ফিকির সভাপতি শ্রী পঙ্কজ আর প্যাটেলজি, ভাবীসভাপতি শ্রী রমেশ সি শাহ্জি, সেক্রেটারি জেনারেল ডঃ সঞ্জয় বারুজি এবং এখানেউপস্থিত অন্যান্য সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ,
আপনারা সকলে আজ নিজেদের সারা বছরের কাজের হিসাবনিয়ে বসেছেন। এবছর ফিকির ৯০ বছর পূর্ণ হয়েছে। যে কোনও সংস্থার জন্য এটি অত্যন্তগৌরবের বিষয়। আপানাদের সকলকে আমার পক্ষ থেকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
বন্ধুগণ, ১৯২৭ সালে সাইমন কমিশন গঠন করা হলে তারবিরুদ্ধে ভারতীয় শিল্প জগতের ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ একটি ঐতিহাসিক ও অত্যন্ত প্রেরণাদায়কঘটনা। প্রত্যেকেই নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে এই প্রতিবাদজানিয়েছিলেন। তৎকালীন ভারতীয় সমাজের প্রতিটি অঙ্গের মতো রাষ্ট্রহিতে এগিয়ে এসেতৎকালীন শিল্প জগতের প্রতিনিধিরাও সাইমন কমিশন গঠনের প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছিলেন।সেই ভারতীয় সমাজে প্রত্যেক বৃত্তির মানুষ যেমন রাষ্ট্রহিতে এগিয়ে এসেছেন, তেমনইভারতীয় শিল্পপতিরাও রাষ্ট্র নির্মাণে নিজেদের শক্তি প্রয়োগ করেছেন।
ভাই ও বোনেরা, ৯০ বছর আগে যেমন সাধারণ মানুষনিজেদের দৈনন্দিন দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দেশের দায়িত্ব সম্পাদনের জন্যও এগিয়েএসেছিলেন, আজও তেমনই সাধারণ মানুষ আবার সক্রিয় হয়ে উঠছেন। দেশের জন্য তাঁদেরপ্রত্যাশার স্তর এখন সর্বোচ্চ। সেজন্য তাঁরা যত শীঘ্র সম্ভব সকল কুসংস্কার,দুর্নীতি ও কালো টাকার কবল থেকে মুক্তি পেতে চান।
সেজন্য আজ প্রতিটি সংস্থা, সে কোনও রাজনৈতিক দলহোক কিংবা ফিকি’র মতো শিল্পপতিদের সংগঠন; তাঁদের জন্য আত্মমন্থনের সময় সমাগত, যাতেতাঁরা দেশের প্রয়োজনীয়তা, দেশের মানুষের প্রত্যাশা বুঝে নিজেদের ভবিষ্যৎকর্মপদ্ধতি রচনা করতে পারেন।
বন্ধুগণ, স্বাধীনতার পর বিগত সাত দশকে দেশে অনেককিছু হয়েছে। কিন্তু এটাও সত্য যে এই সময়কালে আমাদের সামনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও বড়হয়ে উঠেছে। এই সাত দশক ধরে গড়ে ওঠা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সর্বদাই দেশের নানাপ্রান্তে গরিব মানুষকে লড়াই করতে হয়েছে। অনেক ছোট ছোট প্রয়োজনে তাঁদের সংঘর্ষ করতেহয়েছে। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে, রান্নার গ্যাস সংযোগ পেতে গরিব মানুষকে দশজায়গায় ঘুরতে হ’ত। নিজের পেনশন কিংবা ছাত্রবৃত্তি পেতে এখানে-ওখানে কমিশন দিতেহ’ত।
বর্তমান সরকার ব্যবস্থার সঙ্গে সাধারণ মানুষেরলড়াই বন্ধ করার কাজ করছে। আমরা এমন একটি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই, যাতে স্বচ্ছতাথাকবে এবং যা হবে সংবেদনশীল। এমন এক ব্যবস্থা, যা সাধারণ মানুষের প্রয়োজন বুঝতেপারবে।
সেজন্য আমরা যখন জন ধন যোজনা শুরু করেছিলাম, তখনএত ভালো সাড়া পেয়েছি। আপনারা শুনলে অবাক হবেন, এই প্রকল্প শুরু করার আগে আমরালক্ষ্য স্থির করতে পারছিলাম না যে, ঠিক কত অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। কারণ, সরকারেরকাছে কোনও সঠিক তথ্য ছিল না।
