Mann Ki Baat: PM Modi speaks about the tradition of storytelling
The agriculture sector of the country, our farmers, our villages, is the foundation of self-reliant India: PM Modi during Mann Ki Baat
In today's date, the more modern methods we apply to agriculture, the more the sector will flourish: Prime Minister during Mann Ki Baat
I bow to Shaheed Veer Bhagat Singh, an icon of courage and valour among all the countrymen: PM Modi
Mann Ki Baat: PM Modi remembers greats like Mahatma Gandhi, Jayprakash Narayan, Nanaji Deshmukh
Rajmata Vijayaraje Scindia dedicated her entire life to the service of the people: PM Modi during Mann Ki Baat
Wear masks properly, maintain social distancing to combat Coronavirus: PM Modi

আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। করোনার এই সময়ে, গোটা পৃথিবীতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। আজ, একদিকে যখন এই সঙ্কটকালীন সময় পরস্পরের মধ্যে দুই গজের দূরত্ব বজায় রাখতে বাধ্য করছে, তখন অন্যদিকে এই সময়ই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন এবং তাদের মানসিক দিক থেকে কাছে আনার কাজটিও করেছে। কিন্তু এই দীর্ঘ সময় ধরে, কিভাবে একসঙ্গে থাকছেন, কীভাবে প্রতিটি মুহূর্তকে আনন্দে ভরিয়ে তুলছেন, সুখী থাকছেন? অনেক পরিবারেই সমস্যা দেখা গেছে। যা আমাদের ঐতিহ্য ছিল, যে পারিবারিক সংস্কার দ্বারা আমরা চালিত হয়ে এসেছি এতকাল, তার কিছুটা অভাব অনুভূত হয়েছে।এমন অনেক পরিবার রয়েছে যেখানে এই সংস্কারগুলো সব নষ্ট হয়ে গেছে, এবং এর কারণে, এই সঙ্কটের সময়কালে একসঙ্গে বাস করা একটু মুশকিল হয়েছে। কিন্তু তার মধ্যেও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কী ছিল জানেন? প্রতিটি পরিবারে কোনো না কোনও প্রবীণ ব্যক্তি, পরিবারের পুরোনো গল্প শোনান এবং অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে নতুন অনুপ্রেরণা, নতুন শক্তি যোগান। আমরা অবশ্যই উপলব্ধি করেছি, যে আমাদের পিতৃপুরুষেরা যে রীতিগুলো তৈরী করেছিলেন তা আজও কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন যখন সেই রীতিগুলো মানা হয়না তখন আমরা সেগুলোর কতটা অভাব বোধ করি। আমি যেমন বলছিলাম, তেমন একটি রীতি হলো গল্প বলা। বন্ধুরা, গল্প বলার ইতিহাস মানব সভ্যতার মতোই পুরানো। ‘হ্যোয়ার দেয়ার ইজ অ্যা সোল, দেয়ার ইজ অ্যা স্টোরি’౼ মানুষের মধ্যে যে সৃজনশীল এবং সংবেদনশীল দিক আছে গল্প তাকেই তুলে ধরে। গল্পের মধ্যে যে কি শক্তি আছে তা সবথেকে বেশি অনুভূত হয় যখন একজন মা তার ছোট বাচ্চাকে ঘুম পড়ানোর বা তাকে খাওয়ানোর সময় গল্প বলেন। আমি আমার জীবনে দীর্ঘদিন ধরে একজন পরিব্রাজক হিসাবে থেকেছি। ঘুরে বেড়ানোই আমার জীবন ছিল। প্রতিদিন নতুন নতুন গ্রাম, নতুন মানুষ, নতুন পরিবারের সঙ্গে আলাপ হতো। আমি যখন পরিবারগুলিতে যেতাম আমি অবশ্যই বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বলতাম, এবং বলতাম, চলো তোমরা আমাকে একটা গল্প শোনাও। কিন্তু আমি আশ্চর্য হয়ে যেতাম যখন তারা আমায় বলতেন যে আঙ্কেল আমরা আপনাকে গল্প না, একটা চুটকি শোনাবো আর আপনিও চুটকি বলবেন। আমি তখন বুঝতে পারলাম যে গল্পের সঙ্গে তাদের পরিচয়ই ঘটেনি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, তাদের জীবন চুটকিতেই আটকে গেছে। বন্ধুরা, ভারতে গল্প বলার একটি সমৃদ্ধ ঐতিহ্য আছে। আমরা গর্বিত যে আমরা সেই দেশের বাসিন্দা যেখানে হিতোপদেশ এবং পঞ্চতন্ত্রের ঐতিহ্য রয়েছে। যেখানে, গল্পে পশুপাখি ও পরীদের একটি কাল্পনিক জগৎ তৈরী করা হয় যার মাধ্যমে আমরা বিবেক ও বুদ্ধিমত্তার পাঠ নিতে পারি খুব সহজেই। আমাদের এখানে গল্প বলার একটা সুপ্রাচীন পরম্পরা আছে। ধর্মীয় গল্প বলার এটি একটি প্রাচীন পদ্ধতি। আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরণের লোককাহিনী রয়েছে। তামিলনাড়ু এবং কেরালায় গল্প বলার একটি খুব আকর্ষণীয় পদ্ধতি রয়েছে। একে বলা হয় 'বিল্লুপাট'। এটিতে কাহিনী এবং সঙ্গীতের খুব আকর্ষণীয় মিশেল রয়েছে। ভারতে পুতুল নাচের ঐতিহ্যও রয়েছে। আজকাল বিজ্ঞান এবং কল্পবিজ্ঞানের সঙ্গে সম্পর্কিত গল্প বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। আমি দেখেছি বেশ কিছু মানুষ গল্প বলার শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিচ্ছেন। আমি গাথাস্টোরি ডট ইন-এর মতো ওয়েবসাইট-এর খবর জানি যা অমর ব্যাস এবং অন্যান্যরা মিলে চালাচ্ছেন। অমর ব্যাস, আই আই এম আহমেদাবাদ থেকে এমবিএ করার পরে বিদেশে চলে যান, তারপর আবার দেশে ফিরে আসেন। বর্তমানে তিনি বেঙ্গালুরু-তে আছেন এবং কিছুটা অবসর সময় বার করে গল্প বলার এই আকর্ষণীয় কাজটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। এমন অনেক প্রচেষ্টা রয়েছে যা গ্রামীণ ভারতের গল্পগুলিকে জনপ্রিয় করে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা নিচ্ছে। বৈশালী ব্যবহারে দেশপাণ্ডের মতো অনেক মানুষ আছেন যারা মারাঠি ভাষায় এটিকে জনপ্রিয় করছেন। চেন্নাইয়ের শ্রীবিদ্যা বির রাঘাভনও আমাদের সংস্কৃতি সম্পর্কিত গল্পের প্রচার ও প্রসারে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। তেমনি কথালয় এবং দ্য ইন্ডিয়ান স্টোরি টেলিং নেটওয়ার্ক নামের দুটি ওয়েবসাইটও এই ক্ষেত্রে দুর্দান্ত কাজ করছে। গীতা রমানুজন কথালয় ডট ওআরজিতে গল্পগুলোকে একত্রিত করেছেন, তেমনি দ্য ইন্ডিয়ান স্টোরি টেলিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমেও বিভিন্ন শহরের গল্পকারদের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করা হচ্ছে। বেঙ্গালুরুতে একজন বিক্রম শ্রীধর আছেন যিনি বাপু সম্পর্কিত গল্পগুলি নিয়ে খুব উৎসাহী। আরও অনেক লোক অবশ্যই কাজ করছেন এই ক্ষেত্রে – আপনারা অবশ্যই তাদের সম্পর্কে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন। আজ আমাদের সঙ্গে বেঙ্গালুরু স্টোরি টেলিং সোসাইটির এক বোন অপর্ণা আথ্রেয়া এবং অন্যান্যরা আছেন। আসুন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলি এবং তাঁদের অভিজ্ঞতাগুলি জানি।

