২২ অগাস্ট ২০২৪ তারিখে ভারত ও পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা ঐকমত্য এবং কৌশলগত অংশীদারিত্বের মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে আসা গতিকে ত্বরান্বিত করতে দুই দেশ ৫ বছরের জন্য এক কর্মপরিকল্পনা রূপায়ণে সম্মত হয়েছে।
২০২৪-২০২৮ পর্বের জন্য গৃহীত এই অ্যাকশন প্ল্যানে নিম্নলিখিত ক্ষেত্রগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে :
রাজনৈতিক মত বিনিময় ও সুরক্ষা সহযোগিতা
দুই দেশ বিদেশমন্ত্রী স্তরে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করবে এবং দ্বিপাক্ষিক ও বিভিন্ন ক্ষেত্র নিয়ে তাঁরা কথাবার্তা চালাবেন।
রাষ্ট্রসংঘের সনদ মেনে দুই পক্ষই একে অন্যের আশা-আকাঙ্খা পূরণের লক্ষ্যে কাজ করবে।
দুই পক্ষই প্রতি বছর বৈদেশিক সম্পর্কের দায়িত্বে থাকা উপমন্ত্রী স্তরে রাজনৈতিক আলাপ আলোচনা চালাবে।
প্রতিরক্ষা শিল্প, সামরিক সরঞ্জামের আধুনিকীকরণ এবং বকেয়া বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দুই দেশের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলি নিয়মিত শলাপরামর্শ চালাবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতার জন্য গঠিত যৌথ কর্মীগোষ্ঠীর পরবর্তী বৈঠক হবে এই ২০২৪ সালে।
বাণিজ্য ও বিনিয়োগ
উচ্চ প্রযুক্তি, কৃষি, কৃষি প্রযুক্তি, খাদ্য প্রযুক্তি, শক্তি, জলবায়ু, গ্রিন প্রযুক্তি, পরিকাঠামো, স্মার্ট সিটি, প্রতিরক্ষা, স্বাস্থ্য পরিচর্যা, ওষুধ এবং খনিজ উত্তোলনের ক্ষেত্রে সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে দুই পক্ষ এই সব ক্ষেত্রে আরও সহযোগিতার পথ খতিয়ে দেখতে ২০২৪-এর শেষ দিকে আর্থিক সহযোগিতা সংক্রান্ত যৌথ কমিশনের (জেসিইসি) বৈঠক করবে।
প্রতি ৫ বছরে জেসিইসি অন্তত দুটি অথবা সম্ভব হলে আরও ঘন ঘন বৈঠক হবে।
এছাড়া আর্থিক সুরক্ষার ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে দুই পক্ষই ধারাবাহিকভাবে সরবরাহ শৃঙ্খলকে মজবুত করবে।
জলবায়ু, শক্তি, খনন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
চক্রাকার অর্থনীতি ব্যবস্থা এবং বর্জ্য জল ব্যবস্থাপনা নিয়ে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির বিকাশে দুই দেশ পরস্পরকে সহযোগিতা করবে। পরিবেশ দূষণ যথাসম্ভব কমাতে পরিবেশবান্ধব শক্তি উৎপাদনের লক্ষ্যে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করবে।
উদ্ভাবনী ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং বিরল খনিজ পদার্থের ক্রমবর্ধমান গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে দুই দেশই উন্নত খনন ব্যবস্থা, উচ্চপ্রযুক্তির যন্ত্রপাতি, সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে দুই দেশ পরস্পরকে সহযোগিতা করবে এবং খনন সংক্রান্ত শিল্পে পারস্পরিক বিনিময় ও সহযোগিতার ক্ষেত্রকে প্রসারিত করবে।
মহাকাশের সুরক্ষিত ও নিরাপদ ব্যবহার এবং বাণিজ্যিকভাবে মহাকাশ ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার লক্ষ্যে দুই দেশ একযোগে কাজ করতে সম্মত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থায় ভারতের যোগদানের ইচ্ছাকে স্বীকৃতি দিয়েছে পোল্যান্ড।
পরিবহণ ও যোগাযোগ
পরিবহণ পরিকাঠামো বিকাশের ক্ষেত্রে দুই দেশ পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রকে প্রসারিত করবে। দুই দেশ এবং সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলির মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং বিমান যোগাযোগের সম্প্রসারণ ঘটাতে দুই দেশ মিলিতভাবে কাজ করবে।
সন্ত্রাসবাদ