আমরা শুধু বুঝতে পারছিলাম যে, গরিবদের ব্যাঙ্কেরদরজা থেকে কখনও ধমকে আবার কখনও নানা নথির বাহানায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়। আজ আমরা অনুভবকরছি যে, সামান্য সুযোগ পেতেই ৩০ কোটিরও বেশি মানুষ যে নিজেদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টখুলেছেন, তাতে গরিবদের কত বড় প্রয়োজন মিটেছে। একটি সমীক্ষা থেকে জানা গেছে যে, এইব্যাপক হারে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার ফলে বিশেষ করে, গ্রামাঞ্চলে দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি হ্রাস পেয়েছে। এর মানে এই একটি মাত্র প্রকল্প থেকে গরিব মানুষের জীবনে কতবড় পরিবর্তন এসেছে।
ভাই ও বোনেরা, আমাদের সরকার সাধারণ মানুষের সমস্যাও তাঁদের প্রয়োজনীয়তাগুলি মাথায় রেখে সমস্ত প্রকল্প গড়ে তুলেছে।, যাতে সাধারণমানুষের জীবনযাপন সহজ হয়, সেই ভাবনাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
গরিব মহিলাদের উনুনের কালো ধোঁয়া থেকে মুক্তি দিতেউজ্জ্বলা যোজনা শুরু করেছি। আমরা ইতিমধ্যেই ৩ কোটিরও বেশি মহিলাকে বিনামূল্যেরান্নার গ্যাস সংযোগ দিয়েছি। এরফলে, সমীক্ষায় জানা গেছে যে, গ্রামীণ এলাকাগুলিতেজ্বালানি মূল্য বৃদ্ধিও হ্রাস পেয়েছে। অর্থাৎ, গরিবদের এখন জ্বালানি বাবদ অনেক কমটাকা খরচ করতে হয়।
আমরা গরিব মানুষের প্রতিটি প্রয়োজন ও সমস্যাকে ধরেধরে সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি। গ্রামের মেয়েদের দৈনন্দিন লজ্জার হাত থেকে রক্ষারপাশাপাশি তাঁদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে স্বচ্ছ ভারত মিশন প্রকল্পেরমাধ্যমে ৫ কোটিরও বেশি শৌচালয় নির্মাণ করা হয়েছে।
গরিব মানুষের মাথার ওপর ছাদ সুনিশ্চিত করতেতাঁদেরকে যাতে আর ভাড়া বাড়িতে থাকতে না হয়, নিজ মালিকানাধীন পাকা বাড়িতে থাকতেপারেন, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা শুরু করা হয়েছে।
বন্ধুগণ, বিজ্ঞান ভবনের এই ঝকমকে আলোকসজ্জা, এইসুন্দর সুদৃশ্য পরিবেশ; আপনারা প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলিতে, দেশের গ্রামগুলিতে গেলে এরথেকে অনেক ভিন্ন ধরনের পরিবেশ দেখতে পাবেন। আমি আপনাদের মাঝে সেই দরিদ্র ভারতেরপ্রতিনিধিত্ব করছি। সীমিত রোজগার, পড়াশুনার সীমিত সুযোগ কিন্তু অসীম স্বপ্নেরদুনিয়া আমাকে এটা শিখিয়েছে যে, দেশের প্রয়োজন বুঝে, গরিবদের প্রয়োজন বুঝে কাজ করতেহবে, সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আর সেগুলিকেই বাস্তবায়িত করতে হবে ।
মুদ্রা যোজনা দেশের নবীন প্রজন্মের অনেক বড়প্রয়োজন সাধনে কাজে লেগেছে। যে কোনও যুবক-যুবতী নিজের ক্ষমতায় কিছু করতে চাইলেসবচেয়ে বড় প্রশ্ন উঠত যে, বিনিয়োগের টাকা কোথা থেকে আসবে? কোনও ব্যাঙ্ক গ্যারান্টিছাড়া ঋণ দেয় না। মুদ্রা যোজনার মাধ্যমে সরকার তাঁদের হয়ে ব্যাঙ্ককে গ্যারান্টিদিয়েছে। ফলে, বিগত তিন বছরে প্রায় ৯ কোটি ৭৫ লক্ষ ঋণ মঞ্জুর করা হয়েছে। ইতিমধ্যেইব্যাঙ্কগুলি কোনও রকম গ্যারান্টি ছাড়াই যুবক-যুবতীদের ৪ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি ঋণপ্রদান করেছে। পরিণাম-স্বরূপ, বিগত তিন বছরে দেশ প্রায় ৩ কোটি নতুন স্ব-উদ্যোগী পেয়েছেন।
