সারা বিশ্ব জুড়ে নীতি নির্ধারণের বিষয়ে কোভিড-১৯ মহামারী বিভিন্ন সরকারের কাছে নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতও তার ব্যতিক্রম নয়। স্থিতিশীল উন্নয়ন বজায় রেখে জনকল্যাণমূলক কাজে প্রচুর অর্থ সম্পদের যোগান দেওয়া সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল।

এই আবহে বিশ্ব জুড়ে আর্থিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। আপনারা কি জানেন, ভারতের রাজ্যগুলি ২০২০-২১ সালে যথেষ্ট পরিমান অর্থ ঋণ নিতে পেরেছে? আপনারা অনেকেই শুনে অবাক হবেন, ২০২০-২১ সালে রাজ্যগুলি ১ লক্ষ ৬ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত ঋণ নিতে পেরেছে। কেন্দ্র-রাজ্য অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বাড়তি সম্পদের যোগান দেওয়া সম্ভব হয়েছে।

কোভিড-১৯ মহামারীর আবহে আমরা যখন আর্থিক বিষয়গুলি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছিলাম, তখন যে বিষয়ের কথা আমরা বিশেষভাবে বিবেচনা করেছি সেটি হল, একই সূত্র সব এলাকার জন্য প্রযোজ্য হবে না। একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় যেখানে উপমহাদেশের ছোঁয়া রয়েছে, সেই পরিস্থিতিতে জাতীয় স্তরে নীতি নির্ধারণ করে রাজ্য সরকারগুলি সংস্কারকে এগিয়ে নিয়ে যাবে – এটা প্রকৃতই একটি চ্যালেঞ্জের বিষয়। কিন্তু আমাদের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ব্যাপ্তির প্রতি আস্থা ছিল আর আমরা কেন্দ্র – রাজ্য অংশীদারিত্বের ভাবনায় বিশ্বাসী।

আত্মনির্ভর ভারত প্যাকেজে ২০২০-র মে মাসে কেন্দ্র ২০২০-২১ অর্থবর্ষে রাজ্যগুলি যাতে অতিরিক্ত ঋণ নিতে পারে সেই সংক্রান্ত ঘোষণা করেছিল। রাজ্যগুলি রাজ্যের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ২ শতাংশ পরিমান অর্থ অতিরিক্ত ঋণ হিসেবে নিতে পারবে। এর মধ্যে ১ শতাংশ অর্থ শর্তসাপেক্ষে নেওয়া যাবে। কিছু নির্দিষ্ট অর্থনৈতিক সংস্কার রূপায়ণ করলে রাজ্যগুলি ওই অতিরিক্ত অর্থ পাবে। ভারতীয় অর্থ ব্যবস্থায় এ ধরনের সংস্কারের উদ্যোগ বিরল। রাজ্যগুলি যাতে প্রগতিশীল নীতি অবলম্বন করে বাড়তি তহবিলের সুবিধা পায়, এর মাধ্যমে সেটি নিশ্চিত করা হয়েছে। ফল হিসেবে দেখা গেছে, উন্নত আর্থিক নীতির মাধ্যমে যথেষ্ট উৎসাহব্যঞ্জক সংস্কার বাস্তবায়িত হয়েছে।

অতিরিক্ত ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের যে ১ শতাংশ পরিমান অর্থ সংস্কারের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে, সেটিকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়। প্রত্যেক ভাগে ০.২৫ শতাংশ মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের সমতুল অর্থ বরাদ্দ করা হয়। প্রথম যে সংস্কারটি হাতে নেওয়া হয় তার মাধ্যমে সহজভাবে জীবনযাত্রার দিকটি নিশ্চিত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সমাজের ঝুঁকিপূর্ণ অংশের দরিদ্র মানুষেরা এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কথা ভাবা হয়েছে, তাঁদের আর্থিক স্থিতিশীলতার দিকটি নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।

