প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরের চৌরি চৌরার ঘটনার শতবার্ষিকী উদযাপনের উদ্বোধন করেছেন। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়েছে। স্বাধীনতা সংগ্রামে চৌরি চৌরার ঘটনা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। চৌরি চৌরার সেই ঘটনার শতবার্ষিকীর উদযাপন আজ শুরু হল। প্রধানমন্ত্রী এই উপলক্ষ্যে একটি স্মারক ডাক টিকিট প্রকাশ করেছেন। অনুষ্ঠানে উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল শ্রীমতি আন্দন্দীবেন প্যাটেল, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী সাহসী শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে চৌরি চৌরায় আত্মবলিদান নতুন পথ দেখিয়েছিল। ১০০ বছর আগে চৌরি চৌরার এই ঘটনা শুধুমাত্র অগ্নি সংযোগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলনা, সেদিনের সেই মুহূর্ত বিস্তৃত এক বার্তা দিয়েছিল। যে পরিস্থিতিতে অগ্নি সংযোগের ঘটনাটি ঘটেছিল সেটির পিছনের কারণ সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আজ ইতিহাস, এই সংগ্রামের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার কারণে চৌরি চৌরার কথা মানুষ জানতে পারছেন। আজ থেকে চৌরি চৌরা সহ প্রতিটি গ্রাম সেদিনের বীর স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আত্মবলিদানের কথা মনে রাখবে। দেশ যখন স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষে প্রবেশ করছে তখন এই উদযাপন আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। চৌরি চৌরার শহীদদের নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা হয়নি বলে শ্রী মোদী দুঃখ প্রকাশ করেছেন। ইতিহাসের পাতায় তাঁদের যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়া হয়নি। কিন্তু স্বাধীনতার জন্য তাঁদের রক্তপাত অবশ্যই দেশের মাটিতে মিশেছে।
প্রধানমন্ত্রী জনসাধারণকে বাবা রাঘব দাস ও মহামনা মদন মোহন মালব্যের উদ্যোগের কথা স্মরণ করতে বলেছেন। তাঁদের জন্যই আজকের এই দিনে ১৫০ জন স্বাধীনতা সংগ্রামী ফাঁসির হাত থেকে রেহাই পেয়েছিলেন। ছাত্রছাত্রীরা এই ঘটনার প্রচারে যেভাবে অংশগ্রহণ করছে , তার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের নানান না বলা কথা প্রকাশ পাওয়ায় শ্রী মোদী সন্তোষ ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন শিক্ষা মন্ত্রক স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তিতে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নিয়ে একটি পুস্তক রচনায় তরুণ লেখকদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে অনেক অজানা বীর স্বাধীনতা সংগ্রামীর কথা আমরা জানতে পারবো। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে স্থানীয় শিল্প ও সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে উত্তরপ্রদেশ সরকার বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় প্রধানমন্ত্রী তার প্রশংসা করেছেন।
শ্রী মোদী বলেছেন, সমষ্টিগত উদ্যোগের মধ্য দিয়ে দাসত্বের শিকল ভেঙে ফেলার ফলে ভারত বিশ্বের সর্ববৃহৎ শক্তিধর দেশে পরিণত হয়েছে। সামগ্রিক এই শক্তি আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের ভিত্তি। করোনার সময়কালে ভারত ১৫০টি দেশের নাগরিককে অত্যাবশ্যক ওষুধ পাঠিয়ে সাহায্য করেছে। ভারত বিভিন্ন দেশকে টিকা পাঠানোর মধ্য দিয়ে মানব জাতিকে রক্ষা করেছে। এর ফলে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামীরা গর্বিত হবেন।