প্রধানমন্ত্রী: – হ্যালো

অপর্ণা: – নমস্কর শ্রদ্ধেয় প্রধানমন্ত্রীজী | আপনি কেমন আছেন?

প্রধানমন্ত্রী: – আমি ভাল আছি। কেমন আছেন অপর্ণাজী?

অপর্ণা: খুব ভালো আছি স্যার। সর্বপ্রথমে আমি ব্যাঙ্গালোর স্টোরিটেলিং সোসাইটির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ দিতে চাই কারণ আপনি আমাদের মত শিল্পীদের এই মঞ্চে আহ্বান জানিয়েছেন এবং বার্তালাপ করছেন।

প্রধানমন্ত্রী: আর আমি শুনলাম আজ বোধহয় আপনার পুরো টিম আপনার সঙ্গে রয়েছে।

অপর্ণা: হ্যাঁ… একদম। একদম স্যার।

প্রধানমন্ত্রী: তো খুব ভালো হয় যদি আপনি আপনার টিমের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। তা হলে 'মন কি বাত' এর শ্রোতারা আপনাদের এই এত বড় অভিযানের সঙ্গে পরিচিত হতে পারবে।

অপর্ণা: স্যার। আমি অপর্ণা আথ্রেয়া, আমি দুই সন্তানের মা, ভারতীয় বায়ুসেনার একজন অফিসারের স্ত্রী, এবং একজন প্যাশোনেট স্টোরিটেলার। গল্প বলা শুরু হয়েছিল ১৫ বছর আগে যখন আমি সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতাম। সেই সময় যখন আমি সিএসআর প্রকল্পে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করতে গিয়েছিলাম তখন হাজার হাজার বাচ্চাদের গল্পের মাধ্যমে শিক্ষাদানের সুযোগ পেয়েছিলাম এবং যে গল্প আমি ওদের শুনিয়েছিলাম সেটি আমি আমার ঠাকুমার থেকে শুনেছিলাম। কিন্তু সেই গল্প শোনার সময় বাচ্চাদের মধ্যে যে আনন্দ আমি দেখেছিলাম, কী বলব আপনাকে যে কত হাসি ছিল, কত আনন্দ ছিল। ওই সময়েই আমি স্থির করে নিয়েছিলাম যে, গল্প বলা আমার জীবনের একটি লক্ষ্য হবে স্যার।

প্রধানমন্ত্রী: আপনার এই টিমে ওখানে আর কারা রয়েছেন?

অপর্ণা: আমার সাথে আছে শৈলজা সম্পত।

শৈলজা: নমস্কার স্যার।

প্রধানমন্ত্রী: নমস্কার।

শৈলজা: আমি শৈলজা সম্পত কথা বলছি। আমি প্রথমে শিক্ষিকা ছিলাম। তারপরে যখন আমার সন্তানেরা বড় হয়ে যায় তখন আমি থিয়েটারে কাজ করা শুরু করি এবং শেষ পর্যন্ত গল্প বলার মধ্যেই সবথেকে বেশি তৃপ্তি খুঁজে পাই।

প্রধানমন্ত্রী: ধন্যবাদ।

শৈলজা: আমার সাথে সৌম্যা আছে।

সৌম্যা: নমস্কার স্যার।

প্রধানমন্ত্রী: নমস্কার ।

সৌম্যা: আমি হলাম সৌম্যা শ্রীনিবাসন। আমি একজন সাইকোলজিস্ট। যখন আমি বাচ্চা এবং বয়স্ক মানুষের সাথে কাজ করি , তখন গল্পের মাধ্যমে মানুষের নবরসকে জাগানোর চেষ্টা করি এবং তার সঙ্গে আলোচনাও করি। আমার লক্ষ্য হল – গল্প বলার নতুন নিয়মে মনের কষ্ট দূর করা।

অপর্ণা: নমস্কার স্যার।

প্রধানমন্ত্রী: নমস্কার ।

অপর্ণা: আমার নাম অপর্ণা জয়শঙ্কর। এমনিতে আমি সৌভাগ্যবতী কারণ আমি আমার দাদু,দিদিমা এবং ঠাকুমার সাথে এই দেশের বিভিন্ন জায়গায় বড় হয়েছি, সেই কারণে প্রতি রাতে রামায়ণ, পুরাণ এবং গীতার বিভিন্ন কাহিনী উত্তরাধিকার সূত্রে শুনে এসেছি এবং ব্যাঙ্গালোর স্টোরি টেলিং স্যোসাইটির মত একটি সংস্থা যখন আছে, তখন আমাকে গল্প বলিয়ে তো হতেই হত। আমার সঙ্গে রয়েছে আমার সহকারি লাবণ্য প্রসাদ।

প্রধানমন্ত্রী: লাবণ্য জী নমস্কার।

লাবণ্য: নমস্কার স্যার। আমি ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার থেকে প্রফেশনাল স্টোরিটেলারে পরিবর্তিত হয়েছি । ঠাকুরদার কাছ থেকে গল্প শুনে আমি বড় হয়েছি। আমি প্রবীণ নাগরিকদের সঙ্গেই কাজ করি। আমার একটি বিশেষ প্রজেক্টের নাম 'রুটস', যেখানে আমি প্রবীণ ব্যক্তিদের নিজেদের জীবন কাহিনী লিপিবদ্ধ করতে সাহায্য করি তাদের পরিবারের জন্য।