প্রথমে ‘এক দেশ এক রেশন কার্ড’ ব্যবস্থাকে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতায় সব রেশন কার্ডকে আধারের সঙ্গে সংযুক্তিকরণের নীতির বাস্তবায়ন রাজ্য সরকারগুলিকে নিশ্চিত করতে হবে । পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের আধারের সঙ্গে রেশন কার্ডকে যুক্ত করার ফলে ন্যায্যমূল্যের রেশন দোকানে বৈদ্যুতিন পয়েন্ট অফ সেল মেশিনের মাধ্যমে খাদ্যশস্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলবে। এই পদ্ধতিতে সবথেকে উপকৃত হবেন পরিযায়ী শ্রমিকরা। তাঁরা দেশের যে কোনও প্রান্ত থেকে রেশন সংগ্রহ করতে পারবেন। নাগরিকরা যেমন এর সুফল পেয়েছেন, পাশাপাশি ভুয়ো রেশন কার্ডের সমস্যা থেকেও বেরিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। ১৭টি রাজ্য এই সংস্কার সম্পূর্ণ করার ফলে ৩৭,৬০০ কোটি টাকার অতিরিক্ত ঋণ নিতে পেরেছে।

সহজে ব্যবসা করার জন্য দ্বিতীয় সংস্কারটি হাতে নেওয়া হয়েছে। রাজ্যগুলিকে ব্যবসা সংক্রান্ত লাইসেন্সের পুনর্নবীকরণের জন্য স্বয়ংক্রিয়, অনলাইন এবং বৈষম্যমূলক নীতি গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ইন্সপেকশনের কাজ পুরোপুরি কম্পিউটারের মাধ্যমে করা হয়েছে। এর ফলে ব্যবসায়ীরা অহেতুক হয়রানি থেকে রেহাই পেয়েছেন এবং দুর্নীতি রোধ করা গেছে। এই সংস্কারের ফলে মূলত অতিক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগীরা উপকৃত হয়েছেন। তাঁরা ইন্সপেক্টর রাজের সমস্যায় জর্জরিত ছিলেন। নতুন ব্যবস্থার ফলে সেই সমস্যার সমাধান হয়েছে। এর মাধ্যমে বিনিয়োগের উন্নত পরিবেশ গড়ে উঠেছে, আরও বেশি করে বিনিয়োগ হয়েছে, যার ফলে উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত হয়েছে। ২০টি রাজ্য এই সংস্কার বাস্তবায়িত করার ফলে ৩৯,৫২১ কোটি টাকা অতিরিক্ত ঋণ পেয়েছে।

পঞ্চদশ অর্থ কমিশন এবং বিভিন্ন শিক্ষাবিদ যথাযথভাবে সম্পত্তি কর আদায়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তৃতীয় সংস্কারটি ছিল সম্পত্তি কর এবং জল ও নিকাশি কর সংক্রান্ত। স্ট্যাম্প ডিউটির সঙ্গে সাযুজ্য রেখে সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে বর্তমান বাজার দাম বিবেচনা করে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হচ্ছে। মূলত শহরাঞ্চলে এই কাজ করা হয়। এর ফলে, শহরাঞ্চলের দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত মানুষ আরও ভালো পরিষেবা পাচ্ছেন, উন্নত পরিকাঠামো ও উন্নয়নে গতি আসছে। সম্পত্তি করের সংস্কারের ফলে শহরাঞ্চলের দরিদ্র মানুষ সবথেকে বেশি উপকৃত হচ্ছেন। এছাড়াও, পুরসভাগুলির কর্মীরা নির্দিষ্ট সময়ে বেতন পাচ্ছেন – আগে তাঁদের মাসের পর মাস বেতনের জন্য অপেক্ষা করতে হত। ১১টি রাজ্য এই সংস্কারকে বাস্তবায়িত করায় অতিরিক্ত ১৫,৯৫৩ কোটি টাকা ঋণ নিতে পেরেছে।

