প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর পৌরোহিত্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে আত্মনির্ভর ভারতের জন্য দেশের ১০টি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে উৎপাদন ক্ষমতা ও রপ্তানি বাড়ানোর জন্য উৎপাদন–ভিত্তিক উৎসাহ ব্যবস্থা (প্রোডাকশন লিঙ্কড ইনসেনটিভ – পিএলআই) প্রকল্পকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। নীতি আয়োগ এবং ভারী শিল্প দপ্তর অ্যাডভান্সড কেমিস্ট্রি সেল ব্যাটারি তৈরিতে, বৈদ্যুতিন ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক বৈদ্যুতিন ও প্রযুক্তিগত সামগ্রী তৈরিতে, ভারী শিল্প দপ্তর অটোমোবাইল এবং স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতি তৈরিতে, ফার্মাসিউটিক্যালস দপ্তর বিভিন্ন ওষুধ তৈরিতে, টেলিকম দপ্তর টেলিকম এবং নেটওয়ার্কিং–এর সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী উৎপাদনে, বস্ত্র মন্ত্রক এমএমএফ এবং কারিগরি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত বস্ত্র সহ বিভিন্ন বস্ত্রসামগ্রী উৎপাদনে, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প মন্ত্রক খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনে, নতুন ও পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি মন্ত্রক উচ্চক্ষমতাশীল সৌর ফটোভোল্টিক মডিউল তৈরিতে, শিল্প ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য উৎসাহ দপ্তর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র এবং এলইডি বাল্ব তৈরিতে, ইস্পাত মন্ত্রক বিশেষ ধরনের ইস্পাত তৈরিতে উৎসাহ দেবে। এর জন্য পাঁচ বছর সময়ে মোট ১,৪৫,৯৮০ কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে।
পিআইএল প্রকল্পগুলি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক ও দপ্তরগুলি রূপায়িত করবে এবং এগুলি নির্ধারিত আর্থিক পরিমাণের মধ্যেই বাস্তবায়িত হবে। চূড়ান্ত প্রস্তাবগুলি আর্থিক ব্যয় সংক্রান্ত কমিটিকে জানাতে হবে এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা সেগুলিকে অনুমোদন করবে। যদি দেখা যায় একটি পিএলআই প্রকল্পের অর্থ বাঁচানো গেছে, তাহলে সেটি বিশেষ ক্ষমতাশীল সচিব গোষ্ঠী অনুমতি সাপেক্ষে অন্য ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারে। তবে, যে কোনও নতুন ক্ষেত্রের বিষয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার থেকে নতুন করে অনুমোদনের প্রয়োজন রয়েছে।
উপরে উল্লিখিত ১০টি মূল ক্ষেত্রে এই পিএলআই প্রকল্পগুলি ভারতীয় উৎপাদকদের আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণে যোগ্য করে তুলতে পারবে। এ ছাড়াও এই ক্ষেত্রগুলিতে বিনিয়োগ আকর্ষণ করা, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা, রপ্তানি বাড়ানো এবং আন্তর্জাতিক স্তরে সরবরাহ শৃঙ্খলে যুক্ত হওয়া নিশ্চিত করা হবে।
অ্যাডভান্সড কেমিস্ট্রি সেল (এসিসি) ব্যাটারির একবিংশ শতাব্দীতে যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। বৈদ্যুতিন বিভিন্ন সামগ্রী, বৈদ্যুতিক যানবাহন এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে এই ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়। এসিসি ব্যাটারির জন্য পিএলআই প্রকল্পটি দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলিকে দেশে উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তুলতে উৎসাহ যোগাবে।