এই স্ব-উদ্যোগীরাই মুদ্রা যোজনার মাধ্যমে প্রথমবারব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে দেশের ক্ষুদ্র শিল্প ক্ষেত্রে পরিধি অনেক দূর বিস্তৃতকরেছেন, এমএসএমই ক্ষেত্রকে তাঁরাই মজবুত করেছেন।
সরকার স্টার্ট আপ উদ্যোগকেও উৎসাহ প্রদান করছে।স্টার্ট আপ-এর সবচেয়ে বড় সমস্যা হ’ল ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ। এই প্রয়োজন মেটাতে সরকারসিডবি’র মাধ্যমে ‘ফান্ড অফ ফান্ড’ বানিয়েছে। এই পদক্ষেপ নেওয়ার পর সিডবি যেবিনিয়োগ করেছে, তা অন্যান্য বিনিয়োগকারীদের সাহায্যে চার থেকে সারে চার গুণ বেশি উদ্দেশ্যসাধনেরপথ খুলে গেছে। এর মাধ্যমে স্টার্ট আপ বন্ধুরা যাঁদের কাছে নতুন নতুন উদ্ভাবনীশক্তি রয়েছে, তাঁরা বিনিয়োগ সহায়তা পাচ্ছেন।
ভাই ও বোনেরা, স্টার্ট আপ-এর বাস্তু ব্যবস্থায় এই পরিবর্তবিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিগত তিন বছরে সরকারের গ্রহণ করা নীতিগতসিদ্ধান্তের ফলে এ ধরনের বিনিয়োগ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে আর আপনারা হয়ত লক্ষ্য করেছেনযে, সরকার নবীন প্রজন্মের প্রয়োজন মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্তগুলি নিচ্ছে এবংপ্রকল্পগুলি গড়ে তুলছে। বিগত সরকারের সময়ে ঠিক বিপরীত ঘটনা আপনারা লক্ষ্য করেছেন,তখন ব্যাঙ্কগুলিকে চাপ দিয়ে হাতে গোনা কয়েকজন বড় শিল্পপতিকে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকাঋণদানে বাধ্য করা হয়েছিল।
বন্ধুগণ, ফিকি নিজের সম্পর্কে বলে, ‘ইন্ডাস্ট্রিজভয়েস ফর পলিসি চেঞ্জ’। আপনারা শিল্প জগতের বক্তব্যকে সরকারের কাছে পৌঁছে দেন।আপনাদের সমীক্ষা ও সেমিনার চলতেই থাকে। আমি জানি না যে, বিগত সরকারের নীতির কারণেব্যাঙ্কিং ক্ষেত্র যে ধরনের দুর্দশার সম্মুখীন হয়েছিল, তা নিয়ে ফিকি কোনও সমীক্ষাকরেছিল কি না? আজকাল ‘নিষ্ক্রিয় সম্পত্তি, এনপিএ-এনপিএ’ বলে যে হৈচৈ শোনা যাচ্ছে,তা আসলে বিগত সরকারের দায়িত্বে থাকা মহান অর্থনীতিবিদদের কাছ থেকে পাওয়াউত্তরাধিকার, যা বর্তমান সরকারকে বহন করতে হচ্ছে।
আমার জানতে ইচ্ছে করে, ব্যাঙ্কগুলিকে চাপ দিয়ে যখনহাতে গোণা কয়েকজন বড় শিল্পপতিকে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা ঋণদানে বাধ্য করা হয়েছিল, তখনফিকির মতো সংস্থাগুলি কী করছিল? পূর্বতন সরকারে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা জানতেন,ব্যাঙ্কগুলিও জানতো, গোটা শিল্প জগত জানতো, বাজারের সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলিও জানতোযে অন্যায় হচ্ছে। এটাই ইউপিএ সরকারের সবচেয়ে বড় দুর্নীতি। কমনওয়েলথ ক্রীড়াদুর্নীতি, টু-জি, কয়লা – এই সবকটি দুর্নীতির মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড়। এই শিল্পপতিদেরমাধ্যমে সাধারণ মানুষের রক্ত জল করা টাকা সবচেয়ে বেশি লুঠ করেছে ক্ষমতাসীননেতৃবৃন্দ। আপনাদের কোনও সমীক্ষায় একবারের জন্যও এই বিষয়ে ইশারা করতে পারেননি।যাঁরা মৌন থেকে সবকিছু দেখে গেছেন, তাঁদেরকে জাগ্রত করার প্রচেষ্টা কোনও সংস্থাকরতে পারলো না!
