের আশা-আকাঙ্খা পূরণ করতেহবে।
আজ গোটা বিশ্ব ভারতের দিকে অনেক আশা নিয়ে তাকিয়ে আছে। সেসব দেশ অনেকসমস্যার সমাধানের জন্য ভারতের দিকে তাকিয়ে আছে। অনেক দেশই ভারতের উন্নয়নে কাঁধেকাঁধ মিলিয়ে অংশগ্রহণ করতে চায়। এহেন পরিস্থিতিতে আমাদের আইন-ব্যবস্থা, শাসনব্যবস্থা এবং বিচার-ব্যবস্থাকে সংবিধান নির্ধারিত মর্যাদা মাথায় রেখে এগিয়ে যেতেহবে।
বন্ধুগণ, আমি ‘ল কমিশন’ এবং ‘নিতি আয়োগ’কে এই আয়োজনের জন্য অভিনন্দন জানাই।সংবিধানের তিনটি অঙ্গের প্রতিনিধিরাই এই অনুষ্ঠানে মন খুলে নিজেদের বক্তব্যরেখেছেন। অনেক বিশেষজ্ঞ ও বিদ্বান নিজেদের মতামত দিয়েছেন। প্রত্যেকের মতামতেরনিজস্ব গুরুত্ব রয়েছে। গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে এরকম বার্তালাপের অনেক প্রয়োজনরয়েছে। এটা আমাদের ব্যবস্থার পরিপক্কতার পরিচায়ক। এই অনুষ্ঠানে যেসব কার্যকর করারমতো বিষয় উঠে এসেছে, সেগুলিকে সবাই মিলে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বার্তালাপেরপ্রক্রিয়া যাতে নিরন্তর জারি থাকে, সে ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা করা উচিৎ।
ভাই ও বোনেরা, আজ সময়ের দাবি হ’ল – আমাদের পরস্পরের ক্ষমতায়নে এগিয়ে আসতেহবে, পরস্পরের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে হবে, সেই স্তম্ভ যেসব সমস্যার মোকাবিলা করছে,সেগুলি বুঝতে হবে। যখন এই তিনটি স্তম্ভই সংবিধানে লিপিবদ্ধ নিজের নিজের কর্তব্যসম্পাদনে জোর দেবে, তখনই দেশের নাগরিকদের অধিকার সহকারে বলতে পারবে – “আপনারাওনিজেদের কর্তব্য পালন করুন, উন্নাসিকতা ত্যাগ করে সমাজ ও দেশকে নিয়ে ভাবুন”।
বন্ধুগণ, অধিকারের দ্বন্দ্বে কর্তব্যে অবহেলার সম্ভাবনা থাকে আর কর্তব্যেগাফিলতি থাকলে দেশ এগিয়ে যেতে পারবে না।
আমি আরেকবার আপনাদের সবাইকে, দেশবাসীকে সংবিধান দিবসের অনেক অনেক শুভেচ্ছাজানাই।
আপনাদের সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।