প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তর হল চতুর্থ সংস্কার। কৃষকরা বিনামূল্যে বিদ্যুৎ পাওয়ার পরিবর্তে এখন রাজ্যভিত্তিক প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। প্রত্যেক রাজ্যের একটি জেলায় এ বছরের শেষের মধ্যে পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে সেটি বাস্তবায়িত করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের সঙ্গে রাজ্যগুলির মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ০.১৫ শতাংশ হারে অতিরিক্ত ঋণ নেওয়ার সংস্থান থাকছে। কারিগরি ও বাণিজ্যিক ক্ষতির পরিমাণ কমানোর জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, রাজস্ব ও উৎপাদনের জন্য ব্যয়ের তফাৎ হ্রাস করতে পারলে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ০.০৫ শতাংশ হারে বাড়তি ঋণ পাওয়া যাবে। এর ফলে, বন্টন সংস্থাগুলি আর্থিক দিক থেকে লাভবান হয়েছে। এছাড়াও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংরক্ষণে উৎসাহিত করা হয়েছে যার মাধ্যমে পরিষেবার মানোন্নয়ন ঘটেছে। ১৩টি রাজ্য কমপক্ষে একটি উপাদানকে বাস্তবায়িত করেছে আর ছয়টি রাজ্য প্রত্যক্ষ তহবিল হস্তান্তর প্রক্রিয়াটির কাজ সম্পূর্ণ করেছে। এর ফলে, অতিরিক্ত ১৩,২০১ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে।

মোট ২ লক্ষ ১৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার সুযোগ থাকলেও ২৩টি রাজ্য ১ লক্ষ ৬ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত অর্থ ঋণ হিসেবে নিয়েছে। এর ফলে, ২০২০-২১ অর্থবর্ষে শর্তহীন এবং শর্তযুক্তভাবে ঋণ নেওয়ার অনুমতি পাওয়া গেছে। এই পরিমাণ রাজ্যগুলির মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ৪.৫ শতাংশ।

আমাদের মতো বিরাট দেশে বিভিন্ন সঙ্কট দেখা দেয়। এই অভিজ্ঞতাগুলিও নতুন। আমরা প্রায়ই দেখতে পাই, বিভিন্ন প্রকল্প এবং সংস্কার বছরের পর বছর কার্যকর হয়নি। বর্তমানে অতীতের সেই অচল অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। রাজ্যগুলি এবং কেন্দ্র অতীতে জনমুখী সংস্কারকে বাস্তবায়িত করার জন্য বিভিন্ন পন্থাপদ্ধতি অবলম্বন করত। কিন্তু বর্তমানে মহামারীর সময়ে স্বল্পকালের মধ্যে সংস্কার বাস্তবায়িত করা সম্ভব হয়েছে। ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস’-এর মন্ত্রের কারণে এটি রূপায়িত হয়েছে। আধিকারিকরা এই সংস্কারগুলি নিয়ে কাজ করার সময় বলেছিলেন অতিরিক্ত তহবিলের বিষয়ে উৎসাহিত না করলে এই নীতিগুলি বাস্তবায়নের জন্য বছরের পর বছর লেগে যাবে। ভারত বাধ্যবাধকতার মধ্যে নিঃশব্দে সংস্কারের যে অভিজ্ঞতা লাভ করেছে সেটি হল আস্থা ও উৎসাহের মাধ্যমে সংস্কারের নতুন একটি মডেল। আমি সমস্ত রাজ্যের কাছে কৃতজ্ঞ কারণ , তারা কঠিন এই সময়ের মধ্যেও সংশ্লিষ্ট নীতিগুলিকে বাস্তবায়িত করার জন্য উদ্যোগী হয়েছে যাতে নাগরিকদের মঙ্গল হয়। ১৩০ কোটি ভারতবাসীর দ্রুত উন্নয়নের জন্য আমাদের একযোগে কাজ করার ধারাকে অব্যাহত রাখতে হবে।

Explore More
প্রত্যেক ভারতীয়ের রক্ত ফুটেছে: মন কি বাত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মোদী

জনপ্রিয় ভাষণ

প্রত্যেক ভারতীয়ের রক্ত ফুটেছে: মন কি বাত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মোদী
India’s services sector maintains strong momentum in May; job creation hits record high

Media Coverage

India’s services sector maintains strong momentum in May; job creation hits record high
NM on the go

Nm on the go

Always be the first to hear from the PM. Get the App Now!
...
একতার মহাকুম্ভ – নতুন এক যুগের সূচনা
February 27, 2025

