কেরলের রাজ্যপাল শ্রী আরিফ মহম্মদ খান, মুখ্যমন্ত্রী শ্রী পিনারাই বিজয়ন, কেরালা সরকারের মন্ত্রীগণ, অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং কোচির ভাই ও বোনেরা!
ওনামের পবিত্র উৎসবে আজ কেরলের প্রতিটি প্রান্ত সিক্ত। এই উৎসব উপলক্ষে কেরলকে ৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের সংযোগ প্রকল্প উপহার দেওয়া হয়েছে। আমি এই প্রকল্পগুলির জন্য আপনাদের সকলকে অনেক অভিনন্দন জানাই, যা জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন এবং ব্যবসাকে সহজ করে তুলবে।
আমরা ভারতীয়রা স্বাধীনতার ‘অমৃত কাল’-এর পরবর্তী ২৫ বছরে একটি উন্নত ভারত গড়ার জন্য একটি বিশাল সংকল্প নিয়েছি। উন্নত ভারতের এই পথচিত্রে আধুনিক পরিকাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আজ কেরলের এই মহান ভূমি থেকে উন্নত ভারতের জন্য আরেকটি বড় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
বন্ধুগণ,
আমার মনে আছে, আমি ২০১৭ সালের জুন মাসে কোচি মেট্রোর আলুভা-পালারিভাট্টম সেকশনের উদ্বোধন করার সুযোগ পেয়েছিলাম। আজ কোচি মেট্রো প্রথম পর্বের সম্প্রসারণের উদ্বোধন করা হ’ল। এছাড়াও, কোচি মেট্রোর দ্বিতীয় ধাপের ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করা হয়েছে। কোচি মেট্রোর দ্বিতীয় ধাপটি জেএলএন থেকে চলবে। স্টেডিয়াম থেকে ইনফোপার্ক। এটি কাক্কানাদের সাথে এসইজেড কোচি স্মার্ট সিটিকেও সংযুক্ত করবে। অর্থাৎ, কোচি মেট্রোর দ্বিতীয় পর্যায় আমাদের যুবক-যুবতী এবং পেশাদারদের জন্য আশীর্বাদ-স্বরূপ।
কোচির এই প্রকল্পটি সমগ্র দেশের নগর ও পরিবহণ উন্নয়নে একটি নতুন দিক-নির্দেশ দেবে। কোচিতে ইউনিফাইড মেট্রোপলিটন ট্রান্সপোর্ট অথরিটিও বাস্তবায়িত হয়েছে। এই কর্তৃপক্ষ মেট্রো, বাস, নৌপথ ইত্যাদির মতো সব ধরনের পরিবহণকে একই ছাতার নীচে আনতে কাজ করবে।
মাল্টি-মডেল কানেক্টিভিটি - এই মডেলের মাধ্যমে কোচি শহরের তিনটি সরাসরি সুবিধা হবে। এতে শহরের মানুষের যাতায়াতের সময় কমবে, সড়কে যানজট কমবে এবং শহরের দূষণও কমবে। এটি ‘নেট জিরো’র বিশাল প্রতিশ্রুতি পূরণে সহায়তা করবে।
কেন্দ্রীয় সরকার গত আট বছরে মেট্রোকে শহরে পরিবহণের সবচেয়ে বড় মাধ্যম হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কাজ করেছে। কেন্দ্রীয় সরকার রাজধানী থেকে রাজ্যের অন্যান্য বড় শহরে মেট্রো নেটওয়ার্ক প্রসারিত করেছে। প্রায় ৪০ বছর আগে আমাদের দেশে প্রথম মেট্রো ট্রেন চলে। পরবর্তী ৩০ বছরে, দেশে ২৫০ কিলোমিটারেরও কম মেট্রো নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা ছিল। গত আট বছরে দেশে ৫০০ কিলোমিটারেরও বেশি মেট্রোর নতুন রুট তৈরি করা হয়েছে এবং ১ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি মেট্রো রুটের কাজ চলছে।
আমরা ভারতীয় রেলকে সম্পূর্ণ রূপান্তর করছি। আজ কেরলকে উপহার দেওয়া প্রকল্পের মধ্যে আন্তর্জাতিক মানের বড় রেলস্টেশন পুনর্নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে৷ এখন এর্নাকুলাম টাউন, এর্নাকুলাম জংশন এবং কোল্লামও এইসব সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত হবে।
