নমো বুদ্ধায়!
নেপালের প্রধানমন্ত্রী মহামান্য শ্রী শের বাহাদুর দেউবাজি,
মাননীয়া শ্রীমতী আরজু দেউবাজি,
সভায় উপস্থিত নেপাল সরকারের মাননীয় মন্ত্রীগণ,
বিপুল সংখ্যায় আগত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষজন এবং উপস্থিত মাননীয় বৌদ্ধ ভিক্ষুগণ,
বিভিন্ন দেশ থেকে আগত গণ্যমান্য অতিথিগণ,
ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ!
“বুদ্ধ জয়ন্তী কো পাবন অবসর-মা, ইয়শ সভা-মা উপস্থিত, এহাঁ-হরু সবৈ-লাই, সম্পূর্ণ নেপালবাসী-হরুলাই, র বিশ্বকা সবৈ শ্রদ্ধালু-জন-লাই, লুম্বিনী কো পবিত্র ভূমিবাট, বুদ্ধ পূর্ণিমা কো ঘেরোই ঘেরোই শুভকামনা!”
অর্থাৎ, বুদ্ধ জয়ন্তীর পবিত্র উৎসব উপলক্ষে এই সভায় উপস্থিত সকলকে, সম্পূর্ণ নেপালবাসীকে, সমস্ত নেপালিদের, সমগ্র বিশ্বের সমস্ত ভক্তজনদের এই লুম্বিনীর পবিত্র ভূমি থেকে বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই।
আগেও আমার বৈশাখ পূর্ণিমার দিন ভগবান বুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত দিব্যস্থলগুলিতে, ভগবান বুদ্ধের আরাধনায় আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য হয়েছে, আর আজ ভারতের মিত্র দেশ নেপালে ভগবান বুদ্ধের পবিত্র জন্মস্থান লুম্বিনীতে এসে এই সুন্দর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের সৌভাগ্য হল।
কিছুক্ষণ আগে আমার মায়াদেবী মন্দির দর্শনের সৌভাগ্য হয়েছে। এই অভিজ্ঞতা আমার জন্য অত্যন্ত অবিস্মরণীয়। সেই স্থান, যেখানে স্বয়ং ভগবান বুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেছেন, সেখানকার প্রাণশক্তি, সেখানকার চেতনা – এটা একটা ভিন্ন ধরনের অনুভব। এখানে এসে আরেকটি দৃশ্য দেখে আমার খুব আনন্দ হয়েছে;২০১৪ সালে আমি এই পবিত্র স্থানের জন্য মহাবোধি বৃক্ষের যে শিশু চারাগাছটি পাঠিয়েছিলাম, সেটি এখন বড় হয়ে একটি বৃক্ষে পরিণত হচ্ছে।
বন্ধুগণ,
নেপালে পশুপতিনাথজির মন্দির হোক, মুক্তিনাথজির মন্দির হোক, জনকপুরধাম হোক কিংবা এই লুম্বিনী – আমি যখনই নেপালে আসি, নেপাল তার আধ্যাত্মিক আশীর্বাদ বর্ষণের মাধ্যমে আমাকে কৃতার্থ করে তোলে।
বন্ধুগণ,
জনকপুরে আমি বলেছিলাম যে, “নেপাল ছাড়া আমাদের রামও অসম্পূর্ণ!” আমি জানি যে আজ যখন ভারতে ভগবান শ্রীরামের অনিন্দ্যসুন্দর মন্দির গড়ে উঠছে, তখন নেপালের মানুষও ততটাই আনন্দ অনুভব করছেন।
বন্ধুগণ,
নেপাল অর্থাৎ, বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ – সাগরমাথা বা মাউন্ট এভারেস্টের দেশ! নেপাল অর্থাৎ, বিশ্বের অনেক পবিত্র তীর্থ, অসংখ্য মন্দির এবং মঠের দেশ!
নেপাল অর্থাৎ, বিশ্বের প্রাচীন সভ্যতা ও সংস্কৃতির সংরক্ষণ করে রাখা অতুলনীয় এক দেশ!
