ঘোষক ঃ কিদাম্বি শ্রীকান্ত
প্রধানমন্ত্রীজি : হ্যাঁ শ্রীকান্ত বলুন!
শ্রীকান্ত : স্যার, সবার আগে অনেক অনেক ধন্যবাদ। থ্যাঙ্ক ইউ স্যার! আপনি আপনার এত মূল্যবান সময় থেকে আমাদেরকে সময় দেওয়ার জন্য, আমাদের ম্যাচ শেষ হওয়ার পরই আপনি ফোন করে আমাদের সকলের সঙ্গে কথা বলেছেন স্যার। আমি অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে বলতে পারি যে বিশ্বের আর কোনও দেশের অ্যাথলিটদের এ ধরনের প্রেরণা পাওয়ার সৌভাগ্য হয় না। কোনও খেলার শেষে একমাত্র আমরাই আপনার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাই স্যার।
প্রধানমন্ত্রীজি : আচ্ছা শ্রীকান্ত এ কথা বলুন, এমনিতে ব্যাডমিন্টন খেলা আর ক্যাপ্টেন – এই দুটি শব্দ জনগণের মনে সহজে স্থান করে নিতে পারে না। এখন আপনাকে ভারতীয় ব্যাডমিন্টন দলের ক্যাপ্টেন করা হয়েছে। এখন এত বড় দল, এত বড় বড় চ্যালেঞ্জ – এই দায়িত্ব আপনার কেমন লেগেছে? যখন প্রথম এই দায়িত্ব পান, এত বড় লক্ষ্য আপনার সামনে ছিল, তখন কেমন লেগেছিল?
শ্রীকান্ত : স্যার, শুধু এটুকুই মনে হয়েছে যে আমার দলের সবাই নিজের খেলাটি খুব ভালোভাবে খেলছে! শুধু টিম ইভেন্টে আমার সবাইকে একসূত্রে গাঁথার ব্যাপারটা করতে হত, আর সবাইকে উদ্বুদ্ধ করে তাঁদের মনে এই অনুভব জাগাতে হতো যে, আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে খেলতে হবে আর শেষ পর্যন্ত লড়াই করতে হবে স্যার। ব্যাস, এই ছোট ছোট জিনিসগুলি স্যার, আমাকে সমস্ত খেলোয়াড়দের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ঠিক করতে হত। ক্যাপ্টেন হয়ে এর থেকে বড় আর কিছু করতে হয়নি স্যার কারণ, আমার দলের প্রত্যেকেই যথারীতি অনেক ভালো খেলছিল স্যার।
প্রধানমন্ত্রীজি : না না! সবাই ভালো খেলেছে এটা ঠিকই, কিন্তু এই সবাইকে একসূত্রে গাঁথার ব্যাপারটা কোনও সাধারণ কাজ ছিল না। আপনি যদিও নিজের চরিত্রের সারল্য গুণ দিয়ে একথা এত সহজভাবে বলছেন, কিন্তু একটা পর্যায়ে আসার পর যখন মনে হচ্ছিল যে সামনে অনেক কঠিন লড়াই, যেমন ক্রিকেটের শেষ ওভারে হয়, ক্যাপ্টেনের সামনে তখন সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় যে কী করে সবাইকে উজ্জীবিত করতে হবে। আপনার ওপরেও তো সেই চাপ নিশ্চয়ই ছিল!
শ্রীকান্ত : হ্যাঁ স্যার, ছিল, মানে এটা একটা প্রিভিলেজ বলতে পারেন, আমার সৌভাগ্য। আমার সামনে ফাইনালে সেই গোটা ম্যাচটাই লাস্ট ডিসাইডার উইনিং মোমেন্টের মতো। আমি অ্যাকচ্যুয়ালি খেলতে পেরেছি স্যার। যে ম্যাচ অত্যন্ত ইম্পর্ট্যান্ট ছিল, ইন্ডিয়ান টিম বা ভারতীয় দলের জন্য ফাইনালে তা অ্যাকচ্যুয়ালি আমার প্রিভিলেজ ছিল বলে আমি মনে করি স্যার, আর ভারতের জন্য এটা একটা বিরাট সুযোগ ছিল। আমার জন্যও ভারতের মতো দলের নেতৃত্ব দেওয়ার এটা একটা বড় সুযোগ ছিল। ব্যস, আমি ভাবলাম যে আমার সম্পূর্ণ জোর লাগিয়ে আমার জীবনের সেরা খেলাটা খেলতে হবে, আর আমি ব্যস কোর্টে…, যে সময় আমি কোর্টে নামি তখন আমি ভাবি যে আমাকে ১০০ শতাংশ খেলতে হবে আর সেরা ব্যাডমিন্টন খেলতে হবে স্যার।
প্রধানমন্ত্রীজি : আচ্ছা শ্রীকান্ত, আপনি বিশ্ব র্যাঙ্কিং-এ এক নম্বর ছিলেন, আর এখন আপনি থমাস কাপ-এ গোল্ড মেডেল বা স্বর্ণ পদক জিতেছেন। এমনভাবে জিজ্ঞাসা করা উচিৎ নয় জানি, কারণ প্রত্যেক সাফল্যেরই একটি নিজস্ব বৈশিষ্ট্য থাকে, নিজস্ব বিশেষত্বও থাকে, তবুও সাংবাদিকদের যেরকম স্বভাব থাকে, সেরকই একটি প্রশ্ন যদি আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করি যে এই উভয় সাফল্যের মধ্যে আপনি নিজের জীবনে কোনটাকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন?
