আমরা, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, ভূটানের প্রধানমন্ত্রী,ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী, মায়ানমার প্রজাতন্ত্রের স্টেট কাউন্সিলার, নেপালেরপ্রধানমন্ত্রী, গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী শ্রীলঙ্কা প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপ্রধানএবং থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ব্রিকস-বিমস্টেক আউটরিচ শিখর সম্মেলনউপলক্ষ্যে গোয়ায় ১৬ অক্টোবর বৈঠকে মিলিত হই।
থাইল্যান্ডের নৃপতি ভূমিবল আদুল্লদেজ-এর প্রয়াণে আমরা গভীরশোকপ্রকাশ করি। রাষ্ট্রসঙ্ঘের প্রথম মানবোন্নয়ন জীবনকৃতী সম্মানে ভূষিত করার মধ্যদিয়ে বিশ্বজোড়া উন্নয়নে তাঁর অবদানের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। থাইল্যান্ডের সরকার,রাজপরিবার এবং সেদেশের জনসাধারণের প্রতি আমাদের আন্তরিক সমবেদনা অর্পণ করা হল।
ব্রিকস ও বিমস্টেক নেতৃবৃন্দের মধ্যে শীর্ষ সম্মেলনের সুযোগ পাওয়ায়পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক নানাগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতামত বিনিময়ের যে সুযোগ করে দেবে এই শীর্ষ বৈঠক তাকে আমরাস্বাগত জানাই।
১৯৮৭-এর ব্যাঙ্কক ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত নীতিগুলির কথা স্বরণ করে আমরাবিমস্টেক-এর অভ্যন্তরে সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলি যে এই সহযোগিতা প্রত্যেকরাষ্ট্রের সার্বভৌম সমতা, আঞ্চলিক অখন্ডতা, রাজনৈতিক স্বাধীনতা একে অপরেরঅভ্যন্তরীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, শান্তিপূর্ণ সহাবস্হান এবং পারস্পরিক আস্হারওপর-ই নির্ভরশীল।
১৯৮৭ সালের ব্যাঙ্ককঘোষণাপত্রে গৃহীত নীতি ও উদ্দেশ্যগুলিকে রূপায়ণের জন্য আরও জোরদার প্রয়াস করারবিষয়ে আমরা সম্মত হই। বিমস্টেক-কে আরও বলিষ্ঠ ও কার্যকরী এবং পারস্পরিক সুবিধামূলকসহযোগিতার মাধ্যমে ইতিমধ্যেই চিহ্নিত অগ্রাধিকারমূলক ক্ষেত্রগুলিতে অর্থনৈতিক ওসামাজিক উন্নয়ন ঘটাতে বিমস্টেকের যে যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে সেকথা আমরা স্বীকার করেনিয়েছি। বিমস্টেক গোষ্ঠীকে আরও বলিষ্ঠ ও কার্যকরী এবং পরিণামমূখী করে তুলতে একযোগেকাজ করার জন্য আমরা শপথ নিয়েছি।
তৃতীয় বিমস্টেক শিখরসম্মেলনে নে পি তাউ-তে ২০১৪-র ৪ঠা মার্চ যে ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়েছিল সেকথা স্মরণকরে বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে আঞ্চলিক সহযোগিতা ও সংহতির উন্নয়নে সংগঠন হিসেবে বিমস্টেকেরদায়বদ্ধতার পুনরাবৃত্তি করে আমরা স্বীকার করি যে এই অঞ্চলে শান্তি, সম্বৃদ্ধি ওস্হিতিশীলতার প্রশ্নে বিমস্টেক-ই পারে আদর্শ মঞ্চ হিসেবে কাজ করতে।
আমাদের এই অঞ্চলেসন্ত্রাসবাদ-ই যে শান্তি ও স্হিতিশীলতার প্রতি সবথেকে বড় আশঙ্কা হয়ে রয়েছে সেকথাস্বীকার করে আমরা সবরকম আকার ও প্রকারে সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলায় আমাদের জোরালোদায়বদ্ধতার পুনরাবৃত্তি করে এই অঞ্চলে সম্প্রতি জঙ্গি হামলার বর্বর ঘটনাকে কঠোরতমভাষায় নিন্দা করি। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই শুধু যে জঙ্গি,সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ও কাঠামোকে ধ্বংস করে দেবে তাই নয়, সেইসঙ্গে যেসব রাষ্ট্রসন্ত্রাসবাদের উৎসাহ, সমর্থন ও অর্থ যোগায় ও সন্ত্রাসবাদীদের এবং ওইসব গোষ্ঠীকেআশ্রয় যোগায় আর তাদের গুন সম্পর্কে মিথ্যা অপপ্রচার করে সেইসব রাষ্ট্রকে চিহ্নিতকরা, এব্যাপারে দায়ি করা এবং তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্হা গ্রহণের ব্যবস্হা করবে।