পবিত্র প্রয়াগরাজ শহরে সফল এক মহাকুম্ভ সম্পন্ন হয়েছে। ঐক্যের মহাযজ্ঞ সম্পূর্ণ হল। কোন জাতির মধ্যে যখন চেতনা জাগ্রত হয়, তখন সেই জাতি দীর্ঘ কয়েক শতক পুরনো পরাধীনতার শিকলকে ভেঙে ফেলে, নতুন শক্তিতে মুক্ত বাতাস গ্রহণ করে। ১৩ জানুয়ারি থেকে প্রয়াগরাজে একতার মহাকুম্ভে তার-ই প্রতিফলন দেখা গেছে।

|

অযোধ্যায় রাম মন্দিরের প্রাণপ্রতিষ্ঠার সময় ২২ জানুয়ারি আমি দেবভক্তি এবং দেশভক্তির বিষয়ে বলেছিলাম। প্রয়াগরাজের মহাকুম্ভ চলাকালীন দেব-দেবী, সাধু-সন্ত, মহিলা, শিশু, যুবক-যুবতী, প্রবীণ নাগরিকবৃন্দ থেকে শুরু করে সমাজের সকল স্তরের মানুষ এখানে জড়ো হয়েছেন। আমরা জাতির মধ্যে চেতনা জাগ্রত হওয়ার প্রমাণ পেয়েছি। একতার এই মহাকুম্ভে একই জায়গায় একই সময়ে পবিত্র এক আয়োজনে ১৪০ কোটি ভারতবাসীর আবেগ পুঞ্জিভূত হয়েছে।

প্রয়াগরাজ অঞ্চলের পবিত্র শৃঙ্ঘারপুর হল ঐক্য, সম্প্রীতি এবং ভালোবাসার এক মহান ভূমি, যেখানে প্রভু শ্রীরাম এবং নিশাদরাজের মধ্যে সাক্ষাৎ হয়। তাঁদের সেই সাক্ষাৎ আসলে নিষ্ঠা এবং সদিচ্ছার মিলন। আজও সেই একই মানসিকতায় প্রয়াগরাজ আমাদের অনুপ্রাণিত করে চলেছে।

|

গত ৪৫ দিন ধরে আমি প্রত্যক্ষ করেছি দেশের প্রতিটি প্রান্ত থেকে কোটি কোটি মানুষ সঙ্গমের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছেন। মিলনের সেই আবেগ আরো সঞ্চারিত হয়েছে। গঙ্গা, যমুনা এবং সরস্বতীর পবিত্র সঙ্গমে ভক্তরা বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় আস্থার সঙ্গে মিলিত হয়েছেন।

|

প্রয়াগরাজের মহাকুম্ভ নিয়ে আধুনিক যুগের ম্যানেজমেন্টের পেশাদার ব্যক্তিত্বরা পড়াশোনা করছেন। বিভিন্ন নীতি প্রণয়ন যারা করেন, সেই বিশেষজ্ঞ এবং পরিকল্পনাকারীরাও এই মহাকুম্ভের বিষয়ে আগ্রহপ্রকাশ করেছেন। এর আগে বিশ্বের কোথাও এত বৃহৎ জনসমাগম হয় নি।

তিনটি নদীর সঙ্গমস্থলে কোটি কোটি মানুষ জড়ো হওয়ার জন্য কিভাবে প্রয়াগরাজে এসেছেন সারা বিশ্ব তা প্রত্যক্ষ করেছে। এঁদের কাছে কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে কোন আমন্ত্রণপত্র পাঠায়নি, কোথায় যেতে হবে তা বলে দেয়নি, অথচ কোটি কোটি মানুষ স্বইচ্ছায় মহাকুম্ভের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন, পবিত্র অবগাহনের মাধ্যমে নিজেকে আশীর্বাদধন্য বলে মনে করেছেন।

|

পবিত্র স্থানের পর প্রত্যেকের মুখে যে অপার আনন্দ ও তৃপ্তি আমি প্রত্যক্ষ করেছি তা কোনদিনই ভোলার নয়। মহিলা, বয়স্কজনেরা, আমাদের দিব্যাঙ্গ ভাই ও বোনেরা – প্রত্যেকেই ঠিক সঙ্গমে পৌঁছোনোর রাস্তা খুজে পেয়েছেন।