শ্রীকান্ত : স্যার, এই দুটোই আমার স্বপ্ন ছিল স্যার। বিশ্বের এক নম্বর হওয়া, কারণ সেটা প্রত্যেক খেলোয়াড়ের জীবনে একটা স্বপ্ন থাকে। প্রত্যেকেই বিশ্বের শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় হতে চায়, আর থমাস কাপ-এর মতো প্রতিযোগিতায় যেখানে দল হিসেবে খেলতে হয়, ১০ জন মিলে একটি টিমের মতো খেলতে হয়, এটাও একটা স্বপ্ন স্যার, কারণ এর আগে কখনও ভারত থমাস কাপ-এ মেডেলও জেতেনি স্যার, আর এ বছর আমাদের সামনে একটা বড় সুযোগ ছিল, কারণ এই মুহূর্তে আমরা প্রত্যেকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভালো খেলছিলাম। সেজন্যই স্যার, এই দুটো স্বপ্নই স্যার আমার কাছে সমান মূল্যবান, দুটোই পূর্ণ হয়েছে। আমার জন্য এটা একটা অত্যন্ত আনন্দঘন মুহূর্ত, আমাদের প্রত্যেকেরই খুব ভালো লাগছে স্যার।
প্রধানমন্ত্রীজি : একথা সত্যি যে আগে থমাস কাপ-এ আমরা এতটাই পিছিয়ে থাকতাম যে দেশে এই ধরনের প্রতিযোগিতা নিয়ে তেমন আলাপ-আলোচনাও হত না। ক্রীড়াপ্রেমীরা জানতেও পারতেন না যে এত বড় প্রতিযোগিতার আয়োজন হচ্ছে আর সেজন্য যখন ক্রীড়াপ্রেমীদের কাছে এই খবর পৌঁছয়, সবাই অবাক হন। তখন আমি আপনাদেরকে ফোনেও বলেছিলাম যে হয়তো ভারতে আরও ৪-৬ ঘন্টা লাগবে, সাধারণ মানুষ তারপরই বুঝতে পারবেন যে আপনারা দেশের জন্য কী অর্জন করেছেন! আচ্ছা শ্রীকান্ত, আমি সমগ্র দেশবাসীর পক্ষ থেকে আপনাকে এবং আপনার টিমকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই । কারণ, অনেক দশক পর আপনারা ভারতের ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা থমাস কাপ-এর গরিমাময় মঞ্চে উড়িয়েছেন। এটা কোনও ছোট ঘটনা নয়।
শ্রীকান্ত : অনেক অনেক ধন্যবাদ।
প্রধানমন্ত্রীজি : একজন খেলোয়াড় হিসেবে আর তার ওপর এরকম একটা প্রতিযোগিতায় একটা দেশের ক্যাপ্টেন হিসেবে লাস্ট মোমেন্টে কতটা চাপ ছিল, এটা আমি খুব ভালোভাবেই আন্দাজ করতে পারছি। কিন্তু আপনি অত্যন্ত ধৈর্য্যের সঙ্গে সম্পূর্ণ টিমকে সঙ্গে নিয়ে যেভাবে লড়াই করে দেশকে এই গৌরব এনে দিয়েছেন সেজন্য আমি আপনাকে আরও একবার ধন্যবাদ জানাই। একবার তো টেলিফোনের মাধ্যমে আপনাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছিলাম, কিন্তু আমি আরও একবার সাক্ষাতে আপনাদেরকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আজ নিজে এই আনন্দ উপভোগ করছি।
শ্রীকান্ত : অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ঘোষক ঃ সাত্বিক সাইরাজ রানকি রেড্ডি
প্রধানমন্ত্রীজি : হ্যাঁ সাত্বিক, একটু খেলা সম্পর্কে বলুন। আপনাদের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলুন।
সাত্বিক : অবশ্যই স্যার! গত ১০ দিন সময় আমাদের প্রত্যেকের জীবনে অত্যন্ত স্মরণীয়, অত্যন্ত রোমহর্ষক অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ ছিল স্যার। যেভাবে আমরা অন-কোর্ট খেলেছি, একইরকমভাবে গোটা দল অফ-কোর্টেও খুব সাপোর্ট দিচ্ছিল। এই অভিজ্ঞতা সত্যিই স্মরণীয়, মনে রাখার মতো, কখনও ভোলা যাবে না। অনেক সাপোর্ট পেয়েছি স্যার। আমাদের সাপোর্ট স্টাফরাও উজাড় করে দিয়েছেন, আর এদিক থেকেও, ভারত থেকেও অনেক সমর্থন পেয়েছি, আর এই ১০ দিন আমরা খুব উপভোগ করেছি স্যার। এখনও আমরা যেন ওখানেই আছি। আমরা সবাই যেন থাইল্যান্ডেই আছি স্যার, এরকম মনে হচ্ছে। আমাদের শরীর এখানে আছে কিন্তু মন যেন ওখানেই পড়ে রয়েছে। সেই লাস্ট পয়েন্টে যেমনটি শ্রীকান্ত ভাইজি বলছিলেন, এখনও চোখে ভাসছে স্যার। এখনও আমরা সেই মুহূর্তগুলি উপভোগ করছি স্যার।
প্রধানমন্ত্রীজি : রাতে ক্যাপ্টেন খুব বকাবকি করত, না?