প্রধানমন্ত্রী : লাবণ্য জি আপনাকে অনেক শুভেচ্ছা জানাই। যেরকম আপনি বললেন, আমিও একবার মন কি বাতে সকলকে বলেছিলাম তারা যেন নিজেদের পরিবারের দাদু-দিদিমা, ঠাকুরদা-ঠাকুরমার শৈশবের গল্প জানতে চায়। এবং সেগুলিকে যেন টেপ করে নেয়, রেকর্ড করে নেয়। এটি খুবই কার্যকরী হবে। তবে আমার খুব ভালো লাগলো যে, আপনারা সকলে নিজের যা পরিচয় দিলেন, তার মধ্যেও আপনাদের শিল্প, আপনাদের কম্যুনিকেশন স্কিল প্রকাশ পেল এবং খুব অল্প কথায়, দারুণ ভাবে, আপনারা নিজেদের পরিচয় দিয়েছেন। সেজন্যও আমি আপনাদের অভিনন্দন জানাই।

লাবণ্য : ধন্যবাদ স্যার। ধন্যবাদ।

এখন আমাদের 'মন কি বাতের' যারা শ্রোতা, তারাও নিশ্চয়ই গল্প শুনতে চাইবেন? আমি কি আপনাদের অনুরোধ করতে পারি দু-একটা গল্প শোনানোর জন্য?

সমবেত কণ্ঠে : হ্যাঁ অবশ্যই। এ তো আমাদের সৌভাগ্য!

"আসুন, আসুন আমরা একজন রাজার গল্প শুনি। তাঁর নাম ছিল কৃষ্ণদেব রায় এবং তাঁর রাজ্যের নাম ছিল বিজয়নগর। এখন রাজা ছিলেন অত্যন্ত গুণবান । যদি তাঁর কোনো দোষের কথা বলতেই হয়, তাহলে সেটি ছিল অত্যধিক ভালোবাসা। প্রথমতঃ নিজের মন্ত্রী তেনালি রামের প্রতি এবং দ্বিতীয়তঃ, ভোজনের প্রতি। রাজামশাই প্রতিদিন মধ্যাহ্নভোজনে খুব আশা নিয়ে বসতেন এই ভেবে যে আজ নিশ্চয়ই ভালো কিছু তৈরি হয়েছে, আর প্রতিদিনই তাঁর বাবুর্চি তাঁকে সেই একঘেয়ে সব্জি খাওয়াত – ঝিঙে, লাউ, কুমড়ো, চালকুমড়ো …উফফ! এমনই একদিন খাওয়ার সময় রাজামশাই রাগ করে থালা ছুঁড়ে ফেলে দিলেন এবং বাবুর্চিকে আদেশ দিলেন, "হয় কাল অন্য কোন সুস্বাদু তরকারি বানাবে না হলে কাল আমি তোমায় শুলে চড়াবো।" বেচারা বাবুর্চি ভয় পেয়ে গেল। এখন নতুন সবজির জন্য সে কোথায় যাবে! তখন বাবুর্চি এক দৌড়ে সোজা তেনালী রামের কাছে গেল এবং তাঁকে পুরো ঘটনা বলল। শুনে তেনালী রাম বাবুর্চিকে উপায় বলে দিলেন। পরদিন দুপুরে রাজামশাই খেতে এলেন এবং বাবুর্চিকে ডাকলেন, "আজ নতুন সুস্বাদু কিছু তৈরি হয়েছে নাকি আমি শুল প্রস্তুত করব?" ভীত বাবুর্চি দ্রুত থালা সাজিয়ে দিলো আর রাজার জন্য গরম গরম খাবার পরিবেশন করলো। থালায় নতুন সবজি ছিল। রাজা উৎসাহিত হলেন এবং একটু সবজি চেখে দেখলেন। আরে বাহ! কি চমৎকার সবজি! না ঝিঙের মত পানসে, না কুমড়োর মত মিষ্টি! বাবুর্চি যে যে মসলা ভেজে-বেটে দিয়েছিল, তার সবটাই খুব সুন্দর ভাবে মিশে ছিল। আঙ্গুল চাটতে চাটতে তৃপ্ত রাজা বাবুর্চিকে ডাকলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন, "এটা কোন সবজি? এর নাম কী?" যেমন তাকে শেখানো হয়েছিল বাবুর্চি তেমনি উত্তর দিল, "মহারাজ এটি মুকুটধারী বেগুন। প্রভু, ঠিক আপনার মতই এটিও সবজিদের রাজা, আর এ কারণেই বাকি সবজিরা বেগুনকে মুকুট পরিয়েছে।" রাজা খুশী হলেন এবং ঘোষণা করলেন, "আজ থেকে আমি এই মুকুটধারী বেগুনই খাব। আর শুধু আমি নই, আমার রাজ্যেও শুধু বেগুনই রান্না হবে, আর কোন সবজি রান্না হবে না।" রাজা এবং প্রজা উভয়েই খুশি ছিলেন। মানে প্রথম প্রথম তো সবাই খুশি ছিলেন এই ভেবে যে একটা নতুন সবজি পাওয়া গেছে। কিন্তু যত দিন যেতে লাগলো সেই খুশির সুর একটু কমতে লাগলো। এক বাড়িতে বেগুন ভর্তা তো আরেক বাড়িতে বেগুন ভাজা। এক জায়গায় বেগুনের সম্বর তো আরেক জায়গায় বেগুন ভাতে। বেচারা একই বেগুন আর কত রূপ ধারণ করতে পারে! ধীরে ধীরে রাজাও বিরক্ত হয়ে গেলেন। প্রতিদিন সেই এক বেগুন! আর একদিন এমন এল যে রাজা বাবুর্চিকে ডেকে খুব ধমক দিলেন, "তোমাকে কে বলেছে যে বেগুনের মাথায় মুকুট আছে? এই রাজ্যে এখন থেকে কেউ বেগুন খাবেনা। কাল থেকে অন্য যে কোন সবজি রান্না করবে কিন্তু বেগুন রান্না করবে না।" "যথা আজ্ঞা, মহারাজ" এই বলে বাবুর্চি সোজা গেল তেনালী রামের কাছে। তেনালী রামার পায়ে পড়ে তাঁকে বলল, "মন্ত্রী মশাই, ধন্যবাদ! আপনি আমার প্রাণ বাঁচিয়েছেন। আপনার পরামর্শের জন্যই এখন আমি যেকোনো সবজিই মহারাজকে খাওয়াতে পারবো।" তেনালি রাম হেসে বললেন, "সে কিসের মন্ত্রী, যে রাজাকে খুশি রাখতে পারেনা!" আর এভাবেই রাজা কৃষ্ণদেব রায় আর মন্ত্রী তেনালী রামের কাহিনী তৈরি হতে থেকেছে এবং মানুষ শুনতে থেকেছেন। ধন্যবাদ।