|

ভারতের যুবসম্প্রদায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই আয়োজনে সামিল হয়েছেন, যা অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। মহাকুম্ভে তরুণ প্রজন্মের উপস্থিতি এক নতুন বার্তা দিয়েছে – আমাদের গৌরবোজ্জ্বল সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে তাঁরা এগিয়ে নিয়ে যাবেন। একে সংরক্ষণ করার বিষয়ে নিজ নিজ দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে তাঁরা ওয়াকিবহাল হয়েছেন এবং এই দায়িত্ব পালনে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন।

মহাকুম্ভ উপলক্ষে প্রয়াগরাজের বিপুল জনসমাগম নতুন এক রেকর্ড তৈরি করেছে। কিন্তু শারীরিক ভাবে উপস্থিত না হয়েও কোটি কোটি মানুষ এই উপলক্ষে এখানে মানসিক ভাবে সমাবেত হন। ভক্তরা যে পবিত্র জল নিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরে গেছেন, সেই জল লক্ষ লক্ষ মানুষের আধ্যাত্মিক ভাবনার উৎসে পরিণত হয়েছে। মহাকুম্ভ ফেরত বহু পূণ্যার্থীকে নিজ নিজ গ্রামে সসম্মানে বরণ করে নেওয়া হয়েছে, সমাজ তাঁদের সম্মানিত করেছে।

|

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রয়াগরাজে যা ঘটেছে তা অভূতপূর্ব। এর মাধ্যমে আগামীদিনের দেশ গঠনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়েছে।

কেউ ভাবতেও পারেননি এত বিপুল সংখ্যক তীর্থযাত্রী এখানে জড়ো হবেন। কুম্ভের অতীতের অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে এখানে কতজন আসতে পারেন, সেবিষয়ে প্রশাসন কিছু হিসেব-নিকেশ করেছিল, কিন্তু সেই প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে বহু মানুষ এখানে এসেছেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যতজন বসবাস করেন তার প্রায় দ্বিগুণ মানুষ একতার এই মহাকুম্ভে এসেছিলেন।

কোটি কোটি উৎসাহী অংশগ্রহণকারী ভারতবাসীর বিষয়ে আধ্যাত্মিক জগতের বিশেষজ্ঞরা যদি পর্যালোচনা করেন, তাহলে তাঁরা দেখবেন নিজ ঐতিহ্যে গর্বিত দেশবাসী এখন নতুন এক উদ্দীপনায় ভরপুর হয়ে উঠেছেন। আমি তাই মনে করি নতুন এক যুগের সূচনা হয়েছে, যা নতুন ভারতের ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করবে।

|

হাজার হাজার বছর ধরে ভারতের জাতীয় ভাবনাকে মহাকুম্ভ শক্তিশালী করেছে। প্রতিটি পূর্ণ কুম্ভে সাধু-সন্ত, বিদ্বান ব্যক্তি এবং পণ্ডিতেরা জড়ো হতেন। তাঁরা সেই সময়ে সমাজের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মত বিনিময় করতেন। তাঁদের আলোচনার ওপর ভিত্তি করে দেশ এবং সমাজ নতুন এক দিশায় এগিয়ে চলতো। প্রতি ৬ বছর পর অর্ধকুম্ভের সময় গৃহীত নীতিগুলি পর্যালোচনা করা হতো। ১৪৪ বছর পর ১২টি পূর্ণ কুম্ভের শেষে সেকেলে ঐতিহ্যগুলিকে বাতিল করে দেওয়া হতো, নতুন নতুন ধারণা যুক্ত হতো, ভবিষ্যতের জন্য নতুন নতুন রীতি-নীতি কার্যকর করা হতো।

১৪৪ বছর পর এই মহাকুম্ভে ভারতের উন্নয়নযাত্রা সম্পর্কে আমাদের সাধু-সন্ন্যাসীরা নতুন এক বার্তা দিয়েছেন। সেই বার্তা হল বিকশিত অর্থাৎ উন্নত ভারত গড়তে হবে।