সাত্বিক : স্যার, ফাইনালের পর আমরা সবাই মেডেল পড়ে ঘুমিয়েছি স্যার। কেউ মেডেল খুলিনি।
প্রধানমন্ত্রীজি : আমি কারোও একজনের ট্যুইট দেখছিলাম, সম্ভবত প্রণয়ের ট্যুইট দেখেছি। প্রণয় মেডেল নিয়ে বসেছিল আর বলছিল, আমার ঘুম আসছে না। ভালো খেলার পরও আপনারা সবাই ভিডিও দেখে কোনদিন কার খেলায় কী ত্রুটি ছিল সেগুলি দেখতেন একসঙ্গে বসে।
সাত্বিক : হ্যাঁ স্যার! কোচের সঙ্গে বসে ম্যাচের আগে আগামীকাল কে কার সঙ্গে খেলছে সেটা বুঝে প্রত্যেকের প্রতিপক্ষের গেমকে, প্রতিপক্ষের রণকৌশলকে সম্পূর্ণ বিচার-বিশ্লেষণ করা হত স্যার।
প্রধানমন্ত্রীজি : ঠিক আছে, চলুন সাত্বিক। আপনাদের সাফল্য শুধু এটাই প্রমাণ করেনি যে আপনাদের কোচ সঠিক ছিলেন, তাঁর রণকৌশলগুলি ঠিক ছিল, বরং এটাও প্রমাণ করেছে যে আপনারা প্রত্যেকেই এক একজন খুব ভালো খেলোয়াড়, আর ভালো খেলোয়াড় তাঁরাই হন যাঁরা নিজেদেরকে খেলার প্রয়োজন অনুসারে তৈরি করতে পারেন, সেই অনুসারে নিজেদের শরীর ও মনকে সঞ্চালনা করতে পারেন, যে কোনও পরিবর্তনকে স্বীকার করে নিতে পারেন। তবেই তো সেই কাঙ্খিত ফল অর্জন করা সম্ভব হয়। আমি জানি, আপনারাও তেমনই প্রতিটি পরিবর্তনকে স্বীকার করে নিয়েছেন। আপনারা নিজেদেরকে দক্ষ করার জন্য, আরও উন্নতির জন্য যত ধরনের কাজ করার প্রয়োজন ছিল, যত ধরনের অনুশীলনের দরকার ছিল তা করেছেন। যথেষ্ট পরিশ্রম করেছেন, আর আজ তার পরিণাম হল আপনাদের এই আনন্দঘন মুহূর্তগুলি। গোটা দেশবাসী আজ আপনাদের জন্য গর্বিত। আমার পক্ষ থেকে আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভকামনা। আপনারা ভবিষ্যতে অনেক কিছু করবেন, অনেক সাফল্য আনবেন, কেউ থেমে যাবেন না। এতটাই শক্তি নিয়ে লেগে থাকুন। অনেক অনেক শুভকামনা!
ঘোষক : চিরাগ শেট্টি
প্রধানমন্ত্রীজি : দেখুন চিরাগ, সাত্বিক আপনার অনেক প্রশংসা করল।
চিরাগ শেট্টি : স্যার, নমস্তে স্যার! প্রথম কথা হল, আমার মনে হয় স্যার, আমার এখনও মনে আছে যে গত বছর আমরা এখানে এসেছিলাম। আপনি আমাদেরকে অলিম্পিকের পর আমন্ত্রণ জাানিয়েছিলেন। আমরা ১২০ জন অ্যাথলিট ছিলাম, আর সবাইকে আপনি নিজের বাড়িতে ডেকেছিলেন, আর যাঁরা মেডেল জেতেননি, তাঁরাও এখানে আপনার আমন্ত্রণে এসেছিলেন স্যার। তখন আমার মনে খুব দুঃখ ছিল কারণ, আমি সেবার আমার দেশের জন্য কোনও মেডেল জিতে আসিনি। কিন্তু এবার যখন আমরা থমাস কাপ খেলতে যাই, আমাদের মনে একটা প্রবল ইচ্ছা ছিল, একটা উদ্দীপনা ছিল। জানিনা আর কী কী ছিল। কিন্তু এইটা ছিল, যেভাবেই হোক একটি মেডেল তো আনতেই হবে আর হয়তো আমরা এটা ভাবিনি যে গোল্ড মেডেলই আনব ! কিন্তু, মেডেল যে আনব সে ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত ছিলাম। স্যার, আমার মনে হয় আমরা নিজের দেশের জন্য এর থেকে বড় খুশি আর কিছু আনতে পারতাম না। এটাই একটা কাজ যেটা আমরা সারা জীবন দেশের জন্য করে যেতে চাই স্যার।
প্রধানমন্ত্রীজি : দেখুন, আপনারা সবাই সেদিন এমন সময়ে এসেছিলেন, আমি দেখছিলাম সেই সময় অনেকের চেহারায় হতাশার ছাপ, অনেকের মুখ হতাশায় শুকিয়ে ছিল, ঘাড় ঝুলে ছিল, আর কেমন একটা অপরাধবোধ নিয়ে আপনারা তাকাচ্ছিলেন যে আমরা মেডেল না জিতেই ফিরে এসেছি। কিন্তু সেদিনও আমি বলেছিলাম যে আপনাদের ওই আন্তর্জাতিক মঞ্চে পৌঁছনোই এক একটি মেডেল পাওয়ার মতো। আমি সেদিন বলেছিলাম আর আজ আপনারা প্রমাণ করে দিয়েছেন যে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ক্রীড়াক্ষেত্রে একটি পরাজয় নিছকই পরাজয় হয় না। জীবনে জয়ের জন্য শুধুই সাহস চাই, প্রবল ইচ্ছাশক্তি চাই, উদ্দীপনা চাই। জয় আপনার পায়ে চুমু খাওয়ার জন্য কখনও কখনও সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকে, আর আপনারা এটা করে দেখিয়েছেন। আচ্ছা চিরাগ, আমি সাত্বিককে তো আগে জিজ্ঞাসা করেছি, আর সে বলেও দিয়েছে, কিন্তু আপনাদের দু’জনের জুটি…, আর আমি জানি যে টোকিও অলিম্পিকে আপনাদের মনে একটা হতাশা ছিল, উদাসীনতা ছিল। কিন্তু আজ আপনারা সেই হতাশাকে সুদ সহ পূরণ করে দিয়েছেন। দেশের মর্যাদাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন, আর একটি টিম হিসেবে আপনারা চেষ্টা করেছেন, আর আমি মনে করি যে এই ঘটনাটিই একটি বড় উদাহরণ। কিন্তু যখন অলিম্পিকে সাফল্য না পাওয়ার হতাশা কাটিয়ে ওঠার জন্য যথেষ্ট দিন বাকি ছিল না, এত কম সময়ের মধ্যেই আপনাদের মনে এমন কোন উদ্দীপনা জেগে উঠেছিল যে আপনারা জয়ী হওয়ার জন্যই সেখানে গিয়েছিলেন, আর জয় করে ফিরেছেন। এর কারণ কী?
