কেন্দ্রে এনডিএ সরকারের কাজের প্রথমদিন থেকেই পরিকাঠামো গড়ে তোলার ওপর বিশেষ নজর দেওয়া হয়। রেল, সড়ক, নদী ও সমুদ্রপথ – সর্বত্রই পরিকাঠামোর প্রসার ও উন্নয়নের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার সামগ্রিক উন্নতির দিকটি বিশেষভাবে অগ্রাধিকার লাভ করে কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মসূচিতে।
কাঠামোগত সংস্কার এবং পরিকাঠামো পরিবর্তনের ওপর প্রথম জোর দেওয়া হয় এনডিএ সরকারের রেল বাজেটে। প্রতিটি রেল বাজেটে নতুন নতুন ট্রেনের ঘোষণা করা এতদিন পর্যন্ত ছিল এক রাজনৈতিক চমক। কিন্তু বর্তমানে এনডিএ সরকারের শাসনকালে যাত্রী-বান্ধব বিভিন্ন ব্যবস্থার কথা ঘোষণা করা হয়েছে রেল বাজেটে। রেল স্টেশনগুলিতে ওয়াই-ফাই-এর সুযোগ, যাত্রীদের জন্য হেল্পলাইন (১৩৮), নিরাপত্তা সংক্রান্ত হেল্পলাইন (১৮২), অসংরক্ষিতটিকিট বুকিং-এর ক্ষেত্রে কাগজের সাশ্রয়, ই-ক্যাটারিং, মোবাইলে নিরাপত্তা হেল্পলাইন, মহিলাদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার লক্ষ্যে সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা – এ সমস্ত কিছুই এখন চালু হয়েছে বা ক্রমান্বয়ে চালু করার কাজ চলছে। দেশের অর্থনীতির একটি চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে ভারতীয় রেল। এর মাধ্যমে সংযুক্ত হয় দেশের বিভিন্ন খনি ও উপকূল এলাকা। মুম্বাই ও আমেদাবাদের মধ্যে উচ্চগতির বুলেট ট্রেন এখন নিছক ধারণা থেকে বাস্তবের মাটিতে। নয়াদিল্লি-চেন্নাই রুটে এই ট্রেন চালানোর বিষয়টি বর্তমানে সমীক্ষার পর্যায়ে।
১,৯৮৩ কিলোমিটার রেলপথে ট্রেন চলাচল যেমন শুরু হয়েছে, তেমনই ১,৩৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রেললাইন বরাবর বৈদ্যুতিকরণের কাজও সম্পূর্ণ হয়েছে। তীর্থযাত্রীদের জন্য চালু হয়েছে ছ’টি নতুন ট্রেন এবং কাটরা লাইনটিকে খুলে দেওয়া হয়েছে বৈষ্ণোদেবী দর্শনে যাওয়ার জন্য।
সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে যে প্রকল্পগুলির কাজ এতদিন বাধাপ্রাপ্ত অবস্থায় ছিল, সেগুলির জট কাটিয়ে নতুন করে আবার রূপায়ণের দিকে দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদারির ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলি বহুদিন ধরেই অমীমাংসিত ছিল সেগুলির ক্ষেত্রে সমস্ত বিতর্ক মিটিয়ে ফেলে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। সম্ভাবনাপূর্ণ নয়, এ ধরনের রেল প্রকল্পগুলিকে বাতিল করা হয়েছে। ভারতের সীমান্ত ও উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলিকে যুক্ত করতে ‘ভারতমালা’ নামে এক রূপান্তরমুখী প্রকল্পের কাজও শুরু হয়েছে সড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে। ৬২টি টোল প্লাজায় টোল আদায় ব্যবস্থাকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে যাত্রীদের স্বার্থে। মহাসড়ক প্রকল্পগুলির নির্মাণে বরাত দেওয়ার কাজও বৃদ্ধি পেয়েছে ১২০ শতাংশ হারে। ‘প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা’র আওতায় সড়ক নির্মাণের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে।
এনডিএ সরকারের শাসনকালে ভারতের জাহাজ চলাচল ক্ষেত্রটিও দ্রুত প্রসার লাভ করছে। ‘সাগরমালা’ প্রকল্পের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে উপকূলবর্তী অঞ্চলের অধিবাসীদের উন্নয়নের স্বার্থে। বন্দরগুলির মাধ্যমে পণ্য চলাচলের হারও বৃদ্ধি পেয়েছে দ্বিগুণ। বন্দরগুলির ক্ষমতার উন্নয়নের ক্ষেত্রে যুক্ত হয়েছে ৭১ এমটিপিএ, যা একটি রেকর্ড বিশেষ। ছাবাহার বন্দরটির কৌশলগত উন্নয়নে মউ স্বাক্ষরিত হয়েছে ইরানের সঙ্গে। এর মাধ্যমে আফগানিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলির সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও নিবিড় হয়ে উঠবে। গঙ্গানদী বরাবর জল পরিবহণ এবং অন্তর্দেশীয় জলপথ উন্নয়নে সূচনা হয়েছে ‘জল মার্গ বিকাশ প্রকল্প’টির।
অসামরিক বিমান পরিবহণ ক্ষেত্রটিও কোনদিক থেকে পিছিয়ে নেই। দ্রুততার সঙ্গে অগ্রগতির কাজ চলছে এই ক্ষেত্রটিতেও। মোহালি, তিরুপতি এবং খাজুরাহোতে নতুন টার্মিনাল ভবনের নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ প্রায়। কারাপ্পা এবং বিকানিরে টার্মিনাল নির্মাণের কাজ ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ। হুবলি, বেলগাঁও, কিষাণগড়, তেজু এবং ঝাড়সুগুড়া বিমানবন্দরগুলিকে উন্নীত করার কাজ চলছে। এর ফলে, আঞ্চলিক ক্ষেত্রে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত হয়ে উঠবে। ভারতের বিমান পরিবহণ ব্যবস্থার নিরাপত্তা সংক্রান্ত অডিটটিকে এফএএ রেটের মাধ্যমে উন্নীত করা হয়েছে। এর ফলে, বিমান চলাচলের সংখ্যাও আশানুরূপভাবে বৃদ্ধি পেতে চলেছে।