বন্ধুগণ, ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার এই দুর্দশা শুধরানোরজন্য ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাকে মজবুত করার জন্য বর্তমান সরকার নিয়মিত পদক্ষেপ গ্রহণকরছে। ব্যাঙ্কের স্বার্থ সুরক্ষিত হলে গ্রাহকদের স্বার্থ সুরক্ষিত হবে, তবেই দেশেরস্বার্থ সুরক্ষিত থাকবে।
আমি মনে করি যে, ফিকির মতো সংস্থাগুলি সবচেয়ে বড়ভূমিকা হওয়া উচিৎ সঠিক তথ্য প্রদানের মাধ্যমে শিল্প জগতের সঙ্গে যুক্ত সকলকে সচেতনকরা। যেমন বিগত কিছুদিন ধরে ফাইনান্সিয়াল রেজোলিউশন অ্যান্ড ডিপোসিট ইনস্যুরেন্সবিল বা এফআরডিআই নিয়ে নিয়মিত গুজব ছড়ানো হচ্ছে। সরকার গ্রাহকদের স্বার্থ সুরক্ষিতকরার জন্য ব্যাঙ্কগুলিতে জমা রাখা তাঁদের পুঁজি সুরক্ষার জন্য যে ব্যবস্থা নিচ্ছে,তার বিপরীত গুজব ছড়ানো হচ্ছে। শিল্প জগৎ ও সাধারণ মানুষকে ভ্রম করার জন্য এ ধরনেরপ্রচেষ্টাকে নস্যাৎ করতে ফিকির মতো সংস্থাগুলির সক্রিয় ভূমিকা চাই। আপনারা কিভাবেসরকারের বক্তব্য, শিল্প জগতের বক্তব্য এবং সাধারণ মানুষের বক্তব্যের সঙ্গেভারসাম্য রক্ষা করবেন, সেটাও আপনাদের ভাবতে হবে। একটি উদাহরণ দিয়ে আমি আপনাদেরবোঝাতে চাই, কেন এই ভারসাম্য প্রয়োজন!
বন্ধুগণ, ভারতের শিল্প জগৎ দীর্ঘকাল ধরে অভিন্নপণ্য ও পরিষেবা কর-এর জন্য দাবি জানিয়ে আসছিল। এখন যখন সেই অভিন্ন পণ্য ও পরিষেবাকর কার্যকরি হয়েছে, তাকে আরও প্রভাবশালী করে তুলতে আপনাদের সংস্থা কী ভূমিকা পালনকরছে? যাঁরা সোশ্যাল মিডিয়াতে রয়েছেন, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরেই হয়তো লক্ষ্য করছেন যে,মানুষ রেস্তোরাঁ’র বিল পোস্ট করে জানাচ্ছেন যে, কর কমে গেছে কিন্তু রেস্তোরাঁগুলিমূল দাম বৃদ্ধি করে দেয় টাকার হিসাব সমান করে দিয়েছে। অর্থাৎ, অভিন্ন পণ্য ওপরিষেবা কর চালু হওয়ার ফলে ক্রেতাদের যে সাশ্রয় হওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি। এহেনপরিস্থিতির মোকাবিলা করতে সরকার নিজের মতো প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু ফিকি’র তরফথেকেও কি সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের এ ব্যাপারে সচেতন করার কোনও প্রচেষ্টা হয়েছে?