“নেপাল আউন্দা, মলাই কুনোই রাজনীতিক ভ্রমণ ভন্দা, অলগ এওটা ছুট্টৈ আধ্যাত্মিক অনুভূতি হুঞ্ছ।” অর্থাৎ, নেপালে এলে তা যতই রাজনৈতিক সফর হোক, আমার মনে একটি ভিন্ন আধ্যাত্মিক অনুভূতি প্রভাব বিস্তার করে।
ভারত এবং ভারতের জনগণ হাজার হাজার বছর ধরে নেপালকে এই সম্ভ্রম মেশানো দৃষ্টি এবং আস্থার সঙ্গে দেখেছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই কিছুদিন আগেই নেপালের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবাজি এবং শ্রীমতী আরজু দেউবাজি যখন ভারতে গিয়েছিলেন, আর একটু যেভাবে দেউবাজি তাঁর বেনারস যাত্রার বর্ণনা করছিলেন, তাঁদের কাশী বিশ্বনাথধাম যাত্রার বর্ণনা করছিলেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস, তখন তাঁদের মনেও ভারতের জন্য এই ধরনেরই অনুভূতি থাকা অত্যন্ত স্বাভাবিক।
বন্ধুগণ,
এই যৌথ ঐতিহ্য, এই যৌথ সংস্কৃতি, এই যৌথ আস্থা এবং এই যৌথ প্রেম – এটাই তো আমাদের সবচাইতে বড় পুঁজি, আর এই পুঁজি যত সমৃদ্ধ হবে আমরা ততটাই কার্যকরিভাবে একসঙ্গে মিলেমিশে গোটা বিশ্বে ভগবান বুদ্ধের বার্তা পৌঁছে দিতে পারব, বিশ্বকে নতুন বাঁচার পথ দেখাতে পারব। আজ যেভাবে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, সেখানে ভারত এবং নেপালের ক্রমাগত শক্তিশালী হতে থাকা মৈত্রী, বন্ধুত্ব, আমাদের ঘনিষ্ঠতা সম্পূর্ণ মানবতার হিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আর এক্ষেত্রে ভগবান বুদ্ধের প্রতি আমাদের উভয় দেশের আস্থা, তাঁর প্রতি অসীম শ্রদ্ধা আমাদের একসূত্রে জুড়ে একটি অভিন্ন পরিবারের সদস্য করে তোলে।
ভাই ও বোনেরা,
গৌতম বুদ্ধ বিশ্বে মানবতার সামুহিক বোধের এক আশ্চর্য অবতরণ। বুদ্ধ যেমন বোধ, বুদ্ধ তেমন শোধ। এখানে ‘শোধ’ বলতে আমি নিরন্তর গবেষণা ও সংস্কারকে বোঝাচ্ছি। বুদ্ধ ভাবনাও, আর বুদ্ধ শিষ্টাচারও। বুদ্ধ এজন্যই বিশেষ, কারণ তিনি কেবল উপদেশ দিয়ে যাননি, বরং তিনি মানবতাকে, মানব সভ্যতাকে জ্ঞানের অনুভূতি এনে দিয়েছেন। তিনি মহান বৈভবশালী রাজপাট এবং চরম সুখ-স্বাচ্ছন্দ ত্যাগ করে পথে বেরিয়ে যাওয়ার সাহস দেখিয়েছেন। নিশ্চিতভাবেই তাঁর জন্ম কোনও সাধারণ বালক রূপে হয়নি, কিন্তু তিনি আমাদের মনে এই অনুভব এনে দিয়েছেন যে কোনও কিছু পাওয়ার থেকেও কোনও কিছু ত্যাগ করার গুরুত্ব ও মহত্ব অনেক অনেক বেশি। ত্যাগের মাধ্যমেই যে কোনও প্রাপ্তি পূর্ণতা পায়। সেজন্য তিনি অরণ্যে অরণ্যে ঘুরে বেরিয়েছেন, তিনি বছরের পর বছর তপস্যা করেছেন, তিনি জ্ঞান ও বোধ নিয়ে ‘শোধ’ বা গবেষণা করেছেন, প্রয়োজনে তার সংস্কার করেছেন। সেই আত্মশোধের পরই যখন তিনি জ্ঞানের শিখরে পৌঁছেছেন তখনও তিনি কোনও ভোজবাজি বা যাদু প্রদর্শনের মাধ্যমে মানুষের কল্যাণের দাবি কখনও করেননি বরং ভগবান বুদ্ধ আমাদের সেই রাস্তা দেখিয়ে গেছেন যে পথে তিনি নিজে বিচরণ করেছেন, যে জীবন তিনি নিজে বেছে নিয়েছেন। তিনি আমাদের মন্ত্র দিয়ে গেছেন –
