নমস্কার!
মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী প্রবীন্দ কুমার জগন্নাথজি,
ভদ্রমহোদয় / মহোদয়াগণ,
১৩০ কোটি ভারতবাসীর পক্ষ থেকে মরিশাসের সমস্ত ভাই-বোনেদের নমস্কার, বনজুর এবং পবিত্র থাইপুসম কাভাদির শুভকামনা জানাই।
শুরুতেই আমি ভারত-মরিশাস সম্পর্ককে নিবিড় করতে প্রয়াত স্যার অনিরুদ্ধ জগন্নাথের ভূমিকার কথা উল্লেখ করতে চাই। তিনি ছিলেন এক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতা, যিনি সারা ভারতে শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব। তাঁর প্রয়াণে আমরা একদিন জাতীয় শোক পালনের কথা ঘোষণা করেছিলাম এবং আমাদের সংসদে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছিলাম। এটা আমাদের কাছে অত্যন্ত সৌভাগ্যের বিষয় যে আমরা তাঁকে ২০২০-তে ‘পদ্মবিভূষণ’ সম্মানে ভূষিত করি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, মহামারীজনিত পরিস্থিতির ফলে জীবৎকালে তিনি পুরস্কার গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি। সেজন্য আমরা গত নভেম্বর মাসে তাঁর পত্নী সরোজিনী জগন্নাথের হাতে পুরস্কার তুলে দিয়েছি। স্যার অনিরুদ্ধ জগন্নাথের প্রয়াণের পর দুই দেশের মধ্যে এটিই প্রথম দ্বিপাক্ষিক অনুষ্ঠান। আমরা অভিন্ন উন্নয়নের যাত্রাপথে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জন করেছি। আমি তাঁর পরিবারের ও মরিশাসবাসীর প্রতি আমার গভীর সমবেদনা জানাই।
ভদ্রমহোদয় / মহোদয়াগণ,
ভারত ও মরিশাসের মধ্যে এক অভিন্ন ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, পৈতৃক ও ভাষাগত সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশ ভারত মহাসাগরের সীমাহীন জলসীমানাও ভাগ করে নেয়। আজ আমাদের উন্নয়নমূলক অংশীদারিত্ব দুই দেশের নিবিড় সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হয়ে উঠেছে। ভারতের উন্নয়নমূলক অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে মরিশাস একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ভারত উন্নয়নমূলক অংশীদারিত্বে সর্বদাই মিত্র দেশগুলির সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান জানিয়ে থাকে।
প্রবীন্দজি, আমি আপনার সঙ্গে মেট্রো এক্সপ্রেস প্রকল্প, নতুন ই.এন.টি. হাসপাতাল এবং নতুন সুপ্রিম কোর্ট ভবন উদ্বোধনের কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি। আমি এটা জানতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত যে, মেট্রো পরিষেবার জনপ্রিয়তা ক্রমশ বেড়েছে এবং ইতিমধ্যেই ৫৬ লক্ষের বেশি যাত্রী এই পরিষেবা ব্যবহার করেছেন। মেট্রো পরিষেবার আরও সম্প্রসারণে সাহায্যের জন্যও আমরা আগ্রহী। এজন্য দুই দেশের মধ্যে আজ ১৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এটা আমাদের কাছে অত্যন্ত সন্তুষ্টি ও গর্বের বিষয় যে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলায় নতুন ই.এন.টি. হাসপাতালটি অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা নিয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে কোভিড-১৯ মহামারীর সময় আমাদের দুই দেশের সহযোগিতা নজির সৃষ্টি করেছে। ‘ভ্যাক্সিন মৈত্রী’ কর্মসূচির আওতায় মরিশাসই প্রথম দেশ যেখানে আমরা কোভিড টিকা পাঠিয়েছিলাম। আজ আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, মরিশাস বিশ্বের অল্পসংখ্যক কয়েকটি দেশের মধ্যে একটি যেখানে মোট জনসংখ্যার তিন-চতুর্থাংশের টিকাকরণ সম্পূর্ণ হয়েছে। মরিশাস ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আমাদের উন্নয়নমূলক প্রয়াসের এক অভিন্ন অঙ্গ। ২০১৫-তে মরিশাস সফরের সময় নৌ-বাণিজ্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা ও নিরাপত্তার জন্য আমি ভারতের ‘সাগর’ (এই অঞ্চলের সব দেশের জন্য নিরাপত্তা ও অভিন্ন অগ্রগতি) কর্মসূচির কথা উল্লেখ করেছিলাম।
আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, নৌ-বাণিজ্যে নিরাপত্তা সহ আমাদের দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা এখন পরিকল্পনার স্তর থেকে বাস্তবায়িত হচ্ছে। কোভিড মহামারীজনিত বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও আমরা মরিশাসের উপকূলরক্ষী বাহিনীকে লিজ বা চুক্তির ভিত্তিতে একটি ডর্নিয়ার যুদ্ধবিমান দিয়েছি সেইসঙ্গে, বারাকুডা জাহাজের মেরামতের কাজ শেষ করেছি। আমাদের অভিন্ন নৌ-বাণিজ্য সম্পর্কিত ঐতিহ্য সুরক্ষায় দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার আরও একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে আমরা ওয়াকাশিও তৈল কূপের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও বিশেষজ্ঞদের সাহায্য দিয়েছি।
ভদ্রমহোদয় / মহোদয়াগণ,
আজকের এই অনুষ্ঠান দুই দেশের মানুষের জীবনযাপনের মানোন্নয়নে অভিন্ন অঙ্গীকারকেই প্রতিফলিত করে। প্রবীন্দজি, সামাজিক আবাসন কর্মসূচির কাজ শেষ হওয়ায় পর এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আপনার সঙ্গে যোগ দিতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমরা বিশেষ করে আনন্দিত যে, মরিশাসের সাধারণ মানুষের জন্য আপনারা সুলভ আবাসনের সংস্থান করতে পেরেছেন। আমরা আরও দুটি কর্মসূচি গ্রহণ করেছি যা দেশ গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর একটি হল অত্যাধুনিক সিভিল সার্ভিস কলেজ, যা মরিশাসের নিরবচ্ছিন্ন অগ্রগতিতে সরকারি আধিকারিকদের দক্ষতার মানোন্নয়নে সাহায্য করবে। আর দ্বিতীয়টি হল, ৮ মেগাওয়াট ক্ষমতাবিশিষ্ট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। এই কেন্দ্রটি দ্বীপরাষ্ট্র মরিশাসকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আরও শক্তিশালী করবে।
ভারতে আমরাও ‘মিশন কর্মযোগী’ উদ্যোগের মাধ্যমে সিভিল সার্ভিসের আধিকারিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য একাধিক উদ্ভাবনমূলক প্রয়াস গ্রহণ করছি। আমরা মরিশাসকে সিভিল সার্ভিস ক্ষেত্রে আমাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারলে আনন্দিত হব। আজ যখন ৮ মেগাওয়াট ক্ষমতাবিশিষ্ট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের সূচনা হতে চলেছে সেই সময় গত বছর গ্লাসগো-তে সিওপি-২৬ বৈঠকের ফাঁকে ‘এক সূর্য, এক বিশ্ব, এক গ্রিড’ গড়ে তোলার কথা মনে পড়ছে। ২০১৮-র অক্টোবরে আন্তর্জাতিক সৌর জোটের প্রথম অধিবেশনে প্রথমবার আমি ‘এক সূর্য, এক বিশ্ব, এক গ্রিড’ গড়ে তোলার প্রস্তাব রেখেছিলাম। এই উদ্যোগ না কেবল কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ হ্রাস করবে, সেইসঙ্গে শক্তিখাতে খরচও সাশ্রয় হবে। এমনকি বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে এই উদ্যোগ সহযোগিতার নতুন দ্বার খুলে দেবে। সৌরবিদ্যুৎ ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য ভারত ও মরিশাস দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলেও আমার বিশ্বাস।
ক্ষুদ্র উন্নয়নমূলক প্রকল্পে আজ আমাদের দুই দেশের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছে তা মরিশাসের সর্বজনীন ক্ষেত্রে গভীর প্রভাব ফেলতে চলেছে। আগামীদিনে আমরা একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে একযোগে কাজ শুরু করব। এর মধ্যে রয়েছে – রেনাল ট্রান্সপ্ল্যান্ট ইউনিট, ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি, জাতীয় গ্রন্থাগার ও মহাফেজখানা, মরিশাসের পুলিশ অ্যাকাডেমি প্রভৃতি। আমি আজ আরও একবার একথা বলতে চাই যে, মরিশাসের উন্নয়নের যাত্রাপথে ভারত সর্বদাই পাশে থাকবে।
আমি মরিশাসের সমস্ত ভাই ও বোনেদের সুস্থ, মঙ্গলময় জীবন কামনা করি এবং ইংরেজি নববর্ষ, ২০২২-এর শুভেচ্ছা জানাই।
ভারত ও মরিশাসের মৈত্রী অমর হোক।
জয় হিন্দ!
অনেক অনেক ধন্যবাদ। নমস্কার।