ভাই ও বোনেরা, অভিন্ন পণ্য ও পরিষেবা কর-এর মতোব্যবস্থা রাতারাতি গড়ে তোলা সম্ভব নয়। আর আমরা তো বিগত ৭০ বছরের জগদ্দলকে হটানোরচেষ্টা করছি। আমরা চাই যে, দেশের অধিকাংশ ব্যবসায়ী এই ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হন।
যে ব্যবসায়ী মাসিক ১ থেকে ১০ লক্ষ টাকার ব্যবসাকরেন, এমন ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের আমরা দেশের মূল বাণিজ্য ব্যবস্থায় নিয়ে আসার চেষ্টাকরছি। নিছকই সরকারের আমদানি বৃদ্ধি কিংবা কর আদায়ের জন্য এটি করছি না। এর মূলউদ্দেশ্য হ’ল ব্যবসা ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি । স্বচ্ছতা যত বাড়বে , গরিবরা তত বেশি উপকৃত হবেন।দেশের মূল বাণিজ্য ব্যবস্থার অংশীদার হলে ব্যবসায়ীরাও সহজেই ব্যাঙ্কগুলি থেকে ঋণপাবেন, কাঁচামালের উৎকর্ষ বৃদ্ধি পাবে এবং পণ্য পরিবহণে খরচ সাশ্রয় হবে। অর্থাৎ,বিশ্ব বাণিজ্যে আমাদের ছোট ব্যবসায়ীরাও প্রতিযোগীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারবেন।আমার আশা যে, ফিকি ইতিমধ্যেই এই ছোট ব্যবসায়ীদের সঠিক রাস্তা দেখানোর জন্য অবশ্যইকোনও প্রকল্প গড়ে তুলেছে।
ভাই ও বোনেরা, আমাকে বলা হয়েছে যে ফিকি’র এমএসএমইভার্টিক্যাল ২০১৩ সালেই গড়ে উঠেছে। ৯০ বছর পুরনো সংস্থা আর এমএসএমই ভার্টিক্যাল গড়েউঠেছে মাত্র চার বছর আগে!!! আমি আর কোনও মন্তব্য করতে চাই না, কিন্তু অবশ্যই আশাকরবো যে আপনাদের এই ভার্টিক্যাল মুদ্রা যোজনা, স্টার্ট আপ যোজনা, স্ট্যান্ড আপযোজনা’র মতো প্রকল্পগুলির প্রসারে সাহায্য করবেন! এত অভিজ্ঞ একটি সংস্থা যখনআমাদের ছোট ছোট শিল্পগুলির হাত ধরবে, তখন তাঁরা আরও বেশি শক্তি নিয়ে কাজ করতেপারবে।
সরকার ‘গভর্নমেন্ট ই-মার্কেট প্লেস বা জিইএম নামকযে ব্যবস্থা চালু করেছে, তার মাধ্যমেও দেশের ক্ষুদ্র শিল্পপতিদের নিজেদের যুক্তকরার প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। জিইএম-এর মাধ্যমে এখন ছোট ছোট নির্মাণকারীওনিজেদের উৎপাদিত বস্তু সরকারকে বিক্রি করতে পারবে।
আপনাদের কাছ থেকে আমার আরেকটি আশা যে, এমএসএমই-রযে টাকা বড় কোম্পানিগুলি ঋণ নিয়ে রেখেছে, তা যেন তারা নির্দিষ্ট সময়ে ফেরৎ দেয়,সেদিকে লক্ষ্য রেখে আপনারা কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। নিয়ম অবশ্যই আছে। কিন্তু এটাওসত্যি যে ছোট শিল্পপতিদের অর্থ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বড় কোম্পানিগুলির কাছে কুক্ষিগতথাকে। ৩-৪ মাস পর পর তারা টাকা পান। ব্যবসায়িক সম্পর্ক যাতে নষ্ট না হয়, সে কথামাথায় রেখে ছোট ব্যবসায়ীরা নিজেদের টাকা চাইতেও ইতস্তত বোধ করে। আমি চাই, তাদের এইসমস্যা দূরীকরণে আপনারা কোনও উপায় বের করুন।
বন্ধুগণ, এরকম অনেক কারণ ছিল, যার ফলে বিগতশতাব্দীতে আমাদের দেশ সম্পূর্ণভাবে শিল্প বিপ্লবকে কাজে লাগাতে পারেনি। আজ এরকমঅনেক কারণ রইয়েছে, যার ফলে ভারত একটি নতুন বিপ্লব শুরু করতে পারে।
বর্তমান সরকার দেশের প্রয়োজন বুঝে নতুন নতুন নীতিপ্রণয়ন করছে। কালবাহ্য আইনগুলি বাতিল করে নতুন আইন প্রণয়ন করছে।