চিরাগ শেট্টি : স্যার অলিম্পিকে যেমন আমি আপনাকে বলেছি, আমাদের খুব দুঃখ হয়েছিল, কারণ আমরা যাদেরকে হারিয়েছিলাম তাঁরা অবশেষে স্বর্ণ পদক জিতেছিল, আর তাঁরা শুধু একটাই গেম হেরেছিল, সেটা আমাদের সঙ্গে। তারপর থেকে তাঁরা আর কারোর কাছে হারেনি। কিন্তু এবার ঠিক উল্টোটাই হয়েছে। এবার আমরা প্রি-কোয়ার্টার ফাইনাল গ্রুপ স্টেজে হেরেছি, কিন্তু তারপর সব জিতে আমরাই স্বর্ণ পদক জয় করেছি। এটা একদিক থেকে খুবই ভালো হয়েছে। একে ভাগ্যের খেলা বলুন, কিংবা অন্য কোনকিছু, কিন্তু সব মিলিয়ে প্রকৃতই আমাদের সবার মনে একটা অদ্ভূত উদ্যম জেগে উঠেছিল যে কিছু না কিছু করে দেখাতেই হবে, আর এই উদ্যম শুধু আমার মধ্যে নয়, এখানে যে ১০ জন বসে আছি, এর মধ্যে কারোর মনে কোনও দুঃখ থাকুক বা যাই থাকুক, আমাদের সবার মনেই এই উদ্যম জেগে উঠেছিল আর আমার মনে হয় এই ১০ জন আমাদের ভারতের প্রকৃত জনসংখ্যার প্রতিনিধি এবং এই জয় প্রমাণ করে যে যা কিছু হোক না কেন, আমরা ফাইট-ব্যাক করব।
প্রধানমন্ত্রীজি : বাঃ! দেখুন চিরাগ, আপনাকে এবং গোটা দলকে আমি বলব আপনাদের আরও অনেক মেডেল জয় করে আনতে হবে, আরও অনেক প্রস্ফুটিত হতে হবে ,আর দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে খেলার জগতে টেনে ওপরেও তুলতে হবে। কারণ, এখন ভারত আর পিছিয়ে থাকতে পারবে না, আর আমি চাইব যে আপনারা একের পর এক যেভাবে জয়লাভ করছেন, দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে খেলার জন্য যেভাবে প্রেরণা যোগাচ্ছেন আপনারা, আর আমি মনে করি এটা নিজেই একটি বড় ঘটনা। সেজন্য আমার পক্ষ থেকে আপনাদের সবাইকে অনেক শুভকামনা বন্ধুগণ।
চিরাগ শেট্টি : থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ স্যার! অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ঘোষক : লক্ষ্য সেন
প্রধানমন্ত্রীজি : চলুন লক্ষ্য সেন, আমি আগে আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। কারণ, আমি আপনাকে শুভেচ্ছা জানানোর সময় টেলিফোনে বলেছিলাম যে আমি আপনার কাছে একটি বিশেষ মিষ্টি খেতে চাই, আর আজ আপনি সেই বিশেষ মিষ্টিটি নিয়ে এসেছেন। আপনি মনে রেখেছেন। হ্যাঁ লক্ষ্য, এবার বলুন!
লক্ষ্য সেন : জি নমস্কার স্যার! আমি যেদিন ইয়ুথ অলিম্পিকে স্বর্ণ পদক জিতেছিলাম, তখনও আমার আপনার সঙ্গে দেখা করার সৌভাগ্য হয়েছিল, আর আজ দ্বিতীয়বার সাক্ষাতের সৌভাগ্য হল। সেজন্য আমি বলতে চাইব যে আমি এমনিই উজ্জীবিত অনুভব করছি। যখনই আপনার সঙ্গে দেখা হয় তখন আমরা সবাই উজ্জীবিত অনুভব করি। সেই ফোন কলের পরও আবার যখনই আপনার সঙ্গে দেখা হয়, তখন মনের মধ্যে এই ভাবনাটাই থাকে যে এভাবেই ভারতের জন্য যাতে মেডেল জিততে থাকি, আর আপনার সঙ্গে দেখা হতে থাকে, আর আমি আপনার জন্য এই বিশেষ মিষ্টিটি আনতে থাকি।
প্রধানমন্ত্রীজি : আচ্ছা লক্ষ্য, আমাকে বলা হয়েছে যে সেখানে গিয়ে আপনার ফুড পয়জনিং হয়ে গিয়েছিল?
লক্ষ্য সেন : হ্যাঁ স্যার। আমরা যেদিন পৌঁছেছিলাম সেদিনই আমার ফুড পয়জনিং হয়েছিল, আর আমি দু’দিন খেলতে পারিনি। কিন্তু তারপর ধীরে ধীরে যখন গ্রুপ স্টেজের ম্যাচগুলি শুরু হয়, ততদিনের মধ্যে কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠেছিলাম। তারপর যখন একটি ম্যাচ খেললাম, তারপরও ফুড পয়জনিং-এর জন্য আবার বিশ্রাম নিতে হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রীজি : আপনার কি সবকিছু খাওয়ার অভ্যাস আছে নাকি?
লক্ষ্য সেন : না স্যার! সম্ভবত সেদিন এয়ারপোর্টে যা খেয়েছিলাম তাতে খারাপ কিছু ছিল। হয়তো সেজন্যই পেট খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তারপর যখন টুর্নামেন্ট এগিয়ে চলে, তখন আমি প্রতিদিনই কিছুটা করে সুস্থ হতে থাকি। আরও ভালো লাগতে থাকে।
প্রধানমন্ত্রীজি : আপনারা সবাই নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন যে, আজকাল দেশের ছোট ছোট বাচ্চাদের মধ্যেও খেলার প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। তাহলে দেশের ৮ থেকে ১০ বছর বয়সী বাচ্চাদের জন্য আপনি কী বার্তা দেবেন?