একতার এই মহাকুম্ভে ধনী, দরিদ্র নির্বিশেষে , তরুণ বা প্রবীণ, গ্রামবাসী বা শহরের বাসিন্দা, দেশ-বিদেশের মানুষ, পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণ – যে কোন প্রান্তের মানুষ এখানে মিলিত হয়েছেন। জাত, ধর্ম, নীতি, আদর্শ এ সব কিছু অগ্রাহ্য করে সঙ্গমে তাঁরা সমবেত হয়েছেন। এটি আসলে এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত ভাবনার প্রতিফলন, যেখানে কোটি কোটি মানুষের আস্থা রয়েছে। আর এখন আমরা সেই একই উৎসাহ, উদ্দীপনায় উন্নত ভারত গড়তে ব্রতী হব।

|

এই প্রসঙ্গে আমার ভগবান কৃষ্ণের সেই উপাখ্যানটি মনে পড়ছে। মা যশোদা তাঁকে মুখ খুলে হাঁ করতে বললে, তিনি যখন মুখ খুলেছিলেন, তখন তাঁর মা সমগ্র বিশ্ব ব্রহ্মান্ড প্রত্যক্ষ করেন। একই ভাবে এই মহাকুম্ভে দেশ-বিদেশের মানুষ ভারতের সম্মিলিত শক্তির সম্ভাবনাকে প্রত্যক্ষ করেছেন। আমাদের আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে, একনিষ্ঠ ভাবে উন্নত ভারত গড়তে হবে।

অতীতে ভক্তি আন্দোলনের সময় সাধু-সন্ন্যাসীরা দেশ জুড়ে আমাদের ঐক্যবদ্ধ সংকল্পকে চিহ্নিত করে তাকে কাজে লাগাতে উৎসাহিত করেছিলেন। আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের শক্তি সম্পর্কে স্বামী বিবেকানন্দ থেকে শ্রী অরবিন্দ — প্রত্যেক মহান চিন্তাবিদ মনে করিয়ে দিয়েছেন। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় মহাত্মা গান্ধীও সেই অভিজ্ঞতা লাভ করেন। স্বাধীনতা উত্তর যুগে এই সম্মিলিত শক্তিকে যদি যথাযথ ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হতো, তাহলে তা প্রত্যেকের কল্যাণে ব্যবহার করা যেত। ফল স্বরূপ নতুন এক স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য তা গুরুত্বপূর্ণ এক শক্তি হিসেবে কাজে লাগান যেতো। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে সেই শক্তিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। তবে, বর্তমানে উন্নত ভারত গড়তে যে ভাবে জনগণের সম্মিলিত শক্তি আত্মপ্রকাশ করছে তা দেখে আমি আনন্দিত।

|

বৈদিক যুগ থেকে বিবেকানন্দ , প্রাচীন যুগের নীতি থেকে আধুনিক যুগের কৃত্রিম উপগ্রহ – দেশের মহান রীতি-নীতি সবসময়ই জাতি গঠনে সহায়ক হয়েছে। নাগরিক হিসেবে আমি চাইবো আমাদের পূর্বপুরুষ এবং সাধু-সন্ন্যাসীদের কর্ম তৎপরতা অনুপ্রেরণার নতুন উৎস হোক। একতার এই মহাকুম্ভ নতুন নতুন সংকল্পকে বাস্তবায়িত করতে সহায়তা করুক। আসুন আমরা ঐক্যকে আমাদের পথপ্রদর্শক নীতি হিসেবে গ্রহণ করি। দেশ সেবা আসলে অধ্যাত্ম সেবার সমার্থক – এই ভাবনায় আমরা এগিয়ে চলি।