সম্প্রতি আমরা বাঁশ নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণসিদ্ধান্ত নিয়েছি। বাঁশকে গাছ মনে করা হবে কি হবে না, তা নিয়ে আমাদের দেশে দুটিআলাদা আইন ছিল, আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যে, অরণ্যের বাইরে যে বাঁশ জন্মায় এবং চাষকরা হয়, তাকে বৃক্ষ বলে মানা হবে না। এই সিদ্ধান্তের ফলে বাঁশ দিয়ে যাঁরা নানাকুটির শিল্প নির্মাণ করেন, দেশের সেরকম লক্ষ লক্ষ ক্ষুদ্র শিল্পপতিরা লাভবান হবেন।
বন্ধুগণ, আমাকে বলা হয়ে যে, ফিকির অধিকাংশ সদস্যই নানাউৎপাদন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কোম্পানিগুলির প্রতিনিধিরা ইঞ্জিনিয়ারিং যন্ত্রপাতি,পরিকাঠামো এবং গৃহ নির্মাণ শিল্পে ব্যবহৃত নানা উপাদান যে কোম্পানি থেকে উৎপাদিতহয়, তাদের প্রতিনিধিরাই ফিকির এক-চতুর্থাংশ সদস্য। ভাই ও বোনেরা, তা হলে নির্মাণশিল্পে দুর্নীতির খবর আগের সরকারের কানে পৌঁছালো না। মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের মানুষশোষিত হচ্ছেন সারা জীবনের রোজগারের জমানো টাকা বিল্ডার কিংবা প্রোমোটারদের হাতেতুলে দেওয়ার পর তাঁরা সঠিক মানের বাড়ি পাচ্ছেন না, এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে কোনও সঠিকপদক্ষেপ কেন নেওয়া হয়নি? কেন? ‘রেরা’র মতো আইন আগেও প্রণয়ন করা যেত, কিন্তু কেনহয়নি? বর্তমান সরকার মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের এই সমস্যাগুলি উপলব্ধি করে এই আইনপ্রণয়ন করেছে।
ভাই ও বোনেরা, মার্চ মাসে বাজেট পেশ করলেপরিকল্পনা-মাফিক প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় পাওয়া যায় না। বর্ষার জন্য ৩-৪ মাস সময়নষ্ট হয়ে যায়। সেজন্য এ বছর এক মাস আগেই বাজেট পেশ করা হয়েছে। ফলস্বরূপ, এই বছরসরকারি বিভাগগুলি নির্দিষ্ট সময়ে টাকা পেয়েছে আর প্রকল্পগুলি বাস্তবায়নে সারা বছরধরে কাজ করতে পেরেছে।
বন্ধুগণ, বর্তমান সরকার নতুন ইউরিয়া নীতি গ্রহণকরেছে। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ও বস্ত্রশিল্পে নতুন নীতি গ্রহণ করেছে। বিমান পরিবহণএবং পরিবহণ ক্ষেত্রে সমন্বয় সংক্রান্ত স্বতন্ত্র নীতি গ্রহণ করেছে। নীতি প্রণয়নেরজন্য এই নীতিগুলি প্রণয়ন করা হয়নি। নতুন নীতির ফলে দেশে নতুন নতুন ইউরিয়া কারখানাচালু হয়েছে। ইউরিয়ার উৎপাদন ১৮ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০ লক্ষ টনে পৌঁছে গেছে।বস্ত্রশিল্প ক্ষেত্রে নতুন নীতি প্রায় ১ কোটি নতুন সুযোগ তৈরি করবে। বিমান পরিবহণক্ষেত্রে এবার হাওয়াই চপ্পল পরিহিত সাধারণ মানুষও বিমানে যাতায়াত করতে পারবেন।পরিবহণ ক্ষেত্রে সমন্বয় নীতির ফলে যাতায়াতের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য বৃদ্ধি পেয়েছে এবংভিন্ন ভিন্ন পরিবহণ ব্যবস্থার ওপর থেকে চাপ হ্রাস পাবে।