কেরলের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা আজ একটি নতুন মাইলফলক ছুঁয়েছে। তিরুবনন্তপুরম থেকে ম্যাঙ্গালুরু পর্যন্ত পুরো রেল পথ ডবল লাইন করা হয়েছে। এটি সাধারণ ভ্রমণকারীদের পাশাপাশি, পুণ্যার্থীদের জন্য একটি অসাধারণ সুবিধা এনে দেবে। এট্টুমানুর-চিংগাভানাম-কোট্টায়াম ট্র্যাক দ্বিগুণ করা ভগবান আয়াপ্পার 'দর্শন' ব্যাপকভাবে সহজ করবে। লক্ষাধিক ভক্তের দীর্ঘদিনের দাবি এখন পূরণ হয়েছে। এটি সারা দেশ এবং বিশ্বের ভক্তদের জন্য একটি আনন্দের মুহূর্ত। কোল্লাম-পুনালুর সেকশনের বিদ্যুতায়ন পুরো অঞ্চল জুড়ে দূষণমুক্ত এবং দ্রুত রেল ভ্রমণ সুগম করে তুলবে। স্থানীয় মানুষের সুবিধার পাশাপাশি, জনপ্রিয় এই পর্যটন কেন্দ্রের আকর্ষণও বাড়বে। প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকার অর্থ ব্যয়ে কয়েকটি পরিকাঠামো প্রকল্পের কাজ বর্তমানে কেরলে চলছে। এই আধুনিক পরিকাঠামো প্রকল্পগুলি কেরলে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে এবং কৃষি ও শিল্পকে শক্তিশালী করবে।
কেন্দ্রীয় সরকার কেরলের যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর জোর দিচ্ছে। আমাদের সরকার জাতীয় মহাসড়ক-৬৬, যাকে কেরালার লাইফলাইন বলা হয়, ছয় লেনে রূপান্তরিত করছে। এর জন্য ৫৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি খরচ করা হচ্ছে। পর্যটন এবং বাণিজ্য আধুনিক এবং উন্নত সংযোগ থেকে বিশাল সুবিধা পায়। পর্যটন এমন একটি শিল্প, যা দরিদ্র, মধ্যবিত্ত, গ্রাম এবং শহর সহ সবাইকে সাহায্য করে। স্বাধীনতার ‘অমৃত কাল’-এ পর্যটনের বিকাশ দেশের উন্নয়নে ব্যাপকভাবে সহায়ক হবে।
কেন্দ্রীয় সরকারও পর্যটন ক্ষেত্রের উদ্যোগকে উৎসাহিত করছে। মুদ্রা যোজনার অধীনে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত গ্যারান্টি ছাড়া ঋণ পাওয়া যায়। এই প্রকল্পের অধীনে, কেরলের লক্ষ লক্ষ ক্ষুদ্র উদ্যোগপতিদের ৭০ হাজার কোটি টাকারও বেশি আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়েছে এবং তাঁদের মধ্যে অনেকেই পর্যটন শিল্পে রয়েছেন।
কয়েকদিন আগে আমি হরিয়ানায় মা অমৃতানন্দময়ীজীর অমৃতা হাসপাতালের উদ্বোধন করার সুযোগ পেয়েছি। আমি মমতাময়ী অমৃতানন্দময়ী আম্মার আশীর্বাদও পেয়েছি। আমি কেরলের ভূমি থেকে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
বন্ধুগণ, আমাদের সরকার ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস এবং সবকা প্রয়াস’-এর মূল মন্ত্রে কাজ করে দেশের উন্নয়ন করছে। স্বাধীনতার এই ‘অমৃত কাল’-এ আমরা একসঙ্গে উন্নত ভারতের পথকে সুদৃঢ় করব - এই কামনা নিয়ে। এই উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য আপনাদের সকলকে অনেক অভিনন্দন। আবারও, আপনাদের সবাইকে ওনামের শুভেচ্ছা।
অনেক অনেক ধন্যবাদ