“অপ্প দীপো ভব ভিক্ষওয়ে
পরীক্ষ ভিক্ষওয়, গ্রাহ্যম মদ্বচো, ন তু গৌরবাৎ”
অর্থাৎ, নিজের দীপক বা প্রদীপ নিজেই হয়ে ওঠ। আমার বক্তব্যকে আমার প্রতি ভালোবাসার কারণে গ্রহণ করো না, বরং আগে সেগুলিকে পরীক্ষা কর তারপর আত্মস্থ কর।
বন্ধুগণ,
ভগবান বুদ্ধের সঙ্গে যুক্ত আরও একটি বিষয় রয়েছে যেটির সম্পর্কে আমি আজ উল্লেখ করতে চাই। এক বৈশাখ পূর্ণিমার দিনে লুম্বিনীতে সিদ্ধার্থ রূপে বুদ্ধের জন্ম হয়েছিল। আরও এক বৈশাখী পূর্ণিমার দিনই বুদ্ধ গয়াতে তিনি বুদ্ধত্ব অর্জন করে ভগবান বুদ্ধ হন। আবার এই বৈশাখী পূর্ণিমার দিনই কুশীনগরে তাঁর মহানির্বাণ হয়। একটাই তিথি! সেই একই বৈশাখ পূর্ণিমা তিথিতে ভগবান বুদ্ধের জীবনযাত্রার এই বিশেষ পর্যায়গুলি নিছকই সংযোগ মাত্র নয়, এতে বুদ্ধত্বের সেই দার্শনিক বার্তাও রয়েছে যেখানে জীবন, জ্ঞান এবং নির্বাণ – এই তিনটি একসূত্রে গাঁথা। তিনটি পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত। এটাই মানুষের জীবনের পূর্ণতা আর সম্ভবত সেজন্যই ভগবান বুদ্ধ বৈশাখী পূর্ণিমার এই পবিত্র তিথিকে বেছে নিয়েছিলেন। যখন আমরা মানবিক জীবনকে এহেন পূর্ণতায় দেখতে শুরু করি, তখন বিভাজন আর বৈষম্যের জন্য কোনও স্থান অবশিষ্ট থাকে না। তখন আমরা নিজেরাই পুরাণে বর্ণিত ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’-এর সেই ভাবনাকে নিজেদের জীবনে অনুভব করি যা “সর্বে ভবন্তু সুখিনঃ” থেকে শুরু করে ‘ভবতু সব্ব মঙ্গলম’ – এই বুদ্ধের উপদেশ পর্যন্ত প্রতিফলিত হয়। সেজন্য ভৌগোলিক সীমারেখার ওপরে উঠে বুদ্ধ প্রত্যেক মানুষের, তাঁর জ্ঞান প্রত্যেক মানুষের কল্যাণের জন্য।
বন্ধুগণ,
ভগবান বুদ্ধের সঙ্গে আমার আরও একটি সম্পর্ক রয়েছে, যাতে একটি অদ্ভূত সংযোগও রয়েছে আর যা অত্যন্ত সুখকরও। যে স্থানে আমার জন্ম হয়েছে, গুজরাটের ওয়াডনগর; সেখানে অনেক শতাব্দী আগে বৌদ্ধ শিক্ষার একটি অনেক বড় কেন্দ্র ছিল। আজও সেখানে অনেক প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ খুঁজে বের করে পুরাতাত্ত্বিকরা সংরক্ষণের কাজ করছেন, আর আমরা তো জানি যে ভারতে এমন অনেক নগর রয়েছে, অনেক শহর রয়েছে, অনেক স্থান এমন রয়েছে যেগুলিকে মানুষ বড় গর্বের সঙ্গে সেই রাজ্যের কাশী রূপে মান্য করেন। ভারতের এটাই বৈশিষ্ট্য, আর সেজন্য কাশীর উপকন্ঠে সারনাথের সঙ্গে আমার আত্মীয়তা কতটা নিবিড় সেটা আপনারাও জানেন। ভারতে সারনাথ, বুদ্ধ গয়া এবং কুশীনগর থেকে শুরু করে নেপালের লুম্বিনী পর্যন্ত – এই পবিত্র স্থানমালা আমাদের মিলিত ঐতিহ্য এবং মিলিত