প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর পৌরোহিত্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা দ্বিতীয় পর্যায়ে ভারত কোভিড-১৯ জরুরী পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং স্বাস্থ্য প্রণালী প্রস্তুত প্যাকেজ সম্পর্কিত একটি নতুন কর্মসূচি অনুমোদন করেছে। এই কর্মসূচির জন্য ২০২১-২২ অর্থবর্ষে ২৩,১২৩ কোটি টাকার তহবিল সংস্থান করা হয়েছে। মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্তের ফলে দ্রুত রোগ প্রতিরোধ, আগাম রোগ নির্ণয় এবং পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য স্বাস্থ্য প্রণালী প্রস্তুত করার বিষয়টি আরও ত্বরান্বিত হবে। একই সঙ্গে শিশুদের পরিচর্যা ও উপযুক্ত চিকিৎসা পরিষেবার জন্য স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ব্যবস্থার মানোন্নয়নে কর্মসূচিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
কর্মসূচির দ্বিতীয় পর্যায়ে কেন্দ্রীয় এবং কেন্দ্রীয় সহায়তাপুষ্ট বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
কেন্দ্রীয় স্তরের বিষয়গুলির মধ্যে রয়েছে :
• কেন্দ্রীয় হাসপাতাল, এইমস এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের অধীন জাতীয় স্তরের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলিকে সহায়তা দেওয়া। এই প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে রয়েছে দিল্লির সফদরজং হাসপাতাল, রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতাল, চণ্ডীগড়ের জিপমার হাসপাতাল সহ প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য সুরক্ষা যোজনার আওতায় গড়ে ওঠা এইমসের ধাঁচে নতুন হাসপাতালগুলি। এই হাসপাতালগুলিতে কোভিড চিকিৎসার জন্য ৬,৬৮৮টি রোগী শয্যার ব্যবস্থা করা হবে।
• ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানকে আরও মজবুত করার জন্য জেনোম সিকোয়েন্সিং যন্ত্র সরবরাহ করা হবে। এছাড়াও সায়েন্টিফিক কন্ট্রোল রুম গড়ে তুলতে সহায়তা দেওয়া হবে।
• দেশের সমস্ত জেলা হাসপাতালে হস্পিটাল ম্যানেজমেন্ট ইনফর্মেশন সিস্টেম চালু করা হবে। বর্তমানে কেবল ৩১০টি জেলা হাসপাতালে এই ব্যবস্থা চালু রয়েছে।
• দৈনিক ৫ লক্ষ টেলি-মেডিসিন পরামর্শ দেওয়ার জন্য ই-সঞ্জিবনী টেলি-পরামর্শ প্ল্যাটফর্মের সম্প্রসারণ করা হবে। এর ফলে, দৈনিক ৫০ হাজার টেলি-মেডিসিন পরিষেবার পরিবর্তে ৫ লক্ষ পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হবে। রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলের কোভিড কেয়ার সেন্টারগুলিতে কোভিড রোগীদের টেলি-পরামর্শ দেওয়ার জন্য সবরকম সহায়তা করা হবে।
• তথ্য প্রযুক্তি ব্যবস্থার প্রয়োগ আরও বাড়াতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের সেন্ট্রাল ওয়ার রুম প্রতিষ্ঠানকে আরও মজবুত করা হবে। একই সঙ্গে দেশের কোভিড-১৯ পোর্টালের মানোন্নয়ন, ১০৭৫ কোভিড সহায়তা নম্বরের সম্প্রসারণ এবং কো-উইন প্ল্যাটফর্মের সংস্কার করা হবে।
কেন্দ্রীয় স্তরের বিষয় সমূহের আওতায় জেলা ও মহকুমা পর্যায়ের হাসপাতালগুলিকে আরও শক্তিশালী করে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। এই লক্ষ্যে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে সহায়তা দেওয়া হবে :
• দেশের ৭৩৬টি জেলার সবগুলিতেই শিশু চিকিৎসা ইউনিট গড়ে তোলা হবে। প্রতিটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে শিশু চিকিৎসা পরিষেবার জন্য উৎকর্ষ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।
• সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আইসিইউ শয্যার সংখ্যা ২০ হাজার বাড়ানো হবে। এরমধ্যে ২০ শতাংশ শয্যা শিশু চিকিৎসা পরিষেবার জন্য সুনির্দিষ্ট থাকবে।
• সামুয়াদিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হবে।
• কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলায় গ্রাম, আধা-শহর ও আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় চিকিৎসা পরিষেবায় সামঞ্জস্য নিয়ে আসা হবে। এছাড়াও দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর শহরগুলির পাশাপাশি জেলা সদর দপ্তরে প্রয়োজন সাপেক্ষে ৫০ থেকে ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল গড়ে তুলতে সাহায্য করা।
• প্রতিটি জেলায় অন্ততপক্ষে একটি হাসপাতালে মেডিক্যাল গ্যাস পাইপলাইন ব্যবস্থা সহ ১০৫০টি লিক্যুইড মেডিকেল অক্সিজেন স্টোরেজ ট্যাঙ্ক বসানো হবে।
• কোভিড মোকাবিলায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের চিকিৎসা পড়ুয়াদের পাশাপাশি চূড়ান্ত বর্ষের এমবিবিএস পড়ুয়া, বিএসসি নার্সিং এবং জিএনএম নার্সিং পড়ুয়াদের সামিল করা হবে।
• রাজ্যগুলিকে নমুনা পরীক্ষা, আক্রান্তদের খুঁজে বের করা এবং তাদের উপযুক্ত চিকিৎসা প্রদানের জন্য সাহায্য করতে কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও মোকাবিলা সম্পর্কিত জাতীয় কৌশলের আওতায় সাহায্য করা হবে।
• কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য জরুরী ওষুধপত্রের প্রয়োজনীয়তা মেটাতে এবং ওষুধপত্রের অতিরিক্ত মজুত গড়ে তুলতে জেলাগুলিকে সাহায্য।
দ্বিতীয় পর্যায়ে ভারত কোভিড-১৯ জরুরী পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং স্বাস্থ্য প্রণালী প্রস্তুত করার জন্য ২৩,১২৩ কোটি টাকা খরচ করা হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ের এই কর্মসূচি ২০২১-এর ১ জুলাই থেকে ২০২২-এর ৩১ মার্চ পর্যন্ত রূপায়িত হবে। কর্মসূচি রূপায়ণে কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিল সংস্থানের পরিমাণ হবে ১৫ হাজার কোটি টাকা এবং রাজ্যগুলির তহবিল সংস্থান দাঁড়াবে ৮ হাজার ১২৩ কোটি টাকা।
২০২১-২২ অর্থবর্ষের বাকি ৯ মাসে কেন্দ্রীয় সরকারি হাসপাতাল / এজেন্সিগুলিকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি রাজ্য / কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ এবং বর্তমান মহামারীজনিত পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে অবিলম্বে সহায়তা দেওয়ার বিষয়টিতে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে জেলা ও মহকুমা স্তরের হাসপাতালগুলিতেও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা গড়ে তোলা সুনিশ্চিত করা।
প্রেক্ষাপট :
সমগ্র দেশ যখন গত বছরের মার্চে কোভিড-১৯ মহামারীর প্রথম ঢেউয়ের মুখোমুখি হয়েছে, সেই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী কেন্দ্রীয় স্তরের একটি কর্মসূচি হিসেবে ১৫ হাজার কোটি টাকার তবহিল সংস্থান সহ ভারত কোভিড-১৯ জরুরী পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং স্বাস্থ্য প্রণালী প্রস্তুত সংক্রান্ত প্যাকেজরে কথা ঘোষণা করেন। এদিকে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি থেকে সমগ্র দেশ কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সম্মুখীন হয়েছে। কিন্তু এবার ঢেউয়ের প্রভাব গ্রামাঞ্চল, আধাশহর ও আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকাগুলিতেও পড়েছে।