বিগত তিনবছরে ২১টি ক্ষেত্র সংশ্লিষ্ট ৮৭টি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারসাধন করা হয়েছে। প্রতিরক্ষাক্ষেত্র, নির্মাণ ক্ষেত্র, অর্থ পরিষেবা, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ইত্যাদি অনেক ক্ষেত্রেবড় পরিবর্তন এসেছে। আপনারা এর পরিণাম অর্থ ব্যবস্থার নানা পরিসংখ্যানে দেখতেপাচ্ছেন।
সহজে ব্যবসার সুবিধার জন্য বিশ্ব র্যাঙ্কিং-এভারত মাত্র তিন বছরে ১৪২তম স্থান থেকে ১০০তম স্থানে পৌঁছে গেছে। ভারতের রাজকোষেবিদেশি মুদ্রার মজুত ভাণ্ডার ৩০ হাজার কোটি ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৪০ হাজার কোটিডলার অতিক্রম করেছে। বিশ্ব প্রতিযোগিতামূলক সূচকে ভারতের র্যাঙ্কিং ৩২ স্থানউন্নত হয়েছে। বিশ্ব উদ্ভাবন সূচকে ভারতের র্যাঙ্কিং ২১ স্থান উন্নত হয়েছে। পণ্যপরিবহণ দক্ষতা সূচকে ভারতের বিশ্ব র্যাঙ্কিং-এ ১৯ স্থান অগ্রগতি হয়েছে। প্রত্যক্ষবিদেশি বিনিয়োগ ক্ষেত্রে বিগত তিন বছরে প্রায় ৭০ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে।
ভাই ও বোনেরা, ফিকিতে নির্মাণ ক্ষেত্রের সঙ্গেযুক্ত সদস্য অনেক বেশি রয়েছেন। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন যে, নির্মাণ ক্ষেত্রে এখনওপর্যন্ত মোট যত প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে, তার ৭৫ শতাংশই বিগত তিন বছরেহয়েছে।
এভাবে বিমান পরিবহণ ক্ষেত্র, খনি ক্ষেত্র,কম্প্যুটার সফট্ওয়্যার এবং হার্ডওয়্যার, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম – এই সকল ক্ষেত্রেইমোট বিনিয়োগের অর্ধেকেরও বেশি বিগত তিন বছরেই হয়েছে।
অর্থ ব্যবস্থা শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে আরও কিছুপরিসংখ্যান আমি আপনাদের সামনে রাখতে চাই। আশা করি, দু-তিন দিন আগে পাওয়া এইপরিসংখ্যান আপনারাও জানেন। কিন্তু আমি এগুলির দিকে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেচাই।
বন্ধুগণ, গত নভেম্বর মাসে অভ্যন্তরীণ বাজারেযাত্রী পরিবহণকারী যান বিক্রির ক্ষেত্রে ১৪ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি হয়েছে। ব্যবসায়িকযানের ক্ষেত্রে এই বৃদ্ধি ৫০ শতাংশেরও বেশি, যা দেশের অর্থনৈতিক গতিবিধির পরিচায়ক।তিন চাকা গাড়ির বিক্রিকে রোজগারের ক্ষেত্রে একটি সূচক বলে মানা হয়। নভেম্বর মাসেএই তিন চাকা গাড়ি বিক্রিতে প্রায় ৮০ শতাংশ বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। দ্বিচক্র যানেরবিক্রি গ্রামে এবং শহরের মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের আয় বৃদ্ধির সূচক নির্দেশ করে,এক্ষেত্রেও গত নভেম্বরে ২৩ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়েছে।
বন্ধুগণ, আপনারা জানেন যে, এত বড় স্তরে পরিবর্তনতখনই সম্ভব, যখন দেশের অর্থ ব্যবস্থার ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা বৃদ্ধি পায়। এইউন্নতি প্রমাণ করে যে, সরকার তৃণমূল স্তরে বড় প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক এবং আইনসংক্রান্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এই উন্নতি প্রমাণ করে যে, সরকার সামাজিক সংস্কার ওঅর্থনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকরছে।