লক্ষ্য সেন : হ্যাঁ জি স্যার! যেভাবে বিমল স্যার বলছিলেন যে আমি অনেক দুষ্টু ছিলাম, আর অনেক দুষ্টুমি করতাম, আমি নিজের মন থেকে বলতে চাইব যে আমি যদি একটু কম দুষ্টুমি করতাম, আর নিয়মিত খেলার দিকে নজর দিতাম তাহলে আরও ভালো হত। আমি অন্য বাচ্চাদেরকে একথাই বলতে চাইব, যখন যে কাজটাই তোমরা করবে, মন থেকে করবে, আর সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে করবে।
প্রধানমন্ত্রীজি : ফুড পয়জনিং হওয়ার পর আপনার নিশ্চয়ই অনেক শারীরিক সমস্যা হয়েছিল, তা থেকে মানসিক যন্ত্রণায়ও আপনি অনেক ভুগেছেন, কারণ, খেলা চলছিল কিন্তু আপনার শরীর সঙ্গ দিচ্ছিল না। সেই সময় আপনি যেভাবে মনের জোরে নিজের ভারসাম্য রক্ষা করেছেন, আপনার সময় থাকলে বা অবকাশের সময়ে একান্তে ভেবে দেখবেন যে এটা কোন শক্তি ছিল, এটা কেমন প্রশিক্ষণ ছিল যে ফুড পয়জনিং হওয়ার পরেও, শারীরিক দুর্বলতা আসার পরেও এই খেলা আপনাকে শান্তিতে বসতে দেয়নি, আর আপনি এই ফুড পয়জনিং-এর পরিস্থিতিকে দ্রুত অতিক্রম করে এসেছেন। সেই মুহূর্তগুলির কথা আরও একবার ভাববেন। সেই ভাবনা আপনার জীবনে অনেক বড় শক্তি যোগাবে। কিভাবে আপনি সেই পরিস্থিতিকে জয় করেছেন। ১০ জন হয়তো সান্ত্বনা দিয়ে বলেছেন, চিন্তা করো না, সব ঠিক হয়ে যাবে! কিন্তু এসব থেকে নয়, তখন আপনার ভেতরের এমন একটি শক্তি জেগে উঠেছিল যা আপনাকে দিয়ে খেলিয়ে নিয়েছে, আর আমি মনে করি, আপনার মধ্যে যে এই দুষ্টুমির স্বভাব রয়েছে, এটাকে কখনও ছাড়বেন না। এই দুষ্টুমিও আপনার জীবনের একটি শক্তি। একে উপভোগ করবেন, আনন্দ করে বাঁচবেন। আসুন ভাই, অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
ঘোষক : এইচ এস প্রণয়
প্রধানমন্ত্রীজি : হ্যাঁ প্রণয়, আমি ঠিকই বলেছিলাম না? আপনারই ট্যুইট ছিল না?
প্রণয় : হ্যাঁ স্যার! আমারই ট্যুইট ছিল স্যার। স্যার, এটা আমাদের সকলের জীবনে একটি অত্যন্ত আনন্দঘন মুহূর্ত ছিল কারণ আমরা ৭৩ বছর পর থমাস কাপ জিতেছি। এর থেকেও বড় আমাদের জন্য গর্বের বিষয় ছিল যে আমরা আমাদের দেশের জন্য স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উৎসবের সময়ে এই জয় আনতে পেরেছি। সেজন্য আমি মনে করি, এটা দেশের জন্য একটি বড় উপহার, আর আমরা সবাই খুবই খুশি।
প্রধানমন্ত্রীজি : আচ্ছা প্রণয়, মালয়েশিয়া, ডেনমার্ক – এ ধরনের বেশ কিছু সেরা টিমের বিরুদ্ধে লড়তে হয়েছে। তাঁদের কোয়ার্টার ফাইনালে খারাপ খেলার পর সেমি-ফাইনালের নির্ণায়ক ম্যাচগুলিতে জেতার হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে আমি শুনেছি, সেই সময় সকলের নজর প্রণয়ের ওপর ছিল। কেন এরকম হয়েছিল? সেই চাপকে আপনি কিভাবে সামলেছেন, আর কিভাবে অ্যাগ্রেসিভ রেজাল্ট বা আক্রমণাত্মক খেলে সুফল এনে দিয়েছেন?
প্রণয় : স্যার, ঐদিন অনেক বেশি প্রেশারই ছিল। স্যার, ঐদিন বিশেষ করে, কোয়ার্টার ফাইনালের দিন। কারণ আমি জানতাম যদি আমি সেই ম্যাচ হেরে যেতাম তাহলে আমরা চ্যাম্পিয়ন মেডেল পেতাম না, আর সবাইকে মেডেল ছাড়াই ফিরতে হত। কিন্তু সেই যে টিম স্পিরিট ছিল স্যার, সম্পূর্ণ টুর্নামেন্টে আর সবার মধ্যে এমন উৎসাহ ও উদ্দীপনা ছিল যে যে কোনভাবেই আমাদেরকে এই মেডেল জিতে আসতেই হবে। প্রথম দিন থেকেই প্রত্যেকের মধ্যে অনেক এনার্জি দেখা গেছে। সম্পূর্ণ স্কোয়াড এবং বিশেষ করে কোর্টের মধ্যে যাওয়ার পর ১০ মিনিট পর আমার মনে হল আজ যাই হোক না কেন, আমাকে জিততেই হবে এবং আমার মনে হয় সেমি-ফাইনালেও একই রকম পরিস্থিতি ছিল স্যার। অনেক বেশি প্রেশার ছিল। কারণ আমি জানতাম, যদি আমরা ফাইনালে পৌঁছে যাই তাহলে আমরা একটি গোল্ড নিয়ে যেতে পারি। তখন তো আমাকে জিততেই হত স্যার! আর গোটা টিমের জন্য জিততে হত স্যার। সবাইকে উৎসাহ যোগানোর জন্য ধন্যবাদ, আর আমার দলের সকলেই সেখানে সমর্থন যোগানোর জন্য ছিল। অনেক বেশি সমর্থন যোগাচ্ছিল। তা থেকে আমি অনেক শক্তি পেয়েছি স্যার।
প্রধানমন্ত্রীজি : দেখুন প্রণয়, আমি দেখতে পাচ্ছি যে আপনি একজন যোদ্ধা। খেলা থেকে বেশি আপনার মধ্যে একজন বিজয়ী মেজাজের সাহসী মানুষ রয়েছে। এটাই আপনার সবচাইতে বড় শক্তি, আর আপনি হয়তো নিজের শরীরের পরোয়া না করেই খেলেন। যতই চোট-আঘাত লাগুক, যা খুশি হোক, আমি জিতেই ছাড়ব – এই মনোভাবের পরিণামই হল আপনার ভেতরে একটি অনেক বড় প্রাণশক্তি খেলা করে, আর তা থেকে মনে উদ্দীপনাও জেগে ওঠে। আমার পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক অনেক শুভকামনা, অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
প্রণয় : থ্যাঙ্ক ইউ ভেরি মাচ স্যার! অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ঘোষক : উন্নতি হুডা
প্রধানমন্ত্রীজি : কী ব্যাপার উন্নতি, আপনি দলের মধ্যে সবচাইতে ছোট তাই না?
