প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর পৌরোহিত্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা উত্তর পূর্বাঞ্চল এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ওপর বিশেষ নজর দিয়ে কেন্দ্রীয় আর্থিক সাহায্যের প্রকল্প হিসেবে ভোজ্য তেল – পাম তেলের ওপর জাতীয় মিশন (এনএমইও-ওপি) হিসেবে পরিচিত একটি নতুন মিশন চালু করার অনুমোদন দিয়েছে। ভোজ্য তেলের জন্য আমদানির ওপর অধিক নির্ভরতা হ্রাসে, ভোজ্য তেলের দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ও পাম তেলের উৎপাদনের পরিধি বিস্তারে এই মিশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
এই প্রকল্পের জন্য ১১ হাজার ৪০ কোটি টাকার আর্থিক বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮ হাজার ৮৪৪ কোটি টাকা কেন্দ্রীয় সরকার দেবে। ২ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা রাজ্য দেবে।
এই প্রকল্পের আওতায় ২০২৫ – ২৬ সাল পর্যন্ত পাম তেল উৎপাদনের জন্য অতিরিক্ত ৬.৫ লক্ষ হেক্টর জমিকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ১০ লক্ষ হেক্টর জমি পাম তেলের উৎপাদনের আওতায় আসবে। আশা করা যাচ্ছে, ২০২৫ – ২৬ সালের মধ্যে ১১.২০ লক্ষ টন অপরিশোধিত পাম তেল উৎপাদন সম্ভব হবে এবং ২০২৯ – ৩০ সালের মধ্যে তা ২৮ লক্ষ টনে পৌঁছবে।
এই প্রকল্পে পাম তেল চাষীরা ব্যাপকভাবে উপকৃত হবেন। পাশাপাশি এই চাষে মূলধন বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে, কর্ম সংস্থান সৃষ্টি হবে, আমদানির ওপর নির্ভরতা কমবে এবং কৃষকদের আয় বৃদ্ধি করবে।
১৯৯১ – ৯২ সাল থেকে কেন্দ্রীয় সরকার তৈল বীজ এবং পাম তেল উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য একাধিক প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। ২০১৪ – ১৫ সালে যেখানে ২৭৫ লক্ষ টন তৈল বীজ উৎপাদন হতো, ২০২০ – ২১ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৩৬৫.৬৫ লক্ষ টন হয়েছে। পাম তেল উৎপাদনের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য গত বছর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অয়েল পাম্প রিসার্চ (আইআইওপিআর) প্রায় ২৮ লক্ষ হেক্টর জমিতে পাম তেল চাষের বিষয়ে একটি মূল্যায়ন প্রক্রিয়া চালায়। তাই পাম তেলের উদ্যান ও পরবর্তীতে অপরিশোধিত পাম তেল উৎপাদনে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে মাত্র ৩.৭০ লক্ষ হেক্টর জমিতে পাম তেল চাষ করা হয়। অন্যান্য তৈল বীজ ফসলের তুলনায় প্রতি হেক্টরে ১০ থেকে ৪৬ গুণ বেশি পাম তেলের বীজ উৎপাদিত হয়। সুতরাং এই চাষের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।
উপরোক্ত বিষয়গুলিকে সামনে রেখে এবং বাস্তবে আজকের দিনে প্রায় ৯৮ শতাংশ অপরিশোধিত পাম তেল আমদানি করার প্রেক্ষিতে, দেশে এখন অপরিশোধিত পাম তেল উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য এই প্রকল্প চালু করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত এই প্রকল্প বর্তমানে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা মিশন – পাম তেল কর্মসূচির আওতাভুক্ত থাকবে।
এই প্রকল্পে দুটি প্রধান বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। পাম তেল চাষীরা তাজা বীজ গুচ্ছ (এফএফবি) উৎপাদন করবে, শিল্প সংস্থাগুলি সেখান থেকে তেল নিষ্কাশন করবে। বর্তমানে এই তাজা এফএফবি’র দাম আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত পাম তেলের দামের ওঠানামার সঙ্গে যুক্ত। এই প্রথমবার কেন্দ্রীয় সরকার এফএফবি’র জন্য পাম তেল চাষীদের ফসলের দামে সুনিশ্চয়তা প্রদান করবে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত পাম তেলের মূল্য ওঠানামা থেকে কৃষকদের রক্ষা করবে এবং তাদের ন্যায্য মূল্য প্রদানে সাহায্য করবে। পয়লা নভেম্বর থেকে পরের বছরের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত পাম তেল বর্ষ হিসেবে নির্ধারিত করা হবে। এই আশ্বাস ভারতীয় পাম তেল চাষীদের আরও বর্ধিত জমিতে পাম তেল চাষের ক্ষেত্রে আস্থা বাড়িয়ে তুলবে এবং অধিক পাম তেল উৎপাদন সম্ভব হবে। কৃষকরা যাতে ফসলের সমান ন্যায্য মূল্য পান তার জন্যও কেন্দ্রীয় সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
এই প্রকল্পের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো পাম তেল চাষের জন্য আনুষাঙ্গিক সহায়তা বৃদ্ধি। পাম তেল চাষে বীজ বপণের সহায়তায় হেক্টর প্রতি ১২ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৯ হাজার টাকা করা হয়েছে। এমনকি এই চাষে রক্ষাণাবেক্ষণের ক্ষেত্রেও সহয়তা বৃদ্ধি করা হয়েছে। পুরনো পাম তেলের উদ্যান গুলিকে পুনরুজ্জীবিত করে তোলার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
দেশে পাম তেল চাষের কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জামের ঘাটতি দূর করতে সহায়তা দেওয়া হবে। দেশের অন্যান্য স্থানে ১৫ হেক্টর জমির জন্য ৮০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে। তবে, উত্তরপূর্ব ও আন্দামান অঞ্চলে ১৫ হেক্টর জমির জন্য ১ কোটি টাকা পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। এর ফলে পাম তেল চাষের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে এবং এই অঞ্চলে একাধিক শিল্প সংস্থাকে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করে তুলবে।