মাননীয় রাষ্ট্রপতি সিসি,
উভয় দেশের মন্ত্রী এবং প্রতিনিধিবৃন্দ,
সংবাদমাধ্যমের বন্ধুরা,
প্রথমেই আমি রাষ্ট্রপতি সিসি এবং তাঁর সঙ্গে আসা প্রতিনিধিদের ভারতে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাই। আগামীকাল আমাদের সাধারণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে রাষ্ট্রপতি সিসি যোগ দেবেন, যা ভারতের জন্য অত্যন্ত আনন্দের ও গর্বের। আমাদের সাধারণতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণের জন্য মিশর থেকে সামরিক বাহিনীর একটি দল এসেছে জেনে আমি অত্যন্ত আনন্দিত এবং তাদের উপস্থিতি এই অনুষ্ঠানকে আরও গৌরবান্বিত করবে।
বন্ধুগণ,
ভারত এবং মিশরের সভ্যতা বিশ্বের প্রাচীনতম সভ্যতাগুলির মধ্যে অন্যতম। হাজার বছর ধরে আমাদের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে। গুজরাটের লোথাল বন্দর দিয়ে চার হাজার বছরেরও আগে থেকে মিশরের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য চলত। বিশ্বে বিভিন্ন সময়ে নানা পরিবর্তন এসেছে-কিন্তু আমাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক রয়ে গেছে আর আমাদের সহযোগিতাও ক্রমশ শক্তিশালী হয়েছে।
গত কয়েক বছরে আমাদের দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা আরও মজবুত হয়েছে। আমার বন্ধু রাষ্ট্রপতি সিসি-র যোগ্য নেতৃত্বের জন্যই এটি সম্ভব হয়েছে বলে আমি মনে করি।
এ বছর জি-২০ গোষ্ঠীর সভাপতি হিসেবে ভারত দায়িত্ব পালন করছে। ভারত মিশরকে অতিথি রাষ্ট্র হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে, এর মধ্য দিয়ে আমাদের বিশেষ বন্ধুত্বের সম্পর্কটি প্রতিফলিত হয়।
বন্ধুগণ,
আরব সাগরের এক প্রান্তে ভারত, অন্যদিকে মিশর। এই অঞ্চলের শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য দুই দেশের কৌশলগত সহযোগিতা সহায়ক হবে। তাই, আজকের বৈঠকে রাষ্ট্রপতি সিসি এবং আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে ‘কৌশলগত অংশীদারিত্বে’ উন্নীত করব। রাজনীতি, নিরাপত্তা, অর্থনীতি এবং বিজ্ঞানে একটি দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতার পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য ভারত-মিশর কৌশলগত অংশীদারিত্ব কাজ করবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসবাদ ছড়িয়ে পড়ায় ভারত এবং মিশর উদ্বিগ্ন। মানবজাতির সুরক্ষায় সন্ত্রাসবাদ যে সবথেকে বেশি বিপজ্জনক, সে বিষয়ে আমরা একমত। দুটি দেশ তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সীমান্তের অন্য পাড় থেকে সন্ত্রাসবাদকে মদত দেওয়ার মতো সমস্যার মোকাবিলা করতে একযোগে কাজ করা হবে। আর তাই, আমরা আন্তর্জাতিক স্তরে সকলকে এই বিপদ সম্পর্কে সচেতন করার জন্য একসঙ্গে কাজ করব।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি করার যথেষ্ট সম্ভাবনা আমাদের মধ্যে রয়েছে। বিগত কয়েক বছর ধরে আমাদের দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে দক্ষতা বৃদ্ধি এবং প্রশিক্ষণের জন্য যৌথ মহড়া বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের আজকের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে উভয় দেশের প্রতিরক্ষা শিল্পকে শক্তিশালী করে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলায় গোয়েন্দা তথ্য আদানপ্রদান করা হবে।
সাইবার জগৎকে অপব্যবহার করে জঙ্গিবাদী আদর্শর প্রচার চালানো এবং মৌলবাদের সম্প্রসারণ মানবজাতির জন্য বড় একটি বিপদ। আমরা এর বিরুদ্ধেও একযোগে কাজ করবে।
বন্ধুগণ,
কোভিড অতিমারীর সময় স্বাস্থ্যক্ষেত্রের পরিকাঠামোয় যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল তার জেরে বিশ্বজুড়ে সরবরাহ শৃঙ্খলও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সঙ্কটের সেই সময়কালে রাষ্ট্রপতি সিসি এবং আমি পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছি। যখনই প্রয়োজন দেখা দিয়েছে তখনই এক দেশ অন্যকে সাহায্য করেছে।
কোভিড এবং ইউক্রেনের সংঘাতের ফলে খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ শৃঙ্খলে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে তা দূর করার জন্য এই শৃঙ্খলকে কিভাবে আরও শক্তিশালী করে তোলা যায় তা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহমতের ভিত্তিতে বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আগামী পাঁচ বছরে আমাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ১২ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলারে নিয়ে যাওয়া হবে।
বন্ধুগণ,
সফলভাবে সিওপি-২৭ আয়োজন করার জন্য মিশরের প্রশংসা প্রাপ্য। জলবায়ু পরিবর্তনে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলির স্বার্থ যাতে সুরক্ষিত থাকে, এই সম্মেলনে তা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রসঙ্ঘ সহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারত এবং মিশর দীর্ঘদিন ধরে পরস্পরকে সহযোগিতা করে আসছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিবাদের সমাধান কূটনৈতিক পথে সম্ভব বলে উভয় দেশই মনে করে।
সুধীবৃন্দ,
আমি আরও একবার আপনাকে এবং আপনার সঙ্গে আসা প্রতিনিধিদলের সদস্যদের ভারতে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাই, আর আপনাকে এবং মিশরের জনসাধারণকে ইংরেজি বছরের শুভেচ্ছা জানাই।
অনেক অনেক ধন্যবাদ!