মূল্যবোধের প্রতীক। আমাদের এই ঐতিহ্যকে একসঙ্গে মিলেমিশে বিকশিত করতে হবে, ভবিষ্যতে আরও সমৃদ্ধ করে তুলতে হবে। এখন আমরা উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রী একসঙ্গে এখানে ‘ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর বুদ্ধিস্ট কালচার অ্যান্ড হেরিটেজ’-এর শিলান্যাস করেছি। ইন্টারন্যাশনাল বুদ্ধিস্ট কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া এই কেন্দ্রটি নির্মাণ করবে। আপনাদের সহযোগিতায় আমার অনেক দশক পুরনো স্বপ্নকে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী দেউবাজির গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। লুম্বিনী ডেভেলপমেন্ট ট্রাস্টের অধ্যক্ষ রূপে তিনি ইন্টারন্যাশনাল বুদ্ধিস্ট কনফেডারেশন অর ইন্ডিয়াকে এর জন্য জমি দানের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আর এখন এই প্রকল্প সম্পূর্ণ করার ক্ষেত্রেও তাঁর পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে রেখেছেন। সেজন্য আমরা সবাই অন্তর থেকে তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে নেপাল সরকার ভারতে বুদ্ধ সার্কিট এবং লুম্বিনীর উন্নয়নের সকল প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করছে। উন্নয়নের সকল সম্ভাবনাকে বাস্তবায়িত করছে। নেপালে লুম্বিনী মিউজিয়াম বা প্রদর্শনশালা নির্মাণও উভয় দেশের মিলিত সহযোগিতার উদাহরণ। আর আজ আমরা লুম্বিনী বুদ্ধিস্ট ইউনিভার্সিটিতে ডঃ বাবাসাহেব আম্বেদকর চেয়ার ফর বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ স্থাপন করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
বন্ধুগণ,
ভারত এবং নেপালের অনেক তীর্থ অনেক শতাব্দীর সভ্যতা, সংস্কৃতি এবং জ্ঞানের বিশাল পরম্পরাকে গতি প্রদান করেছে। আজও এই তীর্থগুলিতে গোটা বিশ্ব থেকে লক্ষ লক্ষ ধর্মপ্রাণ ভক্ত প্রত্যেক বছর ঘুরতে আসেন। ভবিষ্যতেও আমাদের নিজেদের এই প্রচেষ্টাগুলিকে আরও গতি প্রদান করতে হবে। আমাদের উভয় সরকারের প্রচেষ্টায় ‘ভৈরহওয়া’ এবং ‘সনৌলি’তে ইন্টিগ্রেটেড চেক পোস্ট নির্মাণের সিদ্ধান্তও ফলপ্রসূ হচ্ছে। এর কাজও শুরু হয়ে গেছে। এই সীমান্ত পোস্টটি তৈরি হওয়ার পর সীমান্তে উভয় দেশের জনগণের আসা-যাওয়ার সুবিধা বাড়বে। ভারতে যত বিদেশি পর্যটক আসেন, তাঁরা আরও সহজে নেপালে ঘুরতে আসতে পারবেন। পাশাপাশি, এই ইন্টিগ্রেটেড চেক পোস্টের মাধ্যমে উভয় দেশের বাণিজ্য ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের পরিবহণে গতি সঞ্চার হবে। ভারত এবং নেপাল উভয় দেশের মধ্যে মিলেমিশে কাজ করার এরকম অনেক অপার সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের এই প্রচেষ্টাগুলির মাধ্যমে উভয় দেশের নাগরিকরা লাভবান হবেন।