জঙ্গিদের শহীদ বলে চিহ্নিত করে গৌরবান্বিত করার কোনও অবকাশ নেই। সন্ত্রাস,হিংসাত্মক মৌলবাদ, প্রভৃতি প্রসারের মোকাবিলা ও নিবারণের আশু প্রয়োজনীয়তা আমরাস্বীকার করি। এই প্রসঙ্গে আমাদের আইন বলবৎকারী সংস্হা, গোয়েন্দা ও নিরাপত্তাসংস্হগুলির মধ্যে সহযোগিতা ও সমন্বয় বাড়ানো ক্ষেত্রেও আমাদের সংকল্পের কথাও আমারপ্রকাশ করি।
দুষ্কৃতি সংক্রান্তবিষয়ে পারস্পরিক সহায়তামূলক বিমস্টেক কনভেনশন স্বাক্ষরের বিষয়টিকে ত্বরান্বিত করাএবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস, বহুরাষ্ট্রে ছড়ানো সংগঠিত অপরাধ এবং বেআইনী মাদকপাচারের মতো ক্ষেত্রে সহযোগিতা বিষয়ক বিমস্টেক কনভেনশনটি দ্রুত অনুমোদন দেওয়ারবিষয়েও আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনেরফলে আমাদের এই গ্রহের ক্রমবর্ধমান আশঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতে এবং বিশেষকরে বঙ্গোপসাগরঅঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের জীবন ও জীবিকার দিক থেকে এই বিপদ সম্পর্কে অবহিত হওয়ারফলে আমরা পরিবেশ সংরক্ষণ ও সুরক্ষা সহযোগিতা জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।সুস্হায়ী উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্যারিসচুক্তিকে আঞ্চলিক ও জাতীয় স্তরে রূপায়ণেও আমরা গুরুত্ব দিয়েছি।
যৌথ মহড়া, আগামসর্তকতা ব্যবস্হার মাধ্যমে তথ্য ভাগ করে নেওয়া, নিবারণমূলক কর্মসূচি গ্রহণ, ত্রাণও পুনর্বাসনে যৌথ পদক্ষেপ এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির মতো নানা উপায়ের মধ্য দিয়ে বিপর্যয়ব্যবস্হাপনায় ঘনিষ্টতর সহযোগিকে আমরা উৎসাহিত করি। এই অঞ্চলে বিদ্যমান সক্ষমতারভিত্তিতে আরও সামর্থ বৃদ্ধি এবং এই ক্ষেত্রে অন্যান্য আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকঅংশিদারিত্ব গড়ে তোলার সম্ভাবনার প্রতিও আমার নজর দিই।
আঞ্চলিক অখন্ডতাবাড়ানোর ক্ষেত্রে নানা আকারের যোগাযোগের গুরুত্ব অনুধাবন করে আমরা বহুপক্ষিওপ্রকৃত যোগাযোগ (বিমান, রেল, সড়ক ও জলপথ) এগিয়ে নিয়ে যেতে আমাদের ধারাবাহিকপ্রকাশে সন্তোষ প্রকাশ করে বিমস্টেক পরিবহণ পরিকাঠামো ও লজিস্টিকস সমীক্ষায় করাসুপারিশগুলি রূপায়ণে যে অগ্রগতি ঘটেছে সেস্পর্কে আমরা সন্তোষ প্রকাশ করি এবংবিমস্টেক মোটরযান চুক্তি করা চলে কি না সে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সম্মত হই।
সুস্হায়ী কৃষি এবংখাদ্য নিরাপত্তার প্রশ্নে অঙ্গিকারের পুরনাবৃত্তি করে আমরা কৃষি, পশুপালন,উদ্যানচর্চা প্রভৃতি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানো আর সেইসঙ্গে উৎপাদনশীলতা ওকৃষিপণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধিতে প্রয়াস নেবার ব্যাপারে সম্মত হই।