২০২৫ সালের মধ্যে ভারতে ১ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলারের সমতুল ডিজিটাল অর্থনীতি গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে। সরকার এর জন্য ডেটা লোকালাইজেশন, ইন্টারনেটের ব্যবহার, স্মার্ট সিটি এবং ডিজিটাল ইন্ডিয়ার মতো নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এর ফলে, বৈদ্যুতিন সামগ্রীর চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। এই পিএলআই প্রকল্পে ভারতে বৈদ্যুতিন সামগ্রী উৎপাদনও এর ফলে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অটোমোটিভ শিল্প ভারতের অর্থনীতির ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র । পিএলআই প্রকল্পের আওতায় এই শিল্পকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তোলা হবে যার ফলে ভারতীয় অটোমোটিভ ক্ষেত্র আন্তর্জাতিক স্তরে তার উপস্থিতি বাড়াতে পারবে।
বিশ্বে ভারতীয় ওষুধ শিল্প আয়তনের দিক থেকে তৃতীয় বৃহত্তম এবং আর্থিক দিক থেকে ১৪তম স্থান অধিকার করেছে। সারা বিশ্বে যে পরিমাণ ওষুধ রপ্তানি করা হয় তার ৩.৫ শতাংশ ওষুধ ভারত থেকে রপ্তানি হয়। এই শিল্পের উন্নয়নের জন্য এবং অনুসারী শিল্পগুলির মানোন্নয়নের জন্য পিএলআই প্রকল্পটি সাহায্য করবে।
নিরাপদ টেলিকম পরিকাঠামো তৈরিতে কৌশলগত এবং গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলি টেলিকম সংক্রান্ত সরঞ্জামের ওপর নির্ভর করে। ভারত টেলিকম এবং নেটওয়ার্ক ক্ষেত্রে এ ধরনের সরঞ্জাম তৈরির বিষয়ে উৎসাহী। পিএলআই প্রকল্পটির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি এবং দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলি এ দেশে নতুন উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তুলতে পারবে যার ফলে ভবিষ্যতে রপ্তানির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে।
ভারতীয় বস্ত্রশিল্প বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বস্ত্রশিল্প। সারা পৃথিবীতে যত বস্ত্রসামগ্রী রপ্তানি করা হয় তার ৫ শতাংশ ভারত থেকে রপ্তানি করা হয়। এমএমএফ বা ম্যান–মেড ফাইবার–এর (হাতে তৈরি সুতো) ক্ষেত্রে ভারতের পরিমাণ সবথেকে কম অথচ আন্তর্জাতিক স্তরে এর যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। পিএলআই প্রকল্পের ফলে এমএমএফ ক্ষেত্রে এবং শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহৃত কাপড়ের উৎপাদনে ভারতে বিনিয়োগের উৎসাহ দেওয়া হবে এবং এক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়বে।
খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের উন্নতি হলে কৃষকরা আরও বেশি আয় করতে পারবেন এবং খাদ্যশস্য কম নষ্ট হবে। এক্ষেত্রে পিএলআই প্রকল্পের মাধ্যমে এই শিল্পের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাওয়ায় মাঝারি এবং বড় মাপের কর্মসংস্থানের সুযোগ গড়ে উঠবে।
সোলার ফটো ভোল্টিক প্যানেল বিপুল পরিমাণে আমদানি করতে হয়। বৈদ্যুতিন ক্ষেত্রে হ্যাকিং–এর সমস্যা থাকায় কৌশলগত নিরাপত্তার বিষয়ে এক্ষেত্রে বড়সড় চ্যালেঞ্জ দেখা যায়। পিএলআই প্রকল্পের সাহায্যে সোলার ফটো ভোল্টিক মডিউল তৈরিতে দেশীয় এবং বিদেশি সংস্থাগুলিকে উৎসাহ দেওয়ার ফলে বিভিন্ন সংস্থা ভারতে এই মডিউলগুলি তৈরি করবে যার ফলে, আমদানির ওপর নির্ভরতা কমবে।