উন্নতি : গুড ইভিনিং স্যার! শুভ সন্ধ্যা।
প্রধানমন্ত্রীজি : বলুন উন্নতি,
উন্নতি : স্যার, সবার আগে বলছি এই দলের সদস্য হিসেবে আজ এখানে আসতে পেরেছি। সেজন্য আমি আজ খুব খুশি, আর স্যার একটি বিষয় আমাকে খুবই উজ্জীবিত করে যে - আপনি কখনও যাঁরা জিতে মেডেল পেয়ে আসেন, আর যাঁরা নন-মেডেলিস্ট বা মেডেল পাননি, তাঁদের মধ্যে কোনও বৈষম্য দেখান না।
প্রধানমন্ত্রীজি : বাঃ ভাই বাঃ! খুব ভালো। এত ছোট বয়সে এত বড় সিনিয়র খেলোয়াড়দের সঙ্গে টিমে খেলতে যাওয়া কম কথা নয়, আর আপনার দল তো অলিম্পিক বিজেতাও ছিল। তখন আপনার মনে কেমন আনন্দ হয়েছিল? এমনই সব বড়দের ভিড়ে চাপা পড়ে যাচ্ছিলেন নাকি ভাবছিলেন আমিও সবার সমকক্ষ? ঠিক কী মনে হচ্ছিল বলুন তো!
উন্নতি : হ্যাঁ স্যার, এবারের টুর্নামেন্টে অনেক দারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছে, আর আমি অনেক কিছু শিখেছি, আর বয়েজদের টিম জিতেছে বলে খুব খুশি হয়েছি, আর এটা ভেবেছি যে আগামীবার গার্লস টিমকেও জিততে হবে, আর মেডেল আনতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীজি : আচ্ছা উন্নতি, আমাকে এটা বলুন যে হরিয়ানার মাটিতে এমন কী আছে যে একজন থেকে আরেকজন সেরা খেলোয়াড় উঠে আসছেন?
উন্নতি : স্যার আমার মনে হয় এটা খাঁটি দুধ, দই বেশি করে খাওয়ার সুফল!
প্রধানমন্ত্রীজি : উন্নতি, এটা আমার এবং গোটা দেশের বিশ্বাস যে আপনি নিজের নামকে অবশ্যই সার্থক করবেন। এত ছোট বয়সে আপনি সুযোগ পেয়েছেন, আপনি এবারের সুযোগকে বিগিনিং বা নিছকই সূত্রপাত হিসেবে মনে করুন। এখনও অনেক কিছু করা বাকি রয়েছে। কখনও এটা ভাববেন না যে চলো, এখানে তো পৌঁছে গিয়েছি, অমুক টুর্নামেন্ট তো জিতে এসেছি – এরকম বিজয়কে কখনও মনের মধ্যে ঢুকতে দেবেন না কারণ আপনার এখনও অনেক কিছু করা বাকি। আপনার হাতে একটা দীর্ঘ সময়ও রয়েছে আর অনেক ছোট বয়সে আপনি এরকম আন্তর্জাতিক টুনার্মেন্টগুলিতে খেলার সুযোগ পেয়েছেন, অভিজ্ঞতা হয়েছে, আর সেজন্য এখন এই সাফল্যকে হজম করে ফেলুন, আর পরের খেলার জন্য তৈরি হোন। এই দুই পদক্ষেপ আপনার জীবনে অনেক কাজে লাগবে আর আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে আপনি অবশ্যই বারবার সফল হবেন। আমার পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক অনেক শুভকামনা, অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
উন্নতি : থ্যাঙ্ক ইউ স্যার! অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ঘোষক : ট্রেসা জলি
ট্রেসা জলি : গুড ইভিনিং স্যার!
প্রধানমন্ত্রীজি : ট্রেসা জলি
ট্রেসা জলি : হ্যাঁ স্যার! একজন নবীন খেলোয়াড় হিসেবে ভারতের জন্য খেলা একটি সম্মানের বিষয়। আগামী বছরগুলিতে আমি দেশের জন্য অনেক পদক জয় করব আর ভারতকে গর্বিত করব।
প্রধানমন্ত্রীজি : ফ্যামিলি সাপোর্ট কেমন ছিল?
ট্রেসা জলি : স্যার, আমার বাবা আগে ফিজিক্যাল এডুকেশন শিক্ষক ছিলেন। তিনি আগেই খেলার মধ্যে ছিলেন, সেজন্য তিনি যে আমাকে সমর্থন করবেন তা প্রকৃত ব্যাডমিন্টন খেলার জন্য … তাঁর মতবাদ ছিল, আগে বাড়িতে কোর্ট। তিনি বাড়িতে একটি ব্যাডমিন্টন কোর্ট গড়ে তুলেছিলেন। তারপর বাড়িতেই খেলাতেন। তারপর প্রথমে রাজ্যস্তরে ও পরে জাতীয় স্তরে টুর্নামেন্ট খেলে মেডেল এসেছে। তখনই আমার ও পরিবারের সবার মনে একটি আশা জেগেছিল যে আমিও ভারতীয় দলে সুযোগ পেতে পারি। তাই আপ্রাণ লড়ে গেছি, কঠোর পরিশ্রম করেছি স্যার!
প্রধানমন্ত্রীজি : আপনার বাড়িতে কী সবাই সন্তুষ্ট?