প্রধানমন্ত্রী: আপনার কথায় এতটা চমৎকার বাচিকধারা ছিল, এতটা সুক্ষ্ণভাবে আপনি বিষয়টাকে ধরেছেন যে আমার মনে হয় বাচ্চা, বড় যেই শুনবে অনেক কিছুই মনে রাখতে পারবে। অত্যন্ত চমৎকার ভঙ্গিতে আপনি বলেছেন আর একটা বিশেষ কোইন্সিডেন্স হল, দেশে পোষণ মাস চলছে, আর আপনার কথা খাওয়া-দাওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। আর আমি অবশ্যই আপনার ও আপনাদের মত অনেক স্টোরিটেলার যাঁরা আছেন, তাঁদের একটা বিষয় বলব। আমাদের দেশের নবীন প্রজন্মকে কীভাবে আমাদের মহাপুরুষ, মহীয়সী মা বোনদের সম্পর্কে অবহিত করা যায়, গল্পের মাধ্যমে কীভাবে তাদের সাথে যুক্ত করা যায়, আমরা গল্প ও গল্প বলাকে কীভাবে আরো বেশি প্রচার করতে পারি, জনপ্রিয় করতে পারি তা আমাদের ভাবতে হবে। আর প্রতিটি ঘরে ভালো গল্প বলা, ভালো গল্প বাচ্চাদের শোনানো এটি জনজীবনের খুব বড় সম্পদ। এই পরিবেশ কিভাবে তৈরি করা যায় সে লক্ষ্যে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে মিলে কাজ করতে হবে। আমার খুব ভালো লাগলো আপনাদের সঙ্গে কথা বলে আর আমি আপনাদের সবাইকে অনেক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।ধন্যবাদ।

সমবেত কণ্ঠ: ধন্যবাদ স্যার।

গল্পের মাধ্যমে সংস্কারের বহতা নদীকে প্রবহমান রাখা এই বোনেদের কথা আমরা শুনলাম। আমি যখন ওঁদের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলাম তা এক দীর্ঘ বাক্যালাপ হয়েছিল। আমার মনে হল "মন কি বাত"-এর তো সময় সীমিত, তাই তাঁদের সঙ্গে সম্পূর্ণ কথোপকথন আমি নরেন্দ্র মোদি অ্যাপে আপলোড করব। সম্পুর্ণটা আপনারা অবশ্যই শুনবেন। এখন "মন কি বাত"-এ তো তার খুব ছোট্ট একটা অংশ আমি আপনাদের সামনে পেশ করলাম। আমি অবশ্যই আপনাদের কাছে অনুরোধ করবো পরিবারের সদস্যরা একজোট হলে অবশ্যই গল্প বলার জন্য কিছুটা সময় বার করুন। আর এটাও করতে পারেন যে পরিবারের প্রতিটি সদস্য প্রত্যেক সপ্তাহের জন্য একটি বিষয় স্থির করুন, যেমন ধরুন – করুণা, সংবেদনশীলতা, পরাক্রম, ত্যাগ, শৌর্য – যেকোনো একটি আবেগ। এবার পরিবারের সব সদস্য ওই সপ্তাহে সেই একটি বিষয়ের ওপরই গল্প খুঁজবেন এবং পরিবারের সবাই মিলে একেক জন একেকটি গল্প বলবেন। আপনারা দেখবেন পরিবারের মধ্যে কি বিরাট এক সম্পদের সন্ধান পাবেন! রিসার্চের কত বড় কাজ হবে, প্রত্যেকে কত আনন্দ পাবেন এবং পরিবারের মধ্যে এক নতুন প্রাণ, এক নতুন উদ্দীপনা সঞ্চার হবে। একইভাবে আমরা আরেকটি কাজও করতে পারি। যাঁরা গল্প বলেন, তাঁদের সবাইকে আমি একটা অনুরোধ করব। আমরা স্বাধীনতার ৭৫ বছর উদযাপন করতে চলেছি। আমাদের পরাধীনতার সময়কালের যা কিছু প্রেরণাদায়ক ঘটনা তাকে কি আমরা গল্পের মাধ্যমে প্রচার করতে পারি? বিশেষত, ১৮৫৭ থেকে ১৯৪৭ সালের মধ্যে ঘটে যাওয়া ছোট, বড় সকল ঘটনার সঙ্গেই গল্প বলার মাধ্যমে আমাদের বর্তমান প্রজন্মকে পরিচিত করানো যেতে পারে। আমার বিশ্বাস আপনারা অবশ্যই এই কাজ করবেন। গল্পের আকারে কোন কিছু ব্যক্ত করার এই ধারা আরো মজবুত হোক, আরো বেশি করে প্রচারিত হোক এবং আরো সাবলীল হোক। এর জন্য আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রয়াস ভীষণ জরুরী।

আমার প্রিয় দেশবাসী, গল্প শোনার এই পৃথিবী থেকে এখন আমরা সাত সমুদ্র পার করে এগিয়ে যাব, একজনের কথা শুনে নেওয়া যাক।

"নমস্কার, ভাই ও বোনেরা, আমার নাম সেদু দেম্বলে, আমি পশ্চিম আফ্রিকার একটি দেশ মালিতে থাকি। গত ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতে ভ্রমণ করাকালীন আমি ওখানকার সর্ব বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব কুম্ভ মেলায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। আমার কাছে এটা অত্যন্ত গর্বের বিষয়। এই কুম্ভ মেলায় অংশগ্রহণ করতে পেরে আমার খুব ভাল লেগেছিল এবং ভারতের সংস্কৃতি দেখে আমি অনেক কিছু শিখতে পেরেছিলাম। আমি অনুরোধ করতে চাই যে, আমাদের আবার ভারত ভ্রমণের সুযোগ দেওয়া হোক যাতে আমরা ভারতবর্ষ সম্পর্কে আরো অনেক কিছু জানতে পারি, শিখতে পারি, নমস্কার"।