বিশ্বের ৩০ শতাংশেরওবেশি মৎস্যজীবির বসবাস এই বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে আর এ বিষয়ে সচেতনতার প্রসঙ্গে আমরা এওস্বীকার করি যে এই অঞ্চলে মৎস্যচাষের সুস্হায়ী উন্নয়ন খাদ্য নিরাপত্তা ও আমাদের এইঅঞ্চলভুক্ত দেশগুলির জনসাধারণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের প্রতি উপযুক্ত অবদানরাখতে পারবে এবং সেই অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে আমরা সম্মত হই।এই প্রসঙ্গে আমাদের অঞ্চলে সমুদ্রজাত সামগ্রীর উন্নয়নের বিরাট সম্ভাবনার কথাস্বীকার করে অন্তর্দেশীয় ও উপকূল অঞ্চলে অ্যাকোয়া কালচার, সমূদ্রগর্ভে খনিজঅনুসন্ধান, উপকূলভিত্তিক জাহাজ পরিবহণ, ইকো ট্যুরিজম, পুনর্নবিকরণযোগ্যসমুদ্রশক্তির বিকাশ প্রভৃতি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর উপায় খুঁজতেও আমরা সম্মতহয়েছি।
বিমস্টেক সদস্যরাষ্ট্রগুলির মধ্যে শক্তিক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়কে আমরা স্বাগত জানাই এবংগ্রীড আন্তর্সংযুক্তির জন্য বিমস্টেক সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরের বিষয়টিকে ত্বরান্বিতকরারও সিদ্ধান্ত নিই। শক্তিক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনারচনায় আমরা সম্মত হয়েছি।
বিমস্টেক মুক্তবানিজ্য অঞ্চল-এর বিষয়টির আশু সমাধান, বানিজ্য আলোচনামূলক কমিটি ওকর্মীগোষ্ঠীগুলিকে সংশ্লিষ্ট চুক্তিগুলি চুড়ান্ত করার পাশাপাশি বানিজ্যিকসহযোগিতা বাড়ানোর জন্য আমরা সুষ্পষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণে সহমত হয়েছি।
উন্নয়ন, প্রযুক্তিরসুযোগ ও তার ব্যবহার এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব উপলব্ধি করে আমরা শ্রীলঙ্কায়বিমস্টের প্রযুক্তিকেন্দ্র গড়ার জন্য সমঝোতাপত্র দ্রুত চুড়ান্ত করারও নির্দেশদিয়েছি।
জনস্বাস্হ্যসংক্রান্তক্ষেত্রগুলিত সহযোগিতা ধারাবাহিকভাবে বজায় রাখতে এবং বিমস্টেকের মাধ্যমে সনাতনচিকিৎসায় সমন্বয় ঘটানোর লক্ষ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির ব্যবস্হা নেওয়া হয়েছে।
আমাদের এই অঞ্চলেরসভ্যতা, ঐতিহাসিক ও সাস্কৃতিক সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে পর্যটন উন্নয়নের প্রভূতসম্ভাবনার কথা মেনে নিয়ে ও আন্ত-বিমস্টেক পর্যটন উন্নয়নে আমাদের নিবিড় আগ্রহেরবিবেচনায় এই অঞ্চলে বৌদ্ধ পর্যটন সার্কিট ও মন্দির পর্যটন সার্কিট গড়ে তোলায় আমরাউৎসাহ দিচ্ছি। প্রসঙ্গত আমরা ভূটানে বিমস্টেক সাংস্কৃতিক শিল্প কমিশন ওঅবর্জাভেটরি গড়ে তোলার বিষয়টি ত্বরান্বিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সংস্কৃতি সংক্রান্তশিল্পের ক্ষেত্রে এগুলি তথ্য যোগাবে।
বিমস্টেক দারিদ্রদূরীকরণ সংক্রান্ত্র পরিকল্পনা ২০১২ জানুয়ারিতে নেপালে বিমস্টেক দারিদ্র দূরীকরণসংক্রান্ত্র মন্ত্রিপর্যাযের দ্বিতীয় সম্মেলেন গৃহীত হয়েছিল আর ২০১৪ মার্চে মায়ানমারেতৃতীয় বিমস্টেক শীর্ষ সম্মেলনে তা গৃহীত হয়। ঢাকায় বিমস্টেক স্হায়ী সচিবালয়টি ২০১৪সেপ্টেম্বর মাসে চালু হয়েছে এবং এটি চালু করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে সরকারেরঅবদানেরও আমরা প্রশংসা করি। ২০১৭ সালে বিমস্টেক প্রতিষ্ঠার বিংশতিতম বার্ষিকীউপলক্ষে বিমস্টেক সচিবালয়কে এটি পালনে উপযুক্ত ব্যবস্হা গ্রহনে নির্দেশ দেওয়াহয়েছে।
আমরা বাংলাদেশ,ভূটান, মায়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডের নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রীনরেন্দ্র মোদী ব্রিকস- বিমস্টেক আউটরিচ শীর্ষ বৈঠকে বিমস্টেক নেতৃবৃন্দকে আমন্ত্রণজানানোয় এবং এই শিখর সম্মেলন চলাকালীন উষ্ণ আতিথেয়তা ও অসাধারণ ব্যবস্হাপনার জন্যতাঁকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই।
নেপালে ২০১৭ সালেচতুর্থ বিমস্টেক শিখর সম্মেলনে আবার মিলিত হবার আশা রইলো।