আমি যদি শুধুই প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার কথাউল্লেখ করি, সরকার ২০২২ সালের মধ্যে দেশের প্রত্যেক গরিব মানুষের মাথার ওপর নিজস্বছাদ তৈরি করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। সেজন্য গ্রামে ও শহরে লক্ষ লক্ষ গৃহনির্মাণ করা হচ্ছে। এই গৃহ নির্মাণের কাজ সেখানকার স্থানীয় মানুষরাই করছেন।স্থানীয় বাজার থেকেই জিনিসপত্র কেনা হচ্ছে। একইভাবে, সারা দেশে গ্যাস পাইপ লাইনসম্প্রসারণের কাজ হচ্ছে। এরফলে, অনেক শহরে নগর গ্যাস বিতরণ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। যেশহরগুলিতে সিএনজি পৌঁছয়, সেখানকার কাজের বাজারে একটি নতুন দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়েউঠছে।
ভাই ও বোনেরা, আমরা সবাই যদি দেশের প্রয়োজন বুঝেকাজ করি, তা হলেই সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্খা পূরণ করতে পারব। ফিকির সঙ্গে যুক্তসদস্য কোম্পানিগুলিরও এ বিষয়ে চিন্তা করতে হবে যে, তারা কিভাবে সেসব জিনিস উৎপাদনকরবে, যেগুলি ভারত বিদেশ থেকে আমদানি করতে বাধ্য হয়। এরকম অনেক ক্ষেত্র রয়েছে, যারকাঁচামাল আমাদের দেশ থেকে আমদানি করে অনেক দেশ আমাদেরকেই বেশি দামে তাদের উৎপাদিতপণ্য বিক্রি করে। আমাদের দেশকে এই পরিস্থিতি থেকে বের করে আনতে হবে।
বন্ধুগণ, ২০২২ সালে আমাদের দেশ স্বাধীনতার ৭৫ বছরপূর্তি পালন করবে। তার আগেই আমরা সবাই ‘নতুন ভারত’ গঠনের সংকল্প নিয়েছি। ফিকির মতোসংস্থাগুলির কর্মপরিধি এত বৃদ্ধি পেয়েছে, দায়িত্ব এত বেড়েছে যে তাদেরকেও এগিয়ে এসে‘নতুন ভারত’-এর জন্য সংকল্প নিতে হবে। দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রয়োজন বুঝেফিকিকে কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে নতুন সংকল্প গ্রহণ করবে, তা ঠিক করতে হবে। অনেকক্ষেত্রেই আপনাদের কাজ করার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। যেমন – খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ,স্টার্ট আপ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সৌরশক্তি ক্ষেত্র, স্বাস্থ্য পরিচর্যা। এই সকলক্ষেত্রে ফিকির অভিজ্ঞতা দেশকে সমৃদ্ধ করতে সহায়ক হবে। আপনাদের সংস্থাটি দেশেএমএসএমই ক্ষেত্রের জন্য থিঙ্ক ট্যাঙ্ক হিসাবে কাজ করতে পারে।?
ভাই ও বোনেরা, করতে চাইলে অনেক কিছুই করার আছে। শুধুআমাদের সংকল্প গ্রহণ করতে হবে আর সংকল্প সাধনে লেগে পড়তে হবে। আমাদের সংকল্প সিদ্ধহলে দেশও উন্নত হবে। শুধু এদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে যেমন – ক্রিকেট খেলায় অনেকব্যাটস্ম্যান ৯০ রানে পৌঁছে ১০০ রান করার প্রতীক্ষায় ধীরে খেলতে শুরু করেন, ফিকিযেন এরকমটা না করে। উঠুন, একটি ছক্কা মারুন। তারপর একটি চার মারুন – আর এভাবেই ১০০রান করুন!!!
আমি আরেকবার ফিকি এবং তার সদস্যদের শুভেচ্ছাজানিয়ে আমার বক্তব্য সম্পূর্ণ করছি। আপনাদের সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।