ট্রেসা জলি : হ্যাঁ স্যার, সবাই খুব খুশি।
প্রধানমন্ত্রীজি : আপনার বাবা অনেক পরিশ্রম করেন। এখন তিনি কি সন্তুষ্ট?
ট্রেসা জলি : হ্যাঁ স্যার! বাবাও খুব খুশি।
প্রধানমন্ত্রীজি : বাঃ! দেখুন, আপনারা সবাই যেভাবে উবর কাপ-এ খেলেছেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে দেশ এর জন্য অত্যন্ত গৌরবান্বিত, আর আপনি এই লক্ষ্য নিয়ে একদমই ভালোভাবে টিকে রয়েছেন। ঠিক আছে, আজ মনের মতো পরিণাম হয়তো পাননি, কিন্তু আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, এভাবে নিয়ম মেনে পরিশ্রম করে গেলে আজ যা চান অদূর ভবিষ্যতেই তেমন রেজাল্ট পেতে পারেন, আর আপনার টিমও জিতবে। এরপর আরও দল আসবে ও ভালো ফল করবে এমনটি নয়, কারণ আপনি একটি ভালো সূত্রপাত করেছেন। আপনি দেশের নবীন প্রজন্মকে নতুন উৎসাহ, নতুন প্রাণশক্তিতে ভরিয়ে দিয়েছেন, আর এই আবহ বিগত সাত দশকে প্রথমবার তৈরি হয়েছে। ১৩৫ কোটি জনগণের দেশ। এই ১৩৫ কোটি জনগণকে ব্যাডমিন্টনে এমন সাফল্যের জন্য সাত দশকেরও বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে।
এই সাত দশকে আমাদের খেলোয়াড়রা অনেক চেষ্টা করেছেন। না জানি কতো প্রজন্ম, এই সাত দশক ধরে যাঁরাই ব্যাডমিন্টন খেলেছেন, তাঁরাই স্বপ্ন দেখেছেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন আপনারা এসে বাস্তবায়িত করেছেন। এই বাস্তবায়নকে ছোট ভাববেন না। আর যখন ফাইনাল খেলার সময় আমি জজা-র সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তিনি সেখানে ছিলেন, আর আমি অনুভব করছিলাম যে, আপনারা নিজেরাও কল্পনাও করতে পারছেন না যে আপনারা কত বড় কাজ করেছেন, আর এজন্য আমি বারবার বলি যে প্রকৃতপক্ষে আপনারা অনেক বড় কাজ করেছেন। আর তখনই, প্রত্যেকবার হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পরেই আপনারা অনুভব করেছেন যে হ্যাঁ স্যার, কিছু কসরৎ করে এসেছি।
আপনারা যে খেলাগুলির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, সেগুলি যখন এত বড় সাফল্য পায়, তখন কেন্দ্রীয় সরকারেরও যে ক্রীড়া ও পরিবেশ দপ্তর রয়েছে তা থেকে খেলার জন্য যে সাজসরঞ্জাম রয়েছে, যে কালচার রয়েছে সেটিতে নতুন উৎসাহের রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আপনারা যে যে খেলার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন সেগুলিতে যখন এত বড় সাফল্য আসে, তখন ভারতের যে ক্রীড়া ব্যবস্থা এবং ক্রীড়া পরিকাঠামো ব্যবস্থার ইকো-সিস্টেম রয়েছে, এবং স্পোর্টর্সের জন্য যে কালচার রয়েছে, যে ক্রীড়া সংস্কৃতি রয়েছে, তাতে একটি নতুন উৎসাহ সঞ্চার হয়। যে আত্মবিশ্বাসের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, তা ভালো ভালো কোচেরা করতেএনে দিতে পারেন না, বড় নেতারা খুব ভালো বক্তৃতার মাধ্যমেও করতে পারেন না। সেই কাজ আপনাদের এই বিজয় করে দেখায়।
এটা ঠিক যে উবর কাপ-এ আরও কিছু করার রয়েছে। সেজন্য অপেক্ষা করবেন। কিন্তু জেতার ব্যবস্থাও করবেন, আর আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে আমাদের দীর্ঘকাল অপেক্ষা করতে হবে না। কারণ, আপনারা এতদিন যা করে এসেছেন, আপনাদের চোখে আমি সেই উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেখতে পেয়েছি, আর আমাদের মহিলা দল বারবার এটাই প্রমাণ করে দেখিয়েছে যে তারা কতটা উন্নতমানের অ্যাথলিট, আর আমি এটা স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছি বন্ধুগণ, শুধুই সময়ের অপেক্ষা, এবার নয়তো আগামীবার নিশ্চয়ই সাফল্য পাবেন। আপনারাই সেই মানুষ যাঁরা বিজয়ী হয়ে ফিরে আসবেন, আর যেমনটি আপনারা সবাই বলেছেন যে স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব চলছে, স্বাধীনতার ৭৫ বছর সম্পূর্ণ হতে চলেছে, আর আমাদের চোখের সামনে ক্রীড়া বিশ্বে ভারতের এই উত্থান অনেক আনন্দঘন মুহূর্ত জন্ম দিচ্ছে। ক্রীড়া ময়দান থেকে বেরিয়ে আসা নবীন প্রজন্মের মানুষেরা যখন বিশ্বমঞ্চে শক্তি দেখাচ্ছেন, তখন গোটা ভারত গর্বে ভরে উঠছে, উজ্জীবিত হচ্ছে। সাফল্যের সেই উচ্চতাকে স্পর্শ করা প্রত্যেক ভারতবাসীকে গর্বিত করছে, আর এজন্য একটি নতুন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ভারতের খেলোয়াড়সুল্ভ মেজাজ তৈরি হচ্ছে, জেতার মেজাজ তৈরি হচ্ছে। ইয়েস আই ক্যান ডু ইট! হ্যাঁ, আমি করতে পারবই, - এই মেজাজ গড়ে উঠছে, আর প্রণয় যেমন বলছিলেন, তখন আমি মনের মধ্যে দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে এবার হারলে চলবে