কাশীতে আমার নির্বাচনী প্রচারের সময়কালে আমি বলেছিলাম, “মা গঙ্গার আহ্বানে আমি এখানে এসেছি”। এটি নিছক কোন আবেগ ছিল না। এর মধ্য দিয়ে পবিত্র নদীগুলিকে পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে আমাদের দায়বদ্ধতার বিষয়টি অন্তর্নিহীত ছিল। প্রয়াগরাজে গঙ্গা, যমুনা এবং সরস্বতী নদীর সঙ্গমে দাঁড়িয়ে আমার সেই সংকল্প আরও দৃঢ় হয়েছে। আমাদের নদীগুলির পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার সঙ্গে নিজেদের জীবনযাত্রা যুক্ত রয়েছে। তাই বড় বা ছোট যেরকমেরই নদী হোক সেই নদীকে জীবনদায়ী মাতা হিসেবে আমরা পুজো করবো। আমাদের নদীগুলিকে পরিচ্ছন্ন রাখার ক্ষেত্রে যে উদ্যোগ আমরা নিয়েছি, এই মহাকুম্ভ তাকে আরও অনুপ্রাণিত করেছে।

|

আমি জানি এধরনের একটি বৃহৎ কর্মকান্ডকে বাস্তবায়িত করা সহজ কোন কাজ নয়। আমাদের নিষ্ঠায় কোন ঘাটতি থাকলে তার জন্য আমি মা গঙ্গা, মা যমুনা এবং মা সরস্বতীর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করছি। আধ্যাত্মিক চেতনার প্রতিমূর্তি জনতা জনার্দনকে পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের তরফে যদি কোনরকমের খামতি থাকে, তার জন্য আমি সকলের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

এই মহাকুম্ভে অগণিত মানুষ যে আধ্যাত্মিক চেতনায় জড়ো হয়েছিলেন, তাঁদের পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে একই রকমের ভাবনায় আমরা কাজ করেছি। উত্তর প্রদেশের সাংসদ হিসেবে আমি বলতে চাই যোগীজির নেতৃত্বে প্রশাসন এবং জনসাধারণ যে ভাবে এই একতার মহাকুম্ভকে সফল করে তুলেছেন তার জন্য আমি গর্বিত। রাজ্য অথবা কেন্দ্র, প্রশাসক অথবা শাসক – কারোর পক্ষে একক ভাবে এই আয়োজন সফল করা সম্ভব নয়। নিকাশী ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত কর্মী, পুলিশ, নৌকো চালক, গাড়ি চালক, খাদ্য সরবরাহকারী - প্রত্যেকে একনিষ্ঠ সেবক হিসেবে এখানে নিরলস ভাবে কাজ করে গেছেন। প্রয়াগরাজের জনসাধারণ নিজেদের হাজারও অসুবিধা সত্বেও যে ভাবে তীর্থযাত্রীদের স্বাগত জানিয়েছেন, তা এককথায় অনবদ্য। আমি প্রয়াগরাজের জনসাধারণ সহ উত্তরপ্রদেশের প্রত্যেককে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। তাঁরা এক অসাধারণ কাজ করেছেন।

|

আমাদের দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের বিষয়ে আমার সবসময়ই অটুট আস্থা রয়েছে। এবারের মহাকুম্ভ প্রত্যক্ষ করে সেই আস্থা বহুগুণ শক্তিশালী হয়েছে।

যেভাবে ১৪০ কোটি ভারতবাসী একতার মহাকুম্ভকে আন্তর্জাতিক এক কর্মসূচিতে পরিণত করেছেন, তা অবিশ্বাস্য। আমাদের জনগণের নিষ্ঠা, অধ্যবসায় এবং উদ্যোগে আমি আপ্লুত। দেশবাসীর এই সম্মিলিত প্রয়াসের মধ্য দিয়ে যে সাফল্য আমরা অর্জন করেছি, আমি তা শ্রী সোমনাথকে নিবেদন করবো। দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে আমি প্রথমে সেখানে যাব এবং তার কাছে প্রত্যেক দেশবাসীর জন্য প্রার্থনা করবো।

মহাশিবরাত্রীর দিনে মহাকুম্ভ হয়তো আনুষ্ঠানিক ভাবে শেষ হয়েছে, কিন্তু গঙ্গার শাশ্বত প্রবাহের মতো আমাদের আধ্যাত্মিক শক্তি, জাতীয় ঐক্য ও চেতনা জাগ্রত থাকবে, যেগুলিকে মহাকুম্ভ আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে সঞ্চারিত করেছে। এই শক্তি, ঐক্য ও চেতনা আমাদের আগামী প্রজন্মকেও অনুপ্রাণিত করবে।