সম্প্রতি পেশ হওয়া বাজেটের বিষয়ে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মহামারীর জন্য বিভিন্ন সমস্যার মোকাবিলা করতে এর মাধ্যমে সুবিধা হবে। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ বাজেট সম্পর্কে আগে ভুল ধারণা করতেন। বাজেটের মধ্যে দিয়ে সাধারণ নাগরিকের ওপর নতুন নতুন করের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়, এরকম কথা তাঁরা বলতেন। দেশের দ্রুত উন্নয়নে সরকার আরও বেশি অর্থ ব্যয় করবে। এই ব্যয়ের ফলে সড়ক, সেতু, রেললাইন, নতুন ট্রেন, বাস এবং বিভিন্ন বাজারের মধ্যে যোগাযোগ গড়ে তোলা হবে। বাজেট উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা ও আমাদের যুব সম্প্রদায়ের জন্য ভালো সুযোগ তৈরি করার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। এই উদ্যোগগুলি লক্ষ লক্ষ যুবক-যুবতীর জন্য কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করবে। আগে বাজেটের অর্থ ছিল বিভিন্ন প্রকল্পের ঘোষণা করা, যেগুলি কখনই বাস্তবায়িত হতনা। শ্রী মোদী বলেছেন, ‘বাজেট ভোট রাজনীতির হিসেবের বইখাতায় পরিণত হয়েছিল। এখন দেশ নতুন এক অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে এবং এই সংক্রান্ত ধারণার পরিবর্তন হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যেভাবে ভারত মহামারী জনিত পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছে তার জন্য এই উদ্যোগ বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়েছে। প্রতিটি গ্রাম ও ছোট ছোট শহরে স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতির জন্য দেশ এখন উদ্যোগী হয়েছে। বাজেটে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিপুল বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে। জেলা স্তরে উন্নত মানের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
দেশের প্রগতির মূল ভিত্তি কৃষকরা- প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়টি উল্লেখ করে গত ৬ বছর ধরে সরকার কৃষকদের জন্য যেসব উদ্যোগ নিয়েছে সেগুলির কথা জানিয়েছেন। মহামারীর সমস্যা সত্ত্বেও কৃষকরা রেকর্ড ফসল ফলিয়েছেন। বাজেটে কৃষকদের ক্ষমতায়ণের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কৃষকরা যাতে তাঁদের উৎপাদিত শস্য সহজে বিক্রি করতে পারেন তার জন্য ১ হাজার মান্ডিকে ই-ন্যাম ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।
গ্রামীণ পরিকাঠামো তহবিলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে ৪০ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে কৃষকরা আত্মনির্ভর হবেন ও কৃষিকাজ আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। গ্রামের মানুষদের জমি ও বাস্তু সম্পত্তির মালিকানার নথি স্বামীত্ব প্রকল্পের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে সম্পত্তির ভালো দাম পাওয়া যাবে। যে সমস্ত পরিবার ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিতে চাইবেন তাঁরা এর মাধ্যমে উপকৃত হবেন এবং জমিও দখলদারদের হাত থেকে রেহাই পাবে।
প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, কলকারখানা বন্ধ, খারাপ রাস্তা, হাসপাতালের ভগ্নদশা- এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে এসে গোরক্ষপুর এখন নানা দিক থেকে উপকৃত। এই অঞ্চলের সার উৎপাদন কারখানাটি আবারও চালু হওয়ায় কৃষক এবং যুব সম্প্রদায় উপকৃত হয়েছে। গোরক্ষপুর শহরে এইমস গড়ে তোলা হয়েছে। হাজার হাজার শিশুর জীবন মেডিকেল কলেজ রক্ষা করেছে। দেওরিয়া, কুশি নগর, বস্তি মহারাজ নগর, সিদ্ধার্থ নগর নতুন নতুন মেডিকেল কলেজ পেয়েছে। এই অঞ্চলের ৬ লেন, ৪ লেনের সড়ক তৈরি হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হয়েছে। গোরক্ষপুর থেকে ৮টি শহরে বিমান চলাচল শুরু হয়েছে। নির্মীয়মান কুশিনগর আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর পর্যটন ক্ষেত্রে সুবিধা করবে। শ্রী মোদী বলেছেন, ‘আত্মনির্ভরতার জন্য এই পরিবর্তন আমাদের সকল স্বাধীনতা সংগ্রামীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন।’
Click here to read PM's speech