না, পিছিয়ে পড়লে চলবে না। ইয়েস, উই ক্যান ডু ইট – এই যে মনোভাব এটা ভারতের খেলোয়াড়দের মনে একটি নতুন শক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছে, আর আপনারা তা প্রমাণ করে যাচ্ছেন, আপনারা এই মনোভাবের ধারক ও বাহক হয়ে এই নতুন শক্তির প্রতিনিধিত্ব করে যাচ্ছেন। আচ্ছা, সামনের প্রতিদ্বন্দ্বীরা যতই শক্তিশালী হোন না কেন, একজন কম্পেটিটর বা প্রতিযোগী আমাদের থেকে যতই শক্তিশালী হোন না কেন, তিনি কে, তাঁর রেকর্ড কী - তা নিয়ে গবেষণা করার থেকেও আজকের ভারতের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ নিজস্ব ক্ষমতা প্রদর্শন। আমি এটা মনে করি। আমাদের কোথায় পৌঁছতে হবে - শুধু এই উদ্দীপনা নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। কিন্তু বন্ধুগণ, আপনারা সবাই আরও একটি কথা মনে রাখবেন। এখন আপনাদের সবার ওপরে দেশের প্রত্যাশা স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে গেছে। দেশ এখন আপনাদের দিকে একটু বেশিই প্রত্যাশা নিয়ে তাকাবে, আর তখন চাপ আরও বাড়বে। আর এ ধরনের চাপ খারাপ কিছু নয়। কিন্তু এই চাপে নিজেরা চেপে যাওয়াটাই খারাপ। আমাদের প্রত্যেককেই সেই চাপকে প্রাণশক্তিতে রূপান্তরিত করতে হবে, আমাদের নিজস্ব শক্তিতে রূপান্তরিত করতে হবে, তাকে আমাদের উৎসাহ যোগাতে হবে। কেউ কেউ বলেন, বাক-আপ, বাক-আপ, বাক-আপ! তার মানে এটা বলছে না যে তাঁরা আপনার ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন। তাঁরা যে বাক-আপ, বাক-আপ বলছেন, তার মানে হল, বন্ধু আরও যদি দ্রুত করতে পারেন তাহলে আপনি করুন। একে আমাদের একটি শক্তির উৎস বলে মেনে নেওয়া উচিৎ। আর আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে আপনারা এটা করে দেখাবেন।
বিগত কয়েক বছরে প্রায় প্রত্যেক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ভারতের যুবক-যুবতীদের প্রদর্শন খুব ভালো ছিল আর কিছু না কিছু নতুন, কিছু না কিছু ভালো, কিছু না কিছু বেশি করার প্রচেষ্টা হয়েছে। তাতেও বিগত ৭-৮ বছরে ভারতের খেলোয়াড়রা নানা আন্তর্জাতিক মঞ্চে অনেক নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছে। আমাদের নবীন প্রজন্মের মানুষেরা তাঁদের ধারাবাহিক পরিশ্রমের পরিণাম অর্জন করে দেখিয়েছেন। তা সে অলিম্পিক গেমস হোক কিংবা প্যারালিম্পিক্স – প্রত্যেকেই রেকর্ড প্রদর্শন করে সাফল্য ঘরে তুলেছেন। আজ সকালেই আমি ডেফলিম্পিক্সের সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হয়েছিলাম। আমাদের ছেলে-মেয়েরা ওই সর্বশেষ ডেফলিম্পিক্সের মাঠেও এত ভালো সাফল্য এনেছে যে, আমার মন খুব ভালো হয়ে গিয়েছে, আমি খুব আনন্দ পেয়েছি।
আজ ক্রীড়াক্ষেত্রে পুরনো ধারনাগুলি পরিবর্তিত হচ্ছে। যেমনটি আপনারা সবাই বলছিলেন, আজকাল মা-বাবারা আপনাদেরকে উৎসাহিত করছেন, সাহায্য করছেন। মা-বাবাদেরও অ্যাম্বিশন তৈরি হচ্ছে, তাঁদের মনেও বিশ্বাস গড়ে উঠছে যে হ্যাঁ, ছেলে-মেয়েরা এক্ষেত্রেও এগিয়ে যেতে পারবে, পেশা হিসেবে গড়ে তুলতে পারবে। এভাবেই তো একটি নতুন কালচার, একটি নতুন সংস্কৃতি, একটি নতুন আবহ আমাদের দেশে তৈরি হবে আর এটা ভারতের ক্রীড়া ইতিহাসে আমি মনে করি একটি সোনালী অধ্যায়ের মতো, আর যার রচয়িতা হলেন আপনারা সবাই। আপনাদের প্রজন্মের যে খেলোয়াড়রা সবাই - যাঁরা আজ ভারতকে নতুন নতুন জায়গায় বিজয়ধ্বজা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার কারণ হয়ে উঠছেন।
এই মোমেন্টামকে আমাদের জারি রাখতে হবে। এই আবহ বজায় রাখতে হবে। ব্যাস, এক্ষেত্রে আমাদের মেজাজে একটুও ডালনেস আসতে দিলে চলবে না। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি যে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার আপনাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলবে, সম্ভাব্য সব ধরনের সাহায্য আপনারা সরকারের পক্ষ থেকে পাবেন। যেখানে উৎসাহদানের প্রয়োজন, সেখানে উৎসাহ পাবেন। বাকি ব্যবস্থাগুলির ক্ষেত্রেও যেখানে যেখানে প্রয়োজন হবে সবই পূরণ করা হবে। আর আমি শুধু যে যাঁরা আমার সামনে বসে আছেন তাঁদেরকেই নয়, গোটা দেশের সমস্ত খেলোয়াড়দের আশ্বস্ত করতে চাই যে, আমাদের সরকারের দিক থেকে কোনও ত্রুটি থাকবে না। এখন আমাদের থামলে চলবে না। এখন আমাদের পেছনে ফিরে তাকালে চলবে না। আমাদের সামনের দিকে তাকাতে হবে। লক্ষ্য স্থির করে এগোতে হবে আর, বিজয়ী হয়ে ফিরতে হবে। আপনাদের সবাইকে আমার পক্ষ থেকে অনেক অনেক শুভকামনা।
অনেক অনেক ধন্যবাদ!