বন্ধুগণ,
“ভারত র নেপাল বিচ কো সম্বন্ধ, হিমাল জাস্তৈ অটল ছ, র হিমাল জতিকৈ পুরানো ছ” অর্থাৎ, ভারত এবং নেপালের মধ্যে সম্পর্ক পাহাড়ের মতো অটল আর পাহাড়ের মতোই আদি ও অকৃত্রিম। ভারত ও নেপালের সম্পর্ক হিমালয়ের মতো স্থিতিশীল, হিমালয়ের মতো পুরনো।
আমাদের নিজেদের এই স্বাভাবিক এবং নৈসর্গিক সম্পর্ককে হিমালয়ের মতোই নতুন উচ্চতা প্রদান করতে হবে। খাওয়াদাওয়া, গীত-সঙ্গীত, উৎসব-অনুষ্ঠান এবং বিভিন্ন রীতি-রেওয়াজ থেকে শুরু করে পারিবারিক সম্পর্ক পর্যন্ত – যে সম্পর্কগুলিকে আমরা হাজার হাজার বছর ধরে উপভোগ করেছি, এখন সেগুলিকে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং পরিকাঠামো উন্নয়নের মতো নতুন নতুন ক্ষেত্রের মাধ্যমে জুড়তে হবে, আরও পোক্ত করতে হবে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে এই লক্ষ্যে ভারত নেপালের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে। লুম্বিনী বুদ্ধিস্ট ইউনিভার্সিটি, কাঠমান্ডু ইউনিভার্সিটি এবং ত্রিভুবন ইউনিভার্সিটিতে ভারতের সহযোগিতা এবং প্রচেষ্টা এর বড় উদাহরণ। আমি এই ক্ষেত্রে আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতাকে আরও বিস্তারিত করার আরও অনেক বড় বড় সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি। আমাদের এই সম্ভাবনাগুলিকে এবং ভারত ও নেপালের স্বপ্নগুলিকে একসঙ্গে মিলেমিশে বাস্তবায়িত করতে হবে। আমাদের সক্ষম যুবক-যুবতীরা যাতে সাফল্যের শিখরের দিকে এগোতে থাকেন, আর গোটা বিশ্বে বুদ্ধের শিক্ষার প্রকৃত বার্তাবাহক হয়ে ওঠেন।
বন্ধুগণ,
ভগবান বুদ্ধ বলে গেছেন –
“সুপ্প বুদ্ধং পবুজ্ঝন্তি, সদা গৌতম – সাওকা।
ইয়েসং দিওয়া চ রত্তো চ, ভাবনায়ে রতো মনো।।”
অর্থাৎ, যাঁরা সর্বদাই মৈত্রী ভাবনা নিয়ে বাঁচেন, সদ্ভাবনা বিস্তারে সচেষ্ট থাকেন, গৌতমের সেই অনুগামীরা সর্বদাই জাগ্রত থাকেন। অর্থাৎ, তাঁরাই বুদ্ধের প্রকৃত বাস্তব অনুগামী। এই ভাবনাকে মাথায় রেখে আজ আমাদের সম্পূর্ণ মানবতার জন্য কাজ করে যেতে হবে। এই ভাবনাকে মাথায় নিয়ে আমাদের মনে বিশ্বে মৈত্রীর ভাবনাকে মজবুত করতে হবে।
“ভারত র নেপাল বিচ কো মিত্রতালে, ইয়স মানবীয় সঙ্কল্প-লাই পুরা গর্ন, ইয়সৈ গরী মিলের তাম, গরী র হনে কুরামা, বলাই পূর্ণ বিশ্বাস ছ।” অর্থাৎ, ভারত ও নেপালের মধ্যে বন্ধুত্বকে এই মানবিক সম্পর্কই সম্পূর্ণ করতে পারে। আমি আত্মবিশ্বাসী যে ভারত ও নেপালের মধ্যে বন্ধুত্ব এই মানবিক সংকল্প পূরণে একসঙ্গে কাজ করে যাবে।
এই ভাবনা নিয়ে আপনাদের সবাইকে আরও একবার বৈশাখী পূর্ণিমা উপলক্ষে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই।
নমো বুদ্ধায়!
নমো বুদ্ধায়!
নমো বুদ্ধায়!