যে কোনও ধরনের সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মের তীব্র নিন্দা করেছে দুই দেশ এবং সন্ত্রাসবাদীদের আর্থিক মদত, সহায়তা কিংবা সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের যাতে কোন দেশ আশ্রয় না দেয়, তার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে দুই পক্ষ। রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ১২৬৭ নিষেধাজ্ঞা কমিটির তালিকাভুক্ত সমস্ত জঙ্গি এবং জঙ্গিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে একযোগে কাজ করবে দুই দেশ।
সাইবার সুরক্ষা
আর্থিক এবং সামাজিক উন্নয়নে সাইবার সুরক্ষার গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে দুই দেশ আইসিটি সম্পর্কিত ক্ষেত্রে পারস্পরিক আলোচনা ও বিনিময়ের ক্ষেত্রকে সম্প্রসারিত করবে এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, আইন ও নিয়ন্ত্রণমূলক সমাধান, বিচার ও পুলিশের কাজকর্ম, সাইবার হামলার প্রতিরোধ, সচেতনতা বৃদ্ধি, শিক্ষামূলক কর্মসূচি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত গবেষণা এবং উন্নয়ন, বাণিজ্য ও আর্থিক বিনিময় প্রভৃতির ওপর বিশেষ নজর দেওয়া হবে।
স্বাস্থ্য
স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে পারস্পরিক মত বিনিময় এবং পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে তথ্য আদান-প্রদানের ব্যাপারে সহযোগিতার ক্ষেত্রকে মজবুত করতে একমত হয়েছে দুই দেশ।
মানুষে মানুষে বন্ধন ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা
দুই দেশের সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনগুলির মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্রকে মজবুত করতে সম্মত হয়েছে দুই পক্ষ। শিল্পী, ভাষা বিশেষজ্ঞ, জ্ঞানী ব্যক্তি এবং দুই দেশের সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ জোরদার করতে সহমত হয়েছে দুই পক্ষ।
উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে সহযোগিতাকে মজবুত করা এবং দুই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির কাজকর্মকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে দুই পক্ষ একসঙ্গে কাজ করবে। দুই দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলিকে উৎসাহিত করা হবে।
দুই দেশ পর্যটনের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রকে মজবুত করতে কাজ করে যাবে। দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৫তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে দুই পক্ষের দূতাবাসগুলির উদ্যোগে উভয় দেশে সাংস্কৃতিক উৎসব অনুষ্ঠিত হবে।
ভারত - ইউরোপীয় ইউনিয়ন
শান্তি, স্থায়িত্ব এবং সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, ভারত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নকে মূল আন্তর্জাতিক অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করে দুই দেশ ভারত - ইইউ বাণিজ্য ও প্রযুক্তি কাউন্সিলকে আরও সক্রিয় করা হবে। বাণিজ্য, নতুন প্রযুক্তি ও সুরক্ষার ক্ষেত্রে ভারত - ইউরোপীয় ইউনিয়ন কৌশলগত অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ভারত - ইইউ যোগাযোগ অংশীদারিত্ব রূপায়ণে একমত হয়েছে দুই দেশ।
কর্মপরিকল্পনা রূপায়ণের ক্ষেত্রে নিয়মিত নজরদারি, বার্ষিক রাজনৈতিক শলাপরামর্শ এবং অন্যান্য কাজকর্ম এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে দুই দেশ একযোগে কাজ করবে। এই কর্মপরিকল্পনার মেয়াদ আরও ৫ বছরের জন্য বাড়াতে দুই দেশের বিদেশমন্ত্রীরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।