প্রধানমন্ত্রী: দারুণ, না! ইনি মালি’র সেদূ দেম্বলে। মালি, ভারত থেকে অনেক দূরে পশ্চিম আফ্রিকায় অবস্থিত একটি সুবিশাল, সম্পূর্ণরূপে স্থলবেষ্টিত দেশ। সেদূ দেম্বলে, মালির একটি শহর কিতার একটি পাবলিক স্কুলের শিক্ষক। উনি বাচ্চাদের ইংরেজি, সঙ্গীত, ছবি আঁকা শেখান। কিন্তু ওঁর আরও একটি পরিচয় আছে। কিন্তু ওঁর আর একটা পরিচয় আছে। ওঁকে মালির লোকের ‘হিন্দুস্তানের বাবু’ বলে ডাকে। নিজের এই পরিচয়ের জন্য উনি গর্ব বোধ করেন। প্রত্যেক রবিবার দুপুরের পরে উনি মালিতে এক ঘন্টার একটি বেতার অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন, যার নাম ইন্ডিয়ান ফ্রিকোয়েন্সি অন বলিউড সংস। গত ২৩ বছর ধরে উনি এই অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করে আসছেন। এই অনুষ্ঠানটির মাধ্যমে উনি ফরাসি ভাষার সঙ্গে সঙ্গে মালির একটি স্থানীয় ভাষা 'বম্বারা'তেও ধারাভাষ্য করেন এবং যথেষ্ট নাটকীয় ভাবে অনুষ্ঠানটি করেন। ভারতবর্ষের প্রতি ওঁর মনে গভীর ভালোবাসা রয়েছে। ভারতের সঙ্গে ওঁর অবিচ্ছেদ্য যোগের আরো একটি অন্যতম কারণ হলো, ওঁর জন্ম হয় ১৫ই আগস্ট। সেদূজি এখন প্রতি রবিবার রাত ন'টার সময় দু’ ঘন্টার আরো একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করা শুরু করেছেন, এই অনুষ্ঠানে উনি বলিউডের একটি সিনেমার গল্প ফরাসি এবং বম্বারা ভাষায় শোনান। কখনো কখনো সেই সব সিনেমার কিছু আবেগপ্রবণ দৃশ্যের বর্ণনা দিতে গিয়ে উনি এবং ওঁর শ্রোতারা একসঙ্গে কেঁদে ফেলেন। সেদূজিকে ওঁর বাবাই ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়েছিলেন। ওঁর বাবা চলচ্চিত্র এবং থিয়েটার জগতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং সেখানে ভারতীয় সিনেমাও দেখানো হতো। এই ১৫ই আগস্ট উনি হিন্দি ভাষায় একটি ভিডিওর মাধ্যমে ভারতবাসীকে স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। এখন ওঁর সন্তানেরা খুব সাবলীল ভাবে ভারতের জাতীয় সংগীত গাইতে পারে। আপনারা অবশ্যই এই দুটি ভিডিও দেখবেন এবং ওঁদের ভারতের প্রতি ভালোবাসা অনুভব করবেন। সেদূ জি যখন কুম্ভ মেলায় একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এসেছিলেন, তখন আমার সঙ্গে ওঁদের দেখা হয়। ভারতের জন্য সেঁদূজির এই উচ্ছ্বাস, স্নেহ, ভালোবাসা আমাদের সকলের জন্য গর্বের বিষয়।

আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের এখানে বলা হয়, যাঁর শেকড় মাটির যত গভীরে থাকে, বিশাল ঝড়েও তাঁর ভেঙ্গে পড়ার ভয় থাকে না। করোনার এই সময়ে আমাদের কৃষি ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের, কৃষকদের জীবন আমাদের কাছে উদাহরণস্বরূপ। সংকটের এই সময়ে আমাদের কৃষি ক্ষেত্র তার শক্তির পরিচয় দিয়েছে। বন্ধুরা, দেশের কৃষি পরিষেবা, আমাদের কৃষক বন্ধুরা, আমাদের গ্রাম আত্মনির্ভর ভারতের প্রধান শক্তি। এদের ক্ষমতায়নই মাধ্যমেই আত্মনির্ভর ভারতের ভীত। এঁরা শক্তিশালী হলে ভারতের ভীত মজবুত হবে। বিগত কিছু সময় ধরেই এই সব ক্ষেত্র তার নানা রকম সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্তি করেছে, বহু প্রচলিত ধ্যানধারণা ভাঙার চেষ্টা করেছে। আমায় অনেক কৃষকেরা চিঠি লেখেন, অনেক কৃষক সংগঠনের সঙ্গে আমার কথাবার্তা হয়, তারা বলেন কৃষি ক্ষেত্রে অনেক নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছে , চাষের জমিতেও নানা পরিবর্তন আসছে। আমি ওঁদের কাছ থেকে যা শুনেছি, অন্যদের কাছ থেকেও যা শুনেছি, আজ খুব ইচ্ছে করছে এই 'মন কি বাত' অনুষ্ঠানে কৃষকদের সেইসব কিছু কথা আপনাদেরও শোনাচ্ছি। হরিয়ানার সোনিপত জেলায় আমাদের এক কৃষক বন্ধু থাকেন যার নাম শ্রী কংয়ার চৌহান। উনি বলেছেন কীভাবে মান্ডির বাইরে সবজি ও ফল বিক্রি করার জন্য ওঁকে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো। যখন উনি মান্ডির বাইরে ফল ও সবজি বিক্রি করতে গেছেন, অনেক বারই ওঁর ফল, সবজী, এমনকি গাড়ীও আটক হয়ে যেত। কিন্তু ২০১৪ সালে ফল ও সবজি কে এপিএমসি আইনের আওতার বাইরে করে দেওয়া হল। এতে ওঁর মত অনেক কৃষকেরা লাভবান হলেন। চার বছর আগে উনি এবং ওই গ্রামের আরো কিছু কৃষক মিলে একটি কৃষি উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করেন। এখন গ্রামে কৃষকেরা সুইট কর্ন এবং বেবি কর্নের চাষ করেন। ওঁদের উৎপাদিত ফসল এখন দিল্লীর আজাদপুর মান্ডি, বড় বড় রিটেল চেন এবং ফাইভ স্টার হোটেলেও সরাসরি পৌঁছে যায়। এখন গ্রামের এই কৃষকেরা সুইট কর্ন এবং বেবিকর্নের চাষ করে একর প্রতি আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা বছরে আয় করেন। শুধু তাই নয়, এই গ্রামের প্রায় ৬০ জনেরও বেশি কৃষক নেট হাউস তৈরি করে, পলি হাউস তৈরি করে টমেটো, শসা, ক্যাপসিকাম এসব বিভিন্ন ধরণের ফসলের উৎপাদন করে প্রতিবছর একর পিছু ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা রোজগার করেন। আপনারা জানেন, এই কৃষকদের কাছে এমন কি আলাদা আছে!

