প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ৬ই ডিসেম্বর একবিংশতম ভারত-রাশিয়া বার্ষিক শিখর সম্মেলনে যোগ দিতে রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি মিঃ ভ্লাদিমির পুতিন নতুন দিল্লি সফরে রয়েছেন।
রুশ রাষ্ট্রপতি পুতিনের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের এক প্রতিনিধিদলও রয়েছেন। অত্যন্ত উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে প্রধানমন্ত্রী মোদী ও রাষ্ট্রপতি পুতিনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হয়েছে। কোভিড মহামারীজনিত চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও দুই দেশের মধ্যে বিশেষ অধিকারপ্রাপ্ত কৌশলগত সম্পর্কের লাগাতার অগ্রগতিতে দুই নেতাই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। দুই দেশের বিদেশ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের মধ্যে প্রথম ‘২+২ ডায়ালগ’-কে এবং সামরিক বিষয় সম্পর্কিত আন্তঃসরকারি কমিশন তথা সামরিক-প্রযুক্তি সহযোগিতা সম্পর্কিত বৈঠক আয়োজনের বিষয়টিকেও তাঁরা দু’জনে স্বাগত জানান।
*দুই নেতাই আরও বেশি অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দিয়ে দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে অনুমানযোগ্য ও স্থায়ী অর্থনৈতিক সম্পর্কে নতুন করে গতি সঞ্চারের ওপর অগ্রাধিকার দেন। দুই নেতাই পারস্পরিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সাফল্যে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং একে অপরের দেশে আরও বেশি লগ্নির ব্যাপারে আগ্রহ দেখান। দুই নেতার মধ্যে আলোচনায় আন্তর্জাতিক উত্তর-দক্ষিণ পরিবহণ করিডর (আইএনএসটিসি) এবং প্রস্তাবিত চেন্নাই-ভ্লাদিভোস্তক পূর্বাঞ্চলীয় নৌ-বাণিজ্য করিডরের প্রসঙ্গ উঠে আসে। উভয় নেতাই রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল বিশেষ করে, সে দেশের পূর্ব প্রান্তের সঙ্গে ভারতের রাজ্যগুলির আরও বেশি আন্তঃআঞ্চলিক সহযোগিতা গড়ে তোলার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন। কোভিড মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে চলতি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পাশাপাশি মানবিক সহায়তা এবং সঙ্কটের সময় একে অপরকে সাহায্যের জন্য দুই নেতাই পরস্পরের প্রশংসা করেন।
*দুই নেতাই মহামারী পরবর্তী বিশ্ব অর্থ ব্যবস্থার পুনরুদ্ধার এবং আফগানিস্তান পরিস্থিতি সহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অগ্রগতির বিষয়ে আলোচনা করেন। আফগানিস্তান বিষয়ে উভয় দেশই একই দৃষ্টিভঙ্গি ও উদ্বেগ ব্যক্ত করে বলে দুই নেতা সম্মত হন। তাঁরা আফগানিস্তান সম্পর্কিত আলোচনা ও সহযোগিতা নিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্যায়ের বৈঠকে গৃহীত দ্বিপাক্ষিক ভবিষ্যৎ রূপরেখাগুলির প্রশংসা করেন। এ সম্পর্কে তাঁরা বলেন, দুই দেশেরই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিষয়ে অভিন্ন অবস্থান রয়েছে। সেইসঙ্গে, রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদ সহ বিভিন্ন বহুপাক্ষিক মঞ্চে দুই দেশের সহযোগিতাকে আরও নিবিড় করার বিষয়ে সম্মত হন। রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে বর্তমানে ভারতের অস্থায়ী সদস্যপদ এবং চলতি বছরে ব্রিকস-এর সভাপতি পদেও সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য রাষ্ট্রপতি পুতিন প্রধানমন্ত্রী মোদীকে অভিনন্দন জানান। উত্তর সুমেরু বা আর্কটিক কাউন্সিলের বর্তমান সভাপতি পদে দায়িত্ব পালনের জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদী রাশিয়াকে অভিনন্দন জানান।
*শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে অংশীদারিত্ব সম্পর্কিত ভারত-রাশিয়া যৌথ বিবৃতিতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়গুলিকে সামিল করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি পুতিনের এই সফরের সঙ্গে সঙ্গেই সরকারি পর্যায়ে একাধিক চুক্তি ও সমঝোতাপত্রের পাশাপাশি দুই দেশের কয়েকটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যেও সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই সমস্ত সমঝোতাপত্রের মধ্যে রয়েছে – বাণিজ্য, শক্তি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, মেধাসম্পত্তি, মহাবিশ্ব, ভূতাত্ত্বিক অনুসন্ধান, সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান, শিক্ষা প্রভৃতি। এই চুক্তি / সমঝোতাপত্রগুলির মধ্য দিয়েই আমাদের দ্বিপাক্ষিক অংশীদারিত্বের বহুমুখী বৈশিষ্ট্যের প্রতিফলন ঘটে।
*রাষ্ট্রপতি পুতিন ২০২২-এ পরবর্তী ভারত-রাশিয়া বার্ষিক শিখর সম্মেলনে অংশ নিতে রাশিয়া সফরের জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।