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র এবং এলইডি বাল্ব, যেগুলিকে হোয়াইট গুডস বলা হয়౼ দেশীয় বাজারে এগুলির যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। এইসব সামগ্রীকে আন্তর্জাতিক স্তরে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে পৌঁছে দেওয়ার জন্য পিএলআই প্রকল্পটি সাহায্য করবে। এর ফলে দেশে এইসব সামগ্রীর উৎপাদন বাড়বে এবং কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে ও রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে।
ইস্পাত একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প। বিশ্বে ভারত দ্বিতীয় বৃহত্তম ইস্পাত উৎপাদক রাষ্ট্র। তৈরি ইস্পাত রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারতের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। এই পিএলআই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশে ইস্পাত উৎপাদনের ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং রপ্তানির সুযোগও বাড়বে।
এগুলির পাশাপাশি, ইতিমধ্যেই বৈদ্যুতিন ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক মোবাইল ফোনের যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং বিভিন্ন বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম তৈরি, ফার্মাসিউটিক্যালস দপ্তর গুরুত্বপূর্ণ ওষুধের উৎপাদন এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ওষুধের উপাদান উৎপাদন ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি তৈরির বিষয়েও উৎপাদন–ভিত্তিক উৎসাহ প্রকল্পের ব্যবস্থা করেছে।
প্রধানমন্ত্রীর আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের পরিকল্পনার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে দক্ষ অথচ নমনীয় উৎপাদন ক্ষেত্র গড়ে তোলার বিষয়ে দেশে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। এই ধরনের সামগ্রী উৎপাদন বৃদ্ধি এবং বিদেশে রপ্তানি করলে ভারতীয় শিল্প সংস্থা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করবে। এর ফলে, উদ্ভাবনের সুযোগ তৈরি হবে। উৎপাদন সংক্রান্ত একটি ব্যবস্থা দেশ জুড়ে গড়ে উঠলে আন্তর্জাতিক সরবরাহ শৃঙ্খলে অংশগ্রহণের পাশাপাশি দেশের অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগের বিকাশ ঘটবে। এর ফলে সার্বিকভাবে দেশের অর্থনীতি উপকৃত হবে এবং প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।
পিএলই প্রকল্পের মাধ্যমে যে সব পণ্য উৎপাদনে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে, তার মধ্যে বৈদ্যুতিন এবং প্রযুক্তিগত বিভিন্ন সামগ্রী মধ্যে সেমি–কন্ডাক্টর যন্ত্রাংশ, ডিসপ্লে ব্যবহৃত সামগ্রী, ল্যাপটপ, নোটবুক, সার্ভার এবং কম্পিউটারের হার্ডওয়্যারের যন্ত্রাংশ রয়েছে। ফার্মাসিউটিক্যালস–এর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ওষুধ ছাড়াও কোষ–ভিত্তিক অথবা জিন থেরাপি চিকিৎসার সামগ্রী এবং বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ক্যাপসুল আছে। তাছাড়া বিভিন্ন ওষুধ যেগুলিকে অন্য অসুখের চিকিৎসাতেও ব্যবহার করা যায় সেগুলি উৎপাদনে উৎসাহ তৈরি হবে। টেলিকম ক্ষেত্রে ৪জি এবং ৫জি–র জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ নির্মাণ এবং বিভিন্ন ধরনের স্যুইচ, রাউটার ও ওয়্যারলেস সরঞ্জাম তৈরিতে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের ক্ষেত্রে সহজেই রান্না করা যায়, সামুদ্রিক বিভিন্ন সামগ্রী, ফলমূল, শাকসব্জি, মধু, দেশী ঘি, মোজারেলা চিজ, অর্গ্যানিক ডিম ও পোল্ট্রির মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। ইস্পাতের তৈরি সামগ্রীর ক্ষেত্রে কোটেড ইস্পাত, উচ্চ শক্তিসম্পন্ন ইস্পাত, বিভিন্ন রড এবং সঙ্কর ধাতুর বার তৈরিতে দেশে উৎসাহ সৃষ্টি হবে।