নিজের ফল- সবজিগুলো যেকোনো জায়গার যে কোনো লোককে বিক্রি করার ক্ষমতা আছে, আর এই ক্ষমতাই তাঁদের প্রগতির ভিত্তি। আজ সেই সামর্থ্য দেশের অন্যান্য কৃষকেরাও লাভ করেছেন। শুধু ফল বা শাকসব্জি‌-ই নয়, নিজেদের খেতে কৃষকেরা যা যা উৎপাদন করছেন- ধান, গম, সরষে, আখ – সেই সমস্ত কিছুই নিজেদের ইচ্ছামতো, যেখানে ভালো দাম মিলবে, সেখানে বিক্রি করার স্বাধীনতা মিলেছে তাঁদের।

বন্ধুরা, তিন-চার বছর আগেই মহারাষ্ট্রে ফল ও শাক-সব্জিকে এপিএমসি-এর আওতার বাইরে নিয়ে আসা হয়েছিল। এই পরিবর্তনের ফলে ওই রাজ্যের ফল ও সব্জি কৃষকদের অবস্থা কিভাবে পাল্টে গিয়েছিল, তার-ই উদাহরণ হ'ল ‘শ্রী স্বামী সমর্থ ফার্মার্স প্রডিউসার কোম্পানি লিমিটেড’। এটি কৃষক বন্ধুদের একটি গোষ্ঠী। পুনে এবং মুম্বাইতে কৃষকরাই 'সাপ্তাহিক বাজার' পরিচালনা করছেন। এই বাজারগুলিতে প্রায় সত্তরটি গ্রামের সাড়ে চার হাজার কৃষকের উৎপাদন সরাসরি বিক্রি করা হয়ে থাকে, মাঝখানে কোন দালাল নেই। গ্রামের যুবকেরা চাষের কাজ এবং সরাসরি ফসল বেচার বাজারে অংশগ্রহণ করছেন। আর তার সুফল ভোগ করছেন কৃষক এবং গ্রামের তরুণেরা, তাঁদের উপার্জন বৃদ্ধির মাধ্যমে। আরেকটি উদাহরণ দেবো। তামিলনাড়ুর থৈনি জেলায় রয়েছে ‘তামিলনাড়ু কলা-চাষী উৎপাদন কোম্পানী’। নামে কোম্পানি হলেও আসলে এটি কৃষকদের একটি গোষ্ঠী। এঁদের ব্যবস্থাটি খুব নমনীয় । কৃষক বন্ধুরা পাঁচ-ছ' বছর আগে এটি স্থাপন করেন। সাম্প্রতিক লকডাউন এর সময় এই কোম্পানি আশপাশের গ্রামগুলির কৃষকদের থেকে শতাধিক মেট্রিক টন শাকসব্জি এবং ফল, কলা কিনে নেয়। আর চেন্নাই শহরে শাকসব্জির কম্বো কিট বিতরণ করে। একবার ভাবুন, এইভাবে কত তরুণের উপার্জনের পথ প্রশস্ত হলো। মজার ব্যাপার , মধ্যস্বত্বভোগী কোন ফ'ড়ে বা দালাল না থাকার ফলে, একদিকে কৃষক এবং অন্যদিকে ক্রেতা- উভয়েই লাভবান হয়েছেন। এরকমই একটি কৃষক গোষ্ঠী রয়েছে লখ্নৌ শহরে। নাম "ইরাদা ফার্মার প্রডিউসার"। তাঁরাও লকডাউন চলাকালীন কৃষকদের থেকে শাকসব্জি ও ফল সরাসরি কিনে লখ্নৌ-এর বাজারে সরাসরি বেচে দেন। এইভাবে দালালদের হাত থেকে কৃষকদের মুক্তি ঘটেছে এবং তাঁরা তাঁদের ফসলের ন্যায্য দাম পেয়েছেন।

বন্ধুরা, গুজরাতের বনসকান্থা জেলার রামপুরা গ্রামে ইসমাইল ভাই নামে এক কৃষকবন্ধু বাস করেন। তাঁর কাহিনী-ও খুবই চমকপ্রদ। তিনি চাষবাস করতে চাইতেন , কিন্তু তাঁর এই সিদ্ধান্ত তাঁর পরিবারের বিশেষ মনঃপুত হচ্ছিল না। কারণ ইসমাইল ভাইয়ের বাবা চাষবাস করে কোনোদিনই লাভের মুখ দেখতে পাননি। তাই তিনি ছেলেকে চাষবাস করতে নিষেধ করতেন। পরিবারের এবং বাবার প্রচুর বারণ সত্ত্বেও ইসমাইল ভাই চাষের কাজ-ই করবেন বলে মনস্থ করেন। তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন যে, 'কৃষি কাজ করা অলাভজনক'- এই চিন্তাধারা ,এবং নিজের বাস্তব অবস্থা – দুটিতেই পরিবর্তন আনবেন। তিনি চাষ শুরু করেন কিন্তু প্রগতিশীল এবং উদ্ভাবনী পন্থায়। “ ড্রিপ ইরিগেশন” পদ্ধতির সাহায্যে আলু চাষ শুরু করেন ইসমাইল ভাই। আর আজ ওঁর উৎপাদিত আলুর এক বিশেষ পরিচিতি পেয়েছে। উনি যে আলু চাষ করছেন তার গুণগতমান খুব উন্নত। ইসমাইল ভাই এই আলু সরাসরি বড় কোম্পানিগুলিকে বিক্রি করেন, মধ্যস্বত্বভোগীদের উৎপাত না থাকায়, ইসমাইল ভাই প্রচুর লাভ করতে সক্ষম হয়েছেন। এখন তো উনি নিজের বাবার সব ধার শোধ করে দিয়েছেন। আর সব থেকে বড় কথা কি জানেন? ইসমাইল ভাই౼ তিনি নিজের এলাকার শত শত কৃষক- বন্ধুদেরকে সাহায্য-ও ক'রে থাকেন। তাঁদেরও জীবন বদলে যাচ্ছে।

বন্ধুরা, আমরা এই সময়ে কৃষিক্ষেত্রকে যত বেশী আধুনিক বিকল্প দেবো, ততই তার উন্নতি ঘটবে। নতুন নতুন পদ্ধতি আসবে, উদ্ভাবন ঘটবে। মণিপুরের বিজয়শান্তি এ ধরনের একটি নতুন উদ্ভাবনের ফলে খ্যাতি লাভ করেছেন। তিনি পদ্মফুলের ডাটি থেকে সুতো বানানোর একটি নতুন উদ্যোগ চালু করেছেন। তাঁর এই উদ্ভাবনের ফলে পদ্ম চাষ আর বস্ত্রশিল্পের মধ্যে একটা মেলবন্ধন ঘটেছে।

আমার প্রিয় দেশবাসী, আমি এবার আপনাদের অতীতে নিয়ে যাবো। ১৯১৯ সাল, অর্থাৎ ১০১ বছর আগের কথা। সে বছর জালিয়ানওয়ালাবাগে নির্দোষ ভারতবাসীর গণহত্যা ঘটিয়েছিল ইংরেজ শাসক-শক্তি। এই গণহত্যার কিছুদিন বাদে বারো বছর বয়সী হাসিখুশি, চঞ্চল স্বভাবের এক বালক ওখানে গিয়েছিল। কিন্তু গিয়ে সে যা দেখল তা তার কল্পনার বাইরে ছিল। সেখানে গিয়ে ছেলেটি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল এ কথা ভেবে যে, মানুষ একে অন্যের প্রতি এত নির্মম কিভাবে হতে পারে। ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে ছেলেটির মনে ক্রোধের আগুন জ্বলে ওঠে এবং সে তার বিরুদ্ধে আজীবন লড়াই করার শপথ নেয়। আপনারা কি বুঝতে পেরেছেন আমি কার কথা বলছি? হ্যাঁ, আমি বীর শহীদ ভগৎ সিং-এর কথাই বলছি। আগামীকাল অর্থাৎ আটাশে সেপ্টেম্বর শহীদ ভগৎ সিং-এর জন্মজয়ন্তী পালিত হবে। আমি সমস্ত দেশবাসীর সাথে বীরত্ব ও সাহসের এই মূর্ত প্রতীক ভগত সিং-কে প্রণাম জানাই। আপনারা ভাবতে পারেন? যে ইংরেজ শাসকশক্তি সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিল দুনিয়ার এক বিশাল অংশে। আর তাই বলা হতো, ইংরেজ সাম্রাজ্যে কখনো সূর্য অস্ত যায় না। অথচ মাত্র তেইশ বছরের এক যুবকের বীরত্ব ইংরেজ শাসকদের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিল। কেবলমাত্র সাহসী নন, শহীদ ভগৎ সিং ছিলেন বিদ্বান এবং চিন্তাশীল মানুষ-ও। শহীদ ভগৎ সিং এবং তাঁর বিপ্লবী সাথীরা নিজেদের প্রাণের মায়া তুচ্ছ ক'রে এমন এক দুঃসাহসিক কাজের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন, যার প্রভাব দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ক্ষেত্রে অপরিসীম। ভগৎ সিংয়ের জীবনের আরেকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তিনি দলবদ্ধ কাজের মর্ম গভীরভাবে উপলব্ধি করতেন। আর তাই, লালা লাজপত রায়ের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধাই হোক বা চন্দ্রশেখর আজাদ, সুখদেব, রাজগুরু প্রমূখ বিপ্লবীদের সঙ্গে তাঁর সংযোগ হোক, এই নিয়ে তাঁর কোনো ব্যক্তিগত শ্লাঘা ছিল না। তাঁর জীবন এবং আত্মবলিদান – দুইয়েরই একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল ভারতবর্ষকে অন্যায় ইংরেজ শাসনের নাগপাশ থেকে মুক্তি দেওয়া।

আমি নমো অ্যাপ-এ হায়দ্রাবাদের অজয় এস জী'র একটা কমেন্ট পড়লাম। অজয়জী লিখেছেন – আজকের যুবারা কিভাবে ভগৎ সিংহের মতন তৈরি হতে পারেন? দেখুন, আমরা ভগৎ সিংহের মত হতে পারি বা নাই পারি, কিন্তু ভগৎ সিংহের মত দেশপ্রেম, দেশের জন্য কিছু করার আবেগ আমাদের সবার মনের মধ্যে যেন অবশ্যই থাকে। শহীদ ভগৎ সিংয়ের প্রতি এটাই হবে আমাদের সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাঞ্জলি। চার বছর আগে, প্রায় এই সময়ে, সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের দরুন বিশ্ব আমাদের সৈন্য বাহিনীর সাহস, শৌর্য এবং নির্ভীকতার পরিচয় পেয়েছিল। আমাদের বাহাদুর সৈনিকদের একটাই উদ্দেশ্য এবং একটাই লক্ষ্য ছিল, যেকোনো মূল্যে, ভারত মায়ের গৌরব এবং সম্মান রক্ষা করার। তাঁরা নিজেদের জীবনের এতোটুকু পরোয়া করেননি। তাঁরা নিজেদের কর্তব্য পথে এগিয়ে গিয়েছিলেন এবং আমরা সবাই দেখেছি কিভাবে তাঁরা বিজয়ী হলেন। ভারত মায়ের গৌরব বৃদ্ধি করলেন।

আমার প্রিয় দেশবাসী, আগামী কয়েকদিনে আমরা সবাই বেশ কিছু মনীষীদের স্মরণ করব, যাঁদের ভারত নির্মাণের ক্ষেত্রে অবর্ণনীয় অবদান রয়েছে। দোসরা অক্টোবর আমাদের সকলের জন্য এক পবিত্র এবং প্রেরণাদায়ী দিন। এই দিনে মা ভারতীর দুই সুসন্তান, মহাত্মা গান্ধী এবং লাল বাহাদুর শাস্ত্রীকে স্মরণ করার দিন।

পূজনীয় বাপুর বিচার এবং আদর্শ আজ আগের থেকেও বেশি প্রাসঙ্গিক, মহাত্মা গান্ধীর যে অর্থনৈতিক চিন্তা ভাবনা ছিল, যদি তার মর্মকে ধরা যেত, বোঝা যেত, সেই রাস্তায় চলা যেত, তাহলে আজ আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের কোন দরকার পড়তো না। গান্ধীজীর অর্থনৈতিক চিন্তা ভাবনার মধ্যে ভারতের প্রতিটি স্নায়ুর উপলব্ধি ছিল, ভারতের সুগন্ধ ছিল। পূজনীয় বাপুর জীবন আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে আমাদের প্রতিটি কাজ যেন এইভাবে করি যাতে প্রতিটি গরিব থেকে গরিব ব্যক্তির যেন মঙ্গল সুনিশ্চিত হয় । অপরদিকে শাস্ত্রীজীর জীবন আমাদের নম্রতা এবং সরলতার বার্তা পৌঁছে দেয়। ১১ ই অক্টোবরের দিনটিও আমাদের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সেদিন আমাদের ভারতরত্ন লোকনায়ক জয়প্রকাশজীকে তাঁর জন্ম জয়ন্তীতে স্মরণ করে থাকি। জে.পি. আমাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। আমরা ভারতরত্ন নানাজি দেশমুখ কেও স্মরণ করি, যার জন্ম জয়ন্তী ও সেই ১১ তারিখেই। নানাজি দেশমুখ জয়প্রকাশ নারায়ণজীর ভীষণ ঘনিষ্ঠ ছিলেন। যখন জে.পি. দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন, তখন পাটনায় তাঁর উপর প্রাণঘাতী হামলা করা হয়েছিল। সেই সময় নানাজি দেশমুখ সেই আঘাত নিজের ওপর নিয়ে নিলেন। যদিও এই হামলায় নানাজী বেশ আহত হয়েছিলেন, তবু তিনি জে.পি.'র জীবন রক্ষা করতে সফল হয়েছিলেন। এই ১২ ই অক্টোবর রাজমাতা বিজয় রাজে সিন্ধিয়াজীর জন্মজয়ন্তী, তাঁর পুরো জীবন মানুষের সেবায় নিবেদিত করেছিলেন। তিনি একটি রাজপরিবারের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, তাঁর কাছে সম্পত্তি, ক্ষমতা এবং অন্যান্য সংস্থানগুলির কোনও ঘাটতি ছিল না। তবুও তিনি তাঁর সারা জীবন, একজন মায়ের মত, সন্তান স্নেহে মানুষের সেবায় কাটিয়ে দিয়েছেন। উদার মনের মানুষ ছিলেন তিনি। এই ১২ ই অক্টোবর তাঁর জন্মশতবর্ষ উদযাপনের সমাপ্তির দিন, তাই আজ যখন আমি রাজ মাতাজীর সম্পর্কে বলছি তখন এক আবেগপূর্ণ ঘটনার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। এমনিতে ওঁর সঙ্গে বহু বছর কাজ করার সুবাদে বহু ঘটনাই রয়েছে। তবু আজ আমার ইচ্ছে একটি বিশেষ ঘটনার উল্লেখ করি। কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর হয়ে আমরা একতা যাত্রা করেছিলাম। ডাঃ মুরলি মনোহর যোশীর নেতৃত্বে এই যাত্রা চলছিল। ডিসেম্বর জানুয়ারির প্রচন্ড ঠান্ডার দিন ছিল। আমরা রাত ১২-১ টা নাগাদ মধ্য প্রদেশের গোয়ালিয়রের কাছে শিবপুরীতে পৌঁছেছি। নিবাস স্থানে পৌঁছে যেহেতু সারাদিনের ক্লান্তি থাকতো তাই স্নান সেরে ঘুমোতাম এবং সকালের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতাম। প্রায় রাত দুটোর কাছাকাছি আমি স্নানাদি সেরে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম এই সময় কেউ দরজায় কড়া নাড়লেন। দরজা খুলে দেখি সামনে রাজমাতা দাঁড়িয়ে রয়েছেন। এই ভীষণ শীতের রাতে রাজমাতা কে দেখে আমি তো বেশ অবাক। আমি মাকে প্রণাম করে জিজ্ঞাসা করলাম, মা আপনি এত রাতে? উনি বললেন মোদিজি আপনার জন্য এই গরম দুধ, আপনি এই দুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। হলুদ দিয়ে দুধ নিয়ে উনি নিজে চলে এলেন আমার কাছে। পরের দিন আমি দেখলাম শুধু একা আমি নই আমাদের যাত্রী দলের যে ৩০-৪০ জন লোক ছিলেন, তার মধ্যে অনেক ড্রাইভার ছিলেন, কর্মকর্তাও ছিলেন, তাদের প্রত্যেকের কামরায় তিনি নিজে রাত দুটোর সময় দুধ নিয়ে গিয়ে খাইয়েছেন। মায়ের ভালোবাসা যে কি, বাৎসল্য ভাব যে কি, এই ঘটনা আমি কোনদিনও ভুলব না। আমাদের সৌভাগ্য, এমন মহান ব্যক্তিত্বরা তাঁদের ত্যাগ ও তপস্যার দ্বারা আমাদের ধরিত্রী কে সুফলা করে তুলেছেন। আসুন আমরা সবাই মিলে এমন এক ভারতের নির্মাণ করি যার জন্য এই মহাপুরুষরা গর্ববোধ করবেন। তাঁদের স্বপ্নকে আমাদের সংকল্প বানাই।

আমার প্রিয় দেশবাসী, করোনার এই দুঃসময়ের মধ্যে, আমি আরো একবার আপনাদের মনে করিয়ে দি, মাস্ক অবশ্যই পরবেন, ফেস কভার ছাড়া বাইরে বেরোবেন না। দুই গজ এর দূরত্বের নিয়ম আপনাকেও রক্ষা করবে এবং আপনার পরিবারকেও রক্ষা করবে। এই কিছু নিয়ম করোনার বিরুদ্ধে আপনার হাতিয়ার, প্রতিটি নাগরিকের জীবন বাঁচানোর জন্য এক মজবুত উপায়। আমরা যেন না ভুলি, যতক্ষণ ওষুধ নেই ততক্ষণ ঢিলেমি নেই। আপনি সুস্থ থাকুন, আপনার পরিবার সুস্থ থাকুক, এই শুভ কামনার সঙ্গে অনেক অনেক ধন্যবাদ। নমস্কার।

 

Explore More
৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪

জনপ্রিয় ভাষণ

৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪
Snacks, Laughter And More, PM Modi's Candid Moments With Indian Workers In Kuwait

Media Coverage

Snacks, Laughter And More, PM Modi's Candid Moments With Indian Workers In Kuwait
NM on the go

Nm on the go

Always be the first to hear from the PM. Get the App Now!
...
PM to attend Christmas Celebrations hosted by the Catholic Bishops' Conference of India
December 22, 2024
PM to interact with prominent leaders from the Christian community including Cardinals and Bishops
First such instance that a Prime Minister will attend such a programme at the Headquarters of the Catholic Church in India

Prime Minister Shri Narendra Modi will attend the Christmas Celebrations hosted by the Catholic Bishops' Conference of India (CBCI) at the CBCI Centre premises, New Delhi at 6:30 PM on 23rd December.

Prime Minister will interact with key leaders from the Christian community, including Cardinals, Bishops and prominent lay leaders of the Church.

This is the first time a Prime Minister will attend such a programme at the Headquarters of the Catholic Church in India.

Catholic Bishops' Conference of India (CBCI) was established in 1944 and is the body which works closest with all the Catholics across India.